somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

তৈরি পোশাক শিল্প ভাবনাঃ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নন টেকসই খাতকে উন্নয়নশীল বা মধ্যবিত্ত বাংলাদেশ কতটা ও কিভাবে এগিয়ে নিবে?

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৈরি পোশাক শিল্প নির্ভর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নন টেকসই খাতকে উন্নয়নশীল বা মধ্যবিত্ত বাংলাদেশ কতটা এগিয়ে নিবে?
প্রেক্ষাপটঃ
-------------
-প্রায় ৪০ লক্ষ নাগরিক শ্রমঘন কাজে দীর্ঘ মেয়াদে নিয়োজিত।
-শ্রমিকদের দৈনিক শ্রম ঘন্টা অনির্ধারিত এবং অতি দীর্ঘ (প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা)।
-মাসিক বা বাৎসরিক পেইড লিভ নেই।
-স্বাস্থ্য ভাতা নেই।
-পোশাক শিল্পে শ্রমিকের চাকুরী নিরাপত্তা নেই।
-কর্মজীবি পিতা মাতা দীর্ঘ সময়ে কাজে থাকেন বলে বাচ্চার লালন পালনের বিকল্প নেই।
-নূন্যতম মজুরি বলে শ্রমিক ঠকানোর একটা অবিচার চালু হয়েছে, এই মজুরি শহরে বাঁচার মত মজুরি কিনা তা যাচাইয়ের কোন সিস্টেম নেই।
-ফলে লাখে লাখে গার্মেন্টস দেশের ডেটাবেইজে চাকুরীজীবি হয়েও আসলে বস্তিবাসী, যাঁদের কোন ধরনের নাগরিক সুবিধা নেই। উপরন্তু রাজনৈতিক চাঁদাবাজি দখল-পুনঃ দখল চক্রে পড়ে এবং বহুতল ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে নিয়মিত বিরতিতে আগুন লাগান হয় বস্তিতে। সহায় সম্বল হীন প্রান্তিকজন বছরে দু-এক বার নিঃস্ব হয় এই প্রক্রিয়ায়।

গার্মেন্টস শ্রমিকের এক রুম ঘরে বহু মানুষের জীবন -
-----------------------------------------------------------------

বস্তির এক রুমের ঘরে চার-ছয় বা তারও বেশি সদস্য নিয়ে বসবাস করেন একটি পুর্ণ পরিবার। আবাসন সুবিধা বলতে যা বুঝায় তার কিছুই এখানে নেই, নেই স্বাস্থ্য সুবিধা,নেই সঠিক ইউটিলিটি সুবিধা যেমন গ্যাস,খাবার পানির সঠিক বন্দোবস্ত, নেই টয়লেট ও স্যানিটেশন সুবিধা, বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও হাটু পানি নিত্য চিত্র। পরিষ্কার পানির জন্য, রান্না ও ধোঁয়া মোছার জন্য, গ্যাসের জন্য, টয়লেট এবং গোছলের জন্য বস্তিবাসীর দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকাই নিয়তি।

ফলে এই ঘর গুলো স্বাস্থ্য কর তো নয়ই, বরং এখান থেকে সুশিক্ষিত কিংবা স্বশিক্ষিত নাগরিক তুলে আনাও অসম্ভব। এই পরিবেশে থাকা কারো প্রতিষ্ঠানগত শিক্ষার মানুষিক অবকাশ নেই, নেই মেধা ও মনন তৈরির সুযোগ। উপরন্তু বস্তি মদ জুয়া চোরাচালান রাজনৈতিক অপরাধ ও অন্য সব সামাজিক অপরাধ ও অবৈধ ব্যাবসার আখড়া।

আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছে নব্বই এর দশকে শিক্ষা উপবৃত্তি শুরু হলে শিক্ষায় অংশগ্রহন বাড়তে শুরু করে, তথাপি যে সুনির্দিস্ট কিছু কারণে শুহুরে প্রান্তিক পরিবারের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সার্টিফিকেশন স্তরই পার হচ্ছে না তার মধ্যে এই আবাসন অন্যতম। আসলে বস্তিতে পড়াশুনার কোন সুযোগই নেই। এই বোধ রাষ্ট্রকে জাগ্রত করতে হবে।


