কোন বিষয়ের প্রমাণ কারো নিকট থাকে আর কারো নিকট থাকে না। প্রমাণ হলো দেখা, শুনা, ত্বক দ্বারা অনুভব ও যুক্তি দ্বারা বুঝা। জীব্রেঈলকে (আ.) মহানবি (সা.) দেখেছেন।তাঁর কথা তিনি শুনেছেন।ত্বক দ্বারা তাঁর স্পর্শ অনুভব করেছেন।এ জন্য এ সংক্রান্ত প্রমাণ তাঁর নিকট ছিল। মহানবি (সা.) কাছাকাছি বসে আল্লাহর কথা শুনেছেন।আল্লাহর বিষয়ে তাঁর নিকট শুনার মাধ্যমের প্রমাণ ছিল। বর্তমানে একশত আশি কোটি মানুষ তাঁর কথায় বিশ্বাস করে।মহানবির (সা.) কথায় যারা বিশ্বাস করেনা, তারা তাঁর প্রাপ্ত প্রমাণে বিশ্বাস করেনা। যদি তারা জীব্রাঈলকে দেখতো, তাঁর স্পর্শ অনুভব করতো তবে কি তারা জীব্রাঈলকে (আ.) বিশ্বাস করতো? নাকি বলে বসতো তুমি যে জীব্রাঈল (আ.) তার প্রমাণ কি? এ ক্ষেত্রে মহানবি (সা.) জীব্রাঈলের (আ.) প্রতি বিশ্বাসী হয়ে তাঁর দাবী বিশ্বাস করেছেন।তাঁর মনে হয়েছে জীব্রাঈল সত্য বলছেন। যারা মহানবির (সা.) কথায় অবিশ্বাস করেছে তারা যদি আল্লাহর কথা শুনতো তবে কি তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করতো? নাকি বলতো আপনি যে আল্লাহ তার প্রমাণ কি? এ ক্ষেত্রে মহানবি (সা.) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে তাঁর দাবী বিশ্বাস করেছেন।তাঁর মনে হয়েছে আল্লাহ সত্য বলেছেন।
মহানবির (সা.) সংবাদ অনুযায়ী শেষ বিচারের সময় অবিশ্বাসীরা যখন আল্লাহর কথা শুনবে তখনকি তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করবে? নাকি মনে করবে ক্ষমতা ফলানোর জন্য কেউ একজন আল্লাহ দাবী করছে? তারপর তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তারা কি মনে করবে?চুড়ান্ত প্রমাণ তবে কোথায়? এ ক্ষেত্রে যুক্তি ছাড়া গতি নেই। এখানে যুক্তি হলো সসীমের ভুল আছে, অসীমের ভুল নেই। কারণ সসীমে যে বিষয়ে ঘাটতি আছে সে বিষয়ে সসীম থেকে নিশ্চিত সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু অসীমে কোন বিষয়ে কোন ঘাটতি থাকা সম্ভব নয় বিধায় অসীমে ভুল থাকা সম্ভব নয়। আর অসীম একাধিক হওয়া সম্ভব নয়। কাজেই নির্ভুল হলো একজনের কথা, যিনি অসীম। বর্তমানে শুধুমাত্র একটি পুস্তকে ভুল না থাকার ঘোষণা রয়েছে। দেড় হাজার বছরেও যাতে কোন ভুল সনাক্ত হয়নি। কাজেই এ পুস্তককে অসীমের বা আল্লাহর পুস্তক বলা যায়।সংগত কারণে আল্লাহর বিষয়ে যুক্তিসংগত প্রমাণ রয়েছে। যেহেতু আল্লাহর পুস্তক মুখস্ত আকারে জীব্রাঈল ও মহানবির (সা.) মাধ্যমে এসেছে কাজেই তাঁরাও আল্লাহর দূত হিসেবে প্রমাণীত।
