somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটোগল্প : **পঁচিশ বছর পর**

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বৃষ্টিটা আজ আর থামবে না মনে হয়, ছাতাও যে মানেনা।বাস-অটো মনে হয়না আজ কপালে আছে। দূরে একটা বাসস্টপ, যাই বরং মাথা বাঁচাই।
বাসস্টপে পৌঁছে দেখি, জবুথবু বসে এক মহিলা। চশমাটা চোখ থেকে নামিয়ে রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে শাড়িপরিহিতা মহিলাটির দিকে তাকিয়ে নিলাম একবার, মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালাম অন্যদিকে। গায়ে জলের ছিটে আসছে তাই বাধ্য হয়েই মহিলার দিকে একটু সরতেই তিনি তাকালেন আমার দিকে, অন্ধকারে ঠিক স্পষ্ট নয় মুখটা। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।

"আপনি কি কৃষ্ণনগরের অনিমেষ! মানে অনিমেষ রায়?"

আচমকা প্রশ্নে হতবাক হলাম বটে কিন্তু সেটা সামলে বললাম, "হ্যাঁ!"

"কেমন আছো অনিমেষদা?"

"ভালো। না মানে আপনি! কে?"

"ভুলে গেলে তোমার সরমা কে?"

মনে মনে বললাম, ভুলিনি। তাই জন্য এতোগুলো বছর পেরিয়েও তোমার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারিনি। নিজের অজান্তে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, "তা এখানে কি করছো?"

"এখানেই তো বাড়ি আমাদের। ওপারের গলিটা দিয়ে ঢুকে ডানহাতের দ্বিতীয় বাড়িটা, আমাদের। ছেলের জন্য অপেক্ষা করছি, যদি আজ ও চাকরিটা পায়! আজ ওর ইন্টারভিউ ছিলো।"

"কোথায়?"

"রয় কেমিক্যালস্ এ।"

"জানিনা কি হবে! মাথার উপর অনেক টাকার দেনা, চাকরিটা না পেলে ছেলেটা আমার..."

"বৃষ্টি কমেছে সরমা। রাত প্রায় দশটা, চলো ওঠা যাক্!"

"তুমি যাও অনিদা, আমি পরে যাবো।"

...

বছর বাইশের অনিমেষ। সদ্য গ্র‍্যাজুয়েট, নানান জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়ে চলেছে। সুবলকাকু একদিন রাস্তায় ধরে বললেন, "অ্যাই অনি! আমার ভাইঝিকে পড়াবি?" না করেনি সে। সেন বাড়ির আদরের মেয়েকে পড়ানোর মাইনে ছিলো পঞ্চাশ টাকা। আজ হাস্যকর মনে হলেও সেসময়ে বেকার অনিমেষের কাছে সেই সামান্য টাকাটা অনেক। মাসে দুবার কলকাতা ছুটতে হয়, চাকরির দরখাস্তের জন্য।

প্রথমদিন পড়াতে যেতেই বৈঠকখানায় জায়গা হলো অনিমেষের৷ সুবলকাকু সাথে নিয়ে এলেন এক মাঝবয়সী মহিলাকে, ওনার হাতে একটি ট্রে। তাতে চায়ের কাপ আর সিঙাড়া। "অনি দেখ, ইনি আমার বউদি।" অনিমেষ উঠে প্রণাম করলো। "আর এ আমার ভাইঝি সরমা, একেই পড়াবি তুই।" পিছনে বইখাতা হাতে লাজুক মুখে সদ্যযৌবনা একটি অপরূপ সুন্দরী মেয়ে।
চা পড়ে রইলো কাপেই, সরমাকে কটা অঙ্ক দিয়ে সে বসে রইলো। "আপনি চা খাবেননা? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যে!" অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো অনিমেষ। সরমা একটু লজ্জা পেলো। সেই শুরু, কখন যে আপনি থেকে তুমি আর তুমি থেকে মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গেছে বুঝে ওঠেনি ওরা দুজনে। ইতিমধ্যেই সময়ের নিয়মে বছর ঘুরেছে। গোল বাঁধে যখন সরমার বাবা কুমার সেনের কানে খবর গেলো। 'পড়া শেষে মাস্টারের সাথে তার মেয়ে নাকি বাগানে হাটতে যায়, গুনগুনিয়ে গান করে।'
মামাবাড়ির লোককে যা নয় তাই অপমান করলেন কুমার সেন। মা-বাপ মরা অনিমেষ শেষে গ্রামছাড়া হলো। আর সরমা, ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও করেছিল, কিন্তু মাসছয়েক পর ওর বিয়ে হয়ে যায়। রাগে দুঃখে মামাবাড়ির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
...
ঘুমটা থেকে থেকে ভেঙে যাচ্ছে আমার। বিকেলের দিকে শেষ ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম একটি ছেলের, যখন সে ঘরে ঢোকে আমি অবাক হয়েছিলাম। যেন সরমাকে দেখছি। পঞ্চাশজনের মধ্যে সে যোগ্য তেমন নয়, তবে অযোগ্যও নয়। বেশ সপ্রতিভ ছেলেটি। তবুও কোথাও সে আঁটকে যাচ্ছে, হীনমন্যতা কিনা জানিনা। বেকার এতো ভাবছি, কাল ছেলেটি ফোন, না না বরং চিঠিটা নিয়ে তার বাড়ি যাই। এড্রেসটাও একই, সরমার ছেলে, ব্যস এটাই নাহয় ওর যোগ্যতা!

