ব্লগ কেনো সরগরম নয়।এ নিয়ে আমাদের সকলেরই আক্ষেপ।ঠিক কি করলে এ থেকে উত্তরণ হতে পারি তা অনেকের মতো আমার নিজেরও অজানা।নিজ ভাষায় কিছু লিখছি।
ব্লগে প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন ব্লগার যুক্ত হয়।তাদের কথা কজনে জানে?একটিভ ব্লগারের তালিকায় তারা নিচের সারিতে পড়ে থাকে।
তারা ব্লগে অনেকটা নিষ্ক্রয় ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু কেনো???
আমার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলি,আমি যখন ব্লগে আসি তখন আমার বয়স ১৬(এখন ১৮ছুঁই ছুঁই)।আমি জানি না,আমার সমবয়সী এখন কেউ এই ব্লগে রয়েছে কিনা।এসেই অস্বস্তি তে।কারো পোষ্টে মন্তব্য করতেও ভয়,কি বলতে কি বলে ফেলি।পোষ্ট করতেও ভয়,কি পোষ্ট করতে কি করে ফেলি।এইসব দ্বিধা নিয়েও আস্তে আস্তে মন্তব্য পোষ্ট শুরু করলাম প্রথমে স্বাভাবিকত সাড়া পাই নি।পঠিত পোষ্ট ১০পার হতো নাহ।জোঁকের মতো লেগে থেকেই কিছুটা সাড়া পেয়েছি।
এবার আসি যাদের নিয়ে বলতে চেয়েছিলাম।দেখুন,যারা ব্লগে নতুন আসে তাদের মধ্যে অবশ্যই কিছু মেধাবী রয়েছে।যারা এই ব্লগে জানতে আসে,আর জানাতে আসে।
যে কেউ প্রথম প্রথম তার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করে।নতুন ব্লগার থেকে অনেক ভালো পোষ্ট পাওয়া যায়।
এবারই হচ্ছে আসল প্রশ্ন,নতুনদের এই চেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই কজনে?কজন ব্লগার গিয়ে তাদের পোষ্টে অনুপ্রেরণা দেয়?
অনুপ্রেরণা পায় না সেটাও নাহ,পায়।কারা পায় জানেন?
যারা সারাদিন অন্যের ব্লগে গিয়ে কমেন্ট করে আসে।সিনিয়র ব্লগার দের ব্লগে যেইসব নতুন ব্লগারের পদচারণ বেশি তারা পোষ্ট করলেই অনেকটা সাড়া পায়।
আর একজন মেধাবী যে,কাউকে চিনেও নাহ তেমন অথবা পোষ্টে কমেন্টও করে না তারা শত ভালো পোষ্ট করলেও উৎসাহ পাবে না।
হুম,আমি এটা বলছি না যে শুরুতেই কেউ সাড়া জাগাতে পারে নাহ।ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয়,কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।কিন্তু একটা কথা কোন সহব্লগার যদি তাকে একটু উৎসাহ দেয় তার পোষ্টে গঠনমূলক একটা মন্তব্য করে,তাহলে কি তার পরিশ্রম ত্বরান্বিত হয় নাহ?
সহব্লগার,তরুণ ব্লগার তাদেরকে প্রেরণা দেয়ার গুরুদায়িত্ব কজনে নিই?স্বীকার করতেই হবে,আমি নিজেও হয়ত করি নাহ।তাহলে এবার বলেন,যেখানে ১০জন তরুণ ব্লগার পাওয়ার কথা সেখানে আমার আপনার কারণে,তারা পিছটান দিচ্ছে।
আমি আর আপনি তো পড়ে আছি,কিছু গুটিকয়েক ব্লগার নিয়ে।তারা পোষ্ট করলেই কমেন্টের ঝুড়ি।সে যে পোষ্টই হোক না কেনো।
এবার বলবেন,এর সঙে ব্লগ ঠান্ডা থাকার কারণ কি?
কিছু ব্লগার"ক" লিখে পোষ্ট করলেও সেটা আলোচিত ব্লগ হবে গ্যারান্টি।
সাধারণ যেই পাঠক তাদের প্রধান আকর্ষণ থাকে আলোচিত ব্লগ।তারা যদি "ক"লেখা পোষ্ট দেখে দ্বিতীয়বার নিশ্চয় আসবে নাহ।এভাবে সামু হয়ত বিশাল একটা পাঠকশ্রেণী হারায়।
যেমন আমি হলফ করে বলতে পারি,পোষ্টদাতার নাম যদি দেখা না যেত তাহলে ব্লগে প্রতিটা পোষ্ট সমান মর্যাদা পেত।
এখন কি পায়?অথবা আপনি কি সব পোষ্ট সমান চোখে দেখেন?নিজেকে প্রশ্ন করুন।
এরপর,আসুন।আমি আপনার ব্লগে মন্তব্য করলাম।একপ্রকার ফরজ হয়ে যায়,আপনিও আমার পোষ্ট দেখলেই মন্তব্য করা।
এটা,একপ্রকার ফেসবুকের লাইকখোড় দের মতো কাহিনী।
কমেন্ট করে গেলাম বন্ধু।পাশে থাকলে পাশে পাবেন।এইরকম বিজ্ঞাপনের ইঙ্গিতবাহী একটা কাজ করি ব্লগে।
অনেকে আমাকে বলে ব্লগের হোমপেজ দেখাতে, ব্লগ সম্পর্কে কিছু বলতে।আমি স্বর্ণযুগের কথা বলে চালিয়ে নিই।এরপর,আমি চুপ থাকি।এটি কার ব্যর্থতা?ব্লগের নাকি আমাদের???
ব্লগ থেকে কিছু স্বর্ণ হারিয়ে যাচ্ছে।তারা কেনো হারাচ্ছে তা জানি না।যারা সত্যিই ব্লগটাকে ধরে রেখেছিলো।যারা চলে গেছে তাদের ধরে রাখতে কে কিভাবে ধরে রাখি?কিন্তু ব্লগের ঐতিহ্য তো ধরে রাখতে পারি। অনেকে ব্লগটাকে সরগরম রাখতে চায়।কিন্তু পথ পায় নাহ।এসময় সিনিয়র ব্লগারদের পথ দেখানোর অনুরোধ করছি।
আমি জানি নাহ,সামুর স্বর্ণযুগে সামু ব্লগারদের মনমানষিকতা কেমন ছিলো।কিন্তু আমরা যেভাবে এগুচ্ছি এতে সামু দিনদিন আরো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে।
লেখাকে মূল্যায়ন করুন।তার এক্টিভিটিকে নয়।কে আপনার ব্লগে কমেন্ট করেছে তা না দেখে দেখুন কে ভালো লিখছে।সিনিয়র ব্লগার দের সাথে তাল না মেলানোর চাইতে নতুনদের উৎসাহ দিন।
এতে কি হবে?আমি আপনি একদিন থাকবো না,কিন্তু আমি আপনি যাদের উৎসাহ দিয়ে যাবো তারা থাকবে।তারা আবার চলে যাওয়ার আগে আরো কয়েকজন নতুনদের উৎসাহ দিয়ে বাঘা বাঘা ব্লগারদের উঠিয়ে আনবে।
অনেকে ব্লগ আর ফেসবুককে একই সুতোয় বেঁধে ফেলে।নতুনদের মাঝে এই প্রভাব বেশি,আমার নিজের মাঝেও প্রথম প্রথম ছিলো।পুরোপুরি শুধরাতে পেরেছি কিনা জানি না।সেইসব নতুন ব্লগারের জন্য ব্লগের মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।তাদেরকে বোঝানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
হিটখোর না হই।হিটখোর ফেসবুকার হয়ত নিজের মানসম্মান ডুবায়,কিন্তু হিটখোর ব্লগার ব্লগের পরিবেশ নষ্ট করে
এডমিন সমীপে
আড্ডা পোষ্ট,সাধারণ ভাবেই সাড়া জাগাতে পারে।কিন্তু এই আড্ডা পোষ্ট সাধারণ পাঠকদের জন্য নয়।তাই আমার মনে হয়,আমরা কেউ আড্ডা পোষ্ট না দিয়ে এডমিন কর্তৃক একটা আড্ডা পোষ্ট দেয়ার চেষ্টা করতে পারি যা আলোচিত পাতায় আসবে না।
আপনারা বিষয়ভিত্তিকএই অপশনটায় জোর দিন।কারণ,সবার সব কিছুতে ইন্টারেস্ট থাকে না।শিরোনামের পাশেই বিষয় লেখা থাকলে কারো অপছন্দের বিষয়ে পড়তে যেতে হবে না।ফলে,বিরক্তি কম আসবে।যেমন মনে করেন আমি সাইন্টিফিক পছন্দ করি না কিন্তু হোমপেজের ৫টা পোষ্টই সাইন্টিফিক।আমি বারবার গিয়ে সাইন্টিফিক দেখলে আমি সাধারণই বিরক্ত হবো
নির্বাচিত ব্লগ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে,এ নিয়ে আমি তেমন কিছুই জানি না।তবে,এটা করা যায়।মাস শেষে/সপ্তাহে শেষে সেরা পাঁচটি/দশটি পোষ্টের তালিকা প্রকাশ করতে পারেন।সেরা পোষ্ট গুলো হিট,কমেন্ট অথবা লাইক অনুসারে না হয়ে গঠনমূলক কিনা সেই অনুসারে হবে।কতটা উপকারী সেই অনুসারে হবে।এতে গঠনমূলক লেখকদের স্পৃহা বাড়বে।
শুধু জানার জন্য, এমন একটা নিয়ম করা যায় কি?যে,একজন কমেন্টকারী একটা পোষ্টে যতগুলোই কমেন্টই করুক একটা কমেন্টই কাউন্ট করা হবে?কারণ,মাঝে মাঝে যেকোন কারণে একেক জনকে কয়েকটা কমেন্ট করতে হয়।এতে একটা ভালো পোষ্ট হয়ত আলোচিত ব্লগ এ আসতে পারে না।
আপনারা কয়েকটা আইডি খুলতে পারেন।একটা আইডি নির্দিষ্ট একটা কাজ করবে।আমরা শুধু নোটিশবোর্ড আইডি ছাড়া আর কিছু দেখি না।আর মাঝেমাঝে কাভা ভাই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।কিন্তু কয়েকটা থাকলে আমার যে বিষয়ে জানা দরকার আমি সে বিষয়ে যেই নিক লেখে তার আইডিতে গেলেই হবে।এতে নতুনদের জন্য ব্লগ চালনা সহজ হবে,যা তাদের গতি বাড়াবে।
সর্বশেষ:আমরা দেখি যে,ব্লগে কারো সম্পর্কে কোন সাধারণ তথ্য দেয়ারও সুযোগ নেই।জানি না,কেনো।সবাই পরিচয় দিতে চায় না,আবার সবাই পরিচয় গোপনও করতে চায় না।যারা দিতে চায় তাদের জন্য এই অপশন গুলো অপশনাল হিসেবে রাখতে পারেন।আমার মনে হয়,সাধারণ তথ্য দেয়ার সুযোগটা থাকলে ব্লগাররা একে অপরের সাথে সহজেই পরিচিত হতে পারবে।এতে ব্লগ পরিবেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে।
ব্লগ প্রাণোচ্ছল রাখতে,সুন্দর রাখতে যা দরকার করুন।তাহলে হয়ত শত ব্যস্ততার মাঝে একদিন প্রিয় ব্লগে ঢুকে মুখে একচিলতে হাসি ফুটিয়ে মনে মনে বলবেন
"ব্লগটা এখন আগের থেকে বেশি প্রাণোচ্ছল"
নিজের বক্তব্য তুলে ধরলাম।ভূল হলে ছোটভাই হিসেবে বুঝিয়ে বলবেন।শুধরানোর চেষ্টা করবো।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