somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোড টু স্কলারশিপ - ১

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে সামুতে সর্বশেষ পোস্ট করেছিলাম। এমনিতেই আমি চরম অলস প্রকৃতির মানুষ, দেশে থাকতে একটাই স্বপ্ন দেখতাম, এমন একটা জব করছি যাতে দুপুরবেলা লান্চের পর একটু ঘুমানো যায়।:P দু:খের বিষয়, দেশে আড়াই বছর সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারের জব করতে গিয়ে শুধু গাধার মত কামলা খেটে গেছি, দুপুরের ঘুম তো দুরে থাক, অনেক রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো আমার X((
তাই একদিন চিন্তা করলাম অনেক হইছে, এইভাবে চললে আর পোষাবে না। তাই সব ছেড়েছুড়ে GRE আর TOEFL নিয়ে ৪ মাস ফাইট দেওয়ার পর আরো অনেক ঝামেলা টামেলা করে চলে আসলাম আম্রিকা!

আমার এতদিনের ক্ষুদ্র experience এ যেটা দেখেছি, শুধুমাত্র lacking of proper information/approach এর কারণে বাংলাদেশের হাজার হাজার এলিজিবল স্টুডেন্ট নর্থ আমেরিকায় ফুল স্কলারশিপ নিয়ে আসতে পারেনা, যেটা বছরের পর বছরে ধরে চাইনিজ আর ইন্ডিয়ানরা করে আসছে। তাই আমার সবসময় ইচ্ছা ছিলো উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের কাজে লাগে এমন কিছু জিনিস যা আমি নিজে ফিল করেছি তা সবার সাথে শেয়ার করার। কিন্তু এইখানে আসার পর গ্র্যাজুয়েট স্কুলের চরম টাইট স্কেজিউলের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আরো অনেক কিছুর সাথে ব্লগিং কেও সাময়িকভাবে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছি। মাঝে মাঝে সামুতে ঢুকতাম শুধু পাঠক হিসেবে। এর মাঝে আমার ইউনির(দেশের) ইয়াহুগ্রপে কিছু লেখা দিয়েছিলাম জুনিয়রদের যাতে কাজে লাগে সেজন্য। ওদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পর ভাবলাম আরো বড় পরিসরে জিনিসগুলা শেয়ার করা দরকার। তাই দেড় বছর পর সামুতে ফেরা।

কয়েকটা পার্টে আমি এই লেখাগুলো লিখতে চাচ্ছি যাতে কোনো লেখা বেশি বড় হয়ে ধ্যের্যচ্যুতি না ঘটে। আজকে প্রথম পর্বে শুধু স্কলারশিপ নিয়ে নর্থ আমেরিকায় আসার পথে কি কি স্টেপ পার করতে হয় সেগুলো নিয়ে কথা বলব। পরের পর্বগুলাতে একে একে GRE, TOEFL, SOP, Recommendation Letter, University Selection, Communication with Professors এগুলা নিয়ে কথা বলা যাবে। আমি মেইনলি ইন্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টদের জন্য লেখাটি লিখছি যদিও সব ডিসিপ্লিনের ক্ষেত্রেই অনেক ব্যাপারস্যাপার কমবেশি সেইম।

সাধারণভাবে একজন ছাত্রের আমেরিকায় গ্রাজুয়েট স্কুলের অ্যাডমিশন পেতে হলে মোটামুটিভাবে নিচের টাইমলাইন ফলো করতে হয় :

১. জিআরই প্রিপারেশন নেয়া (মে/জুনের মধ্যে শুরু করা উচিত ফল অ্যাডমিশন পেতে হলে। ৪-৬ মাস টাইম দেয়া উচিত ভালো স্কোরের জন্য)

২. টোফেল প্রিপারেশন নেয়া (জিআরই-র মত কঠিন না, এক মাসের প্রিপারেশন এনাফ। সবচেয়ে ভালো হয় জিআরই-র সাথে একসাথে স্টাডি করলে। এতে টোফেলের সাথে জিআরই ভার্বাল এর প্র্যাকটিস হয়ে যায়)

৩. জিআরই এবং টোফেল দেয়া (নভেম্বরের মধ্যে শেষ করা উচিত)

