স্কুলকলেজে বাংলায় প্রায়ই একটি প্রশ্ন থাকতো - 'অমুক' গল্পটি নিজের ভাষায় লেখো। একবার আমাদের এক শিক্ষক পাঠ্য বইয়ের একটা কবিতাকে নিজের শব্দে পুনর্লিখন করতে বলেছিলেন। কয়েকটা ছেলেমেয়ে বেশ ভালোই লিখেছিল, তবে শিক্ষক ওদেরকে 'গাধা' বলেছিলেন

হোসনে আরার একটা অতি প্রিয় ছড়া ‘সফদার ডাক্তার’, যা বাল্যকালে আমাদের পাঠ্যসূচিতে ছিল; খুব মজা পেতাম ছড়াটি পড়ে; এবার এবার আমার নিজের ভাষায় লেখা ছড়াটি পড়ুন আর স্মৃতির সাথে মিলিয়ে নিন।
কামিনী রায়ের ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটা নিজের ভাষায় লিখলে কেমন হয়? ‘কেউ যদি কিছু ভাবে’ শিরোনামে লিখেও ফেললাম কিছু একটা, এবার দেখুন- কোথায় তালতলা, আর কোথায় তেঁতুলিয়া

'যেতে নাহি দিব' কবিতার কয়েকটা পঙ্ক্তি আমরা অনেক পড়েছি ও শুনেছি :
এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গ-মর্ত্য ছেয়ে
সবচেয়ে পুরাতন কথা, সবচেয়ে
গভীর ক্রন্দন, ‘যেতে নাহি দিব।’ হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।
এমনি ঘটিতেছে অনাদিকাল হতে
প্রলয় সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে।
এ থেকে লিখলাম ‘মগের মুল্লুক’। যদি 'মগের মুল্লুক' পড়ে আপনাদের মনে হয় কবিতায় সত্যিই এখন মগের মুল্লুক কায়েম হচ্ছে, আমি বলবো, ওসব মগা-টগার কথা বাদ দিয়ে ব্লগিঙে বড়শি ফেলুন, অনেক কাজে লাগবে

স্কুলে সারমর্ম ও ভাবসম্প্রসারণে পড়েছি ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই...’। এটা থেকে অনুলিখিত হল ‘বড়’র মোহ’

এবার আপনাদের জন্য ধাঁধা : নিচের শিরোনামযুক্ত লেখাগুলো পড়ে চেষ্টা করে দেখুন এগুলোর উৎস সম্পর্কে আপনাদের কার কতটুকু ধারনা আছে। এগুলো অতি পরিচিত পঙ্ক্তিমালা বা কবিতা থেকে অনুলিখন করা হয়েছে।
চাওয়া ও পাওয়া
আরাধনা
বিদ্রোহ - গ্রামের মানুষকে উচ্চ ভাবিব, সেই কথা আজ মিছে
বিশ্বখাদ্যনীতি
ঝড়ো
পথের কাদা
সবার উপরে নারীরা সত্য, নরেরা খড়ের ছাই
আসলে এগুলোকে ‘প্যারোডি’ বলা যায় না, কারণ, মৌলিক লেখার বৈশিষ্ট্য এতে বিদ্যমান; তবে দয়া করে কেউ এতে কোনো শিল্পগুণ খুঁজবেন না! কেউ হয়ত ‘নকল’ অভিহিত করতে পারেন। কিন্তু নকলও না। রবীন্দ্র-নজরুল যুগে তাঁদের প্রভাব-বলয় থেকে বাইরে বেরুতে পেরেছিলেন খুব কম কবিই। অনুলিখিত কবিতাগুলো সেজন্য প্রভাব-অমুক্ত কবিতা বড়-জোর, কিন্তু নকল নয়। এগুলোকে নকল বলা হলে ঐ যুগের কবিরাও নকল কবিই ছিলেন।
কিছু কিছু জায়গায় খুব গম্ভীর শব্দগুচ্ছের মাঝখানে নিছক আনকোরা, বেঢপ, বেমানান ও ইমম্যাচিউর শব্দমালা ঢুকে গেছে। সেখানে ফিক করে হেসে উঠলে আমার কিছু বলারও নাই, করারও নাই


****
সফদার ডাক্তার
সফদার ডাক্তার মাথা ভরা চুল তার
খিদে পেলে ভাত খায় গিলিয়া
ছিঁড়ে গেলে কী উপায় এই ভয়ে রাস্তায়
হাঁটে জুতা বগলেতে তুলিয়া
প্রিয় তার টকশো, মহিষের মাংস
অটবির ছিমছাম খাটিয়া
সাঁচা কথা কয় সে, কারণটা এই যে
খায় নাকি ফ্রুটিকা সে চাটিয়া
সফদার ডাক্তার ইয়া বোঁচা নাক তার
শুলে শুধু দেখা যায় ভুঁড়ি খান
কিপটে সে আদৌ নয়, এই তার সদা ভয়-
ঘরে বুঝি এলো কোনো মেজবান
সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার
কেঁচোকাটা কাঁচি তার পকেটে
চেঁছে ফেলা ভুরু তার চোখ দুটো সরু তার
পান খেয়ে হেঁটে যায় শকেটে
৩০ নভেম্বর ২০০৯ রাত ২:৫
****
আরাধনা
মরিতে চাহিনা আমি তোমার ভুবনে
তোমার ভুবনে আমি প্রাণ দেখিয়াছি
তোমা হতে আলোজল, বাতাসের শ্বাসে
দ্বিতীয় জীবন লভি আজো বেঁচে আছি
মানুষেরা ভাবে, তারা সবকিছু বোঝে
সবকিছু জানে, তাই চায় না হারিতে
তোমার সকাশে আমি প্রেম চাহি নাকো
তোমার সকাশে চাই বলিদান দিতে
হে মহান, সুন্দর, আরতির বর
অন্তত ইশারায় দিও উত্তর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ দুপুর ১২:১৮
****
চাওয়া ও পাওয়া
বসুমতী, বুঝলে না গরীবের ব্যথা
কতো খাটুনিতে জোটে কিছু দানাপানি
বন্ধ রেখে দুনিয়ার খাদ্যের গুদাম
অহেতুক আমাদের কষ্ট দাও, রানি।
সব লোকে ধুঁকে ধুঁকে মরে অনাহারে
তোমার গৌরব তাতে সত্যিই কি বাড়ে?
তুমি ভাবো মরে ওরা বেঁচে রবে সুখে
ঈষৎ হাসির রেখা ভেসে ওঠে মুখে।
আর কতো কিপ্টেমি, কতো ভণ্ডামি?
ভালো হতে টাকা লাগে? আর কী চাও তুমি?
আমি দিব সব টাকা, সোনামুখে চুমু
বিনিময়ে দাও একটি ক্ষুদ্র শান্তি-ভূমি।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ রাত ১১:৪২
****
বড়’র মোহ
যেখানে দেখবে খাল ফেলে দেখো ঝাঁকি জাল
পেলেও পেতে পারো ট্যাংরা পুঁটি
কখনো এমনও হবে রুই-কাতলা ধরা খাবে
পোনামাছ পাবে ছুটি।
এ অনন্ত চরাচরে যশোখ্যাতির পুচ্ছ ধরে
ছোটোরাই বড় হতে চায়
তাঁকে মানি বড় অতি নম্র-ভদ্র-বিদ্যাপতি
তার পানে ধরাধাম ধায়।
৯ অক্টোবর ২০১১ রাত ৮:৫০
****
মগের মুল্লুক
এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গ-মর্ত্য-ধামে
সবচেয়ে পুরাতন রীতি, সবচেয়ে
গভীর আক্ষেপ - খেতে নাহি দেবো
আমি রেঁধে কেন তোকে খাওয়াবো বসায়ে?
