এ সুবিশাল পোস্টটি যাঁকে উৎসর্গ করলাম :
ব্লগার শায়মা
(তাঁর কারণে আমাকে অনেকগুলো ছড়া লিখতে হয়েছিল)
***
ভুলে যাওয়া ঠিকানা
তখন আমার অল্প বয়স, কতই বা আর হবে
মা-চাচি আর খালা-ফুপুর কোল ছেড়েছি সবে
তখন আমি তোমার মতো ছোট্ট ছিলাম কী যে
গেরাম ভরে ঘুরে বেড়াই বাবার কাঁধে চড়ে
সকালবেলা বিছনাখানি থাকতো রোজই ভিজে
ওসব এখন বলতে গেলে লাজ নামে চোখ ভরে
ছোট্ট হলেও বলতে পারি কাজের ছিল ধুম
যেমন ধরো- নাওয়া-খাওয়া-খেলনা এবং ঘুম
তখন আমার বই ছিল না, দাদুর গলা ধরে
সন্ধ্যাবেলা কাটতো মজার চাঁদের ছড়া পড়ে
তোমরা কি কেউ কাগজ দিয়ে নাও বানাতে পারো?
উড়োজাহাজ? ঢাউস-ঘুড়ি? কত্ত কিছু আরো?
গাছের ডালে, কিংবা ধরো ঘরের পাটাতনে
দোলনা বেঁধে দোল খেয়েছো ভাইবোনদের সনে?
আমার ছিল ঘরের পাশে ছোট্ট চিকন খাল
তার পানিতে ভেসে গেছে আমার বাল্যকাল
পুবের ধারে ছোট্ট পুকুর, ঠাণ্ডা ছিল জল
বর্ষাতে তায় লগ্গি ফেলে খুঁজতে হতো তল
একদিন এক বকের বাসা হঠাৎ দিয়ে হানা
পেয়েছিলাম চোখ-না-ফোটা একটি ছোটো ছানা
ডোবার ধারে ডাহুকপাখির বিষম আনাগোনা
ধানের শিষে ফাঁদ পেতেছি, কিংবা মাছের পোনা
তোমার কি ভাই লাটিম ছিল? আর কী ছিল, বলো?
বড়শিতে কি মাছ ধরেছো? ঝাঁকিজালে, পলো?
আমার ছিল উদোম গায়ে নাচনতোলা দিন
ধানের ক্ষেতে সবুজ দুপুর, বিকেলটা রঙিন
এসব কথা শুনে তোমার ইচ্ছে হতে পারে
সেই যে ছিল সোনার জীবন- কোথায় পাবো তারে?
কেমন তোমার দিন কেটেছে? কোন্ গাঁয়ে? কোন্ দেশে?
কোথায় তোমার মায়ার জীবন ঘর বেঁধেছে শেষে?
আমার এখন মন টেকে না ইটপাথরের ঘরে
মন ছুটে যায় কিশোরবেলার ধু-ধু তেপান্তরে
তোমরা কি কেউ সঙ্গে যাবে? জলদি বলো নাম
বেরিয়ে পড়ো, বেরিয়ে পড়ো, ঐ দেখা যায় গ্রাম
তোমরা ভাবো- আমিও আবার গ্রাম দেখেছি নাকি?
মিথ্যে না তা- মনের ভেতর গ্রামেই পড়ে থাকি
খুব বুঝেছি খুব বুঝেছি তোমাদের কারসাজি
জলদি করো, দোস্তি মানো, দোস্তিতে হও রাজি
অবাক মধুর ছন্দদোলায় চলতে থাকো সবে
ভুলে যাওয়া নিজ ঠিকানায় আবার মিলন হবে
কাঁদছে নদী নীরব ভাষায় শুকনো যে তার বুক
তার গহনে সোনাভরা একখানি সিন্দুক
ঐ দেখো তার হাতছানি ভাই, বেরিয়ে পড়ো সবে
উথালপাথাল ঢেউতুফানে প্রাণখোলা উৎসবে
২৪ এপ্রিল ২০১০ রাত ১০:৫১
পিতৃভূম
কে লিখেছে কে লিখেছে
এই চিঠিটা কার?
এমন সাহস কার হয়েছে
লিখতে ‘ভিটা ছাড়’?
আমরা করি গেরস্থালি
নিজের জমি চাষ
নিজের ঘরে কামলা খাটি
নিজের ক্রীতদাস
বাপদাদাদের এই ভিটেতে
চৌদ্দ পুরুষ খাঁটি
সামনে দাঁড়াও, বৈরী তোমার
বুকের উপর হাঁটি
৩০ অক্টোবর ২০০৯ রাত ১২:০৫
পদের বচন
তোমার আমার সবার আছে পদের বাহাদুরি
পদের উপর চাপ বেড়ে যায় বাড়লে পেটের ভুঁড়ি
অসাবধানে পথ চলে কেউ পদে হোঁচট খেলে
ব্যথায় কাতর হয় কি কভু অন্য বাড়ির ছেলে?
আমার পদে জোর কমেছে, চলার শক্তি নাই
গাধার পদে বল বেড়েছে, লাফাচ্ছে সে তাই
পদের কাব্য পড়ে বুঝি পদের হচ্ছে লোভ
পদ হারিয়ে কালুর ব্যাটা ঝাড়ছে মনের ক্ষোভ
আমরা যদিও পদের মালিক, কিন্তু জেনো ভাই
ন্যাংড়া-খুঁড়োর ভাঙ্গা পদের এক কড়ি দাম নাই
একটা খুশির খবর আছে, জানতে পেলাম সবে
আমার নাকি পদের ওজন একটু ভারী হবে।
মেপে দেখি পদের ওজন তিরিশ কেজি মোটে
মধ্যখানে যায় চেগিয়ে দেহের ভারের চোটে
২২ মার্চ ২০১০ রাত ১২:১৫
মন খারাপের ঘরে
মন খারাপের ঘরে ছিল মনপবনের বাস
একটি শণের কুটির ছিল মরা নদীর ধারে
একটি হরিণ বনের ভিতর কাঁদতো বারো মাস
একটি কথাই আমার শুধু বলার ছিল তারে
তোমরা বোঝো দুঃখবিলাস শুকনো মাঠের খড়
আমার ভিতর গুমরে ওঠে চৈত্রদিনের ঝড়
২৫ মার্চ ২০১০ রাত ১২:৪৪
থলের বেড়াল
এবার তাহার থলের বেড়াল
বেরিয়ে গেলো বুঝি
কোথায় গেলো, কোথায় গেলো
কোনাকাঞ্চি খুঁজি
কেউ জানালো, গাঁয়ের হাটে
ঘুরছে সারাবেলা
কেউ জানালো, উদোম মাঠে
জমিয়েছে খুব খেলা
নাচতে বেজায় শখ নাকি তার
কিন্তু ব্যাপার হলো
উঠোনটা যে বাঁকা ভীষণ
নাচবে কোথায়, বলো!
