একটা সৌর জগতের কয়েকটি গ্রহের ভেতর পৃথিবী নামক গ্রহের ছোট একটি জায়গায় বসে মহাবিশ্বের ভাবনা ভাবাটা হয়তো অযৌক্তিক। তবুও একটা সোলার সিস্টেমের পৃথিবী, পৃথিবীর চেয়ে আকারে বড় ও সদৃশ্য কেপলার ২২বি, অজানা আরো অনেক সূর্য থাকার সম্ভাবনা, গ্যালাক্সি, ব্ল্যাক হোল, মিল্কিওয়ে, ধুমকেতু, বিশ্ব ব্রক্ষাণ্ডের স্থিরতা, সাম্প্রতিক ঈশ্বর কণার সন্ধান ইত্যাদি ঐ মহাবিশ্ব নামক অচেনা পথের পথিক বানাতে পারে যে কাউকে। তাইতো সেই সুদূর অতীত থেকে মানুষ ঐ অপার রহস্যের মাঝে নিজেকে বিলীন করেছে, অস্তিত্ব খুঁজার চেষ্টা করেছে নিজের আর অন্য কোন প্রাণের। বিন্দু থেকেই যদি সব সৃষ্টি হলো তবে কি ছিলো সে বিন্দুর চারপাশ ঘিরে? সেকি কেবলই শুণ্যতা! আর বিন্দু থেকে সৃষ্ট প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণময় বিশ্ব কোন খালি যায়গায় নিজেকে বিছিয়ে দিচ্ছে? সেও কি কেবলই শুণ্যতার দিকে ধেয়ে চলা! শুণ্য পৃথিবী, শুণ্য আকাশ, শুণ্যতায় ছুটে চলা ও হারিয়ে যাওয়া শুণ্যতায় - সবকিছুই কেমন শুণ্য শুণ্য লাগে! ঐ শুণ্যতার ভেতরে ও বাইরে যে আছেন সে আমার ঈশ্বর, যে নিশ্চয়ই সব জানেন। আমি শুধু সে শুণ্যতার রহস্য, সৌন্দর্য ও মায়ায় বিস্মিত হই, কখনোবা আনন্দিত হই।
বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের আয়তন ক্রমবর্ধমান। এই তত্ত্ব অনুসারে আজ থেকে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বে এই মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন এবং উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দু অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই অবস্থায় সকল পদার্থ এবং শক্তি অতি উত্তপ্ত এবং ঘন অবস্থায় ছিল। কিন্তু এ অবস্থার আগে কী ছিল তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন ঐক্যমত্য নেই।
বড় করে দেখতে ক্লিক করুন।
রাতের আকাশ পরিষ্কার থাকলে হাজারো তারাদের নিয়ে উজ্জ্বল এক লম্বা সাদা মেঘের মত অংশ দেখা যায়। গত ঈদে গ্রামে বসে দেখেছি, খুব ভালো লাগে দেখতে। এটা হচ্ছে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা। এটি মূলত কোটি কোটি তারাদের সমষ্টি, একটি গ্যালাক্সি। এই মিল্কিওয়ে আমাদের পৃথিবীকে ধারণ করে আছে। এই পেঁচানো গ্যালাক্সিটির ব্যাস ১,০০,০০০-১,২০,০০০ আলোকবর্ষ, যা ২০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্রকে ধারণ করে আছে, ধারণ করে আছে অগণিত গ্রহকে। আর মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি আছে কোটি কোটি। আলোকবর্ষ হলো আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে। ১ আলোকবর্ষ = ৯৪৬০৭৩০৪৭২৫৮০৮০০ মিটার। আর আলো প্রতি সেকেন্ডে দূরত্ব অতিক্রম করে ৩০০০০০০০০ মিটার। এর থেকে গ্যালাক্সির আকারের তথা মহা বিশ্বের ধারণা পাওয়া যায়।
তারা বা নক্ষত্রের বিলীন হওয়ার সময় এবং নতুন নক্ষত্রের জন্মের সময় যে সুন্দর মেঘের সৃষ্টি হয় তা হলো নেবুলা বা নীহারিকা। ধুলো, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণে এই মেঘ সৃষ্টি হয়।
হাবল মহাশূন্য দূরবীন থেকে তোলা একটি কাঁকড়া নীহারিকার ছবি -
ছোট ভূতুরে নেবুলা -
হঠাৎ কোন নক্ষত্রের মৃত্যু হলে ঊজ্জ্বল বিস্ফোরণ ঘটে যা সুপারনোভা নামে পরিচিত। এটি এত বেশী শক্তি বিমোক্ত করে যা সূর্যের সম্পূর্ণ জীবনি শক্তির সমান। হঠাৎ ঘটা ঐ মুহূর্তটি সমস্ত গ্যালাক্সিকে আরো আলোকিত করে তোলে এবং এর পথে যা কিছু থাকুক না কেন অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যায়।
আমাদের মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গার মত দেখতে প্যাঁচানো দুইটি গ্যালাক্সি -
ধূমকেতু বা কমেট্ হল ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস বরফ, ধূলা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথুরে কণিকার একটি দুর্বল সংকলনে গঠিত। প্রস্থে কয়েকশ মিটার থেকে দশ কি.মি. এবং লেজ দৈর্ঘ্যে কয়েকশ কোটি কি.মি. পর্যন্ত হতে পারে। একটি ধূমকেতুর পর্যায়কাল কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েকশ’ হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে। ধারণা করা হয় স্বল্পকালীন ধূমকেতুর উৎপত্তি কুইপার বেল্ট থেকে যার অবস্থান নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে এবং দীর্ঘকালীন ধূমকেতুর উৎপত্তি ওরট মেঘ থেকে, যা সৌরজগতের বাইরে একটি বরফময় বস্তুর গোলাকার মেঘ। ধূমকেতু উল্কা বা গ্রহাণু থেকে পৃথক কারণ এর কমা ও লেজের উপস্থিতি। কিছু ধুমকেতু নির্দিষ্ট সময় পরপর একই স্থানে ফিরে আসে; যেমন- হ্যালীর ধুমকেতু।
জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি অনুসারে, কৃষ্ণ বিবর বা ব্ল্যাক হোল হল মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোন কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। এটা তৈরি হয় খুবই বেশী পরিমাণ ঘনত্ব বিশিষ্ট ভর থেকে। প্রতিটি গালাক্সির স্থানে স্থানে কম-বেশি ব্লাকহোলের অস্তিতের কথা জানা যায়। সাধারণত বেশীরভাগ গালাক্সিই তার মধ্যস্থ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণনয়মান। এখন পর্যন্ত ব্লাকহোলের কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি কারণ এ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হতে পারে না। ব্লাকহোলের অস্তিতের প্রমাণ কোন স্থানের তারা নক্ষত্রের গতি এবং দিক দেখে পাওয়া যায়। মহাকাশবিদগণ ১৬ বছর ধরে আশে-পাশের তারামন্ডলীর গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে প্রমাণ পেয়েছেন অতিমাত্রার ভর বিশিষ্ট একটি ব্লাকহোলের যার ভর আমাদের সূর্য থেকে ৪ মিলিয়ন গুন বেশি এবং এটি আমাদের আকাশগঙ্গার মাঝখানে অবস্থিত।
১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দের ১৬ই জুলাই জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশ আবিষ্কারের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অভিযান পরিচালিত হয়। সেদিন প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১ যাত্রা করে, যা ২০ জুলাই চাঁদে অবতরণ করে। এই অভিযানে অংশ নেন দলপ্রধান নীল আর্মস্ট্রং, চালক মাইকেল কলিন্স, এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র এবং কমান্ড মডিউল। পরবর্তীতে আবিষ্কার হয়েছে প্লুটো সহ অন্যান্য বামন গ্রহ, নেহারিকা, ধূমকেতু, কৃষ্ণগহ্বর। বিজ্ঞান ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী কৃত্রিম উপগ্রহ, দূরবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি; যথা- হাবল টেলিস্কোপ।
এসকল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মহাবিশ্বের যে রূপ তুলে আনা হয়েছে এবং হচ্ছে তা সত্যিই অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য রকমের সুন্দর।
নিচের ছবিটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ভসতোক স্পেসক্রাফটের, যা ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিনকে সর্বপ্রথম শুন্যে নিয়ে যায়।
নাসার স্পেস শাটল হচ্ছে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্রথম স্পেসক্রাফট। মূলত স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত হয়; এছাড়া স্পেস ল্যাব স্থাপন ও মিলিটারি মিশনে কাজ করে। এপ্রিল ১২, ১৯৮১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এটি ১৩৫ বার ব্যবহার করা হয়। স্পেস শাটলের যাত্রা -
Spacecraft
১৯৬৫ সালের ৮ জুন ইডি হোয়াইট আউটার স্পেসের প্রথম অভিজ্ঞতা নেন। জিমিনি ৪ ক্যাপসুল থেকে শুন্যে ভাসার এ ছবিটি তুলেন জেমস ম্যাক ডিভিট।
১৯৬৮ সালে এ্যাপোলো ৮ এর মহাকাশচারীরা প্রথম চাঁদ থেকে পৃথিবীর এ ছবিটি তুলেন, চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে এমন -
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই এ্যাপোলো ১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন। নিচে পতাকার পাশে এডউইন এর ছবিটি তাঁরই তোলা -
১৯৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর তোলা পৃথিবীর প্রথম সম্পূর্ণ ছবি; এ্যাপোলো ১৭ স্পেস ক্রাফট থেকে ছবিটি তোলা হয়-
১৯৭৪ সালের ২ ডিসেম্বর পাইয়োনিয়ার২ স্পেস ক্রাফট থেকে বৃহস্পতি ও তার বড় চাঁদ গ্যানিমেডের তোলা প্রথম ছবি; স্পেস ক্রাফটটি বৃহস্পতির পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৬৩০০০ মাইল দূরে ছিলো -
১৯৭৭ সালে মনুষ্যবিহীন ভয়েজার স্পেসক্রাফট ছাড়া হয়, ২০০৩ সাল পর্যন্ত সূর্য থেকে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন মাইল পথ পাড়ি দেয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্য ও ছবি পাঠানোর পর্যাপ্ত তড়িৎ শক্তি এর আছে।
১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে তোলা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অংশ। আমাদের গ্যালাক্সিতে কমপক্ষে ৫০ বিলিয়ন গ্রহ আছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ মিলিয়ন আছে অধিক গরমও নয়, অধিক ঠান্ডাও নয় এমন অঞ্চলে, যেখানে প্রাণ থাকতে পারে।
২০০১ সালের জুলাই মাসে হাবল টেলিস্কোপে তোলা মঙ্গল গ্রহের ছবি -
হাবল টেলিস্কোপে তোলা ৩ আলোক বর্ষ লম্বা গ্যাস ও ধুলোর পিলার -
এটি একটি স্বতন্ত্র গ্যালাক্সি সিস্টেম, নাম আর্প ১৯৪। এটি অনেকগুলো গ্যালাক্সি নিয়ে সাথে নক্ষত্র, গ্যাস ও ধুলোর মহাজাগতিক ঝর্ণা নিয়ে গঠিত; যার বিস্তৃতি ১,০০,০০০ আলোক বর্ষ। মহাজাগতিক ঝর্ণাটিতে রয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন নক্ষত্র।
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ সালে তোলা হ্যাল-বপ ধূমকেতু; খালি চোখে এটি ১৮ মাস দেখা গেছে -
ছবিটি আমাদের মিল্কিওয়ের পাশের বড় গ্যালাক্সি এনড্রোমিডার, এটি সূর্য থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে -
হ্যালির ধূমকেতু -
হাবলের তোলা আবর্তিত গ্যালাক্সি, এর পেছনে ছোট আরেকটি এনজিসি ৫১৯৫ নামের গ্যালাক্সি আছে -
২০১০ সালের মার্চে মঙ্গল গ্রহে হারিয়ে যাওয়া যান স্পিরিটের তোলা একটি ছবি -
২০০৫ সালে হাবলের তোলা এই গ্যালাক্সির নাম মেসিয়ার ১০৪ বা সম্বরেরো গ্যালাক্সি। এর মোট আয়তন ৮০০ বিলিয়ন সূর্যের সমান।
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) হলো মানুষ নির্মিত এক ধরনের কৃত্রিম স্যাটেলাইট যা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে। ১৯৯৮ সালে এটির প্রথম স্টেজ ছাড়া হয়, নির্মাণ কাজ ২০১২ তেই শেষ হওয়ার কথা ছিলো; ৭-৮ বছর পর অপারেশনে ব্যবহার করা হবে। ছবিটি ২০০৬ সালে তোলা -
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবলম্বনে রচিত।