চিত্র-১ঃ বাজেট আয়
বাংলাদেশ সরকারের বাজেট পেশ করলেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়। জাতীয় সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অধিবেশন বাজেট অধিবেশন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মাননীয় মন্ত্রী জাতির জন্য এই মহান দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন বেশ কয়েক বৎসর যাবত।
আসুন আমরা যারা ইকোনমিস্ট নই অথবা সাধারণ মানুষ, আমরা বাজেট নিয়া নিজেদের চিন্তুাগুলো একটু শেয়ার করে নিই।
প্রথমত, উপরের চিত্র-১ একটু লক্ষ্য করুন। সিংহভাগ আয় রাজস্ব বিভাগ থেকেই আসছে ভাল ব্যাপার। কিন্তু এই টাকাটা দেশের কে কে দেবে একটু খতিয়ে দেখা দরকার, অন্তত আমরা যারা সচেতন নাগরিক হিসেবে থাকতে চাই।
আসুন, দেখি এই টাকাটার উৎসঃ
আয়কর থেকে যত টাকা আসছে তার থেকেও বেশি টাকা আসছে কিন্তু ভ্যাট/তথা মুল্য সংযোজন কর থেকে। আসুন এই দুটি খাত নিয়ে আমরা একটু ফুসুর ফাসুর করে নিই।
আয়কর কারা দেয় এবং ভ্যাট কারা দেয় সে ব্যাপারে আমাদের জানা উচিত। আয়কর দিচ্ছেন যাদের টাকা বেশি তথা ধনিক শ্রেনি। আর মুসক/ভ্যাট দিচ্ছে কিন্তু ধনী গরিব সবাই।
> এখন কথা হচ্ছে আয়কর কি সব ধনীরা দিচ্ছেন??
> যারা দিচ্ছেন তাঁরা কি কোন ফাঁকিবাজি করছেন না??
> দেশের জনসাধারণের মধ্যে কত শতাংশ ধনী? আর কত শতাংশ দরিদ্র??
একটু চিন্তা করে দেখুন এই দুটি প্রশ্নের উত্তরে আপনি কি বলবেন? স্বাভাবিকভাবেই উত্তর আসবে দেশে ধনীর সংখ্যা কম এবং গরিব লোকদের সংখ্যা বেশি। তাই নয় কি??
আল্টিমেটলি তাহলে গরিব মানুষরাই অর্থের যোগান দিতে হচ্ছে অধিক। কারণ এরাই ভ্যাট বেশি দিচ্ছে সরকারকে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে বাজেটে গরিব মানুষদের কন্ট্রিভিউশন আছে ভালই। আসুন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বাজেটের চার্টটা একটু দেখি।
আয়ঃ
ব্যয়ঃ
এখন আসুন, ব্যায়ের দিকে। সরকার কোন খাতে কেমন ব্যয় করবে তার একটু আভাস নেওয়া যাক। কি বলেন?
বোঝাই যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি টাকাটা চলে যাচ্ছে বেতনভাতা দিতে। এ কথা অস্বিকার করার উপায় নেই, প্রশাসনের লোকদের কারণেই এই দেশটা চলছে। কিন্তু এর মানে কি এই যে, সিংহভাগ টাকাটা দেশের অন্যান্য খাতে না দিয়ে তাদের পেটেই চালান করতে হবে??
আমার বিবেচনায়, এই দেশকে এগিয়ে নেয়ার চিন্তা করলে শিক্ষাখাতে সরকারকে সবচেয়ে বেশি আন্তরিক হওয়া উচিত। এর কারণ হলো, শিক্ষিত মানুষেরাই দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে।
এই যেমন ধরেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাই। এখন দেশের কোন গবেষক যদি স্বল্প খরচের পাওয়ার প্লান্ট আবিস্কার করে ফেলতে পারেন। অথবা ধরেন, সরকারের টাকায় শিক্ষিত হয়ে একটা লোক বিদেশে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে উপার্জন করছে। সে টাকাটা রেমিটেন্স আকারে দেশে পাঠাল? এতে কি হলো?? দেশের সম্পদ/টাকা বাড়লো না?
অথবা, দেশেই ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করলো। এতেও তো দেশে ঐ টাকাটা যোগ হলো। এইরকম বহু বহু ব্যাপার আছে যা আমাদের দেশকে দ্রুত উন্নতিতে সাহায্য করতে পারতো, কেবলমাত্র শিক্ষার ম্যাজিক দিয়ে। জানেন? দেশে যত সম্পদ আছে, টাকা আছে তা দিয়ে ৯০ শতাংশ-ভাগ শিক্ষিত জাতি হতেই পারি আমরা। আমি যদি বাজেট তৈরির ক্ষমতা রাখতাম তাহলে শিক্ষাখাতে শতকরা ২০ শতাংশ ব্যয় করে ফেলতাম কিন্তু!
বাহঃ বেশ তো শুনলাম শিক্ষা ম্যাজিকের কথা এবার আসি আমাদের সরকার এই ব্যাপারে কি করেছে তা জানি।
দেখাই যাচ্ছে, আমাদের সরকার এই ব্যাপারে মাত্র ২ শতাংশ টাকা খরচ করছে যেখানে পাকিস্তানের মতো একটি থার্ড ক্লাস জাতিও আমাদের চেয়ে অনেক বেশি খরচ করছে। আমাদের সরকার কি তাহলে সামগ্রিক উন্নতি চায় না?? সিংহভাগ ভ্যাট দানকারি এই জনগোষ্টির উন্নতিতে সরকার তাহলে হাত সংকুচিত রাখছে কেন???? তবে ধরেই রাখুন, এই প্রশ্নের উত্তর সরকারের কাছে পাওয়া যাবে না।
আমিই দিচ্ছি উত্তর, আগেকার যুগে শিক্ষাকে শত্রু হিসেবে চিহ্ণিত করেছিল ধনিক শ্রেণি। আর সারা পৃথিবীতেই কম-বেশি শিক্ষাকে এখন অস্তিত্বের শত্রু বলে ভাবে ধনিক ও শাসকগোষ্টি। এ কারণে দেখবেন শিক্ষাখাতে বাজেট সবদেশেই তূলনামূলক কম।
যেমন ভারতের মোটামুটি ৫%, মিয়ানমার(১% এর কম), দুবাই(১%), কংগো(১.৮%), আফগান(১.৯%), শ্রী লংকা(২.৬%), পাকিস্তান(২.৫%), ইসরাইল(৬%), সুইডেন(৬.৬%), নরওয়ে(৬.৮%), কিউবা(১৩%), পুর্ব তিমুর(১৬%)
রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব না। আমাদের সরকারে যারা আছেন, সিংহভাগ টাকাটাই নিজেদের বেতনভাতায়/অন্যান্য খাতে খরচ করে ফেলছেন, সামনে হয়তো এই জাতির সুদিন আসবেই......। আসুন! সে আশায় কাজ করে যাই!!
তথ্য সংগ্রহঃ ১ম আলো ৩ জুন ২০১৬ ও টাইমস অব ইন্ডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪১