যারা ইসলামকে সঠিক মানেন তারা তাদের উপলব্ধির মাধ্যমে ইসলামকে সঠিক মানেন। যেমন মহানবি (সা.) যখন তাঁর স্ত্রী হজরত খাদিজার (রা.) নিকট তাঁর আল্লাহর নবি হওয়ার কথা জানিয়ে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তাঁকে নবি মেনে ইসলাম গ্রহণ করার কথা জানালেন তখন তিনি মহা নবির (সা.) কথায় বিশ্বাস করে ইসলাম গ্রহণ করলেন। তিনি এটা বিশ্বাস করলেন যে তাঁর স্বামী হজরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁকে সত্য কথা বলেছেন।এখানে হজরত খাদিজার (রা.) উপলব্ধি হলো, তাঁর স্বামী কোন মিথ্যা কথা বলেন না। তিনি পনের বছর খুব কাছে থেকে তাঁর স্বামীকে দেখেছেন সে হিসেবে তাঁর প্রতি তাঁর এ বিশ্বাস। তিনি এটাও দেখেছেন যে, তাঁর স্বামী প্রতারক নন।কিন্তু একজন অবিশ্বাসী মহানবিকে (সা.) কাছ থেকে দেখেনি কাজেই হজরত খাদিজার (রাঃ)মত তার মহানবির (সা.) প্রতি বিশ্বাস থাকার কথা নয়।
মহানবির (সা.) বাল্য বন্ধু হজরত আবু বকর (রা.) শৈশব থেকেই তাঁর বন্ধু মোহাম্মদকে (সা.) দেখেছেন। তিনি জানেন তাঁর বন্ধু মিথ্যা বলেন না, সেজন্য তাঁর বন্ধু মোহাম্মদ (সা.) যখন তাঁর নিকট তাঁর নবুয়তের কথা জানালেন তখন তিনি তাঁর কথায় সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করলেন।কিন্তু একজন অবিশ্বাসীর অবস্থা আবু বকরের (রা.) মত নয়। আবু বকরের (রা.) বিশ্বাসের কারণ একজন অবিশ্বাসীর বিশ্বাসের কারণ হতে পারে না।
এরপর যারা কোরআন শুনেছে। কোরআন তাদের মাতৃভাষায় হওয়ায় তারা এর মর্ম বুঝেছে। তাদের অনেকের মনে হয়েছে মোহাম্মদ (সা.) ঠিক বলেছেন। এজন্য তারা মহানবির (সা.) আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে।কিন্তু অনেকে মনে করেছে মহানবি (সা.) নিজে কোরআন রচনা করে এর মাধ্যমে তিনি তাদেরকে তাদের ধর্ম থেকে সরিয়ে নতুন এক ধর্মে সামিল করতে চায় সে জন্য তারা মোহাম্মদের (সা.) বিরুদ্ধে ধর্ম রক্ষার সংগ্রাম শুরু করে।তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে অবশেষে মুসলমানেরা দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যায়। এর কিছুকাল পরে মহানবি (সা.) নিজেও মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যান।মদীনার দু’টি গোত্র আওস ও খাজরাস কোরআন আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করে ইসলাম গ্রহণ করে।তারমানে ইসলাম গ্রহণের মূল কারণ কোরআনকে আল্লাহর বাণী হিসেবে উপলব্ধি করা। এরপর ইসলাম বিরোধীরা ইসলামের বিরুদ্ধে অনেকগুলো যুদ্ধ পরিচালনা করে হেরে হেরে অবশেষে বুঝেছে ইসলাম আসলে ঠিক। এটাও ছিল তাদের উপলব্ধি।
মুসলমানের সন্তান হিসেবে যারা জন্মলাভ করেছে তারা জন্মসূত্রে মুসলমান হয়ে গেছে।তারা বিশ্বাস করেছে তাদের পিতা-মাতার বিশ্বাস সঠিক।কোরআনকে সঠিক উপলব্ধির মাধ্যমেও ইসলাম গ্রহণের বিষয় অব্যাহত থেকেছে।কিন্তু অবিশ্বাসীরা কোরআন উপলব্ধির মাধ্যমে ইসলামকে সঠিক হিসেবে বিশ্বাস করতে পারেনি।তারা বলছে, ‘কোরআন মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর চেলাপেলারা বানিয়েছে, এটা আল্লাহর বাণী নয়’।তাদের এ ধরনের উক্তিতে অনেক মুসলমানের মেজাজ টগবগ করে উৎরায়। অনেকে বলে এদের মেজাজ উৎরায় কেন? আমি যা বুঝি সেটা হলো এরা সম্ভবত তাদের নবীকে (সা.) মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা সহ্য করতে পারে না। অতীতেও বহু লোক মোহাম্মদের (সা.) জন্য জীবন দিয়েছেন। তাঁর জন্য অনেকে অন্যের জীবনও কেড়ে নিতে পারে।নবির (সা.) প্রতি অদ্ভুত টান থেকে তারা সম্ভবত এমন কান্ড ঘটায়।