এমনি অনেক তামাশা সে
দেখায় ভারি রোজ
তাহার সাধের থলের বেড়াল
কোথায় করি খোঁজ!
২ নভেম্বর ২০০৯ রাত ৮:১৭
সম্পূর্ণ কাল্পনিক
তাসের ছবির মতো কোনো এক রাজা
কুঠারে মারেন মশা সোজা এক কোপে।
আমড়া কাঠের এক কেদারায় বসে
গাছের কাঁঠাল দেখে পাক দেন গোঁফে।
জিলিপির প্যাঁচ দেখে চাপড়িয়ে মাথা
খাল কেটে পানি এনে যান গোসলেতে।
কলুর বলদ কিনে টাকা বাকি রেখে
পটল তুলিতে যান অটলের ক্ষেতে।
যেদিন আমার কথা তুমিও ভুলিবে
এ ছড়াটা সেইদিন পটল তুলিবে।
১৫ নভেম্বর ২০১১ রাত ১২:০০
ভাগ্যরেখা
কুঁড়ের রাজা স্বপ্ন দেখে দেশের রাজা হবে-
রাজত্ব কি গাছে ধরে? কে দেখেছে, কবে?
একটা কিছু গেলেই হলো পেটের ভিতর দানা
আমি কি হে অজর জীবন পাবো? - না না না না
যে কটা দিন বাঁচতে পারি বাঁচার জন্য খেয়ে
যেটুকু কাজ করতে পারি তাই ভালো সবচেয়ে
পেটের দানা ফলবে হাতে, বীজ বুনেছো তাতে?
হাতের ’পরে ভাগ্যরেখা নাও গড়ে নিজ হাতে
১৭ মার্চ ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৮
মজার খাদক
এমন খাদক কোথাও খুঁজে পাবেন নাকো আপা
পোলাওকোর্মা খান না তিনি, প্রিয় তার দই-মাঠা
তিনি খুব খান খেজুর গুঁড়ের পাটিসাপটা ও ভাঁপা
নাসিকা ডুবিয়ে তিনবেলা খান আঁটার রুটি ও পাঠা
এতো এতো খেয়ে পরাণ ভরে না, আরও কিছু খেতে চান
কোথা পাবো ছাই, সাবাড় হয়েছে দুনিয়ার মেনু সবই
তাকে দেখবার সাধ যদি হয়, আমাকে একটু জানান
এমএমএস করে পাঠিয়ে দেবো ভুঁড়িসহ তাঁর ছবি
১৭ মার্চ ২০১০ ভোর ৬:২৯
আজগুবি ছড়া
গুঁড়ে চিনি দুধে দধি ঘোলে মাখন মেখে
একটুখানি দেখুন চেখে কী ভয়ানক স্বাদ
ঘোড়ার উপর বসুন চেপে কিংবা হাতির পিঠে
এরপরে দিন পদ্মা পাড়ি ডিঙ্গিতে পাল তুলে
শীতের রাতে গোসল করুন পুকুরজলে নেমে
উদোম গায়ে শুয়ে ঘরে দিন এসিটা ছেড়ে
বালু দিয়ে ঘর বানালে পাবেন বালির ঘর
কলাগাছের তক্তা দিয়ে খাট বানাবেন তবে
বইপুস্তক পড়তে গেলে চাপ বেড়ে যায় ব্রেনে
এরচে ভালো বইগুলো সব খান গুলিয়ে জলে
আপনি কি ভাই শিল্পী মানুষ? কেমন গানের হাত?
নাচের আগে গলাখানি নেবেন খানিক সেধে
ঘুম না এলে কী কাজ করেন? দেখুন টেরাই করে
সিনেমাতে ঢুকলে কেমন ঘুম আসে নাক ডেকে
এসব যদি করতে পারেন, বলবে গাঁয়ের লোকে
এমনতরো বীর বাহাদুর কেউ দেখে নি আগে
না পারিলে কী আর করা, একটি মুগুর তুলে
মনের সুখে জোরসে কষে করুন মাথা গুঁড়ো
৫ এপ্রিল ২০১০ রাত ১০:৪৯
ধূরন্ধর মেয়েপুরুষ
আচ্ছা আপু, দুষ্টু লোকে তোমায় কেন ‘বোন’ ভাবে?
এমন আজব সম্বোধনের বিচার হবে কোন্ ভাবে?
আমরা পুরুষ নারীর কাছেই টইটুম্বুর রস খুঁজি
তোমার তেমন ইচ্ছে ভারি, ধরছো নারীর রূপ বুঝি!
রাগ করো না, রাগ করো না, লক্ষ্মীমণি ভাই, কী বোন
আমরা এমন অনেকেই ধূরন্ধর ও অসজ্জন।
১৭ মার্চ ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪০
তোমার ইচ্ছে
আমার এখন ইচ্ছে করে নদীর ধারে বসতে
তোমার দেয়া কঠিনতম অঙ্কগুলো কষতে।
আমার আরও ইচ্ছে করে নদীর ঢেউয়ে নাবতে
কাঁথার তলে পিদিম জ্বেলে তোমার কথা ভাবতে।
এমন কত ইচ্ছে আমার নদীর জলে ভাসছে
তাতে তোমার কত্তটুকু যাচ্ছে, কিবা আসছে!
১৭ মার্চ ২০১০ রাত ৮:০০
মেয়েদের এককলা
কেমনতরো বললে কথা
জমবে বুকের অস্থিরতা
এসব তোমার জানা
আমার কেবল ইচ্ছে করে
তোমার কোমল নাকটি ধরে
আদর করে দুইগালেতে
চড় মারি দুই খানা
হাসছো যে খুব বড়!
উলটো না হয় তুমিই আমায়
মারো এমনতরো!
নারীর হাতের নরম চড়ে
জানো তুমি, কী আছে সুখ?
জানবে তুমি কেমন করে
তুমি তো আর নও হে পুরুষ!
১৭ মার্চ ২০১০ রাত ১০:০৭
বয়সের ছড়া
*
বয়স কেবল বেড়েই চলে-
মন বোঝে না কোনো ছুঁতো!
মন মজে রয় রঙ্গরসে
মন কখনো হয় কি বুড়ো?
*
বয়স আমার তিন কুড়ি তিন
খাই সন্দেশ, মণ্ডামিঠাই
বাউকুল আর মিষ্টি তেঁতুল
এরচে’ স্বাদের আর কিছু নাই
*
আজকে তুমি জোয়ান আছো
কাল কী হবে, জানো?
