একবার এক মেয়ে আমাকে ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে ‘অ্যাড’ রিকোয়েস্ট পাঠালে আমি তাকে ‘ফ্রেন্ড’ হিসাবে অ্যাকসেপ্ট করে নিলাম। তার সাথে মাঝে মাঝে টুকরো টুকরো চ্যাট হয়। কোনো এক বাংলা ব্লগে আমার লেখা পড়ে সে আমার প্রতি অনুরক্ত হয়েছিল। লেখালেখির পাশাপাশি নবীন লিখিয়েদের জন্য আমি একটা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করে থাকি, এটাও সে জানতে পেরেছিল। কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছিল, সে কবিতা লেখে। আমার সাথে ‘ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে’ কানেকটেড হবার মূল কারণ হিসাবে লেখালেখি সম্পর্কে মত বিনিময় করার কথা সে উল্লেখ করেছিল। আমার অনুমান হয়েছিল, এই সুবাদে তার লেখাগুলো যাতে পত্রিকা প্রকাশের কালে কিছুটা হলেও অগ্রাধিকার পায়, সেটাই আমার সাথে ঘনিষ্ঠতা অর্জনের মূল লক্ষ্য ছিল। অন্য কোনো লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকগণ ব্যক্তিগত পরিচয়সূত্রে লেখকদের লেখাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন কিনা জানি না, কিন্তু আমার ম্যাগাজিনে কখনো এমনটা হয় নি।
অমর একুশে বইমেলার জন্য ‘লেখা আহ্বান’ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের দ্বিতীয় দিনেই মেয়েটি তার সমুদয় কবিতা-সমগ্র আমাকে মেইল করে পাঠিয়ে দিয়ে বললো- এখান থেকে আপনার ভালোলাগা কবিতা যত খুশি ততগুলো ম্যাগাজিনে ছাপতে পারেন, আমার কোনো আপত্তি নেই। বিজ্ঞপ্তিতে কবিদের কাছ থেকে মাত্র একটি এবং তাদের শ্রেষ্ঠ কবিতাটিই চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ কবির ফাইল খুলে আমি বাস্তবিকই খুব অবাক ও বিরক্ত হলাম। তার ফাইলটি ১৭৯ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট ছিল। সম্পাদকগণ জানেন এ অবস্থায় ধৈর্য টিকিয়ে রাখা কত কষ্টকর। কিন্তু ‘পূর্বপরিচয়’ সূত্রে তাকে কিছুটা ‘অগ্রাধিকার’ দেয়ার লক্ষ্যে আমি প্রথম থেকেই মনোযোগ সহকারে তার কবিতা পাঠ করতে শুরু করলাম। অবশেষে যদিও আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো, তথাপি স্ক্রল টেনে পুরো ফাইলটিতে একবার ভার্টিক্যাল স্ক্যানিং করে গেলাম। কিন্তু পত্রিকায় ছাপানোর মতো একটা ‘পঙ্ক্তি’ও খুঁজে না পেয়ে আমি যারপরনাই হতাশ হলাম।
মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে ম্যাজেঞ্জারে নক করে সে জানতে চায়, ‘আমার কবিতাগুলো আপনার কেমন লাগলো, বললেন না যে কিছু!’ এক শব্দে ‘ভালো’ বলে আমি নীরব থাকলেও সে কবিতায় তার আগ্রহ ও অনুরাগ সম্বন্ধে একের পর এক ছোটো ছোটো মেসেজ পাঠাতে থাকতো। আমার রিসপন্স না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশের ‘বিকটাকৃতির’ ইমোটিকন পাঠাতো, কখনো বা ‘বাজ’ ফেলতো।
ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে একুশে বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে আমার সম্পাদিত ও প্রকাশিত ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হলো, আর তার পিডিএফ কপির লিংক ব্লগে উন্মুক্ত করে দেয়া হলো।
পত্রিকা প্রকাশের পর মেয়েটি আমার প্রতি অতিশয় ক্ষুব্ধ হলো। এটা আমার অনুমান মাত্র। তাকে অনলাইন হতে দেখি না, তার মেসেজ পাই না। আমি বিমর্ষ হতে থাকি। নীরব প্রতিবাদের দ্বারা মেয়েটি আমাকে ঘায়েল করে দিল। আমার অনুশোচনা হতে থাকে- তার যে-কোনো একটা কবিতা পর্যাপ্ত ‘এডিট’ করে ছাপাতে পারতাম, এতে তার আনন্দ ও উৎসাহ আকাশ ছুঁয়ে যেতো। আমার নির্বুদ্ধিতা ও নিষ্ঠুরতা আমাকে কামড়াতে থাকলো।
মাস ছয়েক বিরতির পর হঠাৎ একদিন মেয়েটা আমাকে ম্যাসেঞ্জারে নক করে :
আপনি কে, ভাই? তার প্রশ্ন।
রিপ্লাইয়ে আমি একটা স্মাইলিং ইমোটিকন ছেড়ে দিই।
সে : আপনার asl?
