আলকোরআন, সূরাঃ ৫৫ রাহমান, আয়াত নং ৭২ ও ৭৩ এর অনুবাদ-
৭২। তারা হুর, তাবুতে সুরক্ষিতা।
৭৩। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার বা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করবে?
# ৭৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার বা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করবে? হুর যদি পুরুষের প্রতি অনুগ্রহ হয়, হুর যদি নারীর প্রতি অনুগ্রহ না হয় তবে নারী এ অনুগ্রহের কথা অস্বীকার বা মিথ্যা প্রতিপন্ন কেন করবে না? এ অনুগ্রহ যদি তার জন্য না হয় তো সে কিভাবে স্বীকার করবে এটা তার অনুগ্রহ? সে কি তবে আরেক জনের প্রাপ্ত অনুগ্রহকে নিজের বলে দাবী করবে? ঘটনা কি এমন যে না পেয়েও বলবে পেয়েছি? ঘটনা কি এমন যে না খেয়েও বলবে খেয়েছি? এমন হলে কি সেটা সত্য প্রতিপন্ন হয়? সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার বা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করবে? এ প্রশ্ন কি তবে আল্লাহ নারীকে করেননি? এ পশ্নকি তবে আল্লাহ শুধু পুরুষকে করেছেন? এ প্রশ্ন শুধু আল্লাহ পুরুষকে করেছেন, এমন প্রমাণ কেউ কোরআন ও হাদীস থেকে দেখাতে পারবে কি? তাহলে যদি কোন হাদিসে হুর শুধু পুরুষের জন্য, হুর নারীর জন্য নয় বলা হয় তবে সে হাদিসকে সহিহ বলা যাবে কি? সে হাদিস কি ৭৩ নং আয়াতের ব্যখ্যা না বিরোধী? হাদিস কোরআন বিরোধী সাব্যস্ত হলে সে হাদিস মানা যায় কি? প্রসঙ্গত হানাফীরা কোরআন বিরোধী হাদিস মানে না। এ শর্তে তারা বোখারী শরিফের অনেক হাদিস মানে না। যেমন তারা নামাজে জোরে আমিন বলা মানে না। তারা আস্তে আমিন বলে। কারণ আল্লাহ বলেছেন,‘ফাইজা কুরিয়া আলাইহিমুল কোরআনা ফাসতামিউ লাহু ওয়া আনসিতু- যখন তাদের নিকট কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তারা উহা শুনে এবং চুপ থাকে’।আর জোরে আমিন বলাতো চুপ থাকা নয়। আর নামাজে আল্লাহর আদেশ অমান্য করলে নামাজ হতে পারে না। নবি (সা.) বলেছেন তাঁর নামে মিথ্যা প্রচার করা হবে। তো হতে পারে জোরে আমিন বলা সংক্রান্ত হাদিস নবির (সা.)নামে মিথ্যা প্রচার।অথবা হতে পারে নবি (সা.) আগে এমন করলেও উপরোক্ত আয়াত নাজিলের পর তিনি এমন আর করেননি। কাজেই নবির (সা.) নামে প্রচার করা কথা মাত্রই হাদিস এমন মনে করা ঠিক নয়। বোখারী (র.) কোন কথা নবির (সা.) হাদিস বললেই সেটা নবির (সা.) হাদিসের স্বীকৃতি পাবে ঘটনা এমনও নয়।কারণ বোখারীকে (র.) মহানবি (সা.) এমন কোন প্রত্যয়ন প্রদান করেননি। মহানবি (সা.) বলেননি যে, এ মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে বোখারী (র.) যে কথা আমার কথা বা হাদিস বলে সাব্যস্ত করবে উহা আমার কথা বা হাদিস হিসেবে গণ্য হবে। তাহলে বোখারীর (র.) কথাকে মানতেই হবে সেটা কোন কথা? বোখারী (র.) হাদিস সনাক্ত করেছেন ভাল কথা এরপর সেটা কোরআনের সাথে গরমিল না হলে মানা যাবে। আর কোরআনের সাথে গরমিল হলে মানা যাবে না। কারণ মুসলমানের পক্ষে কোরআন খেলাফী হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।