সকাল দশটায় যখন গিয়ে বেল বাজালাম তখন সেই ছেলেটি দরজা খুলে বললো,
"আরে স্যর আপনি?"

"হ্যাঁ! তোমার চাকরিটা হয়েছে।"

"আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যর!"

"তোমার মা-বাবাকে ডাকো। একটু কথা বলবো।"

"বাবা মারা গেছেন সাতবছর প্রায়।"

"আর সরমা!"

"আপনি চেনেন মাকে?"

"হ্যাঁ! আমি ইয়ে মানে..."

"আপনি কি অনিমেষকাকু? মা মারা যাওয়ার আগে বলেছিলো আপনার কথা। স্যরি, গতমাসে মা মারা যান। লিভার ক্যানসারের পেশেন্ট ছিলেন।"

"তবে যে কাল রাতে, না না একি করে সম্ভব! ওহ্ মাই গড!"

চোখের সামনেটা এমন অন্ধকার, শরীরটা আমার...

"স্যর! একি! আপনি এমন ঘামছেন কেন? আরে ওখানে বসুন, আমি ধরছি.!"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

”ঈশ্বরের ভুল ছায়া” - যখন ঈশ্বরও মেনে নেন, তিনি নিখুঁত ছিলেন না।

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:১৩


"আলো সবসময় সত্য নয়। কখনো কখনো ছায়াই বলে দেয়—কী ভুল ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনায়।"

ধরুন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি হঠাৎ দেখলেন—আপনার প্রতিবিম্ব মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
অথবা, নদীর জল... ...বাকিটুকু পড়ুন

A Humanitarian Appeal for the Innocent Children of Palestine

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৪৪

A Humanitarian Appeal for the Innocent Children of Palestine

This image was created using AI.

Dear President Donald Trump,

Every word of this letter is an outcry rising from the blood-soaked soil... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি ইউনুস সরকারকে সফল নাকি ব্যর্থ মনে করেন?

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



ইউনুস সাহেব মেহমান। উনি এসেছেন স্বল্প সময়ের জন্য।
নির্বাচনের পরে উনি টাটা বায় বায় খতম। উপদেষ্টাদের থাকার নিয়ম তিন থেকে ছয় মাস। ৯০ দিনের মধ্যে তারা একটা নির্বাচন দেবেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ মুজিব, জনপ্রিয় নেতা থেকে স্বৈরশাসক?

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৫

শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের সব থেকে জনপ্রিয় নেতা। জীবনের শুরু থেকেই তিনি কাজ করে গেছেন দেশের মানুষের জন্য। তবে জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি এমন সব কাজ করেছে যা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা টু দিল্লী : শেখ হাসিনার ভাগ্য ঘুরপাক খাচ্ছে রাউন্ডটেবিলে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


তিনি ছিলেন এক সময়ের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছিলেন সেই নারী, যিনি অফিসের চেয়ারে বসে দেশ চালাতেন আবার অফিসের বাইরেও সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি বিরোধী দলের বাথরুমেও কী হচ্ছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×