# হজরত আলীর (রা.) পরম ভক্তি
মহানবির (সা.) পর হজরত আলীর (রা.) খেলাফত অনেকের কাম্য ছিল। কিন্তু হজরত আবু বকরের (রা.) খেলাফত, হজরত ওমরের (রা.) খেলাফত, ও হজরত ওসমানের (রা.) খেলাফতের কারণে তিন বার তাদের আশা ভঙ্গ হয়।তৃতীয় বারের আশা ভঙ্গের কারণে তাদের মন মেজাজ এলোমেলো হয়ে যায়। তারা যত দ্রুত সম্ভব হজরত ওসমানকে (রা.) খেলাফত থেকে নামিয়ে হজরত আলীকে (রা.) খলিফা পদে অভিষিক্ত করার প্রচেষ্টা শুরু করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল হজরত ওসমানকে (রা.) খলিফা পদের অযোগ্য প্রমাণ করে তাঁকে পদত্যাগ্যে বাধ্য করা।
হজরত আলীর (রা.) ভক্তগণ তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রথমে হজরত ওসমানকে (রা.) কোরআন খেলাফী প্রমাণ করার চেষ্টা করে। আল্লাহ বলেছেন,‘হে নবি স্বর্ণ রোপ্য সঞ্চয়কারীদেরকে জাহান্নামের আগুণের সুসংবাদ দিন’- এ আয়াতের ভিত্তিতে স্বর্ণ রোপ্য সঞ্চয়কারী হিসেবে তারা হজরত ওসমানকে (রা.) গুনাহগার সাব্যস্ত করে খেলাফতের অযোগ্য বলে তাঁর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের এ চাল ব্যর্থ হয়। কারণ জাকাত প্রদান করে সম্পদ সঞ্চয় করা ইসলামে নাজায়েজ কাজ নয়। এরপর তারা প্রাদেশীক শাসক নিয়োগে হজরত ওসমানের (রা.) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আনে। হজরত ওসমানের (রা.) বিবেচনায় এ অভিযোগ সঠিক ছিল না। অভিযোগকারীদের দাবী সিরিয়ার শাসনকর্তা হজরত মোয়াবিয়া (রা.) ও মিশরের শাসনকর্তা হজরত আমর (রা.)হজরত ওসমানের (রা.) আত্মীয় বিবেচনায় শাসনকর্তার পদে আছেন, কিন্তু হজরত ওসমানের (রা.) দাবী তারা যোগ্যতার কারণে নিয়োগ পেয়েছেন বা স্বপদে বহাল আছেন। অভিযোগকারীরা হজরত ওসমানের (রা.) দাবী কিছুতেই মানতে রাজি ছিল না। তাদের কথা না মেনে নেওয়ায় তারা খলিফাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে তৎপর হয়ে উঠে। তাতে সফল না হয়ে তারা খলিফাকে হত্যা করে ফেলে।
যাদের কারণে খলিফাকে হত্যা করা হলো তারা খলিফার হত্যার বিচারের শপথ গ্রহণ করলো। নিরপেক্ষ জনগণও খলিফার হত্যার বিচারের পক্ষে ছিলেন।কিন্তু যিনি খলিফার হত্যার বিচার করবেন সে খলিফা হজরত আলীর (রা.) ভক্তরাই মূলত এ মামলার আসামী ছিল। আর পাঁচ হাজার লোক নিজেদেরকে খলিফার আত্ম স্বীকৃত খুনী দাবী করলো। এত লোকের মৃত্যুদন্ড কিভাবে কার্যকর করবেন সেটাই খলিফা আলীর (রা.) বুঝে আসছিল না।বনু কোরায়জার ছয়শত ইহুদীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরে হজরত আলী (রা.) জল্লাদের দায়িত্বে ছিলেন। তাদের স্বজনদের মাঝে হজরত আলী অজনপ্রিয় ছিলেন। এখন আবার পাঁচ হাজার লোক হত্যা করলে পরিস্থিতি কি হতে পারে সেটাই হজরত আলীর (রা.) বুঝে আসছিল না। তিনি বিচারে গড়িমশি করছেন বলে বিচার প্রার্থীরা ব্যাপক গোলযোগ শুরু করে। সেজন্য তাঁর ভক্তকুলের চাপে তিনি ইরাক সিরিয়া ও মিশরের শাসনকর্তাকে বরখাস্ত করে গোলযোগ থামাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সিরিয়া ও মিশরের শাসনকর্তা বরখাস্ত আদেশ অমান্য করে খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
