সসীমের সীমা দিতেই হয়। সীমা না দিলে সসীম হয় না।অসীমের সীমাই নেই। কাজেই সীমা দাতার দরকার নেই। সীমা দাতা থাকার দরকার থাকায় সসীম নিজে নিজে হতে পারেনা। সীমা দাতা থাকার দরকার না থাকায় অসীম নিজে নিজে হতে পারে । তার মানে নিজে নিজে হতে পারা ও নিজে নিজে হতে না পারা, নিজে নিজে হতে পারার যোগ্যতা থাকা ও নিজে নিজে হতে পারার যোগ্যতা না থাকার কারণে হয়। নিজে নিজে হতে পারার যোগ্যতা একজনের ছিল। কারণ যিনি নিজে নিজে হয়েছেন তিনি অসীম ছিলেন। সীমা দাতা থাকার প্রয়োজন ছিলনা বলে তিনি নিজে নিজে হতে পেরেছেন।
নিজে নিজে হয়েছে সব তবে অসীম রূপে। পদার্থ ও সসীম শক্তি সসীম হওয়ায় নিজে নিজে হতে পারে না। অসীম শক্তি নিজে নিজে হতে পারে। তারমানে সকল পদার্থ ও সসীম শক্তি নিজে নিজে হয়েছে অসীম শক্তি রূপে।সকল পদার্থ ও সসীম শক্তি অসীম শক্তিরূপে হয়ে অসিমে মিলে অসীমকে সমৃদ্ধ করেছে। এজন্য অসীমে পদার্থ, সসীম শক্তি ও অসীম শক্তি অসীম মাত্রায় রয়েছে। এজন্য অসীম নিরভাব। তাঁর কোন কিছুর অভাব নেই। এরপর তাঁর কাজ ছিল সীমা দিয়ে অসীম শক্তি তাড়িত করে সসীমকে সৃষ্টিকরা। আর সে কাজ করে তিনি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। বিনা কারণে তিনি সৃষ্টিকর্তা নন। তিনি নিজ যোগ্যতায় সৃষ্টিকর্তা। অন্য কারো সে যোগ্যতা থাকা সম্ভব নয়। সে জন্য সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর নাম আল্লাহ। তাঁকে অস্বীকার করার যুক্তি কি?
বেকুব বলে এটা বানাতে সৃষ্টিকর্তা লাগে না, সেটা বানাতে সৃষ্টিকর্তা লাগে না। যদি তাকে জিজ্ঞাস করা হয় সৃষ্টি করতে সৃষ্টিকর্তা না লাগার কারণটা কি? সে তখন বলে, সৃষ্টিকর্তাকে তবে কে বানাল বা সৃষ্টি করলো? তো সৃষ্টিকর্তাকে বানাতে সৃষ্টিকর্তা না লাগলে অন্য কিছু বানাতে সৃষ্টিকর্তা লাগবে কেন? তখন তাকে জিজ্ঞাস করতে হয়, সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টিকরতে সৃষ্টিকর্তা না লাগলে কি আর সব কিছু বানাকেও সৃষ্টিকর্তা লাগবে না? সৃষ্টিকর্তা ও আর সব কি এক রকম? তো একরকম না হলে তাদের সৃষ্টির ক্ষেত্রে নিয়ম কেন এক রকম হবে?
