অধিনায়কের ব্যাট থেকে যখন একটি সিঙ্গেলের সুবাদে ৫৯ রান হলো, তখন গ্যালারিতে উদ্বাহু নৃত্য, ধারভাষ্যকার ভদ্রলোক তারচেয়েও বেশি উল্লসিত কন্ঠে অধিনায়কের উদ্দেশ্যে ঘোষনা দিলেন, ইঁটস দ্য বিগ রোল টু মেক ইট ফিফটি নাইন! ম্যাগনিফিসেন্ট ওয়র্কিং ইনডিড! যে কোনো কানা অন্ধের কাছে এর মানে হলো, ম্যাগনিফিসেন্ট মুহুর্ত থেকে নিজেকে বঞ্চিত মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলা। দীর্ঘশ্বাস চক্ষুষ্মানদেরও! তার খানিকটা অনেকক্ষন ধরে আটকে থাকা ৫৮’র নিচে পড়ে যাওয়ার শংকা ঠেলে বেরিয়ে আসার, আর বাকিটা ফিরতি ব্যাটসম্যানদেও লাইন দীর্ঘথেকে দীর্ঘতর হবার দিকে তাকিয়ে। অধিনায়ক বোধয় একটু খুশিই মনে মনে, কারন ৫৮ রানের লজ্জার দিনে কথায় কথায় বলেছিলেন, এর চেয়েও খারাপ দিন আসতে পারে। এ যাত্রা সেটি যে হতে দিলেননা এইটাই জাতির গর্ব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার থাকতেও যদি ৫৮ নিচের লজ্জায় ডুবতে হয়, তাহলে তো শ্লার খেলাই দেখুমনা অবস্থা দর্শকদের। আতœতৃপ্ত দর্শক হিসেবে নিজেও আবেগ ধরে রাখা মুশকিল উপলব্ধি করি। মনে পড়ে যায় একটি মজার কৌতুক, এক ভদ্রলোকের মাথায় চুল কমতে কমতে পুরো টাক, যাকে বলে জাপানের সাপ্পোরো ডোম’ সকার ষ্টেডিয়াম! তো প্রতিদিনই চুল যেতে যেতে আর দুয়েকটা অবশিষ্ট আছে; মনের দু:খে ব্যাটা একদিন বলে, যাহ শ্লা, কাল থেকে আর সিথিই করবো না! আজ ৫৯ রান না হলে হয়তো মুখ ফসকে এরকম কিছুও বলে ফেলতে পারে কোনো বেয়াদপ দর্শক! দর্শকগুলো যা বেয়াদপ, হেরে গেলে আবার প্রতিপক্ষের গাড়িতে ঢিল ছুড়ে!! এই না হলে আমাদের জাতীয় ক্যানভাসের দিনদিন এতো উন্নতি, গানে, সিনেমায়, রাজনীতিতে, ..সবশেষ খেলার মাঠেও আমাদের নান্দনিক প্রদর্শনী জাতীয় ইমেজটারই শ্রীবৃদ্ধি বৈতো কিছু নয়। সেই শ্রী টা আবার ওবামার কাছ থেকে ধার নেওয়া, ইদানীং প্রায়ই বলতে শুনি, ‘আমরা পারি’, ‘উই ক্যান’। বিশ্বকাপের সবচে নিচের সারির দলগুলোর একজন খেলোয়াড়েরও অর্জনের খাতায় দুইটা সেঞ্চুরি, আমদের পুরো দলে যা নেই! তাতে কি, সেই দলকে তো নাকানি চুবানি দিছি..মনে নাই? কোথায় ছিলো তখন “ডয়েসক্য্যাট আর কোথায় ও-ব্রায়ান”? বেয়াদপ দর্শক সব ভুলে যায়, তারা খালি জিততেই জানে, হারতে জানেনা! আরে হার তো হারই, আবার সম্মানজনক আর অসম্মানজনকের কি আছে? ঐ যে যেবার ব্রাজিল ফ্রান্সের কাছে ফাইনালে হেরে গেলো ৩, গোলে সেবার স্কলারি তো বলেই দিছে, রানার আপ হওয়া মানে পরাজিতদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করা। তো অতোবড় বোদ্ধার কথাকে খাটো করে না দেখলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়,..হার হারই, এর আবার বড় আর ছোট কি? কোয়ার্টার ফাইনাল না নক আউট রাউন্ডে দল উঠবে, এমন কোনো নাকে খত তো দিয়ে আসিনি, আমরা বলেছি আমাদের সেরাটা যদি দিতে পারি, তাহলে সবই সম্ভব! সেই সেরাটা কোন মুল্লুকে রাখা আছে, সোনার কাঠি-রূপার কাঠির যাদু ছাড়া যেটাকে সামনে আনা অসম্ভব! সামনে আনার অর্থাৎ বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাজাবে কে? বোলিং-নির্ভর দলে (এ যাবৎ সবগুলো জয়েই বোলিংয়ের অবদান বেশি) মুড়ি মুড়কির মতো স্পিনার দেখে এই পড়ন্ত বিকালে নিজেরও ইচ্ছা করছে হাতযশটা ঝালাই করে নিতে! আমরা পাড়ার