লাইভ টক শো শুরু হবে ক্ষাণিক পরেই। অতিথিরা যার যার মেক-আপ নিতে শুরু করেছেন। তিনজন অতিথির ভেতরে একমাত্র মহিলা হোমায়রা রহমান বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা। ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে তিনি জীবন দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে অসচেতন মানুষগুলোকে শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন করে চলেছেন অবিরত। হোমায়রা রহমানের অবদান এখন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
“গালের ব্লাসনটা কি একটু ভারী হয়ে গেল না?”-ব্যক্তিগত মেক-আপ ম্যানকে জিজ্ঞাসা করলেন হোমায়রা।
-ম্যাম ক্যামেরার সামনে অতটা বোঝা যাবে না। জাস্ট মনে হবে যেন আপনার গালটা প্রাকৃতিক ভাবেই গোলাপি।
মেক-আপ ম্যানের আশ্বাসে ভরসা পান না হোমায়রা। সবাই তো জানেই যে হোমায়রা রহমান পথে পথে ঘুরে পথ শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন করেন। যে মানুষ রোদ-বৃষ্টিতে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়,তার গাল তো গোলাপী হবে না। তার শরীর হবে তামাটে কিংবা বাদামী। তাই তিনি মেক আপ ম্যানকে আদেশ করলেন, “ না বাবা, গোলাপী ব্লাসনটা মুছে ফেল। তুমি বরং বাদামী রং-টা লাগাও। ওটাই আমাকে স্যুট করে।”
আরেক অতিথি নাজমুল ওয়াদুদ নারী স্বাধীনতা ও উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করে দেশে ও বিদেশে ভীষণভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। তার কাজের ভেতর সবচেয়ে প্রশংসিত ছিল নিজ পোশাক কারখানায় প্রায় হাজার খানেক পতিতাকে চাকরী প্রদান করা। এত বড় কাজের জন্য বাহবাও নেহাত কম পাননি। অনেকেতো মাঝে মাঝে বলে বসে- একদম শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মত একটা কাজ করেছেন নাজমুল সাহেব। এসব কথায় নাজমুল সাহেব খানিকটা লজ্জিতই হন। তিনি বরাবরই বিনয়ী মানুষ হিসাবে পরিচিত। আজকের এই টক শোতেও তার আসার একদম সময় ছিল না। তাও বিনয়ী মানুষ বলেই অনুরোধে ঢেকি গিলতে হল। এই টক শো গুলোতে আসার আরেক সমস্যা হল-এই মেক আপ নেয়ার ঝামেলা। তার মেক-আপ নিতে খুবই বাজে লাগে। মেক-আপ ম্যান আসতেই তিনি ভ্রু কুচকে বললেন- এই বস্তুটা না নিলে হয়না?
তার কথা শুনে মেক আপ ম্যান কিছু বলার আগেই ক্যামেরাম্যান বলে উঠল- স্যার, মেক আপ কই দেখলেন? এতো সামান্য পাউডার! সাধারণ ভাবে মুখে লাইট ফেললে স্কিনটা তেলতেলে দেখা যায়। এই পাউডারটুকু মাখলে মুখে সতেজ ভাব আসবে। নিন মেখে নিন।”
আরেক অতিথি ফাদার থমাস রড্রিক্স! তিনি যে দেশে বাস করেন, সে দেশে তার ধর্মের লোকেরা সংখ্যালঘু বলে পরিচিত। তারপরেও দেশের সকল ধর্মে্র লোকেরাই তাকে মন থেকেই সম্মান দেয়। এই সম্মানটুকু সে ধর্মীয় নেতা বলে পায়নি। বরং সম্মানটুকু কর্মগুণেই পেয়েছেন। চার্চের পাশেই দরিদ্র শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন একটা চিকিৎসালয়। সেই সাথে চার্চের ভেতরে একটা নাইট স্কুলও চালান। এখানে সকল ধর্মে্র শিশুরাই সমান সুযোগ পান। এমন উদার চিন্তার থমাস রড্রিক্সকে মানুষ দেবতার আসনে বসাবে- সে তো প্রশ্নের অতীত!