বড়াই রেখে অবিনশ্বর
সত্যটাকে মানো।
৪ মার্চ ২০১০
আমি এবং আমার খানাপিনা
গাজরশশা খাই না আমি
ঘোড়ার মতো বুটচানা খাই
বউ তেঁতুলের চাটনি দিলে
বউয়ের কথাও যাই ভুলে ভাই
সবজি হলো ঘাসের মতোন
ওসব বাপু গরুর খাবার
বউ রাঁধিলে উচ্ছে ভাজি
আমি একাই করি সাবাড়
কোর্মা-পোলাও বিফ-চিকেনে
পাই না রুচি - ভাবটা দেখাই
রুটিন মাফিক তিনবেলা তাই
বউয়ের হাতের কানমলা খাই
এখন যদি কাঁদাও আমায়
গোসল করার কেচ্ছা বলে
ডুবসাঁতারে তলিয়ে যাবো
আষাঢ় মাসের খালের জলে
রোগবালাইয়ের কী আর বলি
নীরোগ থাকাই বড্ড অসুখ
আমার নামে তোমার মুখে
ফুলচন্দন পড়ুক পড়ুক
৪ মার্চ ২০১০
খোকার ইচ্ছেপূরণ
হায় হায় হচ্ছে টা কী?
ভাবছো আমায় কবি নাকি?
কেমন করে স্রোতের মতো
ছাড়ছো ছড়া অবিরত?
এবার তুমি থামো
নীচের তলায় যাবো এখন
কাঁদছে খোকনসোনা।
হাসছো কেন, মেয়ে?
ছন্দে বেজায় অমিল দেখে
বিষম মজা পেয়ে?
এই যে দেখো ছন্দে কেমন
মিল-অমিলের লাউ
আমি গেলাম নীচের তলায়
তুমি তেঁতুল খাও!
*
নীচের তলায় যেয়ে দেখি-
খোকনসোনার কাণ্ড এ কী!
গোঁ ধরেছে মায়ের কাছে
ফ্রিজের ভেতর যা যা আছে-
চকবার জ্যুস পেপসি ফ্রুটো
কোন-আইসক্রিম একটা-দুটো
সবকিছু তার চাই-
সবই আছে, কিন্তু আহা
কোন-আইসক্রিম নাই!
ছোট্ট খোকন পাগলা, জেদি
নেয় না কিছু মেনে-
বলে, আমায় কোন-আইসক্রিম
এক্ষুনি দাও এনে!
হাটবাজারের দোকানবিতান
আটটাতে যায় বন্ধ হয়ে
কোথায় যে পাই কোন-আইসক্রিম
রাত বারোটার পর সময়ে!
গাড়ি ডাকো, পোশাক পরো
জলদি করো! জলদি করো!
অমনি খোকন লাফিয়ে ওঠে
মুখে হাসির ঝিলিক ফোটে
তারপরে কী হলো-
হাটের সকল কোন-আইসক্রিম
ফুরিয়ে গেছে বেশ কিছুদিন
অবশেষে কী আর করা, বলো-
বাজার থেকে খোকনসোনার
বউটি কেনা হলো!
*
ঠিক ধরেছো ঠিক ধরেছো
বাবুর ছিল খিদে
পেটের খিদে সাড়ে নাকো
সুন্দরী বউ দিয়ে
আমরা কি আর অতো বুঝি
সরল সাদাসিধে-
পেটের জ্বালা না মিটিয়ে
দিয়েছিলাম বিয়ে
৪ মার্চ ২০১০
তিন পাগলের মেলা
তিন পাগলের জমছে মেলা
খেলছে ওরা দারুণ খেলা
সেই খেলাটি খেলতে গেলে
ধপাস ধপাস ল্যাং-টি খেলে
নারীর মাথায় টাক হবে আর
পুরুষ পাবে নারীর বাহার
তখন কী যে হবে!
দারুণ মজার মানুষগুলো
হাসির কথায় উঠবে কেঁদে
দুঃখ পেলে নাচবে সবে
আনন্দ-উৎসবে
৪ মার্চ ২০১০
বউ হতে সাবধান
বউশাসিত পুরুষসমাজ বউয়ের ভয়ে ত্রস্ত
বউয়ের ঠেলা সামাল দিতে সাহস লাগে মস্ত
আমার বড় বুকের পাটা, সাহস দেখাই কম কি!
বউয়ের হাতের মুগুর খেয়ে বন্ধ না হয় দমটি
তোমরা এমন ভুল করো না লড়তে বউয়ের সঙ্গে
এমন মধুর শিক্ষা পাবে, বুঝবে অঙ্গে অঙ্গে
৫ মার্চ ২০১০
নিমন্ত্রণ
আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
আমার ঘরে আয়
খেজুর রসের খির রেঁধেছে
সোনামণি মায়
আরও আছে পাটিসাপটা
ভিজনে পিঠে, খই
নারিকেলের মোয়া আছে
গোয়ালাদের দই
মা যে আমার বসে আছে
পিঠে পাকলা বেড়ে
আয়রে আমার বন্ধু সুজন
সব ফেলে, সব ছেড়ে
২৭ এপ্রিল ২০১০ রাত ১:০৭
দরদিয়া
কবে তোমায় দেখেছিলাম
মুখটি গেছি ভুলে
বুকের ভিতর নামটি তবু
রেখেছিলাম তুলে
আবার যদি দেখা মেলে
আমার সবুজ গাঁয়
সবুজ শাড়ি পরো তুমি
আলতা দিও পায়
দিঘির পাড়ে এসো সখি
ইচ্ছে যদি জাগে
সেই কথাটি বলবো তোমায়
যা বলি নি আগে
তোমার গভীর খোঁপার ভাঁজে
জীবন নামে রোজ
আমার ছায়া নিত্য সাঁঝে
করছে তোমার খোঁজ
আমার আছে হাসনাহেনার
গন্ধমাতাল রাতি
সঙ্গী হলে দেবো তোমায়
নিটোল মাতামাতি
২৭ এপ্রিল ২০১০
মায়ের হিসাব
মা আমারে সব দিয়েছে
আমি কিবা দিলাম মারে
আমার পাওনা নিলাম বুঝে
মায়ের হিসাব দিলাম না রে
হিসাব-নিকাশ সব মিটিয়ে
মা যে কোথায় যান হারিয়ে
মায়ের জন্য কাঁদি আমি
চির অভাগা রে
১০ ২০০৯ রাত ৮:০১
বীনাবাঈয়ের টাসকি খাওয়া
একখান তুড়িতে খাস তুই টাসকি
এইবার বল্ না, আর তুই চাস কী!
কম কিরে দেখেছিস ঘুঘুদের যমফাঁদ
ঐসবে থুথু দেয় গুরুদের জল্লাদ
ভালোই রে বীনাবাঈ ভালোই তো সব্বাই
আড়ালে বা আবডালে কে দেখে খাই খাই!
ঘাড়খানা মটকেছি, বেদনা পাস কি?
একটা তুড়িতে খাবি তুই টাসকি
টাসকি টাসকি
টাসকি টাসকি!
