মাঝে মাঝে মানুষের জীবনে এমন সময় আসতেই পারে। আসেও। মাঝে মাঝে অকারণে মন খারাপ হয়। ঠিক কি কারণে মন খারাপ হয় তা খুঁজে পাওয়া যায় না। কোন কিছুতেই মন বসে না। খেতে ইচ্ছে করে না। ঘুমোতে ইচ্ছে করে না। কোন কাজই করতে ইচ্ছে করেনা। এমনকি প্রিয় কোন কিছুও হয়ে যায় একদমই অপ্রিয় । কিন্তু কারণ বিনা তো কার্য হয় না। নিশ্চয়ই এরকম মন খারাপেরও একটা যথার্থ কারণ আছে।
নীলিমার মনটাও আজকে এরকমই। কোন কিছুতেই তার মন বসছেনা। আরমাত্র কয়েকদিন পর বিয়ে। এখনতো তার আনন্দে থাকার কথা। বিয়ের কথা ভেবে নিজের মধ্যে রোমাঞ্চিত হবার কথা। কিন্তু তার বদলে তার মনটা ভীষণ খারাপ। আজ আমার কথাও তার ভালো লাগছেনা। আমাকেই যেন তার বিরক্ত লাগছে।
অনেক কাঠখোড় পোড়িয়ে আমাদের দুজনের বিয়েতে আমাদের দুই পরিবার রাজী হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে নিশাতকে ফোন দিয়েছিলাম। তেমন ভালোভাবে কথা বলতে পারিনি। তবে নীলিমা কি ভাবছে জানিনা।
আমি কিন্তু বিয়ের কথা ভেবে খুব রোমাঞ্চিত হচ্ছি । কেমন কাটবে বিয়ের আগের এই কয়েকটা দিন । কেমন কাটবে বিয়ের দিনটি । বিয়ের প্রথম রাতটাই বা কেমনে পার করবো। এসব ভেবে ভেবেই আমার সারাবেলা কাটছে। বলা যায় একেবারে ভাবনার মোড়কেই ডুবে আছি।
কত স্বপ্ন বুনেছি আমরা দুজন। কত অপেক্ষার প্রহর গুনেছি তার হিসেব নেই। ভালোবাসার প্রথম দিনটি থেকে আজ অবধি কত হিসাব করেছি। কাছে আসার আকুলতা প্রতিনিয়ত কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে আমাদের।
একটা সময়তো যোগাযোগের কোন উপায়ই ছিলোনা তার সাথে আমার। বেশ কয়েক দিন পর পর মাত্র এক-আধ মিনিটের জন্য কথা হতো তার সাথে। কত সহস্র কথা মনের গহীন ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ তুলতো। বলা হতোনা। বলার সুযোগ ছিলোনাু। এই একুশ শতকের প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার যুগেও আমাদেরকে বাঁচতে হয়েছে আদিম মানুষদের মত। যোগাযোগহীন , দেখাহীন, কথাহীন অবস্থায় ।
কিন্তু দুঃখের সময় বেশিদিন স্থায়ী হলো না। আমাদের যোগাযোগ শুরু হলো। কথা হতে থাকলো । রাতের পর রাত জেগে জেগে কথার বৃষ্টিতে ভিজেছি আমরা দুজন।
চোখের আড়াল হলে মনেরও আড়াল হয় একথা ভুল প্রমাণিত করেছিলাম আমরা। দেখা না হয়ে, কথা না হয়েও আমাদের ভালোবাসা হয়েছে আরো দৃঢ়। স্বপ্ন হয়েছে আরো সমৃদ্ধ। আসলে ভালোবাসার ভিত্তি যদি হয় বিশ্বাস তাহলে যেকোনো বিপর্যয়ই মোকাবেলা করা যায় হাসিমুখে।
কথা হতে হতে আমরা মাঝে মাঝে কেমন যেন নীরব হয়ে যেতাম । বোধহয় মনের গহীন অভ্যন্তরটা কি যেনো কি বলতে চায়। বোধহয় এদুটি চোখ তার চোখে চোখ রেখে নিরবতার ভাষায় অনর্গল কথা বলে যেতে চায়। বোধহয় শূন্য এ দুহাত, তার হাতটি ধরে নিরন্তর পথ হেঁটে যেতে চায়।
তারপর সেদিন এলো। আমাদের দেখা হবে । দিনক্ষণ ঠিক হলো । অবশ্য এর আগে যে তার সাথে আমার দেখা হয়নি বিষয়টা সেরকম নয়। আমাদের দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। হয়েছে ভালোবাসা বিনিময়। স্বপ্নের পথ ধরে হাঁটটেও শুরু করেছিলাম কিছুটা পথ। আর ঠিক তক্ষুণি ছন্দ পতন।