খানিক পরেই কে একজন এসে অতিথিদের প্রস্তুত হতে বলল। এখনই টক শো লাইভ টেলিকাস্ট হবে। আজকের বিষয়- “নারী ও শিশু উন্নয়নের অগ্রযাত্রা।”
অতিথিরা আসন গ্রহন যখনই করতে যাচ্ছেন ঠিক তখনই “আগুন-আগুন” বলে চিৎকার শোনা গেল। এমন চিৎকারে স্বাভাবিকভাবেই অতিথিদের দিকে কারো নজর দেয়ার কথা নয়। সবাই হুলুস্থূল করে আগুন থেকে বাচার পথ খুজতে লাগল। অতিথিরাও নিজের জীবন বাচানোর জন্য দৌড়াতে শুরু করেছেন। এদিকে আগুনের শিখা লক-লক করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। দম আটকে আসছে ধোয়ার গন্ধে আর থেমে আসছে দৌড়ের গতি। হাল ছেড়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে একটা সময় লুটিয়ে পড়ছে আগুন আক্রান্ত মানুষগুলো। একটা সময় পুরো বিল্ডিংটায় আগুন ধরে গেল। মারা গেল শ’খানেক মানুষ। সেই মানুষদের ভেতরে আছেন টক-শো-এর তিন অতিথি- হোমায়রা, নাজমুল এবং ফাদার রড্রিক্স।
যে সময়ে তাদের টকশোতে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত থাকার কথা ছিল, তখন তাদের হলেন টিভি চ্যানেলগুলোর খবরের অংশ!
দ্বিতীয় অংশঃ
এদিকে কিছুসময় পর নাজমুল চোখ খুলে দেখলেন তিনি একটা অন্ধকার গুহায় শুয়ে আছেন। শরীরে কেমন পিনপিনে ব্যাথা। পাশেই হোমায়রা শারমিন বসে আছেন। একটু দূরে গুহার মেঝেতে ফাদার রড্রিক্স-এর দেহটা পড়ে আছে। নাজমুল অবাক চোখে চারপাশ দেখতে লাগলেন। তারপর এগিয়ে গেলেন রড্রিক্সের কাছে। রড্রিক্সকে কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করার পর তিনি জেগে উঠলেন এবং সাথে সাথেই প্রশ্ন করলেন, “আমরা কোথায়?”
নাজমুল জবাব দেয়ার আগেই হোমায়রা বললেন- বুঝতে পারছিনা। আমরা টক শোতে গিয়েছিলাম। ওখানে আগুন ধরল। তারপর চোখ খুলে দেখি আমরা এখানে। কিভাবে এই গুহায় আসলাম বুঝতে পারছিনা।
নাজমুলও চিন্তা করে বের করতে পারল না কিভাবে তারা এ জায়গায় আসল। কে আনল তাদের? কোনো বড় চক্রের কাজ হতে পারে এটা। তারা তিনজনই সমাজের ক্ষমতাবান মানুষ। তাদের অপহরণ করে মুক্তিপন চাইলে তার ব্যবস্থা সরকারই করবে হয়তো।
“আমরা হয়তো অপহৃত হয়েছি”-নাজমুল রড্রিক্সকে বললেন।
এরপর আর কেউ কোনো কথা খুজে পেল না। অদ্ভুত আতংকের ছায়া সবার মুখে এসে লাগল।
তারা তিনজন অপেক্ষা করতে শুরু করল কেউ তাদের কাছে আসে কিনা। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, কেউ আসল না।গুহার এপাশ ওপাশ ঘুরে পালানোর পথ খুজলো সেটাও খুজে পেল না। খাচাবন্দী পাখির মত গুহার এপ্রান্তে ও প্রান্তে পালানোর জন্য পথ খুজে খুজে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। একটা সময় হোমায়রা, নাজমুল এবং ফাদার রড্রিক্স কেমন ঝিম মেরে বসে রইলেন।