৯ নভেম্বর ২০০৮
একজন খাদকের কথা
দেখুন কী তার করুণ হাসি
খায় সে নিত্য পোলাও খাসি
আরো সে খায় আটার রুটি
তিন কুড়ি ’পর আরো দুটি
চাল যদি হয় আমন-আউশ
খায় সে মিটিয়ে মনের হাউশ
পেট ভরে না যতই সে খায়
খাবার লোভেই বাঁচতে সে চায়
হঠাৎ যদি খিদে চলে আসে
সেই তরাসে ঘুমায় না সে!
৩০ জানুয়ারি ২০০৯
অপ্সরার পুতুল
হাত খসে পড়ে গেলো
অপ্সরার কাঠের পুতুল-
চোখ হলো, ভুরু হলো,
হলো তার একগোছা চুল।
বাহা রে কাঠের চামচ,
আগুনে সে পুড়িবে না আর;
কী দারুণ মানিয়েছে
অপ্সরা ও পরীর মাঝার।
১৬ মার্চ ২০০৯
মেয়েকপালে ছেলে
ছেলের কপাল মন্দ কপাল
জোটে না তার মেয়ে
এ শোকে তার দিন কাটে হায়
খেয়ে, বা না খেয়ে
সুন্দরীদের চুলের খোঁপায়
দেয় বারে বার হানা
একটা-দুটো জোটেও যদি
খুঁড়ো, না হয় কানা
৪ মার্চ ২০১০ বিকাল ৫:৩০
গোপনচারিণী
আমার বাড়ি অবশেষে
এলেন সদাশয়া!
মেঘ না চেয়েই বৃষ্টি পেলাম
এ আপনার দয়া।
জলের দেশে পরীর দেশে
পদ্মলোচন হাসে
গোপনে তার পায়ের চিহ্ন
আমার চোখে ভাসে।
৪ মার্চ ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬
কানাবগী ও গাধার কাহিনি
একদা এক জঙ্গলের ধারে
এক কানাবগী এক গাধাকে থাপ্পড় মারে
ফৌজদারি আদালতে মামলা হলে
রায় হয় কানাবগী ফাঁস নেবে গলে
তারপর কেটে গেছে বহু বহু দিন
এই কাহিনিরও আর নেই কোনো চিন
২২ জুন ২০১০ বিকাল ৫:২২
নিজের ভাষায় কবিতা লেখা, সাথে আপনাদের জন্য কিছু ধাঁধা
স্কুলকলেজে বাংলায় প্রায়ই একটি প্রশ্ন থাকতো - ‘অমুক’ গল্পটি নিজের ভাষায় লেখো। একবার আমাদের এক শিক্ষক পাঠ্যবইয়ের একটা কবিতাকে নিজের শব্দে পুনর্লিখন করতে বলেছিলেন। কয়েকটা ছেলেমেয়ে বেশ ভালোই লিখেছিল, তবে শিক্ষক ওদেরকে ‘গাধা’ বলেছিলেন।
হোসনে আরার একটা অতি প্রিয় ছড়া ‘সফদার ডাক্তার’, যা বাল্যকালে আমাদের পাঠ্যসূচিতে ছিল; খুব মজা পেতাম ছড়াটি পড়ে; এবার আমার নিজের ভাষায় লেখা ছড়াটি পড়ুন আর স্মৃতির সাথে মিলিয়ে নিন।
কামিনী রায়ের ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটা নিজের ভাষায় লিখলে কেমন হয়? ‘কেউ যদি কিছু ভাবে’ শিরোনামে লিখেও ফেললাম কিছু একটা, তারপর ব্লগে পোস্ট করলাম। আমাকে অবশ্য অবাক হতে হয়েছিল এজন্য যে, কোনো ব্লগারই বুঝতে পারেন নি এটা একটা অনুলিখিত কবিতা মাত্র। ফেইসবুকে কেউ কেউ আমাকে সান্ত্বনাও দিলেন। এবার দুটো কবিতা পাশাপাশি মিলিয়ে দেখুন- কোথায় তালতলা, আর কোথায় তেঁতুলিয়া।
একবার ‘পরী’ গানটাকে উলটো করে লিখলাম ‘ঝড়ো’ শিরোনামে। আমার ব্লগে অবশ্য অত্যন্ত কম সংখ্যক পাঠকই এসে থাকেন, আর এ নগণ্য সংখ্যক পাঠকের কেউই বুঝতে পারলেন না কবিতাটার গূঢ় রহস্য।
‘যেতে নাহি দিব’ কবিতার কয়েকটা পঙ্ক্তি আমরা অনেক পড়েছি ও শুনেছি :
এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গ-মর্ত্য ছেয়ে
সবচেয়ে পুরাতন কথা, সবচেয়ে
গভীর ক্রন্দন, ‘যেতে নাহি দিব।’ হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।
এমনি ঘটিতেছে অনাদিকাল হতে
প্রলয় সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে।
এ থেকে লিখলাম ‘মগের মুল্লুক’। কয়েকজন পাঠক কড়া সমালোচনা করলেন আমার লেখা নিয়ে, কিন্তু সবারই অগোচরে থেকে গেলো এ কবিতার জনকের নাম। যদি ‘মগের মুল্লুক’ পড়ে আপনাদের মনে হয় কবিতায় সত্যিই এখন মগের মুল্লুক কায়েম হচ্ছে, আমি বলবো, ওসব মগা-টগার কথা বাদ দিয়ে ব্লগিঙে বড়শি ফেলুন, অনেক কাজে লাগবে।
স্কুলে সারমর্ম ও ভাবসম্প্রসারণে পড়েছি ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই...’। এটা থেকে অনুলিখিত হল ‘বড়’র মোহ’। প্রিয় ব্লগাররা অবশ্য পজিটিভ ছিলেন, কিন্তু এটাও কেউ ধরতে পারলেন না।
এবার আপনাদের জন্য ধাঁধা : নিচের শিরোনামযুক্ত লেখাগুলো পড়ে চেষ্টা করে দেখুন এগুলোর উৎস সম্পর্কে আপনাদের কার কতটুকু ধারনা আছে। এগুলো অতি পরিচিত পঙ্ক্তিমালা বা কবিতা থেকে অনুলিখন করা হয়েছে।
চাওয়া ও পাওয়া
আরাধনা
বিদ্রোহ - গ্রামের মানুষকে উচ্চ ভাবিব, সেই কথা আজ মিছে
বিশ্বখাদ্যনীতি
পথের কাদা
সবার উপরে নারীরা সত্য, নরেরা খড়ের ছাই