সৃষ্টিকর্তা ও আর সব এক রকম নয় কিভাবে? দু’রকম কারণ সৃষ্টিকর্তার সীমা নেই আর সবার সীমা আছে। সীমা না থাকার কারণে সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টি করতে সৃষ্টিকর্তা লাগে না, আর সব কিছুকে সৃষ্টি করতে সৃষ্টিকর্তা লাগে, আর এটা একদম পানির মত সহজ হিসাব।
সৃষ্টিকর্তার সীমা না থাকায় তিনি নিজে নিজেই হতে পারলেন। কিন্তু আর সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা যদি নাইবা লাগে তবে এসবের সীমা দিল কে? নাকি সীমাও দেওয়া লাগে না? আমরা তবে কি দেখি? এটাতো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যে সীমা দিতেই হয়। আর অসীমের তো সীমাই নেই দিবেটা কি? সংগত কারণে এটা সহজ হিসাব যে সৃষ্টিকর্তা একজন অবশ্যই আছে। সৃষ্টিকর্তা নেই এটা মিথ্যা কথা। আর অসীম সৃষ্টিকর্তার সমকক্ষ থাকা মিথ্যা কথা। এ সত্য ও মিথ্যার কথাই আল্লাহ বলেছেন, ‘যা আল হাক্কু ওয়া জাহাকাল বাতিলু ইন্নাল বাতিলা কানা জাহুকা- সত্য সমাগত, মিথ্যা দূরিভূত আর মিথ্যা দূরিভূত হয়েই থাকে। বিতাড়িত শয়তান হলো মিথ্যার গোলা। এ মিথ্যাবাদী আল্লাহকে অমান্য করতে বলে। এ মিথ্যাবাদী বলে ভালইতো আছ, তাহলে আর আল্লাহকে মানতে হবে কেন? অথচ অসীমকে অমান্য করলে কপালে অসীম দুঃখ থাকার কথা।
কেউ ক্ষমা পেল বলেই মনে করা যাবে না যে সে ভুল করেনি। কেউ অবকাশ পেল বলেই মনে করতে নেই সে গ্রেফতার হবে না্। সে জন্য অবকাশ কালে স্থায়ী মুক্তির চেষ্টা করতে হয়। একবার অবকাশ পেলাম বলেই মনে করতে নেই আবারো অবকাশ পাব।যারা আল্লাহকে অমান্য করে ভালো থেকে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে তাদের কথা বলছি।তাদের অনেকের অমান্যতার অনন্ত শাস্তির কথা আল্লাহ বলেছেন। হাতেম তাই গ্রন্থে পড়েছি,‘বদ কাজে বদি ফলে বিশ্বাস না হয় করে দেখ’। আল্লাহকে অমান্য করা আল্লাহর বিবেচনায় বদ কাজ। যে বিশ্বাস করছে না সে আল্লাহকে অমান্য করছে। আল্লাহর ঘোষণা যেহেতু ঠিক সেহেতু সে তার পাওনা পেয়ে যাবে। প্রথম আলো পত্রিকায় লিখে, ‘বিলিভ ইউ অর নট – বিশ্বাস কর আর না কর’। দরকারী বিশ্বাসের কথা সে জন্য ক্ষতিয়ে দেখতে হয়।
আল্লাহকে যারা মানছে না এত দিন তারা জানতে চেয়েছে আল্লাহ কিভাবে সঠিক? সেটা জানানোর পর তারা জানতে চেয়েছে ইসলাম কিভাবে সঠিক? সেটা জানানোর তারা বলছে হোক আল্লাহ সঠিক। হোক ইসলাম সঠিক। না মানলে কি হয়? ভাল আছি তো! অতীতের লোকেরাও এমন বলেছে। আল্লাহ তাদেরকে দেখিয়েছেন ভাল কিভাবে থাকতে হয়। এখন তাদের অনেকের সভ্যতা মাটি খুঁড়ে বের করতে হয়। তাদের মত যারা তারা বলে এসব দূর্যোগ। তারা যখন শাস্তি পাবে সেটাও হবে দূর্যোগ। তবে সে দূর্যোগের হাত থেকে তারা কখনো রেহাই পাবে না। তো বিশ্বাস যখন হয় না তবে তারা করেই দেখুক কি হয়। যে ধ্বংস হয়েই ছাড়বে তাকে আর উদ্ধার করবে কে?