তার বাসায় কিছুটা জেনে গেলো। আমার কাছ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে নেয়ার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হলো তাদের গ্রামের বাড়িতে। আর যোগাযোগের কোনো রাস্তা থাকলো না। তবে যে মন এই মনের সাথে আজীবন কাটানোর অঙ্গিকার করেছে তাকে কি সামান্য এই বাধা আটকাতে পারে? পারে না। নীলিমাকেও আটকাতে পারেনি ।
একটা ব্যাপার ভেবে খুব মজা পাই আমি। যারা আমার কাছ থেকে ওকে আলাদা করার জন্য এতোখানি চেষ্টা চালিয়েছিলো তারাই কিনা আজকে বেশ ধুমধামের সাথে আমাদের বিয়ের আয়োজন করছে। আসলে দুনিয়াটা বেশ অদ্ভুত। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।
যাই হোক, সেই যোগাযোগহীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে আমি অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে তার সাথে দেখা করতে গেলাম। বুকের ভেতর কেমন যেন একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিলো।
প্রায় পাঁচমাস পর ওর মুখটা দেখবো। কেমন হয়েছে সে। মুখটা কি আগের মতোই মায়াময় আছে। এখনো কি আগের মতোই আমাকে দেখে মুখ নিচু করে ঠোঁটের কোণে আলতো হেসে বলবে- দুষ্টু। আগের মতই কি এখনো তার ভালোবাসার অশ্রুতে সজল চোখের নীরব ভাষা আঁছড়ে আঁছড়ে পড়বে আমার বুকের বালুকাবেলায়। কত স্বপ্ন আমার সেই মুখটিকে ঘিরে।
অবশেষে এলো সেই লগ্ন। আমাদের দেখা হলো। আমার খুব মনে পড়ছে এতোদিন পর আমাকে দেখেই তার চোখের তারায় যেন কি এক অদ্ভুত অনুভূতি জলসে উঠলো। নিঃশ্বাস ভারী হতে থাকলো। ভালোবাসার সুগন্ধিমাখা আমার নিঃশ্বাসে তার বুকটা যেন ওঠানামা করতে লাগলো।
আলতো করে চেপে ধরলাম তার হাত। নীলিমা কেঁপে উঠলো। এক মুহুর্তেই যেন তার শরীরের বিদ্যুৎ খেলে গেলো। শিহরণের এমন ঝড় সইতে না পেরে ও জড়িয়ে ধরলো আমাকে। আমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে যেন এক অমোঘ শীতলতা খুব দ্রুত একত্রিত হয়ে আমার স্নায়ুতে চুমু দিচ্ছিলো। মুখে কোন কথা ছিলো না।
কথা হচ্ছিল ছুঁইয়ে দেয়ার ভাষায়। আর আমি সেদিন বুঝেছিলাম স্পর্শেরও একটা ভালোবাসা আছে। আর সেই ভালোবাসাই সব ভালোবাসাকে পূর্ণ করে দেয়।
তবে আমরা সেদিন পূর্ণ হতে চাই নি। আমরা চেয়েছি আমরা পূর্ন হবো সেইদিন যেদিন হৃদয়ের সমগ্র নদীতে সুনামি হবে। অথচ সেই সুনামিতে কোন ক্ষতি হবেনা । হবে নবজীবনের সৃষ্টি। আমাদের ভালোবাসার স্বরূপ আসবে পৃথিবীতে। আনন্দের উচ্ছাসে ভরে উঠবে চারপাশ। প্রতিটি হাসিমুখের স্মিত আশীর্বাদে আমাদের ঘর ভরে উঠবে। ভালোবাসার শ্বাশ্বত সত্যের ছোঁয়ায় আমরা জড়িয়ে নেবো পরস্পরকে।
হ্যাঁ সেই দিন এলো বলে। আর মাত্র তিন দিন বাকী। তারপর নীলিমা আমার সত্যি সত্যি বউ। ভাবতে ভাবতে নীলিমার কথা খুব করে মনে পড়লো। ওকে ফোন করলাম।
হ্যালো।
হুমম… হ্যালো। কেমন আছো?
এইতো। কিছুই ভালো লাগছেনা। অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বললো নীলিমা।
কেন ভালো লাগছে না?
জানি না ।
এবার কিন্তু আমার বিরক্ত লাগছে। অনেকটা বিরক্তির ভাব করলাম আমি ।
কেন তোমার আবার কি হলো?
জানি না ।
কেনো জানোনা ?
কারণ তোমার ভালো লাগছে না তাই আমারও ভালো লাগছে না।
এটা কোনো কথা হলো? প্রশ্নবোধক কণ্ঠে বললো নীলিমা।
তুমি জানো না মন খারাপ ছোঁয়াচে রোগ?
হা হা হা…নিশাত একটু হেসে উঠলো ।
আমি বললাম – আরেকটু হাসো তো।
না।
হাসো না, প্লিজ।
এবার নীলিমা একটু সত্যি সত্যিই হাসলো। এমন কথা শুনলে সবারই হাসি আসবে ।
আমি একটু সুরে সুরে গাইতে লাগলাম-
“হাসো না, হাসো না সে হাসি মধুময়
তুমি আর নেই সে তুমি।”
এবার নীলিমা হাসার পরির্বতে রেগে গেলো। বললো-
তোমার কি তাই মনে হয়?
কি?
আমি আর আগের মতো নেই?
আরে বাবা! আমি তো গান গাইলাম।
গান হয়েছে তো কি হয়েছে ? গানতো জীবনেরই অংশ।
তাহলে সত্যিই তুমি বদলে গেছো?
হুমম…বদলে গেছি। আগে তোমাকে যেমন ভালোবাসতাম, এখন তার চেয়েও বেশী ভালোবাসি ।
এমনিতেই সকাল থেকে তোমাকে খুব মিস করছি। তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। আর উনি আছেন ওনার তামাশা নিয়ে।
আমার মনটা যেনো আরো ভালো হয়ে গেলো। বললাম-
ও এই কথা। সে জন্যেই সকাল থেকেই তোমার সবকিছুতে এমন বিরক্তির ভাব। আগে বলবে না।
কেন? আগে বললে কি হতো? বিয়ের তারিখটা এগিয়ে নিয়ে আসতে?
