এ পোস্টে কিছু খাবারের কথা বলবো, যে-খাবারগুলো হয়ত আপনারা জীবনেও খান নাই; আবার খেলেও সংখ্যা খুবই কম হবে বলে আমার ধারণা। আসলে এগুলো কোনো বিশেষ খাবার না, প্রচলিত খাবারই, কিন্তু খাওয়ার পদ্ধতি বা মেইন ফুডের সাথে তরকারি বা সালুন মেশানোর পদ্ধতি ছিল ভিন্ন।
দুধ ও ভাত
ছোটোবেলা থেকে অদ্যাবধি দুধ আমার প্রিয়তম খাবার। রাতের খাবারের পর দুধ বা দুধজাত খাবার না খেলে মনে হবে কী যেন এখনো খাওয়া হয় নি। পেট খালি খালি মনে হবে। ছোটোবেলায় আমরা তরকারি-ভাত খেতাম বিকালে, আর রাতে খেতাম দুধ-ভাত। কবরি কলা দিয়ে দুধভাত ছিল সবচাইতে প্রিয়। আমের দিনে আম, কাঁঠালের দিনে কাঁঠাল, শীতের দিনে খেজুর গুঁড় দিয়ে দুধ-ভাত ছিল খুবই সুস্বাদু। বড়ো হয়ে, অর্থাৎ সংসার-জীবনে কলা বা আমের সাথে একটু চিনি যোগ করে দুধ-ভাত মাখিয়ে খেয়েছি, যা অমৃতের চেয়েও অধিক সুস্বাদু হয় (আবার অমৃতের ছবি দিবার কইয়েন না)। কলা হতে হবে দোহারের কবরি কলা; এটা কিন্তু সবরি কলা, চম্পা কলা, বা সমুদ্র কলা না, এমনকি বিচরা কলা বা আঁইট্যা কলা বা বিঁচিকলাও না – দোহারের বিশ্ববিখ্যাত কবরি কলা, যার ঘ্রাণ ইউনিক ও অদ্বিতীয়।
উপরে যে খাবারের কথা বললাম, তা কিন্তু অপ্রচলিত বা অর্ধ-প্রচলিত খাবার নয়; আমাদের দোহারে, বিশেষ করে আমার ও আমার ছেলেমেয়েদের বাপ-দাদার আমলের মানুষের কাছে তা বহু প্রিয় একটি খাবার।
এবার তাহলে অপ্রচলিত খাবারের কথাটা বলি। ছোটোবেলায় আমাদের দু-তিনটা গাভী ছিল। গাভীর দুধ দোহাতাম আমি। সকালবেলা সদ্য দোহানো কাঁচা দুধ দিয়ে পান্তাভাত যদি আপনি কোনোদিন না খেয়ে থাকেন, তাহলে অনেক মজার একটা খাবার আপনি খান নি। এমনকি, এই কাঁচা দুধ জুড়িয়ে ঠান্ডা হয়ে গেলেও মজা পাবেন। এতে কোনো কলা বা গুঁড়-চিনি নেয়ার দরকার নেই, শুধু প্রয়োজনমতো লবণ নিবেন, তারপর হাপুস হুপুস হাপুস হুপুস করতে করতে গলাধঃকরণ করতে থাকবেন। দু-তিন বছর আগে এ নিয়ে ফেইসবুকে স্টেটাস দিলে আমার ভাতিজা উৎস শাহরিয়ার আবেগে আপ্লুত হয়ে বললো, কাকা, আমি এখনো কবরি কলা দিয়ে দুধ-ভাত খাই, বাবাও খায়।
এবার যে কাহিনিটি বলবো, তা হয়ত কোটিতে একজন, বা লাখে একজন, বা হাজারে একজন করেছেন। হয়ত বড়োজোর একশতে একজন করেছেন। একবার দুধ দোহানের সময় মনে একটা খায়েশ হলো – বাঁছুরের মতো আমিও গাভীর বান থেকে বোঁটায় মুখ দিয়ে টেনে দুধ খাব। শখটা পুরা করেছিলাম। বেশ কয়েকবারই। কিন্তু কাজটা খুব কষ্টকর। ঘাড় নীচু করে (আমি লম্বা বলে) দুধের বোঁটায় মুখ দিয়ে বেশিক্ষণ টানা যায় না। ওদিকে গাভী আবার নড়াচড়া করে। তো বলুন, এভাবে গাভীর দুধের বোঁটায় মুখ দিয়ে দুধ খেয়েছেন, এমন বীর বাহাদূর আমার মতো আর কে কে আছেন, বা নাম শুনেছেন? আমি তাদের দেখে নিতে চাই, আই মিন, আমি তাদের মুখ দর্শন বা নাম শ্রবণ করতে চাই।
