somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যাশ রিজার্ভ রেশ্যু (সিআর‌আর) কি ও কেন?

২৬ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লিখতে পারি না কিন্তু কিছু লিখার জন্য হাত নিশপিশ করছে। তাই ভাবলাম এমন কিছু নিয়ে দু’টো লাইন লিখি, যা আমার কাজের সংশ্লিষ্ট। তাহলে আমার জন্য সহজও হলো আবার কিছু লিখাও হলো।

আজকে আলোচনা করবো ব্যাংকিং ব্যবসায় বহুল আলোচিত ও ব্যবহৃত ক্যাশ রিজার্ভ রেশ্যু (Cash Reserve Ratio) নিয়ে। একে কখনও কখনও ক্যাশ রিজার্ভ রিক্যুয়ারমেন্ট-ও (Cash Reserve Requirement) বলে। তবে ক্যাশ রিজার্ভ রেশ্যু নামেই বিশ্বব্যাপী অধিক পরিচিত। সংক্ষেপে বলে সিআরআর (CRR)। অনেক সময় একে তার‌ল্য অনুপাত-ও (Liquidity Ratio) বলা হয়।

কোন একটি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রনকারী ব্যাংক কর্তৃক তার আওতাধীন বানিজ্যিক ব্যাংকসমুহকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শর্ত বেঁধে দেয়া হয়। এমনই একটি শর্ত হচ্ছে সিআরআর সংরক্ষন।

মূলত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যবসা করে ডিপোজিটরের থেকে টাকা সংগ্রহ করে উক্ত টাকা ঋণ হিসেবে ঋণ গ্রহীতাদের নিকট লোন বিতরনের মাধ্যমে। এই ডিপোজিট রেট ও লোন রেট এর মাঝখানে একটি ফারাক (Spread) থাকে। এই Spread এর কিছু অংশ প্রশাসনিক ব্যয় হিসেবে নির্বাহ করার পর বাদ-বাকি যা থাকে- তাই মুনাফা।

এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা হচ্ছে, ডিপোজিটরের নিকট হতে গৃহীত পুরো টাকা অবশ্যই ঋণ হিসেবে বিতরন করা যাবে না। ডিপোজিটের একটি অংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রনাধীন থাকতে হবে। এই নিরাপত্তা সঞ্চিতিই হচ্ছে সিআরআর এবং এসএলআর (Statutory Liquidity Ratio)। এসএলআর নিয়ে পরে কোন এক সময় লিখা যাবে।

তাহলে বলা যায়, সিআরআর হচ্ছে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত মোট আমানতের এমন একটি অনুপাত যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে রক্ষিত একটি চলতি আমানত হিসাবে (Current Deposit Account) রক্ষিত রাখতে হবে। কোন কারনে এর ব্যত্যয় হলে শোকজ লেটারসহ ইস্যু করাসহ বিশাল অংকের জরিমানা আরোপ কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়।

এতটুকু যদি আমি বুঝিয়ে বলতে পারি, তবে পরের অংশে যাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিগত এক বছরে কয়েকবারই সিআরআর রেট পরিবর্তিত হয়েছে। কিংবা বলা যায়, কমানো হয়েছে। সর্বশেষ গত পনের’ই এপ্রিল হতে এই রেট নির্ধারন করা হয়েছে 3.50 ও 4.00%।
আবার কনফিউশ্যন তেরী হলো? আমি দুটো রেট লিখলাম কেন? উত্তর সহজ। সিআরআর ক্যালকুলেশন করা হয় পাক্ষিকভাবে কিন্তু মেইনটেইন করা হয় প্রাত্যাহিকভাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত চলতি হিসাবে প্রাত্যাহিকভাবে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট ডিপোজিটের 3.50% এর কম টাকা রাখতে পারবে না এবং পাক্ষিকভাবে গড় হিসাবায়ন করে রক্ষিত টাকার পরিমান কোনক্রমেই 4.00% এর কম হবে না। এই 0.50% এর ফ্লেক্সিবিলিটি রাখা হয়েছে সিআরআর মেইনটেনান্সের সুবিধার্থে। নয়তো মাঝেমাঝেই ব্যাংকগুলোকে সিআরআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় জরিমানা গুনতে হতো।

এখানে আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য। মোট ডিপোজিট বলতে চলতি মাসের ডিপোজিট বুঝানো হয় না। এটা হলো দ্বিতীয় গত মাসের (Preceding Two Month) মোট গড় ডিপোজিট। তার মানে জুলাই মাসের সিআরআর রক্ষনের হিসাবায়ন হবে মে মাসের ডিপোজিট (Average Time & Demand Liability) এর উপর ভিত্তি করে।

একটা উদাহরন দিয়ে আজকের লিখা শেষ করি।
বাংলাদেশ ব্যাংকে তালিকাবব্ধ একটি শিডিউল্ড ব্যাংক ‘ক’ এর মে মাসের গড় ডিপোজিট 1000.00 কোটি টাকা। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান সার্কুলার অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে উক্ত ‘ক’ ব্যাংকের চলতি হিসাবে প্রাত্যাহিক সিআরআর হিসেবে রক্ষিত টাকার পরিমান 35.00 কোটির কম হবে না এবং পাক্ষিকভাবে রক্ষিত টাকার পরিমান গড়ে 40.00 কোটির কম হবে না।
এখন একটা প্রশ্ন আসতে পারে। সপ্তাহ শুরু অর্থাৎ রোববারে চলতি হিসেবে 40.00 কোটি টাকা রেখে দিলেইতো হলো। সারা সপ্তাহ বা পক্ষকালব্যাপী আর হাত না দিলেই হলো। ইজি এন্ড সিম্পল! কিন্তু আদতে তা হয় না। কারন ইন্টার ব্যাংক ট্রানজেকশন, ট্রেজারী বিল, ট্রেজারী বন্ড ক্রয়-বিক্রয়, মেয়াদপূর্তিসহ বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট যে কোন লেনদেন এই হিসাবের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। সুতরাং বলা যায়, এই হিসাব প্রতিদিনই শুধু নয়, প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হয়। অবশ্য, লেনদেনের একটা টাইমফ্রেম বেধে দেয়া আছে।

তাহলে প্রতিদিন এই হিসাবে রক্ষিত টাকার পরিমান 35.00 থেকে 40.00 কোটির মধ্যে স্থির রাখার জন্য মানি মার্কেট ডিলারগন (G-Sec Dealer) অন্য ব্যাংকের সাথে কখনও টাকা ধার দেন কিংবা ধার করেন। আর এই সময়ই আমাদের সামনে হাজির হয় কল লোন, রেপো, রিভার্স-রেপো, স্পেশাল রেপো, এএলএস ইত্যাদি ইত্যাদি । যা ধাপে ধাপে আলোচনা করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
পরবর্তী আলোচনায় থাকবে কেন সিআরআর সংরক্ষন বাধ্যতামুলক করা হলো? সিআরআর রেট কিভাবে ইকোনমিতে প্রভাব রাখে?

ধন্যবাদ।

বিষয়টি ব্যাপক। আর আমার ব্যাকগ্রাউন্ডও কমার্স নয়। ব্যাংকিং করতে গিয়ে যা শিখেছি- তার আলোকে লিখা। মনযোগী পাঠকের কোন অংশ বুঝতে সমস্য হলে মন্তব্যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা যাবে।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×