আলবৎ আনতাম, মহারাণী। আপনি যা বলবেন তাই হবে। দরকার হলে আজই বিয়ে হবে, এক্ষুণি হবে।
হুমম…হয়েছে হয়েছে। আর কথা বলা লাগবেনা। আচ্ছা এখন রাখতে হবে। আব্বু আমাকে ডাকছে। আমি একটু শুনে আসি।
ওকে।
হুমম।
আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা গুলি বোধহয় এমনি হয়। মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কাছে আসতে চাইবার ব্যাকুলতা যেন সব বাধ ভেঙে দিতে চায়। অপেক্ষার সময়টাকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিতে চায়।
স্বপ্নের একটা জ্বালা আছে। এই জ্বালাই মানুষকে ভালোবাসার পথে টিকে থাকার সাহস জোগায়। যে ভালোবাসা স্বপ্ন দেখতে জানে না, স্বপ্ন দেখাতে জানে না সেটা কোন ভালোবাসা নয়।
শুভ লগ্নের জন্য অপেক্ষা আর সইছে না। এতোদিন অপেক্ষা করেছি কেমন করে যে সময় কেঁটে গেছে কিন্তু বুঝতেই পারি নি। আর কাঙ্খিত মুহুর্তের কাছাকাছি যেন সময় আর কাটতেই চাচ্ছে না। আসলে নির্দিষ্ট কোন কিছুর জন্য প্রবল আকাঙ্খা যেন সময়কে স্থির করে দিতে চায়। আর আবেগকে করে বেগবান।
নীলিমার বাড়ি থেকে আমার বাড়ি প্রায় দশ ঘণ্টার পথ। এতো লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বউ আনতে হবে তার জন্য চলছে বেশ প্রস্তুতি। আমার মতো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে নতুন বউয়ের মুখ দেখার জন্য। তার ওপর বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা। চলছে ঘরদোর সব ঠিকঠাক করার কাজ। বাড়ি রঙ করা, বাড়ির আশেপাশের ময়লা আবর্জনা সব পরিষ্কার করা।
নতুন আসবাবপত্র কেনাসহ সবরকম প্রস্তুতি চলছে বেশ জোড়েসোড়ে। আমার দুটি ছোটভাই সামলাচ্ছে সব। আব্বু নির্দেশ করছে একজন তা পালন করছে। আর সবার ছোটজনের ভাগে পড়েছে বিয়ের কার্ড বিলি করার দায়িত্ব।
বংশের কেউ যেন বাদ না পড়ে সে ব্যাপারে আব্বুর খুব কড়া নির্দেশ। আর আম্মুর সময় কাটছে আশেপাশের এলাকা থেকে আগত মামী-খালা-চাচীদের কে পান-সুপাড়ি দিয়ে আপ্যায়িত করে। আর তার সাথে চলছে নানারকম গল্প । অনেকেতো বিয়ের আগে বাচ্চাকাচ্চা নিয়েও কথা বলা শুরু করে দিয়েছে।
আবার অনেকে অনাগত বউয়ের ছবি দেখতে দেখতে নিখুঁতভাবে ভালোমন্দের বিচার করছে। দাদীগোছের কেউ কেউ ছবি না দেখেই বলছে- আমার নাতির সাথে খুব মানাবে গো বউমা। কি সুন্দর মুখ! একেবারে চান্দের মতো।
এর ফাঁকে হঠাৎ হয়তো আব্বু একটুখানি উঁচু স্বরে বললো-
কই গেলে এক কাপ চা দাও না ।
আম্মু হয়তো একটু অভিমানে বলছে-
চা করার সময় নেই। দুইদিন পর বউমা আসবে তার হাতেই চা খেও। আমি এখন পারবো না। অনেক কাজ আছে।
বলেই আম্মু পাশের বাসার ভাবীকে একটা পান তুলে দিলেন। তারপর জমিয়ে আড্ডা।
সবাই খুব ব্যস্ত। কেবল আমিই একদম ফ্রি। সবার ব্যস্ততা দেখতে দেখতে একটু বোর হলেই নীলিমাকে ফোন দেই। দু চার কথা বলার পর খুনসুটি করে আবার অপেক্ষা করতে থাকি কাঙ্খিত সময়ের। একটা জিনিস দেখে খুবই অবাক লাগে আমার। আর তা হল- কেবল একটা নতুন মুখের আগমন উপলক্ষে এতোসব আয়োজন। পুরো বাড়িতে সাজ সাজ রব। কত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীর মিলনমেলা।