এমনি চলছে রীতি অনাদিকাল হতে
রাঁধুনিরা রান্না করে, খায় বেটাছেলে।
কখনো বা বাড়া ভাত কেড়ে নিয়ে খায়,
কেউ কেউ বাড়া ভাতে ছাই দেয় ফেলে।
কন্যা-জায়া-জননীরা- আর কতোকাল
এভাবে বোকার মতো খাওয়াবে রাঁধিয়া?
আর কতোকাল তুমি মৎস কুটিবে,
বুয়ার মতোন তুমি মরিবে খাটিয়া?
যতোদিন বেঁচে রবো এ ধরণিতলে
দেখে নেবো বউদের বুয়া কে বানায়।
সেইদিন আমি তবে প্রশান্তি পাবো-
পুরুষেরা রান্না করে, নারী কেড়ে খায়।
...
আমি সেইদিন পাবো শান্তি-
যবে অত্যাচারিত রমণীকুলের যাতনা হইবে দূর।
নারীর পায়ের তলায় লুটিয়ে পুরুষ মাগিবে ক্ষমা।
তামাম বিশ্ব নারীর অধীনে, পুরুষ হইবে বুয়া।
১০ অক্টোবর ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৯
****
সবার উপরে নারীরা সত্য, নরেরা খড়ের ছাই
দেখিনু সেদিন বাসে
নারীরা দাঁড়িয়ে, পুরুষ মানুষ সিট চেপে বসে আছে।
চোখ ফেটে এলো জল,
জগৎ জুড়িয়া এমন করিয়া পুরুষ খাটাবে বল?
পাষাণ পুরুষ দেখিল না চেয়ে ঘাড়ের উপর তার
একটি অবলা জননী দাঁড়িয়ে, শরীর কম্পমান
কে জানে হয়তো, গর্ভে তাহার ‘সুপুরুষ’ সন্তান-
তিলতিল করে কষ্ট সহিয়া বহিতেছে দেহভার।
হায়রে অবলা নারী,
তোমার সাহসে ঝলসিয়া ওঠে পুরুষের তরবারি;
তোমাকে ভাবিয়া কবিতা লিখিয়া নর হয় বিখ্যাত
অথচ তুমিই আড়ালে রহিলে, চিরকাল অজ্ঞাত।
কোনোকালে কিছু করিতে পারে নি পুরুষ লোকেরা একা,
বুদ্ধি দিয়েছে গোপনে নারীরা, বাহিরে যায় নি দেখা।
অথচ নারীরা কোথাও এখন পায় না ন্যায্য দাম
সবকিছুতেই জবরদখল, মগের মর্ত্যধাম।
নারীরা এবার জাগো,
ঢেঁকি-পাটা ও দাও-বটি ফেলে কার-ড্রাইভিং শেখো।
পাইলট হয়ে এফ-সিক্সটিন, বোয়িং চালাতে হবে-
মদন মদন পুরুষেরা সব অবাক তাকিয়ে রবে।
প্রতিশোধ হবে নিতে-
নারীরা তখন সিটে বসিবেক, দণ্ডায়মান নর।
নারীরা কষিয়া শাসন করিবে, পুরুষ খাইবে চড়।
সত্যিকারের সমতা তখন দেখা যাবে ধরণিতে।
শোনো হে পুরুষ ভাই,
সবার উপরে নারীরা সত্য, নরেরা খড়ের ছাই।
১১ অক্টোবর ২০১১ রাত ১০:৪৯
****
ঝড়ো
আজ তোমার মনে ভয় নেই, ছেলে
তুমি দ্রুতবেগে ছুটে চলছো
আগুন শরীরে, দৃষ্টি প্রখর
আমি তোমার জন্য কপোলে মেখেছি চাঁদের সুষমা
তোমার পেছনে থির পড়ে থাকে অলোক তেপান্তর
আজ তোমার চোখের আলো দীপ্ত
বোশেখের ঝড়ে চূর্ণ হয়ে উড়ে যায় সকল দ্বিধা আমার পথে পথে
তুমি আমার হাতে তুলে এনে দিলে হিমাচল গিরি, তেজস্বী রোদ,
বাজখাই প্রেম, অনন্য ভাস্বর।
১৫ অক্টোবর ২০১১ রাত ১১:১৭
****
পথের কাদা
কাদা হেরি ক্ষান্ত কেন রাস্তায় হাঁটিতে?