হঠাৎ হোমায়রা কি মনে করে সোজা হয়ে বসে দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “জানেন, আমার বাসায় কুসুম নামে একটা কাজের মেয়ে ছিল। ওর বয়স ছিল ১২ বছর।”
ফাদার রড্রিক্স ও নাজমুল হোমায়রার অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনে কিছুটা বিরক্তই হলেন। কিন্তু ঐদুজনের চোখে ফুটে ওঠা বিরক্তিকে তেমন পাত্তা দিলেন না হোমায়রা। তিনি আপন মনে বলে চললেন, “ওর বাবা ছিল না। ওর মা যখন ওকে আমার কাছে দিয়ে গেল তখন খুব কাকুতিমিনতি করে বলেছিল যেন আমি ওকে পড়া লেখা শিখাই। কিন্তু আমার ওরকম সময় কই বলেন? সমাজ সেবা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে আমাকে কি পরিমান ব্যস্ত থাকতে হয় তাতো আপনারা সকলেই জানেন। তাছাড়া প্রতিদিন আমি কিরকম শাড়ি-গহনা পরব তার জন্যেও তো একটা লোক প্রয়োজন। কুসুমের কাজ ছিল আমার শাড়ি আর গহনাগুলো কোনটা কবে পড়ব তা গুছিয়ে রাখা। কত সামান্য কাজ দেখেছেন? অথচ এই সামান্য কাজটাও ও করতে পারেনা। তারউপর মুখে মুখে কথা বলার অভ্যাস তো ছিলই। সারাদিন শিশুদের শিক্ষার জন্য সচেতন করে তুলতে শহরময় ঘুরে যখন রাতে ফিরতাম তখন প্রতিদিন সে একই ভ্যাজর-ভ্যাজর করত। বলত, “খালা আমারে কবে স্কুলে ভর্তি করবেন?” আমি ওর এই বেয়াদবিটুকু কিন্তু মাফ করে দিতাম। কিন্তু মেজাজ খারাপ হল কবে জানেন? একদিন গোসলের সময় ডায়মণ্ডের ইয়ার রিং বেসিনে রেখেছিলাম। গোসলের পর ওটা আনতে আর মনে নেই। রাতে বাড়ি ফিরে আমার দুল-জোড়ার কথা মনে হতেই ওয়াশরুমে গিয়ে দেখি ওখানে দুলজোড়া নেই। কুসুমকে জিজ্ঞাসা করলাম। সেও নাকি দেখেনি। অথচ আমার রুমে বাইরের লোক বলতে কুসুমই কেবল ঢোকে। আমি নিশ্চিত হলাম- ওই দুলদুটো কুসুমই সরিয়েছে। ওকে বেধরক পেটালাম। তাও দেখি ও দুলদুটো দিচ্ছে না। মেজাজ এত খারাপ হল, কি আর বলব। সামনে ছিল কাটা চামচ। ওটাই ওর বাম চোখে ঢুকিয়ে দিলাম। ব্যাথায় কুসুম শুয়োরের মত গো-গো শব্দ করতে লাগল। কিন্তু তখন আমি হুশ ফিরে পেয়েছি। ওকে এরকম আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমার ইমেজের কেমন ক্ষতি হবে ভাবতে পারেন? সাথে সাথে আজগরকে ফোন দিলাম। আজগর আমার স্বামীর ক্লায়েন্ট ছিল। জানেন তো আমার স্বামী যে ব্যারিস্টার! আজগরকে বললাম-কুসুমকে গুম করে ফেলতে আর সাথে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলাম। আজগরও কৃতজ্ঞতা ভালোই দেখালো। কুসুমকে কই হাপিস করে ফেলল তা কেউ জানলো না। পরদিন কাজের মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে-এই মর্মে থানায় ডায়েরী করলাম। থানা থেকে ফিরে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখি বেসিনের নিচে এক কোনায় দুল-জোড়া পড়ে আছে।”
হোমায়রা অনুতপ্ত কন্ঠে কনফেশ করে অপরাধী দৃষ্টি নিয়ে নাজমুল আর রড্রিক্সের দিকে তাকালেন।
নাজমুল বললেন, “এটা তেমন কোনো বড় অপরাধ নয় হোমায়রা। আমি কি করতাম তা শুনলে তো আপনি আমাকে আপনার থেকেও বড় অপরাধী ভাববেন। আপনারা সবাই জানেন, আমি আমার পোষাক তৈরীর কারখানায় অসংখ্য পতিতাদের চাকরী দিয়েছি। তবে এর পিছনে কিন্তু আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল। ঐ পতিতাদেরকে আমি নিজের জন্য ব্যবহার করতাম। আচ্ছা আপনারাই বলুন, আমার মত এমন একজন মানুষের কি নিয়মিত পতিতালয়ে যাওয়া সাজে? লোকে জানাজানি হলে কি হবে ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন? তারচেয়ে বরং ব্যক্তিগত রক্ষিতা রাখাই কি নিরাপদ না? এখন আপনারা আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন যে এতজন পতিতাকে ব্যবহার করার কি দরকার ছিল আমার? আসলে হয়েছেটা কি, আমি আবার প্রতিদিন এক নারীতে আনন্দ পাই না। আমার একটু ভেরিয়েশন লাগে। এই জন্যেই আরকি এসব করতাম। এই জৈবিক চাহিদাটা কি আমার দোষ বলুন- আপনারাই?”
নাজমুল দোষ কাটাতে এসব যুক্তি দিলেও বাকি দুজন স্পষ্ট দেখলেন নাজমুল সাহেবের চোখে অপরাধ বোধ এসে জমা হয়েছে। তিনি চাইলেও এটা ঢাকতে পারছেন না।
হোমায়রা হঠাৎ করুন কন্ঠে ফাদার রড্রিক্সকে বললেন- ফাদার সব ধর্মে্র মূল কথা তো একই। আপনিই বলুন আমরা কিভাবে এই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাবো?
হোমায়রার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফাদার বলতে শুরু করলেন অন্য কথা।
“আমার চার্চের নাইট স্কুলটায় একজন অসম্ভব মেধাবী শিক্ষক ছিল। ওর নাম জোহান । ওর একাডেমিক রেজাল্ট এত ভালো থাকার পরেও কেন যে ও সব ছেড়ে সন্ন্যাসী হতে চাইল সেটাই জানিনা। ওর আচার-আচরণ, চেহারা, চলাফেরা সব মিলিয়ে আমার মনে হত সাক্ষাত যিশু! রাতের বেলা শিশুদের ওর পরম যত্নে শিশুদের পড়ানো দেখলে যে কারো মনে হবে ঈশ্বর স্বর্গীয় উদ্যানে দেব শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছেন। জোহানকে আমি নিজেও পুত্র জ্ঞান করতাম। কিন্তু দুঃখের কথা কি বলব- ছেলেটা সেই ভালোবাসার মূল্যটুকু দিল না। আমার আবার একটু বদ অভ্যাস ছিলো, বুঝলে! মাঝে মাঝে নাইটস্কুলে আসা ছোটো ছোটো মেয়েগুলোকে আমি আমার ঘরে নিয়ে যেতাম। বাচ্চাগুলো কিছু বুঝত না। কান্না কাটি করলে হাতে দামী চকলেট ধরিয়ে দিলেই কান্না থেমে যেত। বোঝোই তো, গরীবের ছেলে মেয়ে অল্পতেই খুশি। সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ঝামেলা বাধল ঐ ব্যাপারটা জোহানের চোখে পড়াতে। সে সবার কাছে ব্যাপারটা জানিয়ে দিতে চাইল। আচ্ছা, আমার এখানে অপরাধটা কি বলতো। দিন শেষে আমি তো একজন পুরুষ। আমার ভেতরে একটা কামুক জীব যদি থাকে সেটা কি আমার অপরাধ? সেই ক্ষুধা মেটাতে আমি যদি কয়েকটা শিশুকে হাত করি তাতে তো দোষের কিছু নেই। বরং তার বিনিময়ে আমিও তো তাদের শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্থাটা করেছি। তাইনা? ঐদিন রাতেই আমি জোহানকে খুনের সিদ্ধান্ত নিলাম। ওর খেয়াল যখন কিছুটা অন্য দিকে চলে গেল আমি সামনে রাখা ফলের ছুড়িটা ওর গলায় বসিয়ে ফেলি। আর লাশটা গুম করতেও তেমন কষ্ট হল না। চার্চের ভেতরেই সমস্যাটার একটা সমাধান হয়ে গেল।”
রড্রিক্স কথা শেষ করে দেখলেন তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হোমায়রা আর নাজমুল। রড্রিক্সের দেবতাসুলভ মুখোশের পেছনে যে এতটা শয়তানী থাকতে পারে তা তারা ভাবতে পারেনি।
তারপর আবার গুহাময় নীরবতা ছড়িয়ে গেল। হঠাৎ রডিক্স দেখলেন- হোমায়রা নিজের চোখের ভেতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে চোখের মনি বের করার চেষ্টা করছে। চোখ থেকে রক্ত ঝড়ছে তাও হোমায়রা থামছে না।
ব্যাপারটা নাজমুল আর রড্রিক্সের কাছে তেমন অস্বাভাবিক লাগল না। বরং মনে হল- যে বিবেকের দংশনে তারা আক্রান্ত হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে তাদের দুজনকেও হোমায়রার মত কিছুই করতে হবে। সাথে সাথেই নাজমুলকে দেখা গেল কোথা থেকে একটা ছুড়ি খুজে পেয়েছে। তারপর গায়ের কাপড় চোপড় খুলে নিজের যৌনাঙ্গে ছুড়ি চালাতে লাগল ক্রমাগত।
এদিকে রড্রিক্সের মাথার ভেতর কি যেন ভন-ভন শব্দ করে চলেছে। হাজার হাজার মৌমাছি একত্র হলে যে শব্দ করে ঠিক সেই শব্দ। রড্রিক্স পাগলের মত গুহার এদিক ওদিন ছুটতে লাগল। হঠাত তার মনে হল, মাথার ভেতরের মৌমাছিগুলোকে আগুনে পোড়ালে তবেই তার শান্তি হবে। এক জীবনের সব পাপ মুছবে ঐ মাথার ভেতরের মৌমাছিগুলোকে হত্যা করলে। তবেই সে রক্ষা পাবে অপরাধবোধ হতে। গুহার কোনায় কিভাবে যেন সে আগুন ধরিয়ে ফেলল। তারপর নিজ মাথা ঢুকিয়ে দিল সেই আগুনে। আগুনের ফুলকি ছুড়িয়ে পড়েছে গুহাময়। তিন পাপী সেই গুহায় দাঁড়িয়ে নিজেদের গ্লানী দূর করতে চাইছে, যে অপরাধবোধ তাদের হিংস্র কুকুরের মত ছিড়ে খাচ্ছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা নিজেদের শাস্তি দিতে শুরু করেছে। বিবেক নামক সাপটার লকলকে জ্বিহবা তাদের ক্রমাগত পেচিয়ে ধরেছে। পাপীদের সর্বাঙ্গে আগুন। ব্যাথায় তারা উন্মাদের মত চিৎকার করছে। তবুও চাইছে যে কোনো শাস্তির বিনিময়ে তারা তাদের কৃতকর্ম হতে মুক্তি পাক!
একটা সময় তারা বুঝতে পারে তারা এক অন্তবিশে জর্জরিত কারাগারে বন্দী । পৃথিবীতে যাকে তারা নরক বলে জানতো । পাপীরা বুঝতে পারে, নিজ কর্মবিষে বারবার জর্জরিত হবে তারা । এই ভয়াল নরকের বন্দিগণের মুক্তি নেই অনন্তকালেও ।
(অঃটঃ বিশেষ সহযোগীতার জন্য সামুতে আমার অন্যতম প্রিয় লেখক আদনান শাহরিয়ার ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ । এই লোকটাকে লেখা নিয়ে সময়ে অসময়েই জ্বালাতন করা হয়!)