তো এখানে হুর একলা পুরুষের জন্য এমন কথা বলা পরিস্কার কোরআন খেলাফী কথা। কাজেই এমন কথা হাদিস হতে পানে না। হতে পারে এ ক্ষেত্রে কেউ নিজের কথা হাদিস হিসেবে প্রচার করেছে। যা আমরা মানতে বাধ্য নই।
এখানে হুর পুরুষের জন্য আলাদা এমন কথা বলা হয়নি বরং হুর নারী পুরুষ উভয়ের জন্য কোরআনে সে কথাই বলা হয়েছে। হুর উভয়ের অনুগ্রহ বলা হয়েছে। আর এ উভয় থেকে কোনভাবেই নারীকে বাদ দেওয়া যায় না।এখন হুর যদি কোন নারীর স্বামীর স্ত্রী হয় তাহলে এটা সে নারীর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হয় কেমন করে? এর সৌদী নারীকে আমার এক চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী সতীন সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে সে বলেছিল, আল্লাহ আযাব।তো জান্নাতে আল্লাহ নারীকে আযাব দিবেন এমন কথা ভাবা যায়? তাহলে কোন শর্তে বলা যায় হুর শুধু পরুষের জন্য? কোরআনের আয়াতের পরিস্কার ঘোষণা হুর নারী পুরুষ উভয়ের জন্য।
আলকোরআন, সূরাঃ ৫৪ কামার, আয়াত নং ১৭ এর অনুবাদ-
* আমি কোরআন সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
# কোরআন কতিপয়ের জন্য নয় বরং সবার জন্য।আর আল্লাহ বলেছেন কোরআন বুঝার জন্য সহজ। তাহলে বুঝাগেল সূরা আর রাহমানের ৭৩ নং আয়াতে আল্লাহ যা বলেছেন তা’ থেকে সবাই যা বুঝে সেটাই সঠিক কথা, কতিপয় যেটা বুঝাতে চায় সেটা সঠিক কথা নয়।
তো হুর যদি নারী হয় আর কোন নারী যদি নারী পুরুষ উভয়ের জন্য হয় তবে সে পরিচারিকা বা বান্ধবী হয়।হুর সুন্দরী বলে পুরুষ একলা এর দখল নিবে এটা কিছুতেই হতে পারে না। জান্নাতে চর দখলের ন্যায় দখল জাতীয় কিছু থাকবে না। বিমান বালা বা নার্স সুন্দরী বলে কি তারা কারো স্ত্রী নাকি? কাজেই সুন্দরী হলেই স্ত্রী হতে হবে এটা জরুরী বিষয় নয়।
আলকোরআন, সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ৩ এর অনুবাদ-
*তোমরা যদি আশংকা কর যে, ইয়াতিম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন, অথবা চার জন; আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকার ভূক্ত দাসীকে। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর সম্ভাবনা।
# আয়াতে আল্লাহর অবস্থান পরিস্কার পক্ষপাতিত্বের বিপক্ষে। আর পক্ষ থাকলে পক্ষপাতিত্ব হয়েই থাকে।কাজেই জান্নাতে নিজ স্ত্রীর সাথে হুর স্ত্রী বা দাসী হিসেবে থাকলে বা একাধীক হুর স্ত্রী থাকলে এটা কেমন কি হয়? দুনিয়ায় একাধীক স্ত্রী টেনেটুনে জায়েজ। মহানবি (সা.) সহ যাদের একাধীক স্ত্রী ছিল সেটা আয়াত নাজিলের আগের ঘটনা। কাজেই সে দৃষ্টান্ত দিয়ে কোরআন অমান্যের অযুহাত দাঁড় করা যাবে না।
আলকোরআন, সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১২৯ এর অনুবাদ-