অবশেষে এলো সেই কাঙ্খিত দিন । পথের দূরত্বের কথা বিবেচনা করে আমরা বিয়ের আগের দিনই রওয়ানা হলাম। সারা পথ জার্নি করে রাত বারোটার দিকে পৌঁছালাম নীলিমার বাসায়। আমরা অবশ্য বেশি লোক আসিনি। বাবা-ভাই আর সাত আটজন মুরুব্বিসহ মোটের ওপর দশ-বারোজন।
আমাদেরকে বেশ ভালোভাবেই অভ্যর্থনা দেয়া হলো। থাকার জায়গার ব্যাবস্থা হলো। সকাল থেকেই বিয়ের আয়োজন শুরু হবে। দুপুর নাগাদ বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করে আমরা বউ নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো। তেমনি কথা ছিলো। আর তেমনটাই হবে নিশ্চয়ই।
এতো রাতেও শালীগোছের কয়েকজন আমাকে দেখতে এলো। নীলিমার সাথে তখন আমার চলছে এসএমএস চ্যাটিং। বেশ উত্তেজিত এসএমএসের ভাষা। যেন আর তর সইছেনা কারোরই ।
পরদিন সকাল থেকেই শুরু হলো বিয়ের আয়োজন। কত শত মানুষ আসছে দেখতে। কারো বা আমার চোখ ভালো লাগছে, কারো বা ভালো লাগছে আমার চুল, আবার কেউ কেউ আমার খোঁচা খোঁচা দাড়ির খুব প্রশংসা করছে। দেখতে দেখতে সময় হচ্ছে পার। কাঙ্খিত সময় ঘনিয়ে আসছে।
সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকল আয়োজন সম্পন্ন হলো। তারপর নীলিমাকে আমার হাতে তুলে দেবার পালা। নিশাতের বাবা মার দুচোখে অজোর শ্রাবণ। আসলে বাবাদের বুকটা বোধহয় খুব খালি হয়ে যায় সেদিন। অনেক কষ্টে পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে নীলিমার বাবা-মা আমার হাতে ওর হাতটা তুলে দিল। কান্নার জোয়ারে শুধু একটা কথাই উনারা আমাকে বললেন- বাবা, আমাদের মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। আজ থেকে আমাদের মেয়ের দায়িত্ব তোমার। নীলিমার চোখেও অশ্রুর বন্যা।
দুপুর একটা নাগাদ আমরা গাড়িতে উঠলাম। ঐদিকে আম্মুসহ আত্মীয়সজন সবাই অপেক্ষায় বধুবরণের জন্য। গাড়ীতে প্রথম কয়েকঘন্টা নীলিমা খুব বিমর্ষ থাকলেও তারপর সে রেশটা অনেকখানিই কেটে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর আম্মু নীলিমাকে ফোন দিয়ে বলছে- বউমা আর কতদূর? নীলিমা শুধু বলছে- এইতো মা আসছি।
ক্লান্ত শরীরে রাত এগারোটায় ফিরলাম বাড়ীতে। এতোরাতেও হই হুল্লোড়ে পুরো বাড়ি মেতে উঠলো। শীতের রাত তাই সব কার্যক্রম তাড়াতাড়ি শেষ করে আমাদেরকে বাসরঘরে নিয়ে আসা হলো। আমার ঘরটিকে বেশ ভালোভাবে সাজানো হয়েছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে পুরো ঘরটা। একটু পরে কি ঘটতে যাচ্ছে সেই ভেবে বেশ রোমাঞ্চিত দুজনই।
অনেক কথা হয়েছে দুজনের মাঝে। তারপর কি যেন হলো একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে কাটলো আরো কিছু সময়।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখি সকাল নয়টা। নীলিমারও ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখে চোখ পড়লো দুজনার। দুজনের চোখেই যেন অবাক বিস্ময়।
একি অবাক কান্ড! রাত কেটে গেলো। অথচ যা ভেবে এতোখানি রোমাঞ্চিত ছিলাম দুজন তার কিছুই হলো না? জার্নির ধকল শরীরে এতোখানি ক্লান্তি এনেছিল যে, সবকিছু ভুলে ডুব দিয়েছিলাম প্রশান্তির ঘুমে।
পুর্ব প্রকাশিতঃ প্রেস২১