আসলে এগুলোকে ‘প্যারোডি’ বলা যায় না, কারণ, মৌলিক লেখার বৈশিষ্ট্য এতে বিদ্যমান; তবে দয়া করে কেউ এতে কোনো শিল্পগুণ খুঁজবেন না! কেউ হয়ত ‘নকল’ অভিহিত করতে পারেন। কিন্তু নকলও না। রবীন্দ্র-নজরুল যুগে তাঁদের প্রভাব-বলয় থেকে বাইরে বেরুতে পেরেছিলেন খুব কম কবিই। অনুলিখিত কবিতাগুলো সেজন্য প্রভাব-অমুক্ত কবিতা বড়-জোর, কিন্তু নকল নয়। এগুলোকে নকল বলা হলে ঐ যুগের কবিরাও নকল কবিই ছিলেন।
কিছু কিছু জায়গায় খুব গম্ভীর শব্দগুচ্ছের মাঝখানে নিছক আনকোরা, বেঢপ, বেমানান ও ইমম্যাচিউর শব্দমালা ঢুকে গেছে। সেখানে ফিক করে হেসে উঠলে আমার কিছু বলারও নাই, করারও নাই।
****
সফদার ডাক্তার
সফদার ডাক্তার মাথা ভরা চুল তার
খিদে পেলে ভাত খায় গিলিয়া
ছিঁড়ে গেলে কী উপায় এই ভয়ে রাস্তায়
হাঁটে জুতা বগলেতে তুলিয়া
প্রিয় তার টক শো, মহিষের মাংস
অটবির ছিমছাম খাটিয়া
সাঁচা কথা কয় সে, কারণটা এই যে
খায় নাকি ফ্রুটিয়া সে চাটিয়া
সফদার ডাক্তার ইয়া বোঁচা নাক তার
শুলে শুধু দেখা যায় ভুঁড়ি খান
কিপটে সে আদৌ নয়, এই তার সদা ভয়-
ঘরে বুঝি এলো কোনো মেজবান
সফদার ডাক্তার খুব ‘ফানি’ কাজ তার
ডিনারের পরে করে কুস্তি
মাঝরাতে ওঠে ঘেমে তারপর খালে নেমে
স্নান করে হয় তার স্বস্তি
সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার
কেঁচোকাটা কাঁচি তার পকেটে
চেঁছে ফেলা ভুরু তার চোখ দুটো সরু তার
পান খেয়ে হেঁটে যায় শকেটে
সফদার ডাক্তার ইদানীং সাধ তার
ব্লগে নাকি এ্যাকাউন্ট খুলিবেন
অনলাইন সাজেশন করিবেন বিতরণ
মাস্টার কার্ডে ফি তুলিবেন
৩০ নভেম্বর ২০০৯ রাত ২:৫১
আরাধনা
মরিতে চাহি না আমি তোমার ভুবনে
তোমার ভুবনে আমি প্রাণ দেখিয়াছি
তোমা হতে আলোজল, বাতাসের শ্বাসে
দ্বিতীয় জীবন লভি আজো বেঁচে আছি
মানুষেরা ভাবে, তারা সবকিছু বোঝে
সবকিছু জানে, তাই চায় না হারিতে
তোমার সকাশে আমি প্রেম চাহি নাকো
তোমার সকাশে চাই বলিদান দিতে
হে মহান, সুন্দর, আরতির বর
অন্তত ইশারায় দিও উত্তর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ দুপুর ১২:১৮
****
বসুমতী, তুমি এতো কিপ্টে কেন?
বসুমতী, বুঝলে না গরীবের ব্যথা
কত খাটুনিতে জোটে কিছু দানাপানি
বন্ধ রেখে দুনিয়ার খাদ্যের গুদাম
অহেতুক আমাদের কষ্ট দাও, রানি।
সব লোকে ধুঁকে ধুঁকে মরে অনাহারে
তোমার গৌরব তাতে সত্যিই কি বাড়ে?
তুমি ভাবো মরে ওরা বেঁচে রবে সুখে
ঈষৎ হাসির রেখা ভেসে ওঠে মুখে।
আর কত কিপ্টেমি, কত ভণ্ডামি?
ভালো হতে টাকা লাগে? আর কী চাও তুমি?
আমি দিব সব টাকা, সোনামুখে চুমু
বিনিময়ে দাও একটি ক্ষুদ্র শান্তি-ভূমি।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ রাত ১১:৪২
****
বড়’র মোহ
যেখানে দেখিবে খাল ফেলে দেখো ঝাঁকি জাল
পেলেও পেতে পারো ট্যাংরা পুঁটি
কখনো এমনও হবে রুই-কাতলা ধরা খাবে
পোনামাছ পাবে ছুটি।
এ অনন্ত চরাচরে যশোখ্যাতির পুচ্ছ ধরে
ছোটোরাই বড় হতে চায়
তাঁকে মানি বড় অতি নম্র-ভদ্র-বিদ্যাপতি
তার পানে ধরাধাম ধায়।
৯ অক্টোবর ২০১১ রাত ৮:৫০
****
মগের মুল্লুক
এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গ-মর্ত্য-ধামে
সবচেয়ে পুরাতন রীতি, সবচেয়ে
গভীর আক্ষেপ, ‘খেতে নাহি দিব’-
আমি রেঁধে কেন তোকে খাওয়াবো বসায়ে?
এমনি চলিছে রীতি অনাদিকাল হতে
রাঁধুনিরা রান্না করে, খায় বেটাছেলে।
কখনো-বা বাড়া ভাত কেড়ে নিয়ে খায়,
কেউ কেউ বাড়া ভাতে ছাই দেয় ফেলে।
কন্যা-জায়া-জননীরা- আর কতকাল
এভাবে বোকার মতো খাওয়াবে রাঁধিয়া?
আর কতকাল তুমি মৎস কুটিবে,
বুয়ার মতন তুমি মরিবে খাটিয়া?
যতদিন বেঁচে রবো এ ধরণিতলে
দেখে নেবো বউদের বুয়া কে বানায়!
সেইদিন আমি তবে প্রশান্তি পাবো-
পুরুষেরা রান্না করে, নারী কেড়ে খায়।
...
আমি সেইদিন পাবো শান্তি-
যবে অত্যাচারিত রমণীকুলের যাতনা হইবে দূর।
নারীর পায়ের তলায় লুটিয়ে পুরুষ মাগিবে ক্ষমা।
তামাম বিশ্ব নারীর অধীনে, পুরুষ হইবে বুয়া।
১০ অক্টোবর ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৯
****
সবার উপরে নারীরা সত্য, নরেরা খড়ের ছাই
দেখিনু সেদিন বাসে
নারীরা দাঁড়িয়ে, পুরুষ মানুষ সিট চেপে বসে আছে।
চোখ ফেটে এলো জল,
জগৎ জুড়িয়া এমন করিয়া পুরুষ খাটাবে বল!
