একজন বলে সে মুসলিম। অন্য জন বলে সে মুসলিম নয়। গণনাকারী যে বলে সে মুসলিম তাকে মুসলিম হিসেবে গণনা করবে। প্রতিবেদনে সে মুসলিম সংখ্যা বৃদ্ধিকরে মুসলমানদের উপকার করলো। যারা মুসলমানের বিনাশ সাধনের চেষ্টা করছে সে তাদের দলে যোগদান করলো না, এতে সে মুসলমানদের আরো একটু উপকার করলো। যারা ইসলামের বিনাশ সাধন করছে তাদের হামলায় যারা আত্ম রক্ষার চেষ্টা করছে সে তাদেরকে আশ্রয় দিল, এতে সে মুসলমানদের আরো উপকার করলো।এখন কোন লোক যদি বলে তার ইসলামের কোন দরকার নেই তবে সে বেকুব। যার ইসলামে একটা মুসলমান প্রাণে বাঁচে তার ইসলাম দরকারী নয় কেমন করে?
একশত জনে চব্বিশ জন মুসলিম। ছিয়াত্তর জন মুসলিম নয়। ছিয়াত্তর জন মনে করছে চব্বিশজনকে হত্যা করতে গেলে তাদেরও অনেক লোক মারা পড়বে, অথবা চব্বিশ জন খুব বীর এদের সাথে লড়তেগেলে ছিয়াত্তর জন হেরেওে যেতে পারবে সে জন্য ছিয়াত্তর জন চব্বিশ জনকে হত্যা করছে না। এখন নানান অযুহাতে যদি চব্বিশ জন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয় আর একের বিপদে অপর এগিয়ে না আসে। এমতাবস্থায় ছিয়াত্তর জন যদি এদের এক দল এক দল করে শেষ করতে থাকে তবে ছিয়াত্তর জন এতে সাফল্য পেলেও পেতে পারে।
চব্বিশজন যদি মনে করে যারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে তারা মুসলিম এবং চব্বিশজন যদি ঐক্যবদ্ধভাবে ছিয়াত্তর জনের হামলা থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা তাহলে হয়ত ছিয়াত্তর জন নিজেদের ক্ষতির বিবেচনায় চব্বিশ জনকে হামলা নাও করতে পারে। এতে কার লাভ হলো? অবশ্যই সেটা চব্বিশ জনের সবার। এরপর যদি কেউ ইবাদত কম করে বা না করে তার হিসেবের জন্য কি আল্লাহ যথেষ্ট নন? তবে নিজেরা মারামারি করে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনার দরকার কি?
অমুক তমুককে অমুসলিম ঘোষণা দিতে হবে বলে অনেকে বেশ চিৎপাত শুরু করে।এর মাহাত্ম আসেলে কি? মহানবি (সা.) কি মোনাফেকদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন? তিনিতো মোনাফেকেরও জানাজা পড়েছেন।কেউ নিজেকে মুসলমান বললে বলুক না, যার তাকে ভাল না লাগে সে তার থেকে দূরে থাকলেই হলো।আর ইসলামের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বরং একত্রে কাজ করলে নিজেদের উপকার।
একজন বলছে লোকেরা জুম্মার নামাজে আসছে ফয়জরে ঘুমিয়ে থাকছে এটা কেমন হলো? ভাল কি হতো? তারা জুম্মার নামাজও নাপড়লে কি ভাল হতো? সে সময় তারা পুজা করলে কি আরো ভালো হতো? একজন একশতে একশ নম্বর পায়নি বলে কি তার প্রাপ্ত পঞ্চাশ নম্বর বেকার? সে যদি একনম্বরও না পেত সেটা কেমন হতো? আমি মনে করি শূণ্য না পাওয়ার চেয়ে পাঁচ নম্বর পাওয়া ভাল।কারণ শূণ্য নম্বরের কারণে যে পরিমাণ অপদস্থ্য করা হবে, পাঁচ নম্বর পেলে অন্তত তারচেয়ে কম অপদস্থ্য করা হবে।