*আর তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনই পারবে না, তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকে পড়বে না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রাখবে না।যদি তোমরা নিজদিগকে সংশোধন কর ও সাবধান হও তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
# এ আয়াত দ্বারা বুঝাগেল পক্ষপাতিত্ব না করা কিছুতেই সম্ভব নয় । তারমানে পক্ষ থাকলে পক্ষ পাতিত্ব থাকবেই।তবে যখন উপরোক্ত আয়াত সমূহ নাজিল হলো তার আগেই অনেকের বহু স্ত্রী ও দাসী গ্রহণের কাজ হয়ে গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে আল্লাহ যতটা সম্ভব ন্যায় বিচার কামনা করেছেন। তবে তিনি একাধীক পক্ষ থাকা পদ্ধতির সংশোধন চেয়েছেন।সংগত কারণে স্ত্রী, হুর স্ত্রী বা দুই হুর স্ত্রী অবশ্যই একত্রে থাকার কথা নয়।কোরআন থেকে অন্তত সে কথা পরিস্কার।
স্ত্রী নারী ও পুরুষের উভয়ের জন্য হতে পারে না কারণ নারীর স্ত্রী থাকে না। সতীন নারী পুরুষ উভয়ের জন্য হতে পারে না কারণ পুরুষের জন্য হতে পারে না।যেহেতু হুর নারী পুরুষ উভয়ের জন্য সেহেতু হুর স্ত্রী বা সতীন জাতীয় কিছু নয় বরং হুর পরিচারিকা, সেবিকা বা বন্ধবী হতে পারে। কারণ এগুলো নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আলকোরআন, সূরাঃ ৫৬ ওয়াকিয়া, আয়াত নং ১০,২২,২৩ ও ২৪ এর অনুবাদ-
১০। আর অগ্রবর্তি তো অগ্রবর্তি
২২।আয়ত লোচনা হুর
২৩।সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ
২৪। তাদের কর্মের পুরস্কার
# এখানে হুর অগ্রবর্তিদের পুরস্কার।অগ্রবর্তি নারি ও পুরুষ উভয়। আলাদাভাবে পুরুষ অবশ্যই নয়। কাজেই হুর নারী হয়ে থাকলে তারা অবশ্যই পরিচারিকা অথবা বন্ধবী। স্ত্রী বা সতীন অবশ্যই নয়। কারণ নারীর স্ত্রী হয় না আর পুরুষের সতীন হয় না।
আলকোরআন, সূরাঃ ৫৬ ওয়াকিয়া, আয়াত নং ৩৫,৩৬,৩৭ ও ৩৮ এর অনুবাদ-
৩৫।আমরা ওদেরকে সৃষ্টিকরেছি বিশেষ রূপে
৩৬। ওদেরকে করেছি কুমারী
৩৭। সোহাগিনী ও সমবয়স্কা
৩৮। ডানদিকের লোকদের জন্য
# এখানে হুর ডানদিকের লোকদের জন্য পুরস্কার। ডানদিকের নারি ও পুরুষ অবশ্যই। আলাদাভাবে পুরুষ অবশ্যই নয়। কাজেই হুর নারী হয়ে থাকলে তারা অবশ্যই পরিচারিকা অথবা বন্ধবী। স্ত্রী বা সতীন অবশ্যই নয়। কারণ নারীর স্ত্রী হয় না আর পুরুষের সতীন হয় না।
আলকোরআন, সূরাঃ ৫৬ ওয়াকিয়া, আয়াত নং ১৭ ও ১৮ এর অনুবাদ-
১৭।তাদের সেবায় ঘোরাফিরা করবে চির কিশোরেরা।
১৮।পানপাত্র, কুঁজা ও প্রস্রবন নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে।