৪. অত্যন্ত সতর্কভাবে ৬-৮ টা ইউনি সিলেক্ট করা (খুব ক্রুশিয়াল পার্ট কারণ সঠিক স্কুল সিলেক্ট করতে না পারলে স্কলারশিপের আশা মরিচীকা থেকে যায়। জিআরই দেওয়ার এক মাস আগে থেকে ইউনিভার্সিটিগুলার সাইট ব্রাউজ এবং পরিচিত যারা বিভিন্ন স্কুলে আছে তাদের সাথে কন্টাক্ট করা উচিত)

৫. স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (SOP) রেডি করা (খুব খুব জরুরি একটা জিনিস। এটলিস্ট এক মাস সময় নিয়ে একটা ২ পৃষ্ঠা SOP বানানো উচিত। এবং নভেম্বরে মাঝে SOP কমপ্লিট করে ফেলতে হবে)

৬. রিকমেন্ডেশন লেটার কালেক্ট করা (কালেক্ট করা না বলে প্রিপেয়ার করা বলা ভালো কারণ বাংলাদেশের মোটামুটি সবাই নিজে নিজে রিকমেন্ডেশন লেটার লিখে প্রফেসরদের কাছ থেকে শুধু সাইন নিয়ে আসে। যাইহোক এটাও একটা গুরুত্বপুর্ন পার্ট আ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজের এবং দুই সপ্তাহ সময় রাখা উচিত সব কমপ্লিট করতে)

৭. অনলাইনে অ্যাডমিশনের জন্য অ্যাপ্লাই করা এবং অ্যাপ্লিকেশন ফি পে করা(মোস্ট স্কুলের ফল অ্যাপ্লিকেশন ডেডলাইন থাকে ডিসেম্বর-জানুয়ারি)

৮. অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজের হার্ডকপি DHL/FEDEX এর মাধ্যমে পাঠানো(এটাও ডেডলাইনের আগে পাঠাতে হবে)

৯. স্কলারশিপ লেটার এবং I-20 রিসিভ করা (ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে স্কুলগুলো ডিসিশন জানানো শুরু করে)

১০. ভিসা ডকুমেন্টস রেডি করা এবং ভিসা ইন্টারভিউ ডেট ফিক্স করা (ক্লাশ শুরুর ডেট থেকে ৩ মাস আগে করা ভালো কারন অনেক সময় ভিসা দিতে অকারনেই অনেক দেরি করে)

১১. ভিসা পাওয়া এবং প্লেনের টিকেট করা :) (স্কলারশিপ থাকলে ভিসা পাওয়া পিস অফ কেক)

উপরে বর্নিত প্রত্যেকটা জিনিস গুরুত্বপুর্ন এবং প্রত্যেকটা জিনিস আলাদা মনোযোগের দাবি রাখে। কারণ কোনো একটা সিংগেল থিং কখনো স্কলারশিপের নিশ্চয়তা দিতে পারেনা। স্কুলগুলা অ্যাডমিশন দেবার জন্য পুরো অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজটাই কনসিডার করে। যেকারণে অনেক কম সিজিপিএ (এমনকি ৩.২৫
* জিআরই > ১২০০
* টোফেল > ৯০
* ফাইনাল ইয়ারে একটা ভালো প্রজেক্ট/থিসিস করা এবং যথাসম্ভব চেস্টা করা পেপার পাবলিশ করতে। যদিও পাবলিকেশন থাকা জরুরি না কিন্তু এটা একটা ডেফিনিট প্লাস(especially for PhD applicant)
* কিছু এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস করা যেমন প্রোগ্রামিং কনটেস্টে অংশ নেয়া, সেমিনার, ডিবেট, কালচারাল এক্টিভিটিস ইত্যাদি ইত্যাদি। আমেরিকার ইউনি গুলা এইসব সার্টিফিকেটকে অনেক মুল্য দেয় এবং যখন একই যোগ্যতাসম্পন্ন একাধিক ক্যান্ডিডেট পাওয়া যায় তখন এসব ফ্যাক্টর হিউজ রোল প্লে করে স্কলারশিপের জন্য।

কারো যদি উপরের কোয়ালিফিকেশনগুলা থাকে(এট লিস্ট প্রথম তিনটা) তাহলে মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সে নর্থ আমেরিকায় স্কলারশিপ পাবে। এখন যেটা দরকার সেটা হলো সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় সঠিক মালমশলা নিয়ে হিট করা। পরের পর্বগুলাতে আরো আলোচনা করবো এসব বিষয়ে। ততক্ষন পর্যন্ত আলবিদা।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:০৪
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×