একজন নামাজ পড়ে। একজন নামাজ পড়ে না। একজন পুজা করে। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রথম জন সর্বোত্তম হলেও তৃতীয় জনের চেয়ে দ্বিতীয় জন উত্তম।কারণ নামাজ না পড়লেও সে পুজা অন্তত করে না। একজন জামাতে নামাজ পড়ে। একজন একা নামাজ পড়ে। একজন নামাজ পড়ে না। এখানেও তৃতীয় জনের চেয়ে দ্বিতীয় জন উত্তম।কারণ জামাতে নামাজ না পড়লেও নে অন্তত নামাজ পড়ে। একজন সব সময় নামাজ পড়ে। একজন মাঝে মাঝে নামাজ পড়ে। একজন মোটেও নামাজ পড়ে না।এখানেও তৃতীয় জনের চেয়ে দ্বিতীয় জন উত্তম।কাজেই অধিক উত্তম না হলেও তুলনা মূলক উত্তম ভাল। যাকে মন্দের ভাল বলে। অনেক বেকুব লোকের বেশী ভাল করতে গিয়ে যার যেটুকু ভাল আছে সেটুকুও শেষ করে দেয়। একেই বলে আমও গেল ছালাও গেল।এসব গাছ বেকুব থেকে আল্লাহ মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন।
এক হুজুর এক দিন বলছে। এভাবে নামাজ না পড়লে হবে না। সেভাবে নামাজ না পড়লে হবে না। তো আমি বললাম তাহলে মোটে নামাজ না পড়লে কেমন হয়? এখন দেখি হুজুর আমার দিকে পিটি পিটি করে তাকাচ্ছে। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তো আমি তাকে বললাম লোকেরা যতটা পারছে ততটা অন্তত করতে দিন।বেশী করাইতে গিয়ে পুরাটা নষ্ট করবেন না।বেশী ভালোর কথা অবশ্যই বলবেন। তবে মোটে না করে কম ভাল বাদ দেওয়ার পরিবেশ তৈরী করবেন না।
একজন মদও খায় নামাজও পড়ে। তাকে এটা বলার দরকার নেই যে মদ খেয়ে নামাজ পড়ে কি লাভ।হতে পারে এক সময় নামাজের টানে তিনি মদ খাওয়া ছেড়ে দিবেন।
কুখ্যাত ডাকাত সর্দার ফুজাইল ইবনে আয়াজ কোরআন তেলাওয়াত করা খুব পছন্দ করতেন।একদা তিনি তাঁর ডাকাত দলকে ব্যবসায়িক কাফেলায় ডাকাতি করতে পাঠালেন। এক ব্যবসায়ি ছুটতে ছুটতে তাঁর নিকট একথলি স্বর্ণমূদ্রা গচ্ছিত রেখে গেল। ডাকাতি থেমেগেলে সে এসে দেখলো যার কাছে সে স্বর্ণমূদ্রা গচ্ছিত রেখেছে সে আসলে ডাকাত সর্দার। লোকটা তখন হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছিল। সর্দার তখন তাকে ডেকে তার স্বর্ণমূদ্রা ফেরৎ দিল। তার চেলাফেলা বলল, সর্দার ঘটনা কি? সর্দার তখন বলল, ডাকাতি করি সত্য তবে আমানতের খেয়ানত করি না। আচ্ছা এ লোক কি তাঁর আমানত রক্ষার সাওয়াব পাবেন না? তাহলে কিভাবে বলা যায় খারাপ কাজ করলে ভার কাজের দাম থাকে না? কথা হলো ভাল বজায় রেখে খারাপ ছাড়তে হবে। কিন্তু খারাপ করলে সব খারাপ করতে হবে ভাল কাজ এক্কবারে বাদ দিতে হবে এটা ঠিক কথা নয়। ঘটনা চক্রে ফুজাইল কোরআন তেলায়ত করতে করতে একদা তেলাওয়াত করলেন, ঈমানদার লোকদের কি এখনো সুপথে ফিরার সময় হয়নি? এ আয়াত পাঠের পর ফুজাইল আবেগ প্রবন হয়ে গেলেন। তখন তিনি বললেন আমার সময় হয়েছে। এরপর তিনি সব মন্দকাজ পরিত্যাগ করে ভাল হতে হতে আল্লাহর ওলী হয়ে গেলেন। আর তখন আব্বাসীয় খলিফা হারুন উর রশিদও তাঁকে খুব সম্মান করতেন। কাজেই সুকাজ যতটুকুই হোক তাতে লোকদেরকে নিরুৎসাহিত করা বেকুবী।