পাষাণ পুরুষ দেখিল না চেয়ে ঘাড়ের উপর তার
একটি অবলা জননী দাঁড়িয়ে, শরীর কম্পমান
কে জানে হয়তো, গর্ভে তাহার ‘সুপুরুষ’ সন্তান-
তিলতিল করে কষ্ট সহিয়া বহিতেছে দেহভার।
হায়রে অবলা নারী,
তোমার সাহসে ঝলসিয়া ওঠে পুরুষের তরবারি;
তোমাকে ভাবিয়া কবিতা লিখিয়া নর হয় বিখ্যাত
অথচ তুমিই আড়ালে রহিলে, চিরকাল অজ্ঞাত।
কোনোকালে কিছু করিতে পারে নি পুরুষ লোকেরা একা,
বুদ্ধি দিয়েছে গোপনে নারীরা, বাহিরে যায় নি দেখা।
অথচ নারীরা কোথাও এখন পায় না ন্যায্য দাম
সবকিছুতেই জবরদখল, মগের মর্ত্যধাম।
নারীরা এবার জাগো,
ঢেঁকি-পাটা ও দাও-বটি ফেলে কার-ড্রাইভিং শেখো।
পাইলট হয়ে এফ-সিক্সটিন, বোয়িং চালাতে হবে-
মদন মদন পুরুষেরা সব অবাক তাকিয়ে রবে।
প্রতিশোধ হবে নিতে-
নারীরা তখন সিটে বসিবেক, দণ্ডায়মান নর।
নারীরা কষিয়া শাসন করিবে, পুরুষ খাইবে চড়।
সত্যিকারের সমতা তখন দেখা যাবে ধরণিতে।
শোনো হে পুরুষ ভাই,
সবার উপরে নারীরা সত্য, নরেরা খড়ের ছাই।
১১ অক্টোবর ২০১১ রাত ১০:৪৯
ঝড়ো
আজ তোমার মনে ভয় নেই, ছেলে
তুমি দ্রুতবেগে ছুটে চলছো
আগুন শরীরে, দৃষ্টি প্রখর
আমি তোমার জন্য কপোলে মেখেছি চাঁদের সুষমা
তোমার পেছনে থির পড়ে থাকে অলোক তেপান্তর
আজ তোমার চোখের আলো দীপ্ত
বোশেখের ঝড়ে চূর্ণ হয়ে উড়ে যায় সকল দ্বিধা আমার পথে পথে
তুমি আমার হাতে তুলে এনে দিলে হিমাচল গিরি, তেজস্বী রোদ,
বাজখাই প্রেম, অনন্য ভাস্বর।
১৫ অক্টোবর ২০১১ রাত ১১:১৭
****
পথের কাদা
কাদা হেরি ক্ষান্ত কেন রাস্তায় হাঁটিতে?
হাঁটা বিনা যায় কি পৌঁছা দূরের বাটীতে?
২০ অক্টোবর ২০১১ বিকাল ৩:৩৪
****
বিশ্বখাদ্যনীতি
১
এ জগতে হায় সেই বেশি খায়
ক্ষুধা লাগে যার বেশি
রাজার মুখ তো খাবেই গোশতো
ফাটায়ে পেটের পেশি
২১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ২:২২
২
এ জগতে হায় সেই খেতে চায়
খানা নাই যার ঘরে,
ধনীরা করছে ডায়েট কন্ট্রোল
গরীবে না খেয়ে মরে।
২৮ অক্টোবর ২০১১ দুপুর ১২:২২
****
কেউ যদি কিছু ভাবে
সাধ হয় কিছু করি
রিকশা বা বাসে চড়ি
তখনই মন বলে, থামো
কেউ যদি কিছু ভাবে!
গোপনে গোপনে হাঁটি
সুনসান পরিপাটি
কীভাবে জনসমক্ষে যাবো?
কেউ যদি কিছু ভাবে!
কত কী যে ভাবি মনে
আলো দেবো জনে জনে
সব আশা মুকুলেই মরে
কেউ যদি কিছু ভাবে!
কখনো-বা বেদনায়
বুক যদি ভেঙে যায়
কাঁদতে পারি না প্রাণ খুলে
কেউ যদি কিছু ভাবে!
মানবিক কোনো কাজে
সবে জোটে একসাথে-
আমিও সে-দলে যেতে চাই;
কেউ যদি কিছু ভাবে!
হায়রে নিঠুর বিধি
আজব তোমার রীতি-
মরবার ভয়ে আড়ালে লুকাই,
কেউ যদি কিছু ভাবে!
১ নভেম্বর ২০১১ রাত ১২:১৯
বিদ্রোহ - গ্রামের মানুষকে উচ্চ ভাবিব,
সেই কথা আজ মিছে
তোমরা রহিবে নয়নাভিরাম চিরসবুজের গাঁয়,
আমরা মরিব পঁচা ডাস্টবিনে, নোংরা নর্দমায়!
তোমরা একাই উপভোগ করো পল্লীর পরিবেশ,
ঘিঞ্জি শহরে ধুঁকিতে ধুঁকিতে আমাদের জান শেষ।
আমাদের দেখে নাক ছিটকাও, করো নাকো সম্মান,
তোমাদের সাথে আমাদের কত বিস্তর ব্যবধান!
গ্রামের মানুষ শোনো,
আমরাও মানুষ এই বাংলার, নই ভিনদেশী কোনো।
তোমরা কাটাবে সুখের জীবন চরণে চরণ তুলে,
তা বলে তোমাদের উচ্চ ভাবিব, সেই কথা যাও ভুলে।
বিদ্রোহ আজ - বিদ্রোহ সবখানে,
আমরাও আজ গ্রামে ঠাঁই চাই, তোমাদের মাঝখানে।
শহরের দিকে তাকিয়ে দেখো, দলে দলে, গানে গানে
ইটের পাঁজর ভাঙিয়া মানুষ ছুটিছে গ্রামের পানে।
আসিতেছে শুভদিন,
কড়ায় গণ্ডায় তোমাদের থেকে শোধিয়া লইব ঋণ।
তোমরা রহিবে শীতল ছায়াতে, আমরা সিদ্ধ হবো!
শীঘ্র দেখিবে এই ব্যবধান আচানক ভেঙে দিব।
১২ নভেম্বর ২০১১ রাত ১০:০০
আমাদের বড় নদী
আমাদের বড় নদী ভাঙে বাঁকে বাঁকে
ছয়মাস বুকে তার হাঁটুজল থাকে
বর্ষার চারমাস জলে পাড় ভাসে
বুক ফেটে চৌচির গ্রীষ্মের মাসে
আমাদের বড় নদী আর বড় নেই
নাম তার পদ্মা, চেনে সকলেই
৫ মে ২০১২ রাত ১২:০৯
****
ঝড়ের দিনে আমার বাড়ি
ঝড়ের দিনে এলে তিতির
পাখায় করে ভর
জলপান তো করো আগে
বিশ্রাম তারপর
ঝড়ের সময় আম কুড়াবো
মাথায় পরে ক্যাপ
ঝড় থামিলে কাঁঠাল খাবো
একটু দিয়ে গ্যাপ
৫ মে ২০১২ রাত ১২:১৭
****
ছুটি
অফিস যদি ছুটি দিল ‘নৈমিত্তিক’ নামে
কোথায় কাটান সেই ছুটিটা, কোন্ কাজে কোন্ ধামে?