এখন আমি দুধ-কলা খাই না ডায়াবেটিসের কারণে, কিন্তু সেই আগের দিনে্র স্মৃতিরা চোখে ভেসে ওঠে, আর নাকের কাছে দুধভাতে একেবারে সরস নতুন খেজুর গুঁড়ের ঘ্রাণ ভুরভুর করতে থাকে।
তবে, এখন আমি অন্য আরেকটি খাবার খাই- এক গ্লাস দুধে দেড় চামচ ইশব গুলের ভূষি ৩০-৪৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে দিই, এটা ঘন সরের মতো হয়ে যায়, বা ঘোলও বলা যেতে পারে। কোনো প্রকার চিনি বা গুঁড়ের দরকার নেই, দুধের নেচারাল সুইটনেসই খাবারটাকে বেশি মজাদার করে দেয়।
আজ আমি একটা নতুন খাবার খেলাম। একবাঁটি দুধের মধ্যে কয়েক টুকরো চিনি-ছাড়া বাকরখানি ২-৩ মিনিট ভিজিয়ে রাখলাম। অসাধারণ। রুমমেটকে বললাম, এখন থেকে এটাও মাঝে মাঝে দিবেন, কেমন?
মাংস ভাতে মুড়ি
মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। এর সাথে একোমুঠো মচমচে মুড়ি নিন। যারা জীবনে একবার খেয়েছেন, তারা এখনো খাচ্ছেন। যারা কোনোদিন খান নি, তারা কাল দুপুরে ট্রাই করে দেখুন। একবার আপনার এ অভ্যাস হয়ে যাওয়ার পর দেখবেন, আপনি যখনই ভাত খেতে বসেছেন, তরকারি মাংস বা মাছ, এমনকি শুটিকিও যদি হয়, বান্ধবীকে বলছেন- একমুঠো মুড়ি দাও তো। আর আপনার বান্ধবীও তখন মুড়ির টিনটা ডাইনিং টেবিলের উপরেই রেখে দিবেন।
পান্তাভাতে উস্তা বা করলা ভাজি
বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি উস্তা বা করলা খেতাম না। শ্বশুর বাড়িতে শিখলাম উস্তা খাওয়া। এবং এমন খাওয়াই শিখলাম যে, উস্তা এখন আমার প্রিয়তমা সবজি। আমার শাশুড়ির রান্না উস্তা ভাজি অসাধারণ। আমার স্ত্রী শিখেছে তার কাছ থেকে। উস্তা ভাজির আমি এমনই ফ্যান যে, উস্তা এখন আমার কাছে তিতা লাগে না, মিডা লাগে। উস্তা ভাজি, পাতলা ডাল আর একটা ডিম ভাজি হলো একটা অসাধারণ মেনু। তো, এগুলো তো অপ্রচলিত খাবার না, খুবই প্রিয় খাবার, তাহলে অপ্রচলিত খাবার কোনটা? রাতের বেলা ভাতে পানি দিয়ে রাখুন, অর্থাৎ, আপনি পরের দিন সকালে পান্তাভাত খেতে যাচ্ছেন। সেই পান্তাভাতে আপনি নিন আগের দিন রান্না করা বাসি উস্তা ভাজি। জীবনে কোনোদিন না খেয়ে থাকলে আপনি অনেক স্বাদের খাবারই মিস করে ফেলেছেন এ জীবনে। আর যদি খেয়েই থাকেন, অভিজ্ঞতা বলুন। অবশ্য, যারা উস্তা বা করলা খান না, তাদের জন্য এই খাবার অবৈধ ঘোষণা করা হলো।
সবচাইতে মজার খাবার
সবচাইতে মজার খাবার কোনটি? খুব খিদের সময় আপনি যে-খাবারটি খাবেন, ওটিই সবচাইতে মজার খাবার। এ খাবারটিতে আপনি যে স্বাদ বা তৃপ্তি পাবেন, সাধারণ খিদে নিয়ে অনেক উন্নত মানের খাবারেও সেই স্বাদ বা তৃপ্তি আপনি পাবেন না।
আরো বেশকিছু অপ্রচলিত খাবার আছে, যা এখন মনে পড়ছে না। ভবিষ্যতে আরেকদিন লেখার জন্য তা শিকেয় তুলে রাখলেম।
৩১ আগস্ট ২০২২
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:২০