একজন নামাজও পড়ে ভালকাজও করে। একজন নামাজ পড়ে, ভাল কাজ করে না। একজন নামাজ পড়ে, মন্দকাজ করে। একজন ভাল কাজ করে নামাজ পড়ে না। একজন নামাজও পড়ে না, ভাল কাজও করে না।একজন নামাজতো পড়েই না উল্টা মন্দ কাজ করে। এদের সবার মাঝে পার্থক্য অবশ্যই আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ভাল, যে নামাজও পড়ে ভালকাজও করে। আর সব চেয়ে মন্দ, যে নামাজতো পড়েই না উল্টা মন্দ কাজ করে।
একজন মুসলমান নয় কিন্তু মুসলমানের উপকার করে। একজন মুসলমান নয় কিন্তু মুসলমানের উপকারও করে না আবার মুসলমানের ক্ষতিও করে না। একজন মুসলমান নয় আবার মুসলমানের যথেষ্ট ক্ষতি করে। এখানেও মুসলমানের নিকট দ্বিতীয় জন তৃতীয় জন থেকে উত্তম।যে মুসলমান নয় কিন্তু ভাল মানুষ সে জাহান্নামে গেলেও তার শাস্তি কম হবে। এমন একদল লোককে আমি স্বপ্নে দেখলাম, তারা বলছে তাদের শাস্তি একটাই তাদেরকে কাজ করে খেতে হয়। এখন স্বপ্ন বিষয়ে আল্লাহ ভাল জানেন।
সাকুল্য কথা হলো ইসলাম ও ভাল কাজ সামান্য হলেও সেটা বেকার যাবে না। ভালকাজের ভাল ফল পাওয়া যাবেই। একটু হলেও পাওয়া যাবে। আর মন্দ কাজের মন্দফলও পাওয়া যাবেই। একটু হলেও পাওয়া যাবে। এমন কি মন্দ কাজ করে জান্নাতে গেলেও মন্দ কাজের মন্দ ফল ভোগ করতেই হবে। এক্ষেত্রে মন্দ কাজের জন্য লোকে কম মানের জান্নাত প্রাপ্ত হবে। কাজেই ভালকাজ যতটা পারা যায় করা উত্তম, আর মন্দকাজ যতটা ছাড়া যায় ছাড়া উত্তম।আর মন্দ কাজ করে বলে কোন লোককে ভাল কাজ ছেড়ে দিতে বলা ঠিক নয়। আর তাকে বেশী ভাল কাজ এভাবেক করতে বলা ঠিক নয় যাতে সে রাগ হয়ে যেটুকু ভাল করে সেটাও ছেড়ে দেয়।
অনেক ছাত্রকে দেখেছি তারা সাধ্যমত ভাল ফল করার পরেও আরো বেশী ভাল ফলের জন্য অভিবাবক চাপ সৃষ্টি করায় তারা পড়ালেখাই ছেড়ে দিয়েছে।কাজেই কারো কাছ থেকে তার সাধ্যের অধিক প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। তুমি তাকে উত্তম জান্নাতে নেওয়ার জন্য টানাটানি করলে কি হবে সেতো সাধারণ জান্নাতে যেতে চায়। অথবা সে যতটা কাজ করে ততটা ফলপেয়েই সন্তুষ্ট।কেউ তার বেশী ভাল করতে গিয়ে তার যতটা ভাল আছে সেটাও নষ্ট করতে চায় কোন কারণে? এসব হলো বেকুবী। এসব বেকুব লোক সমাজের আবর্জনা, যারা সমাজের ভাল করতে গিয়ে অধিক মন্দ করে বসে।একদল বেকুব লোক ইসলামের ভাল করতে গিয়ে হজরত ওসমানকে (রা.) হত্যা করে ইসলামের যতটা ক্ষতি করেছে তাতে করে তাদেরকে কেয়ামত পর্যন্ত পিটালেও মুসলমানদের তাদের উপর রাগ দমার কথা নয়। এসব বেকুবেরা কম ভাল করতে গিয়ে ইসলামের অনেক বেশী ক্ষতি করে বসে।কোন মুসলমানের এসব বেকুবদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয়। অনেক বড় লোকের বাড়ীতে লেখা থাকে,‘কুকুর হতে সাবধান’। ইসলামের বাড়ীতে লেখা থাকা দরকার,‘বেকুব হতে সাবধান’।আল্লাহ বেকুব লোক থেকে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন-আমিন।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫৭