কেউ সৃষ্টি হতে চায় কিনা, এটা জেনে কাউকে সৃষ্টিকরা সম্ভব নয়। কারণ যে সৃষ্টি হয়নি তার ইচ্ছা কেমন করে জানা যাবে? কেউ সৃষ্টি না হলে তার অবস্থান তখন শূণ্য। তো শূণ্যের কাছে না কোন কিছু জানতে চাওয়া যায় আর না শূণ্য কোন কিছু জানাতে পারে।কেউ সৃষ্টি হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাস করা যায় সে সৃষ্টি হিসেবে বহাল থাকবে না তাকে আবার বিলিন করে দেওয়া হবে? অবশ্য এ ক্ষেত্রে তার মাঝে মতামত প্রদান করার সক্ষমতাও থাকতে হবে।
মনে করি আল্লাহ প্রাণ সৃষ্টি করে তাদেরকে অনেক আকৃতি দেখালেন।এরপর প্রাণ সমূহকে বললেন, আমি তোমাদের পরীক্ষা নেব। পরীক্ষার ফল অনুযায়ী যারা যে আকৃতি পাওয়ার যোগ্যতা লাভ করবে তাদেরকে সে আকৃতি প্রদান করা হবে।তোমরা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে কি করবে না? যদি তোমরা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না চাও তবে তোমাদেরকে শূণ্যে বিলিন করে দেওয়া হবে। আর যদি তোমরা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কর তবে তোমাদেরকে অবশ্যই এ পরীক্ষার ফল মেনে নিতে হবে। এমতাবস্থায় কেউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যদি খারাপ পরিণতির শিকার হয় তবে এর জন্য দায় আসলে কার? যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে সে ভাল কিছু আশা করেছে, কিন্তু বাস্তবে তার ভাল না হয়ে মন্দ হয়ে গেছে, যদিও অনেকের ভাল হয়েছে।এমতাবস্থায় তার বিলিন হওয়ার সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে গেল।অবশেষে সে হয়ে গেল ময়লার কীট। এ প্রক্রিয়ায় মানুষকে সৃষ্টিকরা হলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে সৃষ্টি করা হয়নি। কারণ আল্লাহর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেই সে তার সৃষ্টির অনুকুলে তার মতামত জানিয়ে দিয়েছে। মানুষ ভ্রুন থেকে নব জাতক হয়ে পৃথিবীতে এসেছে এমতাবস্থায় তার এ সংক্রান্ত স্মৃতি থাকা বেমানান ছিল বিধায় তাকে এ সংক্রান্ত স্মৃতি শূণ্য করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে।যে দিন আল্লাহ তাকে বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড় করাবেন সে দিন তার মুছে দেওয়া স্মৃতি আল্লাহ আবার ফেরৎ দিলে সে স্পষ্ট বুঝতে পারবে আসলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে না তার সম্মতি অনুযায়ী তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
সাময়িক ভাবে মানুষের প্রাণ সৃষ্টির পর তার সম্মতি ক্রমে যদি তাকে মানুষ বানানো হয়ে থাকে তবে তার সৃষ্টির দায় কিছুতেই সে আল্লাহর ঘাড়ে চাপাতে পারবে না। একজন বলছে আমিতো মানুষ হতে চাইনি! সে কিভাবে এ কথা বলে? আত্মার জগতের কথা কি তার মনে আছে? আর সে কথা তার মনে রেখে কিভাবে নব জাতক হিসেবে পৃথিবীতে পাঠান যেত? কাজেই এ সব বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে মানুষকে সোজা পথে চলা উচিৎ।
আল্লাহ হুরকে পৃথিবীতে পাঠননি, গেলমানকে পৃথিবীতে পাঠাননি, ফেরেশতাকে পৃথিবীতে পাঠাননি, মানুষ ও জ্বীনকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, এরমধ্যে মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি করেছেন।কিন্তু কেন? এর উত্তর হয়ত মানুষের সাময়িক ভাবে সরিয়ে ফেলা স্মৃতিতে রয়েছে।
আল্লাহ বলেছেন তিনি মানুষকে তাঁর আনুগত্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এখন কোন কোন মানুষ ছাফ বলে দিচ্ছে সে কি মানুষ হতে চেয়েছে? তাকে কেন মানুষ বানানো হলো? এখন সে আল্লাহর আনুগত্য জাতীয় কিছুই করতে পাবে না। এসব মানুষকে আসলে ছাগল বানালেই ভাল হতো। ক’দিন এরা ঘাসপাতা খেয়ে বেঁচে থাকতো তারপর মানুষ এদেরকে জবেহ করে খেয়ে ফেলতো। তাদেরকে আর আল্লাহর আনুগত্য করতে হতো না।
মানুষের উপকারের জন্য আল্লাহ কতকি সৃষ্টি করলেন। এখন মানুষ উপকার নিতে রাজি থাকলেও বিনিময়ে আল্লাহর আনুগত্য করতে মোটেও রাজি নয়।আল্লাহ বলেছেন, ‘লাও আনজালনা হাযাল কোরআনা আলা জাবালিল লারায়াইতাহু খাশিয়াম মুতাসাইয়িদাম মিন খাশিয়াতিল্লাহ ওয়া তিলকাল আমসালু নাদরিবুহা লিন্নাছি লায়াল্লাহুম ইয়াতাফাক্কারুন- আমরা যদি এ কোরআনকে পাহাড়ের উপর নাজিল করতাম তাহলে তুমি উহাকে দেখতে আল্লাহর ভয়ে উহা চুর্ণ বিচুর্ণ হয়ে গেছে। আমি মানুষের জন্য এসব দৃষ্টান্ত দিয়েছি যেন তারা চিন্তা ভাবনা করতে পারে।সংগত কারণে মানুষ আল্লাহকে দোষারোপ করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুক। কারণ আল্লাহ বলেছেন কারো শাস্তির দায় কেউ আল্লাহর উপর চাপাতে পারবে না বরং নিজের শাস্তির দায় মাথা পেতে নিয়ে সবাইকে প্রাপ্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আল্লাহ হুর ও গেলমানদেরকে একত্রে জান্নাত দিয়ে দিলেন। তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠালেন না। কিন্তু মানুষকে কেন পৃথিবীতে পাঠালেন? এর কারণ হুর ও গেলমান জান্নাতের মালিক নয়, মানুষ জান্নাতের মালিক। হুর ও গেলমান থাকবে মানুষের মালিকানায়। তারা মানুষের জন্য উপহার ।মানুষ তাদের উপহার নয়।এর দ্বারা বুঝা যায় হয়ত জান্নাতের মালিক হওয়ার জন্য মানুষ পৃথিবীতে আসতে চেয়েছে। মানুষের পৃথিবীতে আসার কারণ হয়ত তার লোভ। নতুবা আল্লাহ হুর ও গেলমানদেরকে পৃথিবীতে পাঠালেন না মানুষকে পাঠালেন কেন? যেহেতু আল্লাহর উপর মানুষের তার দূর্ভাগ্যের দায় চাপানো সম্ভব নয় সেহেতু মানুষের উচিৎ সর্বনাশা চিন্তা বাদ দিয়ে সুপথে থাকার চেষ্টা করে।
আল্লাহর কত কত নিকৃষ্ট সৃষ্টি রয়েছে। অথচ মানুষ কত উৎকৃষ্ট সৃষ্টি। মানুষ উৎকৃষ্ট সৃষ্টি হিসেবেও আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। অথচ এ নিমক হারাম প্রাণী কিছুতেই আল্লাহর ইবাদত করতে রাজি নয়। কথায় বলে যত গুড় তত মিষ্টি।মানুষ যতটা সম্ভব ততটা আল্লাহর ইবাদৎ করুক। ইবাদৎ যত বেশী হবে, প্রাপ্তি তত বেশী হবে।কোন রকম পাশ করে জাহান্নাম মাপ হলেও কোন রকম চলে। ফেল করে জাহান্নামে গেলেও নেকের মাত্রা পাশের কাছাকাছি থাকলে জাহান্নাম থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি মিলবে।অন্তত ঈমানটুকু থাকলেও কোন না কোন দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি মিলবে। যাদের ঈমানও নেই তারাও যদি ভাল কাজ করে তবে জাহান্নামে তাদের শাস্তি কম হবে। ভাল কাজ ও আল্লাহর ইবাদতে লাভ ছাড়া কোন ক্ষতি নেই।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৯