আমি আবারো একটা হাসির ইমো ফেলি।
সে : আমার নাম রাতুল। সউদি আরবে থাকি।
আমি অবাক হই, কিন্তু ‘ইমো’তে হাসতেই থাকি।
সে : আপনার ছবিটা খুব সুন্দর। আপনি খুব সুন্দরী, তাই না?
এবার আমি প্রচুর হাসতে থাকি, একই সঙ্গে অবাক হওয়ার চরমে পৌঁছে যাই। মেয়েটা আজ এভাবে কথা বলছে কেন?
এই ফাঁকে আরেকটা কথা বলে নিই। আমার ম্যাসেঞ্জারে কিছুদিন পর পর ডিসপ্লে আইকন চেঞ্জ করি। কখনো আমার ছেলের ছবি, কখনো ফুল, পাখি, আর মাঝে মাঝেই আমার স্ত্রীর ছবি ঝুলিয়ে দিই- ডিসপ্লেতে স্ত্রীর মুখ দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।
ঐ সময়ে আইকনে আমার স্ত্রীর সুন্দর মুখখানা ভাসছিল। ওটা দেখেই তার বিমুগ্ধ প্রশ্ন : আপনার ছবিটা খুব সুন্দর। আপনি খুব সুন্দরী, তাই না?
আমি লিখি : এটা আমার স্ত্রীর ছবি।
সে লেখে : আমার মনে হচ্ছে এটা আপনি নিজেই। নিজের পরিচয় গোপন করছেন কেন?
আমি হাসি।
সে লেখে : আমি সউদি আরব থাকি, একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি করি।
আমি : জেনে ভালো লাগলো।
সে : আপনি কি ম্যারিড?
আমি : জি।
সে : আমার মনে হয় আপনি মিথ্যা বলছেন। আপনি আনম্যারিড।
আমি : অদ্ভুত কথা তো, আমি মিথ্যা বলবো কেন? আমি একজন পুরুষ মানুষ। ডিসপ্লে আইকনে যাকে দেখছেন সে আমার স্ত্রী। আমার দুটো ছেলেমেয়ে আছে।
সে : জানি, সত্যিকার মেয়েরা পরিচয় গোপন রাখে। তবে আপনার এই গোপন রাখার ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগলো।
আমি সাথে সাথে স্ত্রীর ছবি পালটে ছেলের ছবি টাঙ্গিয়ে দিলাম। লিখলাম : এই দেখুন, এটা আমার ছেলের ছবি।
সে লেখে : বিশ্বাস হয় না।
সে আরো লেখে : আমার নাম রাতুল। সউদিতে কোরিয়ান কোম্পানিতে বড় পোস্টে চাকরি করি। প্রচুর বেতন পাই। এখনো আনম্যারিড। আপনার কি সত্যিই বিয়ে হয়েছে?
***
আরো মাস ছয়েক পর। সে হঠাৎ উদিত হয়ে লেখে : হাই বেবি, হাউ আর ইউ?
আমি : ইয়েস বেব, আই এ্যাম ফাইন। ইউ?
সে : আমি আঁখি।
আমি : খুব ভালো। আপনি কি সউদি আরব থাকেন?
সে : নাহ্, আমি বাংলাদেশে থাকি।
আমি : কিন্তু আপনি বলেছিলেন সউদি আরবে থাকেন!
সে : নাহ, আমি বাংলাদেশেই থাকি।
আমি : আপনি কী করেন?