অফিস-ছুটি পেলেও তা নয় ঘরের থেকে ছুটি
দড়ি দিয়ে বাঁধা আছেন, ঘরেতে তার খুঁটি।
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৪২
বলার কথা নয়
মামার ছিল হুলো বিড়াল
আমার ছিল পুষি
সুমির ছিল জুতোর ফিতা
রুমির ছিল খুশি।
ওদের ছিল ফুলের ঝুড়ি
রোদের ছিল সাথি
ঘরের ছিল পাটের দড়ি
পরের ছিল হাতি
সবাই গেলো নদীর পাড়ে
গদাই কোথা র’লো?
কলার পাতে চড়ুইভাতি
বলার কিছু হলো?
৫ মার্চ ২০১২ রাত ২:৫০
আমাদের লাবিব
দুষ্টের শিরোমণি
তেড়া তার ঘাড়
নিজ হাতে খায় না সে
নিজের খাবার!
টিভি আর ল্যাপটপে
মালিকানা তার
সাধ্য কি দাবি করি
কিছু অধিকার!!
টিভি ছেড়ে কার্টুন
ল্যাপটপে গেমস
‘কলাভেরি’ গান গায়
আমাদের জেমস!!!
৭ মার্চ ২০১২
ভালোবাসা
*
ভালোবাসা হলো যষ্ঠিমধু
কিংবা ধরো নিমের রস
আমি তা কখনো চেখেও দেখি নি
আমার হয় নি প্রেমের বয়স।
*
তোমার বাড়ি যাবো ভ্রমর
বসতে দিও পিঁড়ে।
পান-সিগারেট খাই না আমি
খাই দধি ও চিড়ে।
*
২৫ আগস্ট ২০১০ রাত ৩:৩০
আজগুবি ছড়া-২
তোমার কেন ইচ্ছে করে পাখির মতো হাঁটতে?
পাটার উপর পানি ঢেলে সারাটা দিন বাঁটতে?
তোমার কেন পাখির মতো শাড়ি পরার সাধ হয়?
পাখির মতো কাটলে সাঁতার কেন অপবাদ হয়?
তোমার যখন পাখির মতো ব্লগিং করার ইচ্ছে
আমার তখন একটি চড়ুই শূন্যে উড়াল দিচ্ছে।
২৫ এপ্রিল ২০১২
যাবজ্জীবন হাজতবাস
লোকটা কী ভালো ছিল
ছিল কত সুখে
গতকাল বিয়ে করে
জেলে গেলো ঢুকে!
এই জেল সেই জেল
কুড়ি মাসে সাল
বউয়ের হুকুমে টানে
লাঙ্গল-জোয়াল!
২৯ আগস্ট ২০১২
ফালতু বালক
এই ছেলেটা আবোল-তাবোল
ফালতু বকে বাঁধায় কি গোল?
সত্যিকারের সেই ইতিহাস
আমরা কি সব জানি?
কে বলে সে ফালতু বালক
জানো কি সে বিমান-চালক?
বরই গাছের ডগায় বসে
ঝাঁকায় সে ডাল জোরসে কষে
আর ডেকে কয়, এই দেখে যাও
আমার বিমানখানি।
এই ছেলেটা কী বাহাদুর
আমরা কি সব জানি?
২৯ অক্টোবর ২০১২
দোহার
মাঝিদের বাড়ি, তাঁতীদের বাড়ি
গোয়ালার বাড়ি, চাষাদের বাড়ি
সবগুলো বাড়ি গলাগলি ধরে
বসে আছে সারি সারি
কোথাও শাবুক মেঘুলা-দোহার
কোথাও বা চর পদ্মার পার
সবচেয়ে বড় জয়পাড়া হাট-
চৌধুরীদের বাড়ি
পশ্চিমে বহে পদ্মা জননী
পুবে আড়িয়াল বিল
দোহারবাসীকে ধন্য করেছে
জীবনকে গতিশীল
২৯ অক্টোবর ২০১২
ইচ্ছে
তোমার সাথে কথা বলার
ইচ্ছে ছিল, জানতে
‘প্রেম গুটিয়ে’ চলে গেলে
কলের পানি আনতে
এখন আমার ভাল্লাগে না
কিচ্ছুটুকুন করতে
ইচ্ছে করে খালের জলে
ঘোড়ার পিঠে চড়তে
২৪ মে ২০১২
সুবোধ বালক
এক যে ছিল সুবোধ বালক
জমিদারের নাতি
শ্বশুর বাড়ি আসতে-যেতে
তার ছিল এক হাতি
হাতির পিঠে চড়তো নাতি
দাদুর কোলে বসে
দুলকি তালে যেতে যেতে
ঘুম দিত খুব কষে
শ্বশুর বাড়ি গিয়ে নাতি
কী করতো জানো?
ঝালমুড়ি আর মাঠা খেতো
আর সে খেতো পানও।
যখন হতো ফেরার পালা
ফিরতো চড়ে হাতি
দাদুর কোলে নাতবউ আর,
বউয়ের কোলে নাতি। ছবিটা কল্পনা করুন
৯ আগস্ট ২০১৩
মজার কাণ্ড
তোমরা কি তার নাম শুনেছ
যার কথাটি বলছি এখন
ছোট্ট যদিও কিন্তু জেনো
দেখতে সে নয় যেমন-তেমন
স্যুট পরেছে টাই পরেছে
চক্লেট রং শু পরেছে
কালো র্যা ভেন চশমা চোখে
মাথার উপর হ্যাট রয়েছে
তারপর সে ডাঁটের সাথে
ড্রুয়িং রুমে পড়লো বসে
দেখতে যেন মস্ত জ্ঞানী
আলাপ করে গভীর রসে
কিন্তু মজার কাণ্ড দেখো
স্যুট-টাই-হ্যাট চশমা ছাড়া
পুরোটা সে জামার ভিতর
ভদ্দরলোক ন্যাংটো খাড়া
সত্যি জানো, কী হয়েছে?
বলছি তবে, সবুর করো
আজকে খোকন রাগ করেছে
তাইতো পোশাক এমনতরো
বাবার গায়ের পোশাক পরে
পরিবারের কর্তা সে আজ
আমরা সবাই পাইক-পেয়াদা
খোকন হলো রাজাধিরাজ
২৪ আগস্ট ২০১৪
হাবিজাবি
হাবিজাবি যখন-তখন
কে যে এসব লেখে
আবোল-তাবোল বকাবকি
কার বা কাছে শেখে,
পিছন থেকে বুদ্ধি দিতে
তার সাথে আর কে কে
ঘুণাক্ষরে পেতাম যদি খোঁজ
নাওয়া-খাওয়া-গাওয়া ভুলে
গেঞ্জি এবং লুঙ্গি খুলে
পেটের উপর দু ঠ্যাং তুলে
ওদের সাথেই পাঞ্জা দিতাম রোজ
১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ রাত ১০:২৮
কাজের লোক
আজ সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম মস্ত বড় কাজে
তার কিছুটা প্রমাণ যদি চাও
দু কানে দুই চাট্টি মারো
নাকের ডগায় পেরেক গাড়ো
কপাল ’পরে দু খান চাড়া বসাও
রণ্পা চড়ে উর্ধ্বমুখে পিছন পানে হাঁটো
কুয়োয় নেমে কুড়াল দিয়ে এঁটেল মাটি কাটো
১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ রাত ১০:৪৪
একটি আত্মভোলা পাখি
একটি পাখি খুব মনোরম
কুসুম ছানার মতো
পাখায় তাহার অবাক আলো
চিরদিন উদ্গত
সেই পাখিটা আত্মভোলা বড়।
নিজের নামও যায় ভুলে সে
কাণ্ড কেমনতরো!