এখন আর সভ্যতা মাটির নিচে লুকিয়ে পড়ে না। এর কারণ মহানবি (সা.) আল্লাহর কাছে আবেদন করেছেন তাঁর সময়ের পর থেকে যেন এমন ঘটনা না ঘটে। তো দেড় হাজার বছরে তেমন ঘটনা ঘটেনি।
আল্লাহ বলেছেন, তাঁকে খূঁজে নাও। খুঁজে নিয়ে তাঁকে বুঝে নাও। তারপর তাঁর বিধান জেনে, তাঁর বিধান মানার মধ্য দিয়ে তাকে মেনে নাও।তারপর তাঁর কাছ থেকে তাঁর প্রদত্ত পুরুস্কার বুঝে নাও। আল্লাহকে খুঁজতে গিয়ে আমি বাবুই পাখির বাসার দিকে তাকালাম। এরপর বুঝলাম কিছুতো একটা আছে।
আল্লাহ জলযানের দিকে তাকাতে বললেন, দেখলাম এরা মানুষ ও মাল পরিবহন করে। যারা গভির ভাবে দেখলো তারা বুঝলো নৌযান যে পরিমাণ পানি অপসারণ করে সে পরিমাণ পানির চেয়ে নৌযানের ওজন কম হলে নৌযান পানিতে ভাসবে। আর নৌযান যে পরিমাণ পানি অপসারণ করে সে পরিমাণ পানির চেয়ে নৌযানের বেশী হলে নৌযান পানিতে ডুববে। আর এ বিধি কাজ করে স্বাভাবিক পানির ক্ষেত্রে। কিন্তু পানির ঘনত্ব বেশী হলে এর উর্ধ্বচাপ এর সাথে যোগ হয়ে নৌযানের ধারণ ক্ষমতা নির্ণয় হবে। তারমানে যে পরিমাণ ওজন নিয়ে নৌযান সাগরে ভাসবে সে পরিমাণ ওজন নিয়ে সে নৌযান নদীতে ডুবেও যেতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহ কি দেখতে বলেছেন? আল্লাহ দেখতে বলেছেন পানির মধ্যে কোন কিছু ভেসে থাকার পানির গুণ।আর সেটা দেখে আমি বুঝলাম কিছুতো একটা আছে।
আল্লাহ আকাশের সৃষ্টি দেখতে বলেছেন, দেখলাম বিশাল বিশাল ওজনী জিনিস শূণ্যে ভেসে থাকে।আমাদের পৃথিবী সূর্য থেকে নির্দিষ্ট দূরে অবস্থান করে। পৃথিবী সূর্যথেকে অনেক দূরে চলে গেলে অথবা অনেক কাছে চলে এলে এটা বাস যোগ্য থাকবে কি? আমার মনে প্রশ্ন জাগে এমন কেন হয় না? আর সেটা দেখে বুঝলাম কিছুতো একটা আছে।
ভয়জার পৃথিবী থেকে অনেক দূরে গিয়ে পৃথিবীর একটা ছবি তুলে পাঠাল। পৃথিবীকে দেখা যায় ধুলি কণার মত। বুঝলাম কতবড় জগতে আমরা আছি। সেই সাথে বুঝলাম কিছুতো একটা আছে।
পৃথিবীসহ মহাশূন্যে বিদ্যমাণ সকল জমিন নিয়ে ভাবলাম। আর পৃথিবীর সব নিয়ে ভাবলাম আর বুঝলাম কিছুতো একটা আছে। আর আমি যা ভাবলাম তা’ নিয়ে ভেবে অন্য কেউ বুঝলো কিছুই নেই সব কিছু শূণ্য।এরপর উভয়ের অপেক্ষার পালা এটা দেখার জন্য যে কিছু একটা আছে না সব কিছু শূণ্য? তবে আল্লাহকে অমান্য করার মন্দ পরিনতি অনেকের ক্ষেত্রে যখন ঘটতে থাকবে তখন সেটা আর থামবে না। এরাই হলো চরম হতভাগা ও কপাল পোড়া কারণ তারা তাদের সৃষ্টিকর্তাকেই বুঝতে পারেনি।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৭