বিশ্বাসীকে অবিশ্বাসী খুন করে। অবিশ্বাসীকে বিশ্বাসী খুন করে। যে খানে যে পক্ষ প্রবল সেখানে সে পক্ষের হাতে দূর্বল পক্ষ মার খায়।অবিশ্বাসীদেরকে যখন বলা হয় বিশ্বাস আসলে উপলব্ধির বিষয় তখন তারা বলে, ওসব উপলব্ধি কিচ্ছু না। খাদিজা (রা.) ও মোহাম্মদ (সা.) মিলে ইসলাম বানিয়েছে। তাদের সাথে ছিল ওরাকা ও জাবির। মোহাম্মদের (সা.) দাবী, খাদিজার (রা.) ও অনেকের বিশ্বাস অবিশ্বাসীর নিকট এসে মস্তবড় ধাক্কা খায়।এমতাবস্থায় অবিশ্বাসীকে থামাতে ইসলামের সঠিকতার প্রমাণ দিতে হয়।
অবিশ্বাসীকে না থামালে অবিশ্বাসী বিশ্বাসীর বিশ্বাস নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। এতে বিশ্বাসীর মেজাজ গরম হয়ে অনেক সময় বিশ্বাসী অবিশ্বাসীকে খুন পর্যন্ত করে ফেলে। বাংলাদেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে।যেমন বিশ্বাসীর বিশ্বাস নিয়ে কটাক্ষ করে মুক্তমনা বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত অভিজিৎ রায় ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামে একখানা পুস্তক রচনা করে। আর তার ব্লগ থেকে মহানবির (সা.) কুৎসা প্রচার হতে থাকে। যারা মহানবির (সা.) কুৎসা রটনা করে লেখা পোষ্ট করতো এমন অনেক ব্লগারও শেষ পর্যন্ত হত্যার শিকার হয়। অভিজিৎ রায়কেও হত্যা করা হয়।সেসময় আরিফ আজাদ অবিশ্বাসীদের অবিশ্বাসের জবাব সম্বলিত ‘প্যরাডক্সিক্যাল সাজিদ’ নামে একখানা পুস্তক রচনা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি সহ অনেকে অবিশ্বসীদের সাথে তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হই। আমার এমন একটি তর্ক সন্ধা থেকে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলে।অবিশ্বাসীদের কথার জবাব প্রদানে জাকির নায়েকেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। অবশেষে অবিশ্বাসীদের ঠাট্টার ঝড় থামে। খুন খারাবিও বন্ধ হয়। এরা দ্বারা বুঝা যায় ইসলামের সঠিকতার প্রমাণ উপস্থাপন সবার জন্য মঙ্গল জনক।
বিশ্বাসীদের বিশ্বাস অর্জনে উপলব্ধি যথেষ্ট হলেও অবিশ্বাসীর ঠাট্টা ও তামাশা থামাতে প্রমাণ না দিয়ে উপায় থাকে না। এরা জানে মুসলমান মহানবির (সা.) অবমাননা সহ্য করতে পারে না তথাপি এরা বার বার মহানবির (সা.) অবমাননা করে জটিল পরিস্থিতি তৈরী করে। খ্রিস্টান লেখক ডঃ মরিচ বুকাইলি তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান’ গ্রন্থে খুব সুন্দর ভাবে প্রমাণ করেন কোরআন কোন মানুষের বানানো নয় বরং কোরআন ঐশি গ্রন্থ। এখন তারা বলছে বুকাইলী কেন মুসলমান হয়নি? তারা কি বুকাইলীর মনের ভিতর ঢুকে দেখেছে যে বুকাইলী মুসলমান হয়েছে কিনা। মহানবির (সা.) সময় রাজা নাজ্জাসী মুসলমান হয়েছেন যা কেউ জানতো না। পরে আল্লাহ সে কথা মহানবিকে (সা.) জানালে তার মৃতূর পর তিনি তাঁর জানাজার নামাজ পড়েন। ধর্মত্যাগী হলে আত্মীয় বন্ধু হারাতে হয় সে জন্য অনেকে গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেন।এটা নাজায়েজ নয়। তবে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ অধিকতর উত্তম। এ তরিকায় হয়ত দেখা যাবে অনেক বড় বড় অমুসলীম আসলে মুসলীম।
ইসলাম বিশ্বাসের বিষয়। উপলব্ধির মাধ্যমে ইসলামে বিশ্বাসী হওয়া যায়। তবে ইসলামকে সঠিক প্রমাণ করা যায়না ঘটনা এমন নয়। আর ইসলামের সঠিকতার প্রমাণ স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এতে ভুল নেই। তো ভুল না থাকা মানেইতো সঠিক। এরপর কোরআনের সঠিকতার বিষয়ে আল্লাহ বহু যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।কাজেই ইসলামের সঠিকতার প্রমাণ উপস্থাপন দোষনীয় কোন কাজ নয়।পৃথিবীর সাড়ে চার হাজার ধর্ম ও মতের মধ্য হতে শুধু ইসলামকে সঠিক প্রমাণ করা যায়। এ ছাড়া আর কোন ধর্ম ও মত সঠিক প্রমাণ করা যায় না। যাদের কথা সঠিক প্রমাণ করা যায় না তারা আমাদের কথা কেন আমরা সঠিক প্রমাণ করছি সে বিষয়ে আপত্তি তুলছে। আমাদের কথা হলো তোমাদের কথা সঠিক প্রমাণ করা যায় না বলে তোমরা তোমাদের কথা সঠিক প্রমাণ করতে পারছো না। তো আমরা আমাদের কথা সঠিক প্রমাণ করতে পারলে আমরা কেন আমাদের কথা সঠিক প্রমাণ করব না। অনেকে ঘুরেই বলছে ইসলাম বিশ্বাসের বিষয়। আমাদের কথা হলো আমরা সেটা অস্বীকার করছি না। তবে ইসলামকে সঠিকও প্রমাণ করা যায়। আর অনেকে ইসলামকে সঠিক নয় প্রমাণ করার চেষ্টা করে আমাদেরকে ইসলাম সঠিক প্রমাণ করতে বাধ্য করছে। যেমন কেউ যদি কোরআনকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করে তবে আমরা কেন কোরআনকে শুদ্ধ প্রমাণ করার চেষ্টা করব না? তবে কি আমরা তাদের কাছে নতি স্বীকার করে বলব যে আপনি যা বলছেন সেটাই আসলে ঠিক, আমরা আসলে ভুল কথাই মেনে চলছি? এভাবে অসত্যের কাছে নতি স্বীকার করা কি সম্ভব? তারচেয়ে সতের প্রমাণ দিয়ে অসত্যকে মাথানত করতে বাধ্য করা ভাল কাজ নয়কি? আর একটা কাজ করা গেলে সেটা না করার কারণ কি?
একটা বাচ্চা শিশু। একজন অজ্ঞ মজুর বিশ্বাসেই সন্তুষ্ট থাকবে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যার সক্ষমতা রয়েছে সে তার বিশ্বাসের সঠিকতার প্রমাণ জোগাড় করে রাখলে ক্ষতি কি? ইসলাম অনন্য, এর বিশ্বাস ও প্রমাণ দু’টোই থাকবে।ইসলাম অসত্যের কাছে মাথানত করতে জানে না। ইসলাম চিরকাল প্রতিপক্ষের যুক্তি প্রমাণের মোকাবেলা করেছে এবং তা’ এর অনুসারীরা চিরকাল করবে ইসলামের ইতিহাস এমনটাই।ইসলামকে উড়িয়ে দেওয়ার ও গুঁড়িয়ে দেওয়ার বহু চেষ্টা হয়েছে, এখনো সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তথাপি সকল প্রতিকূলতা উপড়ে ফেলে ইসলাম অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে।আল্লাহ আছেন ইসলামের সহায়।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৬