সময়টা ১৮৫৭ , সিপাহী বিদ্রোহ সবে শেষ হয়েছে । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক করলেন যে তিনি এবার সংসার ত্যাগ করবেন । প্রথম কাশি গেলেন, কাশিতে মন বসল না, তাই কালকা হয়ে শিমলার কাছে নরকান্দায় গিয়ে পৌঁছালেন । হিমালয়ের কোলে দীর্ঘ তিন বৎসর ধ্যান যোগ এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় দিন যাপনের পড় এক দিন ভোরে দেখলেন ক্ষর স্রোতা নদী সমতলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে , এই দৃশ্য দেখে দেবেন্দ্রনাথ আর থাকতে পারলেন না ১৮৫৯ সালে কলকাতার পথে রউনা হয়ে গেলেন । কলকাতায় আসার পর দেবেন্দ্র নাথের স্ত্রীর গর্ভে রবীন্দ্রনাথের আগমন এবং ১৮৬১ সালে তাঁর জন্ম । দীর্ঘ কয়েক বছর হিমালয়ের আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে বসবাস এবং যোগ সাধনার ফলে মহর্ষির মধ্যে যে অপার শক্তি সঞ্চয় হয়েছিল তাঁর ফলশ্রুতি হিমালয়ের মত বিশাল বিস্তৃত তাঁর পুত্র রবীন্দ্রনাথ ।
এবার আরেকটি ঘটনা বন্ধুদের সামনে তুলে ধরব , এই ঘটনাটি স্টোক সাহেবের । স্টোক সাহেব বিদেশ থেকে উত্তরাখণ্ডে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তনের জন্য এসেছিলেন । উত্তরাখণ্ডে এসে স্টোক সাহেব খুব কাছ থেকে দেখলেন ধ্যান মগ্ন যোগী পুরুশদের, তাঁদের সংস্পর্শে এসে তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলেন, তাঁরপর তিনি দীর্ঘ ৫ বছর কঠোর তপস্যা করার পর তিনি হিন্দু ধর্মের প্রচারে নিবেদিত প্রাণ হলেন … । তাঁর নাম হল স্টোক সত্যানন্দ মহারাজ ।
আমার মনে হয় হিন্দুত্ব এক অনুভূতি, এ এমন এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতি যা অন্তর থেকে অনুভব করতে হয় , সত্যি যদি তা অনুভব করা যায় তাহলে সেই ব্যক্তির মধ্যে এক সামগ্রিক পরিবর্তন আসা সম্ভব । কপালে লাল টীপ আর কাপালিকদের মত লাল বস্ত্র পড়ে “আমি হিন্দু আমি হিন্দু “ বলে চিৎকার করলেই হিন্দু হওয়া যায় না । অন্য ধর্ম গ্রন্থ পড়ার আগে আমাদের বেদ, বেদান্ত, বেদান্ত দর্শন, আরণ্যক, উপনিষদ ভালো করে পড়ে নিজের ধর্মকে আগে অনুভব করা প্রয়োজন , আদি অনন্ত কাল ধরে আমাদের ধর্ম গ্রন্থ গুলি বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দিয়ে আসছে, তা গ্রহণ না করে শুধু মাত্র লৌকিক আচার এবং কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে হিন্দু হওয়া যায় না । এ এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতি , পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে কিছু ক্ষনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গভীর ভাবে তা অনুভব করতে হয় । ঈশ্বরের ওপর সব কিছু ছেড়ে তাকে গভীর ভাবে অনুসরণ করলে সঠিক পথের দিশা তিনি দেবেন । যেমন দেবেন্দ্রনাথ এবং স্টোক সাহেব কে দিয়েছিলেন ।
- সৌজন্য :: দেবশ্রী চক্রবর্তী
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১৪