হাঁটা বিনা যায় কি পৌঁছা দূরের বাটীতে?
২০ অক্টোবর ২০১১ বিকাল ৩:৩৪
****
বিশ্বখাদ্যনীতি
১
এ জগতে হায় সেই বেশি খায়
ক্ষুধা লাগে যার বেশি
রাজার মুখ তো খাবেই গোশ্তো
ফাটায়ে পেটের পেশি
২১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ২:২২
২
এ জগতে হায় সেই খেতে চায়
খানা নাই যার ঘরে,
ধনীরা করছে ডায়েট কন্ট্রোল
গরীবে না খেয়ে মরে।
২৮ অক্টোবর ২০১১ দুপুর ১২:২২
****
কেউ যদি কিছু ভাবে
সাধ হয় কিছু করি
রিকশা বা বাসে চড়ি
তখনই মন বলে, থামো
কেউ যদি কিছু ভাবে!
গোপনে গোপনে হাঁটি
সুনসান পরিপাটি
কীভাবে জনসমক্ষে যাবো?
কেউ যদি কিছু ভাবে!
কতো কী যে ভাবি মনে
আলো দেবো জনে জনে
সব আশা মুকুলেই মরে
কেউ যদি কিছু ভাবে!
কখনো বা বেদনায়
বুক যদি ভেঙে যায়
কাঁদতে পারি না প্রাণ খুলে
কেউ যদি কিছু ভাবে!
মানবিক কোনো কাজে
সবে জোটে একসাথে-
আমিও সে-দলে যেতে চাই;
কেউ যদি কিছু ভাবে!
হায়রে নিঠুর বিধি
আজব তোমার রীতি-
মরবার ভয়ে আড়ালে লুকাই,
কেউ যদি কিছু ভাবে!
১ নভেম্বর ২০১১ রাত ১২:১৯
****
বিদ্রোহ - গ্রামের মানুষকে উচ্চ ভাবিব, সেই কথা আজ মিছে
তোমরা রহিবে নয়নাভিরাম চিরসবুজের গাঁয়,
আমরা মরিব পঁচা ডাস্টবিনে, নোংরা নর্দমায়!
তোমরা একাই উপভোগ করো পল্লীর পরিবেশ,
ঘিঞ্জি শহরে ধুঁকিতে ধুঁকিতে আমাদের জান শেষ।
আমাদের দেখে নাক ছিটকাও, করো নাকো সম্মান,
তোমাদের সাথে আমাদের কতো বিস্তর ব্যবধান।
গ্রামের মানুষ শোনো,
আমরাও মানুষ এই বাংলার, নই ভিনদেশী কোনো।
তোমরা কাটাবে সুখের জীবন চরণে চরণ তুলে,
তা বলে তোমাদের উচ্চ ভাবিব, সেই কথা যাও ভুলে।
বিদ্রোহ আজ - বিদ্রোহ সবখানে,
আমরাও আজ গ্রামে ঠাঁই চাই, তোমাদের মাঝখানে।
শহরের দিকে তাকিয়ে দেখো, দলে দলে, গানে গানে
ইটের পাঁজর ভাঙিয়া মানুষ ছুটছে গ্রামের পানে।
আসিতেছে শুভদিন,
কড়ায় গণ্ডায় তোমাদের থেকে শোধিয়া লইব ঋণ।
তোমরা রহিবে শীতল দালানে, আমরা সিদ্ধ হবো,
শীঘ্র দেখিবে এই ব্যবধান আচানক ভেঙে দিব।
১২ নভেম্বর ২০১১ রাত ১০:০০
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১২ দুপুর ১২:১৯