ব্লগার মাত্রেই জানেন, সামহোয়্যারইন অফিসের কাউন্টারে অফসেট কাগজে হাতে লিখে পোস্ট জমা দিতে হয়। মনোনীত হলে সেই পোস্টগুলো অফিসের দেয়ালে আঠা দিয়ে লাগানো (প্রকাশিত) হয়। প্রথা অনুযায়ী সামহোয়্যারইন প্রাঙ্গণে সমবেত ব্লগাররা চিৎকার করে কোনো পোস্ট সম্পর্কে মন্তব্য দিয়ে থাকেন।
সরেজমিনে একদিন
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক ব্লগার সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পোস্ট জমা দিচ্ছেন। বিকেলের দিকে তুলনামূলক ভিড় বেশি দেখা যায়। তখন বিশৃঙ্খলাও বেশি হয়। ব্লগাররা জানান, পত পরশু লাইনের বাইরে গিয়ে পোস্ট জমা দিতে গেলে কৌশিক আহমেদ নামের এক ব্লগারের সঙ্গে সামহোয়্যারইনের কর্মচারীদের বাকবিতন্ডা হয়। পরে কর্মচারীরা একজোট হয়ে কৌশিক আহমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসে প্রহারের শিকার হন ব্লগার অন্যমনস্ক শরৎ।
এর আগে সামহোয়্যারইন অফিসের সামনে আস্তিক ও নাস্তিকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী এক দাঙ্গার ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল দেশজুড়ে। সুশীল সমাজসহ নাগরিক সমাজ তখন ব্লগ কালচার সমূলে বন্ধ করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল।
কিছু সমস্যা
চাকরিজীবী ব্লগাররা যানজটের মধ্যে সামহোয়্যারইন অফিসে গিয়ে পোস্ট জমা দিতে পারেন না - এ সমস্যা বহুদিনের। চাকরিজীবীদের অনেকে অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পোস্ট জমা দিতে গিয়েও সামহোয়্যারইন অফিসে কাউকে পাওয়া যায় না। তারা অফিস সময়ের পর পোস্ট জমা নেওয়ার জন্য সামহোয়্যারইন অফিসে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগের দাবি জানান। এদিকে দূরের ব্লগাররাও নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। সিলেট থেকে পোস্ট জমা দিতে আসা দুজন ব্লগার আলিম আল রাজি ও সাকিন উল আলম ইভান ক্ষোভমিশ্রিত কন্ঠে বলেন, 'আমরা ঢাকা থেকে দূরে থাকি। তাই একসঙ্গে কয়েকটি পোস্ট জমা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সামহোয়্যারইনের একজন দারোয়ান এজন্য অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন।' তারা প্রশ্ন রাখেন, 'ব্লগিং করার এই কি শাস্তি?' তবে সামহোয়্যারইনের কর্তা আরিল ও জানা দুজনেই ঘুস দাবির কথা প্রত্যাখ্যান করেন। তারা বলেন, আমাদের কার্যালয় ছোট হওয়ায় পোস্ট গ্রহণ ও বর্জনে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ কারণে গত সপ্তাহে দুই চটের বস্তা সমপরিমাণ পোস্ট আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। ফলে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের অফিসের আশেপাশের দেয়ালে ফ্লাডিং করছেন।' তারা বলেন, এই ধরনের প্রবণতা অনাকাঙ্ক্ষিত।
ছিনতাই, বাদ-প্রতিবাদ
এদিকে বিশৃঙ্খলার সুযোগে ছোটখাটো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এই ধরনের ঘটনা সামাল দিতে ব্লগাররা সামহোয়্যারইনের সামনে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের জোর দাবি জানান। ওদিকে কোনো নোটিশ ছাড়াই পোস্ট ছিঁড়ে ফেলার (ডিলিট) ঘটনাও কম নয়। প্রতিদিন এ নিয়ে ব্লগারদের বাদ-প্রতিবাদ লেগেই আছে। ব্লগাররা বলছেন, সামহোয়্যারইন কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ ছাড়াই দেয়ালে টাঙ্গানো পোস্ট ছিঁড়ে ফেলছেন। অনেকের পোস্ট আবার দেয়াল থেকে তুলে আলাদা একটি ফাইলে ড্রাফট করা হচ্ছে। কয়েকজন ব্লগার অভিযোগ করে বলেন, তাদের পোস্ট শুধু ছেঁড়াই হয়নি, প্রত্যেকের আঙ্গুলে অমোচনীয় কালির সিল মেরে জেনারেলও করা হয়েছে।
অবিলম্বে ইন্টারনেটায়নের দাবি
যতোই দিন যাচ্ছে, ইন্টারনেটে ব্লগ স্থাপনের দাবি ততোই জোরালো হচ্ছে। ব্লগাররা ক্ষোভজড়িত কন্ঠে বলেন, উন্নত বিশ্বে যখন ইন্টারনেট নিয়ে ওয়েবপেইজ খোলা, ইমেইলের মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ সহ নানা ধরনের বিস্ময়কর কর্মকান্ড ঘটছে, তখন সামহোয়্যারইন ব্লগকে ইন্টারনেটায়ন করা এখন সময়ের দাবি।