মহানবি (সা.) যা দেখেছেন, যা শুনেছেন, যা অনুভব করেছেন লোকদেরকে সে সংবাদ প্রদান করেছেন।তাঁর সংবাদে যে আল্লাহর বাণী রয়েছে উহা আল্লাহর বাণী হওয়া বিষয়ে উহাতে অকাট্য যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে যা কেউ খন্ডন করতে পারেনি।কাজেই উহা প্রমাণীত সত্য।কেউ যদি সে প্রমাণ বুঝতে না পারে তবে সে যদি মহানবি (সা.) প্রদত্ত সংবাদে বিশ্বাস স্থাপন করে তবেও সে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।মহানবির কথা বিশ্বাসের যুক্তি হলো যেহেতু তিনি সত্যবাদী হিসেবে সমাজ স্বীকৃত সে হেতু তিনি যা বলেছেন তা’ সত্য। এভাবে কেউ বিশ্বাস করতে না পারলে, যদি তার প্রমাণ একান্ত প্রয়োজন হয় তবে মহানবি (সা.) প্রদত্ত সংবাদের সঠিকতার পর্যাপ্ত প্রমাণও মৌজুদ রয়েছে। তাকে শুধু কষ্ট করে সে সব প্রমাণ খুঁজে নিতে হবে। কাজেই সকল বিশ্বাসের সঠিকতার প্রমাণ নেই ঘটনা এমন নয় বরং কোন কোন বিশ্বাসের সঠিকতার প্রমাণ রয়েছে আর কোন কোন বিশ্বাসের সঠিকতার প্রমাণ নেই। যে সব বিশ্বাস কারো অনুমানের ভিত্তিতে করা হয় সে সব বিশ্বাসের সঠিকতার প্রমান নাও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
আদালত সাক্ষ্য আলামত ও যুক্তি তিনটাকেই প্রমাণের উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করে এর ভিত্তিতে আদালতের রায় প্রদান করে।বিচারকের বাস্তব ঘটনা দেখে কোন কিছু প্রমাণ করা সম্ভব নয়।ইসলামের বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও প্রতিটি মানুষ একজন বিচারক।সে ইসলামে বিশ্বাসের সাক্ষ্য বিবেচনা করবে, সে ইসলামে বিশ্বাসের আলামত বিবেচনা করবে, সে ইসলামের বিশ্বাস যুক্তি দিয়ে যাচাই করবে, এরপর ইসলামের বিশ্বাসের বিষয়ে তার রায় ঘোষণা করবে।কেউ যতি মনে করবে তার কাছেও জীব্রঈল আসুক। আল্লাহ তার সাথে কথা বলুক। তবে তার ইচ্ছাও পূরণ হবেনা আর তার আল্লাহ বিশ্বাসও অর্জীত হবেনা।আর এমতাবস্থায় আল্লাহকে অবিশ্বাস করার ক্ষতি থেকেও সে রক্ষা পাবে না।
কোন কিছু সঠিকও হতে পারে আবার বেঠিকও হতে পারে এমন মনভাব বিশ্বাস নয় বরং সন্দেহ। অনেকে সন্দেহকে বিশ্বাস বলে ঘোষণা প্রদান করে যা ঠিক নয়।বাপ-দাদা করেছে সেজন্য আমিও করি এটা বিশ্বাসতো নয় এমনকি সন্দেহ থেকেও নিম্নমানের।সে জন্য বিশ্বাস এমনি এমনি আসেনা। এটা যুক্তি ভিত্তিক অনুমানে অর্জন করে নিতে হয়। যারা বিশ্বাস অর্জন না করে বাপ-দাদার অনুসরন বা সন্দেহ নিয়ে বসে আছেন তাদের কপালে কি আছে আল্লাহ মালুম।যাদের বিশ্বাস বাস্তবে বিশ্বাস নয় কিন্তু তারা বিশ্বাস বলে প্রচার করে, বাঁশডলা পড়লে তাদের সে বিশ্বাসের পরীক্ষা হয়। তখন তারা তাদের অবিশ্বাসের ঘোষণা প্রদান করে। এভাবে আল্লাহ মাঝে মাঝে বিশ্বাস বা ঈমানের পরীক্ষা করে প্রকৃত বিশ্বাসী সনাক্ত করেন। যেন বিশ্বাসীরা পরস্পরকে চিনতে পারে।
