সোনালি বলেছিল, আমাদের বাসর হবে
আড়িয়াল বিলের মাঝখানে ডিঙ্গি নৌকোর ছাদখোলা পাটাতনে
শরতের কোনো পূর্ণিমায়
শাদা-কালো মেঘগুলো বার বার জোসনা ঢেকে দিবে;
দক্ষিণের কালিগাঁও থেকে উড়ে আসা বাতাসে
উজানে ভেসে যাবে আমাদের ডিঙ্গিখানি- আড়িয়াল বিলের
সমগ্র বুক জুড়ে থোকা থোকা শাপলারা দুলে দুলে আমাদের
অভিবাদন জানাবে।
সোনালি বলেছিল, আমরা একটানা অনেক-অনেকদিন
আকাশে-বাতাসে-পাহাড়ে
উড়বো, আর প্রেম করবো। তারপর
আশ্বিনে চকের পানি নেমে গেলে গাংকুলায় আমন ক্ষেতের
পাড় ধরে বহুদূর হেঁটে হেঁটে
ধানের গন্ধ আর সোনারং শরীরে মাখবো।
বিরান সর্ষেক্ষেতের দিকে তাকিয়ে সোনালি বলতো, দেখো,
কী অদ্ভুত সমুদ্র! সাধ হয় ডুবে মরি। তারপর সত্যিই সে
সমুদ্রে ঝাঁপ দিত। দিগম্বর সর্ষেসমুদ্র পেরিয়ে, কালাই,
মটর, ডগাতোলা দূর্বা মাড়িয়ে একনিশ্বাসে ছুটে চলতো সোনালি।
তারপর বিপুল সায়াহ্নে ছোলাপোড়ানো একদঙ্গল
ছেলেমেয়ের ভিড়ে আমরা মিশে যেতাম।
সোনালি বলেছিল, আমরা একরাতে জয়পাড়া সিনেমাহলে
‘সাতভাই চম্পা’ দেখবো; ফিরতিপথে দোহারপুরীর
নিকষ আঁধারে ডানা-ঝাপটে-উড়ে-যাওয়া প্যাঁচাদের ভয়ে
একটুও চমকাবো না।
ভাদ্রের শেষে আড়িয়াল বিলের নৌকাবাইচ, নূরুল্লাপুর
শানাল ফকিরের ধামাইল, গালিমপুর সিদ্ধী পীরের ওরস
আর নূরপুরের মাঠে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা- সোনালি বলেছিল,
আমরা বহুদিন এসব ঘুরবো, আর গাছের বাঁকলে
এঁকে দেব প্রেমের স্বাক্ষর।
আজও সোনালি ছুটছে, অতীত থেকে বর্তমানে; অথবা
ভবিষ্যত গিলে খেয়ে কালের প্রান্তরে, যার নাম ইতিহাস।
আমি আড়িয়াল বিলে ছুটে যাই, গাংকুলায় ছুটে যাই,
আমাদের সর্ষে-মটর-মাষকালাই-মাড়ানো ক্ষেতের আলে গিয়ে
দাঁড়াই- সোনালির সাধগুলো বিধূর কান্নায় পায়ে পায়ে হাঁটে-
আমাদের ছোলাপোড়ানো দিনগুলো হারিয়ে গেছে,
সর্ষের সমুদ্র মরে গেছে, মটরশুঁটির দানাগুলো
আমাদের দাদিমার ঘরে এখন একগুচ্ছ স্মৃতির ফসিল।
২৯ আগস্ট ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