তৈরি পোশাক শিল্পের নন টেকসই দিকগুলো -
----------------------------------------------------------
১। গার্মেন্টস শিল্প দীর্ঘ মেয়াদে নাগরিককে বঞ্চিত করে রাখার চক্রাকার শিকল
প্রায় ৪০ লক্ষ নাগরিক শ্রমঘন কাজে অতি নিন্ম মজুরিতে দীর্ঘ মেয়াদে নিয়োজিত রাখলে হয়ত কিছু মানুষের জীবন ক্ষুধার তাড়নাকে পরাজিত করে বেঁচে থাকবে। কিন্তু এই সুবিধাহীন নিন্ম মজুরির মনবেতর কর্ম জীবন দীর্ঘ মেয়াদে নাগরিককে টেকসই উপার্জন, টেকসই স্বাস্থ্য সেবা এবং উচ্চ শিক্ষার আওতায় আনতে অপারগ, ফলে গার্মেন্সট আসলে একটি বিশাল নাগরিক শ্রেণীকে অতি নীচ ও হীন শ্রম স্তরে রেখে দিবার অচ্ছেদ্য শিকল, অর্থাৎ এখানে যারা শ্রম দিবে তাঁদের মজুরি ও জীবন মান এমনই নীচু হবে যে, কায়িক শ্রমঘন শ্রমিকের সন্তানাদিও শ্রমঘন শ্রমিক হতে বাধ্য হবে। বিস্তৃত নাগরিকের এই ধরনের নিন্ম মান জীবন রাষ্ট্রের উন্নয়নশীল কিংবা মধ্যবিত্ত মর্যাদায় উত্তোরণের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। মর্যাদাহীনতার এমন জীবন জিইয়ে রাখা রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

বিপরীতে রাষ্ট্র কিভাবে পোশাক শিল্প শ্রমিক ও বস্তিবাসীদের সন্তানদের মানসম্পন্ন শিক্ষায় ধাবিত করে উন্নততর কর্মাসংস্থানের জন্য তৈরি করবে তার একটা মাইগ্রেশন পথ তৈরি করা দরকার।

২। পোশাক শিল্প বাংলাদেশের নদী দূষণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।
ঔপনিবেশিক ইউরোপীয় শিল্পের পরিবেশ অবান্ধব খাত গুলোকে (যেমন পোশাক ও চামড়া শিল্প অন্যতম) তৃতীয় বিশ্বের দেশে পাঠিয়ে ইউরোপের নদী ও পানি রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অন্য কিছু ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মত বাংলাদেশ বিশ্বের দর্জিবাড়ি হয়ে উঠে।

পোশাক শিল্পের ডায়িং সরাসরি অশোধিত অবস্থায় বাংলাদেশের নদ নদীতে উন্মুক্ত করে দেশের জল স্থল প্রাণ প্রকৃতি বিষিয়ে দেয়া হয়েছে।গবেষণায় দেখা যাচ্ছে শীতলক্ষ্যার পানিতে প্রাণঘাতী ভারী ধাতু সহ প্রায় ৬০ রকমের বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু দেশ আর্থিক স্বচ্চলতায় পৌঁছানোর প্রান্তে এসেছে, তাই এই শিল্পের মাইগ্রেশন পথ নির্ধারণ জরুরী।

রানা প্লাজা ট্রাজেডির পরে বাংলাদেশ "হাই এন্ড" পোশাক বাজার হারিয়ে ফেলেছে প্রায়। জিন্স ছাড়া উন্নত পোশাকে এখন আর "মেইড ইন বাংলাদেশ" দেখা যায় না বললেই চলে। আমি নিজে এই সার্ভেটা করি মাঝে মাঝে। এই বাজার ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, তুরস্ক,মিয়ান্মার নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন শুধু কিছু মধ্য এবং মূলত নিন্ম মান তৈরি পোশাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

শীতলক্ষ্যার দুপাড়ের পাট সুতা ও বস্ত্র কলের আইয়ুব খান জামানার বাইরেও শুধু তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ৩০ বছরের বেশি। তিন দশকের বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি দেশের নিন্ম মান কাপড়ের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া বড়ই হীন পর্যায়ের অর্জন।

নিন্ম মান পোশাকের ডায়িং শিল্প চরম পর্যায়ের ইরেস্পন্সিবল। এই ইন্ডাস্ট্রির অশোধিত বর্জ্য আমার নদী পানি ও ফসলী ভূমি নষ্টে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।


প্রাণ ও প্রকৃতিকে যাচ্ছে তাই ভাবে ধংস করে সস্তা দামে পোশাক তৈরির যে নির্লজ্জ্বতা তাকে কিভাবে আর্থিক ও পরিবেশ গত ভাবে টেকসই শিল্পে রূপান্তর করা যায় তার কার্যকর ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতা নির্ভর কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩ক। একটি উন্নয়নশীল কিংবা মধ্যবিত্ত দেশ দীর্ঘমেয়াদে তার নাগরিককে আন স্কিল্ড শ্রমিকে রেখে দিতে পারে না, বরং আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাকে এই বিশাল আন স্কিল্ড শ্রমিক কিভাবে স্কিল্ড শ্রমিকে পরিণত হতে পারে তার রূপান্তর কৌশল নির্ধারণ করেতে হবে। দিন যত আগাবে দেশের ভিতরে ও বাইরে আন স্কিল্ড শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা ফুরাবে।

৩খ। দ্রুত উৎপাদন ও তাৎক্ষণিক ডেলিভারি নিশ্চিত করতে, শ্রমিক বিদ্রোহ থেকে বাঁচতে আগামীর পোশাক শিল্প রোবটিক অপারেশনে যাবে প্রায় পুরোপুরি। এমতাবস্থায় আগামীর চাহিদাকে সামনে রেখে মানবসম্পদ উন্নয়নের পোশাক শিল্প ক্যাটাগরি ভিত্তিক কোন টেকসই প্রোগ্রাম দেখছি না আমরা রাষ্ট্রের তরফ থেকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাসও ভবিশ্য উচ্চ কারিগরি ও ইন্ডাস্ট্রি অরিয়েন্ডেড মানব সম্পদ চাহিদাকে টার্গেট করে রূপান্তরিত করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় "একমুখী" অটোমেশন বিপ্লবে নন টেকসই কাজ, পুনঃ পুনঃ করতে হয় এমন আন স্কিল্ড ও সেমি স্কিল্ড কাজ সমূহের শ্রম বাজার বাংলাদেশ স্বাভাবিক ভাবে হারিয়ে বসবে। একদিকে বিদেশী কারিগরি মানব সম্পদ সহ অটোমেশন মেশিনারি আসবে বাইরে থেকে, অন্যদিকে অটোমেশন সাপোর্ট ও অপারেশনে স্থানীয় সক্ষমতার মানব সম্পদের অনুপস্থিতিও দেশের কর্মসংস্থানকে পশ্চাৎ মূখী করে তুলবে।


। যে কোন ধরণের চাকুরী সুবিধাহীন নিন্ম মজুরির পোশাক শিল্প শ্রম বাংলাদেশের উচ্চ আয় বৈষম্য জিইয়ে রাখছে এবং বর্ধিত করছে।

৫। পোশাক শিল্প শ্রমিক পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে আসা যাওয়া করেন। ফলে এই বিস্তৃত নাগরিকের দৈনন্দিন কমিউটেশন ডেটা নগর পরিবহণ চাহিদা কিংবা গ্রোথে সমন্বিত নয়। এতে করে ঢাকা সহ বড় শহর গুলোর গণ পরবহন চাহিদা ঠিক কি তা আমাদের নগর প্রশাসন ও সরকার জানে না। ফলে মেট্রোর মত আধুনিক গণ পরিবহণের সক্ষমতা যে ভবিষ্যতের বাস্তবতা ও চাহিদাকে ধারণ করতে পারবে না, সেটা হলফ করে ব্লা যায়।

৬। পোশাক শিল্প উৎপাদন কয়েক দশক পরেও শুধু রপ্তানীমুখী থেকে গেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পোশাক এখনও আমদানি নির্ভর। সুতরাং এই শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতিকে টেকসই বলা যায় না।

৭। নিন্ম মজুরীর মানহীন অবহেলার জীবন দীর্ঘমেয়াদে সমাজকে অপরাধ প্রবণতা থেকে মুক্ত করতে সহায়ক নয়।


৮। রপ্তানীমূখী পোশাক খাত তিন দশক পরেও শতভাগ শুল্ক রেয়াত দিয়ে সিংহ ভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করছে। এত দীর্ঘ সময়ের পরিসরে কিভাবে সিংহ ভাগ কাঁচালাম ও কাঁচামাল সংশ্লিষ্ট উৎপাদন কিভাবে দেশেই হবে, এই রোডম্যাপ তৈরি হয়নি। অন্যদিকে পোশাক খাতে দেশীয় স্কিল্ড মানব সম্পদ তৈরির অবকাঠামোও তৈরি করা যায়নি। ফলে পোশাক খাতে ভারতীয় স্কিল্ড শ্রমিকের আধিক্য দৃশ্যমান। ফলে কাঁচামাল ও স্কিল্ড মানব সম্পদের দিক থেকেও পোশাক শিল্প টেকইস অর্জন পায়নি।

দেখা যাচ্ছে দেশের মোট বাৎসরিক রপ্তানী আয় ২১ বিলিয়ন ডলারের বিপিরীতে শুধু চট্রগ্রাম বন্দরেই শুল্ক লোকসান হচ্ছে ৩.৫ বিলয়ন ডলার। সবগুলো বন্দরের হিসেব যুক্ত হলে দেখা যাবে আনুমানিক ৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মোট রপ্তানী আয়ের প্রায় ২৫% শুধু প্রণোদনাই। এদিকে এই আগাম শুল্ক রেয়াতে গঠিত বণ্ডেড কমিশন অফিসে বন্ডেড প্রতিষ্ঠান ও বন্ডেড ওয়্যার হাউজ গুলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে রপ্তানীমূখী পণ্যের কাঁচামালের বাইরেও যাবতীয় ক্যাটাগরির পণ্য আমদানি করে খোলা বাজারে চোরাচালান ও বিক্রি করে। ফলে নন বন্ডেড এবং ক্ষুদ্র আমদানীকারক ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে। এর আরেকটি সরাসরি বিপদ হচ্ছে, দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারীরা অনৈতিক প্রাইস ওয়ারে পড়ে বাজার হারাচ্ছেন, শুল্ক মুক্ত বিদেশী পণ্য দামের সাথে দেশীয় উৎপাদন খরচের সামঞ্জস্য রাখতে পারছে না এবং মধ্য ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আজকের ইউরোপীয় আমেরিকান ক্রেতা তুলনামূলক কম দামে (কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুটা কম মানেরও) যে "মেইড ইন বাংলাদেশ" পোশাক কিনছেন, তার প্রতিটি পিস আমাদের মাটি পানি ও পরিবেশ বিষিয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে। এর কাঁচামাল, মেশিনারিজ, কারিগরি সাপোর্ট ও সিংহ ভাগ স্কিল্ড শ্রমিক বাইরে থেকে আসছে। শুধু "শ্রমঘন" কাজে অনৈতিক পরিবেশ ও মজুরিতে নিরন্তর খেঁটে যাচ্ছে কিছু বাংলাদেশী শ্রমিক। প্রাণ ও প্রকৃতি বিষিয়ে দিয়ে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে ও স্কিল্ড কর্মসংস্থানকে ক্ষতি গ্রস্ত করা শুল্ক হীন কাঁচামাল আমদানির মডেল জারি রেখে, ধনী ও গরীবের বর্ধিত আয় বৈষম্য জারি রেখে, বিস্তৃত নাগরিককে এই মানবেতর জীবনের বাঁধা খাপে আটকিয়ে তৈরি পোশাকের গৎবাঁধা মডেলকে আর কত এগিয়ে নিবে আগামীর মধ্যবিত্ত বাংলাদেশ?