সে : কলেজে পড়ি। আপনার নামটা জানতে পারি?
আমি : আমার আইডি দেখুন। ওখানে আমার নামটা দেখতে পাচ্ছেন না?
সে : জি, পাচ্ছি। আপনি কোথায় থাকেন?
আমি : ঢাকায়। আপনি?
সে : ঢাকার আশেপাশে। গাজীপুর।
আমি : সেদিন যে বললেন আপনি সউদি আরবে থাকেন?
সে : সউদি আরবে আমার ভাইয়া থাকে।
আমি : আপনার ভাইয়া আপনার এই আইডিতে এলো কীভাবে?
সে : আমি আর আমার ভাইয়া একই আইডি ইউস করি।
আমি : এটা কি সম্ভব?
সে নিরুত্তর থাকে।
আমি : আপনি যেন কী করেন?
সে : আমি কলেজে পড়ি।
আমি : আপনি সম্ভবত গত বছর আমার কাছে কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলেন, লিটল ম্যাগাজিনে ছাপাবার জন্য।
আঁখি কোনো রিপ্লাই না দিয়ে লগআউট করে।
এর দিন দুয়েক পর তার সাথে আবার চ্যাট শুরু হলো।
সে : হাই!
আমি : জি!
সে : আমি নেহা।
আমি : ওকে।
সে : কে আপনি? থাকেন কোথায়?
আমি : বাংলাদেশে থাকি। আপনি?
সে : আমিও বাংলাদেশেই থাকি।
আমি : আপনার নাম কি ঋতু, নাকি শ্রেয়া?
সে : আমার নাম নেহা।
আমি : আপনার আইডি দেখে মনে হচ্ছে আপনি পুরুষ। (তার আইডি-নেইম ‘রুমন’)
সে : স্যরি টু সে, রুমন ইজ মাই হাজব্যান্ড’স নেইম।
আমি হাসির ইমোটিকন ছাড়ি।
সে : আপনি কি ম্যারিড?
আমি : জি। এবার আপনার ব্যাপারে বলুন। আপনি কি বিয়ে করেছেন?
সে : জি।
আমি : আপনি যেন কী করেন?
সে : আমি কলেজে পড়ি।
আমি : আপনার হাজব্যান্ড কী করেন?
সে : রুমন আমার হাজব্যান্ডের নাম। সে সউদি আরব থাকে। আপনি?
আমি : আমি বাংলাদেশে থাকি। আপনিও কি হাজব্যান্ডের সাথে সউদি আরব থাকেন?
সে : জি না।
আমি : কোথায় থাকেন?
সে : ঢাকার আশেপাশে।
আমি : আপনার সাথে কথা বলে খুব ‘আরাম’ পাচ্ছি।
সে : তাই?
আমি : হুম।
সে : আপনার বেবি ক’টা?
আমি : ২টা। আপনার?
সে : বুঝলাম না।
আমি : আপনার ছেলেমেয়ে কজন?
সে : অনেক।
আমি : অনেক সন্তান দেশ ও দশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।
সে : তাই?
আমি : জি। সত্যি বলুন, আপনার ছেলেমেয়ে ক’টা?
সে : সম্ভাবনা আছে।
আমি : কিসের সম্ভাবনা?
সে : বেবি।
আমি : গুড। কবে?
সে : ১০ মাস।
আমি : জামাই না সউদিতে থাকে!
সে : আসছে।
আমি : জামাই দেশে আসার আগেই বেবি?
সে নিরুত্তর থাকে।
আমি : আপনার ভাইবোন নেই?
সে : আছে। ৫ বোন।
আমি : আপনি কত নম্বর?
সে : ৫ নম্বর।
আমি : বড়দের কি বিয়ে হয়েছে?
সে : জি।
আমি : ভাই?
সে : আমার কোনো ভাই নেই।
আমি : কোনো ভাই নেই!
সে : অবাক হলেন কেন?
আমি : ভাইহীনারা কত মজায় থাকে, তাই না?
সে : বুঝলাম না।
আমি : ভাই থাকলে মেয়েরা খুব স্বাধীনভাবে প্রেম করতে পারে না।
সে : তাই?
আমি : আপনি খুব স্মার্ট একটা মেয়ে।
সে : জি না।
আমি : অবসর কীভাবে কাটান?