ফ্রেন্ডরা যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন এদের চেয়ে ভালো বোলিং করতাম। লক্ষ্য রাখতাম উইকেটে, চেষ্টা করতাম বেল ফেলার, বলে ইনসুইং, আউট সুইং, স্পিনে ঘূর্নিও চেষ্টা করতাম। কিন্তু বোলিংয়ের নামে যে দেহপ্রদর্শনী দেখা গেলো টাইগার দলের, তাতে মনে হলো বলটা কোনরকমে পিচের আরেক প্রান্তে ফেলতে পারলেই হলো, সে জাতীয় দলের বোলার। তো বোলিং নির্ভরতা পরিণত হলো স্পিন নির্ভরতায়। আমাদের এতো স্পিনার, ভবিষ্যতে আরো স্পিনার তৈরিতে নিশ্চয়ই অনুপ্রানীত করবে এদের অনন্য দেহপ্রদর্শনী। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বল কেন যে ব্যাট করছিলো ক্যালিস বোকচোাদা! ৃকতোগুলো ওয়াইড বল পেতে পারতো, সেটাও এক হিসাবের ব্যাপার। আর শফিউল, রুবেল এরা যে কেনো এতো জোরে –কুদে বল করতে গিয়ে খালি খালি কষ্ট করলো, নেটে যদি এর অর্ধেক কষ্টও করতো তাহলে মনে হয় মাঠে কিচু কষ্ট কমে যেতো। দলের অর্জন নেই বলাও তো সমীচিন নয়, আসরের সর্বোচ্চ রানের চাপায় পড়া, সর্ব নিম্ন রানের রেকর্ড..এইসব কি রেকর্ডেও বিষয় নয়? সেরাটা তাহলে আবার কি? বিরতির সময় সেটাই ভাবছিলাম, আজ বোধয় তাহলে সেরাটা দেখা যাবে! গেলও তাই, টাইগারীয় সেরা যেমন হতে পারে আর কি! কোথায় কবে শুনেছিলাম, বিড়ালদের কুস্তিতে একবার বাংলাদেশের এক বিড়ালকে কোনো দেশের বিড়ালই হাড়াতে পারছিলো না; শেষ মেষ ডিএনএ টেষ্ট কওে দেখা গেলো সেটা আদপে বাঘ ছিলো, খেতে না পেওে এই অবস্থা! যাই হোক, আমাদের মাঠের টাইগারদেও আশপাশে সুখাদ্যের কোনো অভাব নেই। খাদ্যের পাশপাশি টাইগাররা আরো কতো সুবিধা পায়! মোটা বেতন তো কিছুই না, যে পুরষ্কার-আর খেপের সুযোগ, তাতে অন্তত: ওই বিড়ালের দলে বাঘ সাজার কোনো যো নেই। মাঝে মাঝে বাঘদেও দেকা যায়, দল বেধে মাছ শিকাওে নেমেছে, গলফ কোর্টে গলফ খেলছে, কিংবা বায়জীদ বোস্তামীর মাজারে কচ্ছপের সাথে খেলা করছেন! তো নেটপ্র্যাকটিসে গতর খাটিয়ে লাভ কি? পড়াশুনায় বইয়ের পোকা ছাত্র হয়ে লাভ কি? একজন ব্যাটসম্যান প্রতিদিন নিদেন ১০-১৫ ওভার ব্যাটিং করলে কি এমন লাভ? বোলাররা উদ্দেশ্যব্রষ্টের মতো না করে ষ্টাম্প লক্ষ্য করে বল প্র্যাকটিস কওে কি ফায়দা, এসব করলে কি সেরাটা পাওয়া যাবে? তার চেয়ে বরং অফুরন্ত অবকাশ গলফ মাঠে কাটিয়ে এলে মনটা ফুরফুরে থাকে। সেটা অনেক বেশি দরকার; বিগম্যাচে নির্ভার হয়ে খেলতে না পারলে সেরাটা যে বেরুবে না। মনে মনে ভাবি, কোন ক্ষেত্রের সেরাটা দেখানোর কথা বলে এরা কে জানে..তামিম হয়তো নিজেরে শচীনের চেয়ে উচু কিছু ভাবে, আর রাজ্জাকরা হয়তো নিজেরে শেন ওয়ার্নের কিংবা মুরালির চেয়েও বেশি কিছু ভাবে! সেরাটা নাইলে আবার কি? এও ভাবি, যদি পুটবলের মতো বেশি সংখ্যক দেশ ক্রিকেট খেলতো, তাহলে বোঝা যেতো বাংলাদেশের ক্রিকেটের শ্রীবৃদ্ধির নমুনা, সেটি যে ফুটবলের চেয়েও উন্নতি করেছে বলে সব বরাদ্দ, থোক, বাজেট ক্রিকেটে ঢেলে দেয়া হয়েছে, একটা সিরিজ জিতলে নানাবিধ গাড়ি-ঘোড়া উপঢৌকন হয়ে আসে, তা তো ক্রিকেটকে যোগ্যতর জায়গাতেই নিয়ে যাচ্ছে নি:সন্দেহে। কায়কোবাদ স্যার একদা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, এদেশে একজন গবেষক পান তার কয়েকগুন পান ক্রিকেটাররা!!!

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৩৫