# এখানে চির কিশোরেরা জান্নাতিদের সেবক। সংগত কারণে হুরগণ সেবিকা হিসেবে অনুমেয়। কারণ সেব থাকলে সেবিকাও থাকার কথা। আর নারী সেবিকাদের সেবার মান বালক সেবকদের থেকে ভাল।আর জান্নাতে উত্তম সেবার ব্যবস্থা থাকা সংগত।
*হাদিসে আছে শহীদের জন্য থাকবে ৭০ জন হুর।
# শহীদ নারী ও পুরুষ উভয়ে। এমন কি ইসলামের প্রথম শহীদ হজরত সুমাইয়া (রা.)। তিনি একজন নারী।তিনি হুর পেলে হুর অবশ্যই তাঁর স্ত্রী হবে না।একজন বলল নারী ও পুরুষ আলাদা হুর পাবে। তো পুরুষের ইয়ে থাকায় পুরুষ হুরের সাথে ইয়ে করতে পারলো। নারীর ইয়ে না থাকায় নারী তার হুরের সাথে ইয়ে করতে অপারগ হলো, তখন নারী ও তার হুর উভয়ে তাদের দূর্ভ্যাগ্যে কপাল চাপড়াল, তো জান্নাতে এমন ঘটনা ঘটলে বিষয়টা কেমন কি হলো? স্ত্রী ও হুরের সাথে এক সঙ্গে ইয়ে করা যাবে কি? একটা মাত্র ইয়ে দিয়ে একই সময়ে দু’জনকে সেবা দেওয়া কি করে সম্ভব? আল্লাহ বলেছেন এটা সম্ভব নয়-
আলকোরআন, সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১২৯ এর অনুবাদ-
*আর তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনই পারবে না, তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকে পড়বে না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রাখবে না।যদি তোমরা নিজদিগকে সংশোধন কর ও সাবধান হও তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
দুনিয়া জান্নাত নয়। এখানে অপারগতার কারণে কারো একাধীক সঙ্গীনী থাকলে। কারো প্রতি অসমান ব্যবহার হলে না হয় আল্লাহ ক্ষমা করবেন। কিন্তু জান্নাত কি পাপের স্থান? যে সেখানেও ক্ষমার বিষয় থাকবে? সংগত কারণে জান্নাতে পক্ষও থাকবে না আর পক্ষপাতিত্বও থাকবেনা।তবে পৃথিবী থেকে যারা সতীন সাথে করে নিয়ে যাবে তাদের বিষয় চলবে অপারগতা শর্তে। সেজন্য আমর স্ত্রী প্রায় আমাকে ওয়াদা করায় তার মৃত্যুরপর আমি বেঁচে থাকলে বিয়ে অন্তত যেন আর না করি।তো দু’নিয়ার সতীন থেকে আত্মরক্ষার পর একগাদা হুর সতীন কপালে ঝুটলে সেটা কেমন কি হবে?
হুর সম্পর্কে লোক কথা হিসেবে যা প্রচার আছে বা যা হাদিসের নামে প্রচার করা হয় কোরআনের সাথে মিল না থাকায় সে সব কথা গ্রহণযোগ্য নয়।
আলকোরআন, সূরাঃ ২ বাকারা, আয়াত নং ২ এর অনুবাদ-
* এটা সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা মোত্তাকীদের জন্য হেদায়েত বা পথ নির্দেশ।
# কোরাআন যদি আমাদেরকে পথ দেখাতে পারে তবে লোক কথাতে পথ খুঁজতে যাওয়ার দরকার কি? হাদিস কোরআনের ব্যখ্যা ব্যখ্যা মূলের সাথে গরমিল থাকে না। যদি দেখা যায় ব্যখ্যা মূলের সাথে মিলে না। তাহলে ধরে নিতে হবে এটা ব্যখ্যা বা হাদিস নয়। আর যদি হাদিস হয়ে থাকে তবে পরে কোরআনের কারণে মানসুখ বা রহিত হয়েছে। উপরোক্ত বিষয়ে মনে হয় এর চেয়ে বেশী কিছু বুঝা সম্ভব নয়।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৫