সে : স্বামী, ল্যাপটপ আর পড়াশোনা।
আমি : আচ্ছা, খুব ভালো। আপনার নামটা কি জানতে পারি?
সে : আমার নাম নেহা।
আমি : হুম।
এরপর কিছু সময় তার রিসপন্স পাই না।
আমি : আপনি কোথায়? বসে আছি। জরুরি কথা ছিল। একটা জিনিস আছে আপনার জন্য। এই ফাইলটা দেখুন ম্যাডাম।
আমি গত বছর পাঠানো তার কবিতার ফাইলটি ম্যাসেঞ্জারের ফাইল অপশন থেকে তাকে সেন্ড করি। ফাইলে তার নাম আঁখি কিংবা নেহা নয় – স্পষ্টাক্ষরে কবির নাম লেখা – শারাজিল জোহা। কিন্তু পর পর ৩বার ফাইলটা রিজেক্টেড হলো।
আমি : আর ইউ দেয়ার? ফাইলটা নিচ্ছেন না কেন?
সে : ইয়েস।
আমি : ফাইলটা অ্যাকসেপ্ট করছেন না কেন?
সে : কীভাবে অ্যাকসেপ্ট করবো? আমি বুঝি না। নতুন ল্যাপটপ কিনেছি। রিস্টার্ট দেব?
আমি : সামহোয়্যারইন ব্লগে আপনার নিক কোন্টা?
সে : কাল বলবো।
আমি : কাল কেন?
সে : জানি না।
আমি : আপনি কি কবিতা বা গল্প লেখেন?
সে : এখন লিখি না। আগে লিখতাম।
আমি : আগের লেখাগুলো কোথায়?
সে : জানি না।
আমি : আপনি একবার আমার কাছে কবিতা পাঠিয়েছিলেন। মনে আছে?
সে : আজ আর নয়। গুড নাইট।
আমি : একটা কথা শুনে যান প্লিজ।
সে তৎক্ষণাৎ লগআউট হয়।
***
বলা বাহুল্য, আমি বিভিন্নভাবে জেরা করে মেসেঞ্জার আইডির পেছনের আসল মানুষটার পরিচয় বের করার মানসে এ ক’দিন নিমগ্ন ছিলাম। শুরুতে যে মেয়েটি আমাকে অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল এবং আমার লিটল ম্যাগাজিনে ছাপানোর জন্য ১৭৯টি কবিতা ই-মেইল করেছিল, তার নাম ছিল শারাজিল জোহা। মাঝখানে সে সউদি প্রবাসী রাতুল, গাজীপুরের কলেজ-পড়ুয়া আঁখি এবং সবশেষে সে নিজের নাম ‘নেহা’ বলে জানিয়েছিল। উপরের কথোপকথন থেকে আমার পক্ষে এ আইডি’র প্রকৃত আইডেন্টিটি বের করা সম্ভব হলো না। এসব ‘জেরা’ পর্যালোচনা করে আপনারা দেখুন কোনো কিছু উদ্ধার করা যায় কিনা।
মেয়েটির পর্ব বাদ দিয়ে এবার চলুন অন্য গল্প বলি।
লিটল ম্যাগাজিনের জন্য হন্যে হয়ে বড় কবিদের কবিতা খুঁজছি। দেশের প্রথম সারির কবিদের কবিতা পাওয়া তো চাট্টিখানি কথা না, তাই না? টপ র্যাংকিং এক কবির ই-মেইল অ্যাড্রেস যোগাড় করে ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠালাম। এখানে বলে রাখি, সে-সময়ে ইয়াহু মেসেঞ্জার ছিল চ্যাটিং, মেসেজিং ও টকিঙের জন্য সেরা এবং একমাত্র মাধ্যম। তো, ইনস্ট্যান্টলি তিনি আমাকে অ্যাড করে নিলেন। তাঁকে ‘আইএম’ (ইন্সট্যান্ট মেসেজ) পাঠাই। তিনি খুব ব্যস্ত মানুষ, জবাব দেবার সময় পান না। পত্রিকায় তাঁর কবিতা পড়ে মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মেইল করি। তাঁর সময় হয় না জবাব দেবার। তাঁর কাছে কবিতা চাই, এমনকি সবিনয়ে জানিয়ে দিই, প্রথম আলোর চেয়ে আমি দ্বিগুণ সম্মানী দেব। ...আমি গরীব সম্পাদক ‘মহাকবি’র দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হতে থাকি, দিনের পর দিন। কত আফসোস বুকের ভেতর জমতে থাকে- আহা, মহাকবি যদি একবার একটা আইএম পাঠাতেন! কিংবা একটা রিপ্লাই- চাই না তাঁর কবিতা। তাঁর কবিতা আমার অখ্যাত লিটল ম্যাগাজিনে ছাপালে কবিতার অপমান হবে।
মহাকবি সহসা একদা রাতে সুপ্রসন্ন হলেন। তখন রাত ১টা। তিনি অনলাইন হয়েই লিখলেন : হাই! দেখতে অদ্ভুত সুন্দরী আপনি।
আমি একটু থতমত খাই। তখনই আমার খেয়াল হয়, আইকনে আমার স্ত্রীর ছবি ঝুলছে। মহাকবি লেখেন : চ্যাট করার সময় হবে?
বাস্তবিকই আমি লজ্জিত ও বিব্রত হতে থাকি। ভুলটা ধরতে আর জ্ঞানী হবার প্রয়োজন পড়ে না। আমি নীরব থাকি।
মহাকবি আমার মাথায় ‘বাজ’ ভাঙলেন। লিখলেন : আপনি এতো অহংকারী কেন?
আমি খুব দ্রুত লগআউট হই, আর খুব অস্বস্তিতে ভুগতে থাকি। ভাবি, এটা হয়তো আমার চেনা দেশখ্যাত ‘মহাকবি’ নন। তিনি এরূপ ‘লোলুপ’ হতেই পারেন না, যদিও জানতাম তাঁর সাম্প্রতিক কালের দুই খণ্ডে লেখা একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা সব বয়সের পাঠক খুব গোগ্রাসে গিলেছেন, যা এরূপ কিছু রাতজাগা মেসেজ আদান-প্রদানের ঘটনা নিয়েই লেখা হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। কোনো এক ইয়াহুগ্রুপে তাঁর জ্ঞানগর্ভ পোস্টগুলো পড়েছি। তিনি একজন মস্তিষ্কবান কবি, সন্দেহ নেই।
এরপর আরো কয়েকদিন মহাকবি আমাকে নক করেছিলেন, আমি রিপ্লাই করি নি। তবে আইকন বদল করে ছেলের ছবি লাগিয়েছি, আর আমাকে চিরতরে তাঁর কাছে ‘ইনভিজিবল’ করে রেখেছি।
ঐ সময়ে, যখন ডিসপ্লেতে আমার স্ত্রীর ছবি ঝোলানো থাকতো, আরও কয়েকজন ক্ষুদে কবি নিয়মিতভাবে দু-চার লাইনের কবিতা আইএম করতেন। কিছু চটুল মেসেজও আসতো মাঝে মাঝে। তাঁরা জানতেন আমি ‘নারী’ নই, তবু কেন আমাকে নারী-জ্ঞান করতেন জানি না। আমার লেখায় কি তাহলে ‘নারী-স্বভাব’ পরিস্ফুট ছিল? নাকি ডিসপ্লে আইকনে একটা সুন্দরী নারীর মুখ দেখেই তাঁরা আমাকে নির্ঘাত ‘রমণী’ মনে করতেন?
২০০৩ সালে তসলিমার ‘ক’ প্রকাশিত হলে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সাপ্তাহিক যায়যায়দিন ‘ক’-এর উপর ধারাবাহিকভাবে পাঠকের প্রতিক্রিয়া ছাপছিল। একবার এক পত্রলেখক একলাইনে একটা কথা লিখেছিলেন- তসলিমার ‘ক’ পড়ে বুঝলাম সকল মহাপুরুষই আসলে পুরুষ।
আমিও ওরকম একজন মহাপুরুষ বটে, যিনি শরীর ও মননে একজন পুরুষ, যেমন পুরুষ আমাদের ঐ দেশখ্যাত ‘মহাকবি’ও। আপনি কী মনে করেন?
২৭ অক্টোবর ২০০৯