প্রবল যুদ্ধে কোনঠাঁসা হয়ে সেই যুদ্ধের মাঝখানে প্রতিপক্ষ যুদ্ধ বিরতি কামনা করে শালিসের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব পেশ করলে হজরত আলী (রা.) সে প্রস্তাব মঞ্জুর করেন। কারণ তিনি অহেতুক মানুষ হত্যা থামাতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর এ কাজকে তাঁর দলের একাংশ কোরআন খেলাফী দাবী করে। কারণ আল্লাহ বলেছেন,‘তাদের সাথে যুদ্ধ কর যে পর্যন্ত গোলযোগ না থামে’। তাদের কথা হলো গোলযোগ থামাতে আল্লাহ যুদ্ধ করতে বলেছেন, সে ক্ষেত্রে শালিসের মাধ্যমে যোলযোগ থামানোর চেষ্টা কোরআন বিরোধী।আর হজরত আলীর (রা.) কথা হলো যুদ্ধ ছাড়াই যদি গোলযোগ থেমে যায় তবে আর যুদ্ধ করার দরকার কি?।কিন্তু যুদ্ধ সমর্থকেরা হজরত আলীর (রা.) বিবেচনা না মেনে তাঁর দল ত্যাগ করে। হজরত আলী (রা.) তাদের নাম দেন দল ত্যাগী বা খারেজী। আর খারেজীরা যেহেতু মনে করে তারা কোরআন মানতে গিয়ে হজরত আলীর (রা.) দল ত্যাগ করেছে সেহেতু তারা আল্লাহর বান্দাদের দল বা ইবাদী। এ ইবাদী সম্প্রদায়ের রাষ্ট্র আরব রাষ্ট্র ওমান।
খারেজীদের দল ত্যাগে অপর পক্ষ সুবিধা বুঝে হজরত আলীকে (রা.) খেলাফত ভাগে বাধ্য করে। এরপরও হজরত ওসমান (রা.) হত্যার বিচারের দাবী থামেনি। এ নিয়ে আরো যুদ্ধ হয়। সব যুদ্ধ মিলিয়ে যা লোক নিহত হয় তার সংখ্যা পাঁচ হাজারের অনেক বেশী। এরপর হজরত মুয়াবিয়া (রা.) পক্ষ তাঁর পুত্র ইয়াজিদের নেতৃত্বে প্রবল হয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও রক্ষা করতে গিয়ে কারবালা কান্ড ঘঠিয়ে হজরত আলীর (রা.) পুত্র হজরত ইমাম হোসেনকে (রা.) হত্যা করে । যার শোকে এখনো প্রতি বছর বহু মানুষ দশই মহররম রক্তাক্ত হয়। আলী (রা.) ভক্তের সাথে যুক্ত হয় হোসেন ভক্ত। তাদের এ দলকে চিরস্থায়ী করতে তারা শীয়ায়ে আলী (রা.) নামে একটা দল তৈরী এবং বলে জান্নাতে যেতে হলে মুসলমানদেরকে অবশ্যই শীয়া হতে হবে। এ দলের রাষ্ট্র ইরান, ইয়েমেন, কাতার, বাহরাইন ও উজবেকিস্তান।সৌদী আরব এদের দলে যোগদান না করায় তারা এদের শত্রু। ইহুদী নিধনের জল্লাদ আলী (রা.) ভক্ত হিসেবে ইরানের প্রবল শত্রু ইহুদী রাষ্ট্র ইজরায়েল। ইজরায়েলের পরম বন্ধু আমেরিকা ইরান শত্রু সৌদি আরবের মিত্র। এবার এ দল সমূহ নিজেদের সঠিক প্রমাণ করতে কোরআনের অপব্যখ্যা ও মহানবির (রা.) নামে হাদিস তৈরীর জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়। আর এটা ইসলামের মহাসর্বনাশের অন্যতম একটি কারণ। যে বৃত্ত ভেদ করে বের হওয়া মহা কঠিন। তবে পথ নেই এমন নয়।
কোরআনের অপব্যখ্যা রোধে কোরআনের এক আয়াত নয় সেই আয়াতের সংশ্লিষ্ট সব আয়াতের সমম্বয়ে ফতোয়া দিতে হবে। আর হাদিস কোরআনের সাথে গরমিল হলে সে হাদিস দিয়ে ফতোয়া প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধুমাত্র তাহলে বিদ্যমান ভুল সংশোধন করা যাবে।হানাফীরা এ শুদ্ধ পথে রয়েছে। আর হানাফীরাই মুসলামনদের মাঝে সর্ব বৃহৎ দল। যদিও সে দলে তাদের মুরুব্বী রাষ্ট্র সৌদি আরবও নেই। প্রসঙ্গ বাংলাদেশীরা সাধারণত হানাফী। এখানে সামান্য সংখ্যক ভিন্ন মতের লোক রয়েছে।
অনেকের প্রশ্ন সৌদি কেন ইয়েমেনে হামলা চালায়? কারণ সৌদি ইয়েমেনে শীয়া বিরোধী শাসন চায়। আর সেটা তরা চায় নিজেদের নিরাপত্তার কারণে।সে জন্য তারা ইয়েমেনে শীয়া বিরোধীদের পক্ষে যুদ্ধ করে।ঘটনার নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে দেখা যাবে এসব ঘটনার সাথে ইসলামের সঠিকতা বা বেঠিকতার কোন সম্পর্ক নেই। যদিও অনেকে ইসলামকে হেয়নেস্তা করার জন্য এসব ঘটনাকে ইসলামের বিরুদ্ধে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:২৫