তৈরি পোশাক শিল্পকে টেকসই করার কিছু দিক

আমাদের সরকার, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনকে ভাবনায় আনতে হবে কিভাবে পোশাক শিল্পকে টেকসই করা যায়। এখানে কয়েকটা বিষয়ের আলোচনা এনেছি যার সম্ভাব্যতা যাচাই এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মতামত দরকার। এই ধরণের বিষয়গুলো নাগরিক বিতর্ক এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের স্ট্রাটেজি সংশ্লিষ্ট হওয়ায় পাবলিক ডোমেইন আলোচনায় আসার দাবী রাখে।
১। যে কোন ইন্টারমিডিয়েট স্টেইজ কিংবা একেবারে র কাঁচালাম দেশে উৎপাদনের ৫০% টার্গেট নিতে হবে। একটা নির্দিস্ট সময়ে ২৫%, পরবর্তি সময় টার্গেটে ৫০% এ উন্নীত করতে হবে।

২। কাঁচামাল আমদানিতে আগাম শুল্ক রেয়াত দেয়া যাবে না, কাঁচামাল আমদানি, পোশাক উৎপাদন ও প্রকৃত বিক্রির পেমেন্ট বাংলাদেশের ব্যাংকে আসা সাপেক্ষে সকল ট্রেড ও ফাইনান্সিয়াল ডেটা ম্যাপিং ও এনালাইসিস সাপেক্ষে অটোমেটেড সফটওয়্যার সিস্টেমে শুল্ক রেয়াত রপ্তানি পরবর্তিতে দিতে হবে। এতে শুল্ক জালিয়াতি এবং কাঁচামালের নাম করে অন্য সকল পণ্য আমদানির জালিয়াতি থামানো যাবে।

৩। ডায়িং ও বর্জ্য শোধন নির্ভর হাই এন্ড প্রোডাক্ট উৎপাদনের টার্গেট নিতে হবে। ধীরে ধীরে যেন তেন ভাবে তৈরি, নিন্ম মান ও লোয়ার এন্ড প্রোডাক্ট থেকে সরতে হবে। যেহেতু চায়না আরএমজি আউট সোর্স করা শুরু করেছে তাই তাদের হাই এন্ড প্রোডাক্ট কে টার্গেট করে আগানো যায়।

৪। গার্মেন্টস শ্রমিকের ফিউচার স্কিল ডীমান্ড বের করতে হবে। যেহেতু অটোমেশন এবং রোবোটিক প্রোডাকশন শুরু হয়ে গেছে তাই নন স্কিল্ড ও সেমি স্কিল্ড শ্রমিকের বিপিরীতে কি কি স্কিল সেটের মানবসম্পদ লাগবে তা ফোরকাস্ট করে এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স ডিফাইন করতে হবে।

৫। ১ম ধাপে পোশাক শিল্পে এক জন শ্রমিক দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ ঘন্টার বেশি কাজ করতে পারবেন না এই বাধ্যবাধক নিয়ম করতে হবে। ২য় ধাপে এটাকে নামিয়ে ৮ ঘন্টা করতে হবে। মানুষের ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স আনা এবং অতি নিন্ম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নিবার ট্রেন্ড রহিত করে ব্যাপক কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এটা অন্য সকল শিল্পের জন্যও প্রযোজ্য।

৬। অশোধিত ডাইয়িং বর্জ্য নদীতে উন্মুক্ত করা যাবে না। প্রতিটি ফ্যাক্টরি থেকে বর্জ্য পরিমাণে শোধন কস্ট নিয়ে কেন্দ্রীয় শোধনাগার তৈরি করা লাগবে। উচ্চ মান শোধিত বর্জ্যই শুধু নদীতে উন্মুক্ত করতে হবে।

৭। এতে প্রাইস নেগসিয়েশন পাওয়ার বাড়াবে। পোশাকের দামের সাথে এনভায়রনমেন্ট কস্ট জুড়ে দিয়ে বারগেইন বাড়াতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:২৭
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×