৬ মে ২০১২ রাত ১১:৫৫
অকুতোভয়
এই দেখে যাও বাচ্চারা সব
হচ্ছে বেদম ষাঁড়ের লড়াই
মর্দরা সব যাচ্ছে সরে
আমি কি আর ষাঁড়কে ডরাই?
আবুল বাবুল মোহন মিয়া
ধরছে কষে ষাঁড়ের রসি
আমার পায়ে খড়ম কিনা
যাই, একটু দূরেই বসি
২৫ আগস্ট ২০১৪
ছড়াণু
তোমাদের সাথে দেখো পুরোপুরি মিলে যায়
ছড়া লিখিবার খেলা অদ্ভুত মজাদার।
নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে এ খেলাটি খেলা যায়
শুধু ভয় - বউ যদি তেড়ে আসে পেটাবার।
*
মাথার উপর লাটিম ঘোরে
মাটির উপর পা
মনের ভিতর ঘুরছে সেজন
যাকে পেলাম না
*
খাওয়ার মাঝে নাওয়ার মাঝে
হাওয়ার মাঝে গাওয়ার মাঝে
সবকিছু্তে সবখানেতে
মিল-অমিলের ছন্দ থাকে
এই কথা কেউ বলতে গেলেই
সবাই তাকে মন্দ ডাকে
*
মুগ্ধ হলাম দারুণ মজার একটি ছড়া পড়ে
ভালোই হলো, ছড়ার লেখক পেলাম আরেক জনা
ছড়ার খেলা চলছে ব্লগে বেশ কিছুদিন ধরে
আপনাকে খুব মিস করেছি ম্যাডাম সুরঞ্জনা!
*
কেমন তুমি ছড়ার রাজা
খাও কলা আর ছোলা ভাজা
আমার প্রিয় রয়না মাছ
ভরদুপুরের কদম গাছ
*
সবাক বলে, শায়মা
পুতুল খেলি, আয় না
শায়মা বলে সময় নাই
ডাকছে ঘরে নাত-জামাই
*
মেঘ বলেছে যাবো যাবো
মাথলা মাথায় ধান শুকাবো
বোশেখ মাসে এসো, তোমায়
মেঘ নামানোর গান শুনাবো
*
দাদুর ছড়ি লম্বা ছড়ি
আমার ছড়ি বাট্টু
তোমার ছড়ি ভাঙ্গা ছড়ি
মাঝখানেতে গাট্টু
*
পঙ্খিরাজের পাখায় করে ভর
একদিন এক যাবো পরীর দেশে
চাও কি হতে আমার সহচর
মেঘের দেশে যেতে ভেসে ভেসে?
*
আপনাদেরকে বোকা-সোকা ভেবে
নিজে করতাম গর্ব
এখন দেখি ভুল সবই ভুল,
সেই দুঃখেই মরবো
মার্চ-এপ্রিল ২০১০
ছড়াকণিকা
**
এতো এতো ছড়া পড়ে চুল গেছে পেকে
সাদা চুল কালো করি গোয়ালাকে ডেকে
৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
**
এই সেরেছে
এসে গেছে
দুলকি ঘোড়ার
ছড়ার রানি
ছড়ায় ছড়ায়
ছড়ির লাগি
দেখবো ছড়ি
টানাটানি
৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
**
ছড়া গেছে দাঁড়িয়ে
বটগাছ ছাড়িয়ে
পাহাড়ের প্রান্তে
তালগাছে বেল হয়
পাটশাকে নিরাময়
তুমি কি তা জানতে?
১০ সেপ্টেম্বর ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২১
**
ধাঁধা থেকে ছড়া আমার
হয় না আদৌ পড়া
সময়-বেজি দৌড়ে পালায়
যায় না তাকে ধরা
ধাঁধার চেয়ে কঠিন কিছু
এই জগতে নেই
দেখলে ধাঁধা মাথা ঘোরায়
হারিয়ে ফেলি খেই
১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ দুপুর ২:৩৫
**
তোমার দেয়া উপাধিটা দারুণ উপভোগ্য
আমার উপদেষ্টা হতে তুমিই সর্বযোগ্য
১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ বিকাল ৫:১৪
**
কোন্ কেলাশে পড়ো তুমি, নাম কী পাঠশালার?
তোমার সাথে পড়তে বসি অনেক সাধ আমার
১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৪
**
নারীর জন্য দুনিয়া সৃষ্টি,
নারীর জন্য বাঁচিয়া রই
নারী না থাকলে থুবড়ে যেতো
এই পৃথিবীর সমস্তই।
১০ এপ্রিল ২০১০ দুপুর ২:১৯
**
মনে মনে সুর তুলি, মনে মনে গাই
মনে মনে নাচানাচি, মনকলা খাই
মনকলা খেতে খেতে মনেই হারাই।
৭ এপ্রিল ২০১২ রাত ১১:৫৯
**
কোন্ বয়েতি শেখালি তুই মেয়ে
প্রেমের ঘাটে ঘোলের পানি খেয়ে?
১৩ অক্টোবর ২০০৯ দুপুর ২:১৯
**
এখন ব্যাক-আপ কম্পুতে রাখি
বউয়ের হাতেই খাইদাই
উদয়াস্ত ব্যস্ত থাকি
হাঁটতে হাঁটতে একটু ঘুমাই।
৫ মার্চ ২০০৯
**
একদা প্রেম ছিল তুফানে ও ঘরের
শিকড়ে
এখন সে কুহকিনী, জানি না কোথায়,
কী করে
অক্টোবর ২০০৮
**
তোমার যখন অঢেল সময়
আমার তখন জগৎ জুড়ে ঘুম
তুমি যখন কবিতা লেখো
আমি জানি, এ নয় আমি। ঠিক?
তুমি জানো, আমি তো নই কেউ
আমার ভিতর অন্য আরেকজন
তোমার নামে দিন-রাত্তির জুড়ে
কাব্য লিখেই হয়ে গেলো খুন
৩১ জুলাই ২০১৫
দ্বিতীয় উৎসর্গ : পড়তে পড়তে যাঁরা হাঁপিয়ে উঠলেন
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩১