ক্ষমতা যেন এক দুরারোগ্য ব্যাধি। ক্ষমতায় গেলেই সরকারের মন্ত্রী,এমপি,উপদেষ্টাগুলোর মাথা ঠিক থাকেনা। লোভ ও ক্ষমতার দাপট কাধে ভর করে বসে। আর সেই সুযোগে মনে যা ইচ্ছে তা করতে কৃপনতা করেনা। বিশেষ করে বাংলাদেশে এটি নতুন নয়,এই ব্যাধি খুবই পুরাতন। যারা আদৌ ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করতে পারেনি তারা তার মজা কল্পনাই করতে পারবেনা। ভোটভিক্ষুক মানুষগুলো ভোটের পূর্বে জনগণকে শতশত প্রতিশ্রুতি দিয়ে,অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমতায় আসে। অত:পর তাদের কুরূচিপূর্ণ দাম্ভিকতার চরিত্রটি ফুটে ওঠে মানুষের চোখের সামনে। বিনয় মানুষ গুলো বেসামাল হয়ে পড়ে। ইচ্ছে ঘুড়ি উড়ায় ইচ্ছে মত,সূতার টান পড়েনা পাঁচটি বছর। আর আখের গুছাতে লুটপাটে অংশ নেয় বাধাহীন ও লাগামহীন খিপ্র আরবীয় সাদা ঘোড়ার মতন।
আর এই চরিত্রটি বেশি ফুটে ওঠে আওয়ামী লীগের বেলায়। ক্ষমতার দাপট দেখায় হাড়ে হাড়ে,তখন তাদের চরিত্রের বেসামাল বৈশিষ্ট্যসমূহ ফুটে আয়নার মত স্বচ্ছতার সাথে। প্রতিশ্রুতি দিতে যেমন সময় কাল লাগেনা আবার তা অস্বীকার করতেও সময় লাগেনা। ভোট ভিক্ষুকরা সাধারণ মানুষকে মিথ্যে আশ্বাসে তাদের মন কাবু করে,আর এই সুযোগ নিয়ে পরে তারা বেমালুম ভুলে যায়। এই দোষ শুধু আওয়ামী লীগকে দিয়ে লাভ নেই,তারাতো আর জোর করে ক্ষমতার মসনদ কেড়ে নেয়নি। আগেরকার রাজা-বাদশারা সুযোগ পেলেই এই অঘটনটা ঘটাত,সেনাপতি বা মন্ত্রীরা গোপনে আঁতাত করে রাজাকে বন্দী বা হত্যা করে ক্ষমতা নিয়ে নিত। আবার প্রতিবেশী রাজা দুর্বল হলে আক্রমন করত যা সম্রাজ্যবাদ নামে অভিহিত। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের পূর্বে দলীয় ইশতিহারে শতশত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যেমন-বেকার সমস্যা সমাধান,অর্থনৈতিক উন্নতি,পদ্মা সেতু তৈরি,১০টাকা সের চাউল,বিনামূল্যে সার প্রদান,ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মান,যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সহ অনেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি। আর এ কথায় সধারণ জনগন সত্য মনে করে নির্বাচিত করল দেশের পুরাতন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। মানুষ তাদের সুন্দর সুন্দর কথায় প্রলুব্ধ হয়,যদিও এটাকে লোভ বলা যাবেনা।মানুষ চায় পেটপুরে ভাত আর কাপড়,আর এটাকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিল করলে দোষ জনগণের নয়। গরীব মানুষগুলোকে এক প্যাকেট বিড়ি আর চা কিংবা একখিলি পান খাওয়ালেই ভাল মানুষ মনে করে। আর ভোটও দেয়, এভাবেই ক্ষমতায় আসার পথটা পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রথম প্রথম সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা জোর গলায় তা অস্বীকার করেছিল। কিন্তু বিরোধীদল তাদের জনসমাবেশে বিশাল প্রজেক্টরের মাধ্যমে ভিডিও প্রদর্শন করলে চুপসে যায়।
১০ টাকা সের চাউলের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আর ইউটিউবে বেশ প্রচার হয়। সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য তথা মন্ত্রীদের গোপন তথ্য ফাঁস,বিভিন্ন মন্তব্য,জালিয়াতী,কেলেংকারি,চুরি সহ আক্রমানত্বক কথা সবই মানুষ ঘরে বসে দেখছে। যা বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে। গোপন রাখার কায়দা নেই। তবে এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
আওয়ামী লীগের প্রধান অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ এখন বেসামাল। যেন একটি আতঙ্ঙ্কের নাম। প্রধানমন্ত্রীও তাদের লজ্জাহীন কর্মকান্ডে বেশ হতাশ। দীর্ঘদিন তিনি ছাত্রলীগের কোন সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। অত:পর শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা স্নরণে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধান আতিথি। তিনি এ অনুষ্ঠানে বেশ কড়া কথায় ছা্ত্রলীগকে শাসিয়েছিলেন। সতর্ক করে দিয়ে বলেন-অপকর্ম করে ছাত্রলীগের বদনাম করলে কাউকে বরদাশ করা হবেনা। পরবর্তীতে দেখা গেল প্রধামন্ত্রীর কথা সবাই ভুলে গেল। প্রধানমন্ত্রী বেশ উঁচু স্বরেই বলেছিলেন ছাত্রলীগে শিবির ঢুকে পড়েছে সাথে ছাত্রদলও আছে। হয়তো তখন তিনি ভাবেছিলেন তার দলের সোনার ছেলেরা খারাপ তবে এত না।
তবে শেখ হাসিনা ছিলেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী। মহাজোট ক্ষমতা আসার পর ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজী,টেন্ডারবাজী,হল দখল,সিট দখল,ভর্তিবানিজ্য এমনকি ছাত্রী নির্যাতনের মত ঘৃণ্য সব কাজে লিপ্ত হয়,আর এ দায়ে শেখ হাসিনা সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তেফা দেন। এর মানে হল তিনি ছাত্রলীগের মত উশৃংখল দলের নেত্রী হতে লজ্জাবোধ করেন। আজ দেশে ছাত্রলীগ একটি আতংকের নাম। প্রধানমন্ত্রীর এ কঠিন সিদ্ধান্তের পরও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আদৌ সামান্য দূরীভূত হয়নি।