কেউ যুক্তিহীন অনুমাণে বিশ্বাস করে। কেউ যুক্তিযুক্ত অনুমাণে বিশ্বাস করে।যুক্তিযুক্ত অনুমাণে বিশ্বাস সুদৃঢ় হয়। যুক্তিহীন অনুমানে বিশ্বাস ভুল ও শুদ্ধ দু’টোই হতে পারে।বিশ্বাসের প্রমাণ থাকেনা, এটা ছেলে মানুষী কথা।যেমন একজন খুন করতে দেখেছে, বিচারক তার কথায় বিশ্বাস করেছে।যে খুন করতে দেখেছে তার নিকট খুনের প্রমাণ আছে, বিচারক তার সে প্রমাণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে।একজন একজনকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে, উকিল যুক্তি দিয়ে তার কথা মিথ্যা প্রমাণ করেছে। কাজেই প্রমাণ বিভিন্ন রকম হয়।আবার একজন যে প্রমাণের কথা বলেছে, এটা সে মিথ্যা বলেছে, আর কেউ কেউ তার মিথ্যা প্রমাণে বিশ্বাস করে ঠকেছে।এ জন্য সব বিশ্বাস সব সময় সঠিক হয় না।
কেউ একটা সংবাদ প্রদান করেছে। সে সংবাদ বিষয়ে কেউ কিছু না ভেবেই এমনি এমনি যদি ঘোষণা দিয়ে বসলো যে সে এ সংবাদ বিশ্বাস করে।তাহলে তার এ বিশ্বাস টলটলমান অবস্থায় বিরাজ করবে। আবার কেউ একজন যদি এসে বলে আসলে এ সংবাদ সঠিক নয়, তখন সে তৎখনাৎ বলে বসবে সে এ সংবাদ বিশ্বাস করেনা। তারমানে তার বিশ্বাস অবিশ্বাসে পরিণত হতে সময় লাগবে না। এধরণের বিশ্বাস হলো বায়বীয় বিশ্বাস বা ঈমান।বায়ু যেমন এখন এখানেতো তখন সেখানে থাকে, কখনো এক যায়গায় থাকে না, এদের ঈমানও কখনো এক জায়গায় থাকে না। এরা কখনো বলে আল্লাহ ছাড়া কিছু নাই, আর কখনো বলে আল্লাহ বলতে কিছু নাই।কখনো তারা পলে পরকালের ভায়ে তারা অস্থির। আবার কখনো তারা বলে পরকাল বলতে কিছু নেই, সব শূণ্য।তারমানে পরের বিশ্বাস তাদের বিশ্বাস, কিন্তু তাদের নিজেদের আলাদা কিছু নেই। ছোট বেলায় টিভি অনুষ্ঠানে একটা গান শুনেছিলাম, ‘আমি কভু নইতো কেহ, কেউ আমার নয়, নাম ঠিকানা নেইতো আমার শুন মহাশয়’।সুতরাং এরা কারো নয়, এমনকি নিজেরও নয়। এদের বিশ্বাস বা ঈমান নিয়ত অস্থিতিশীল।বিশ্বাসী বা অবিশ্বসীদের এদের থেকে দূরে থাকা উচিৎ। এদের জন্য কারো অপেক্ষা করা উচিৎ নয়। কারণ এরা মূলত কারো নয়।
অনেকের বিশ্বাস বা ঈমান একদম পানির মত।কখনো কঠিন হয়ে জমে বরপ হয়ে থাকে। একটু তাপ দিলে গলে তরল হয়ে পানি হয়ে যায়। আরো তাপ দিলে বাস্প হয়ে উড়ে যায়।এ ধরনের বিশ্বাসীর দলে যোগদান করা বা তাকে দলে গ্রহণকরা উভয় বিপদ জনক। এদের বিশ্বাস বা ঈমান কম কষ্টের হয়ে থাকে এ জন্যই পানির মত সহজ হয়। লৌহের মত কঠিন হয় না। লৌহের মত কঠিন হয় না। এমন ঈমান বা বিশ্বাস ছিল হজরত বেলালের (রা.) ঈমান বা বিশ্বাস। মনিবের মেজাজ ও নির্যাতনের উত্তাপে উহা সামান্যতম গলেনি।
বিশ্বাস বা ঈমান কখনো হেলা খেলার মত বিশ্বাস বা ঈমান হবে না। হেলা খেলার মত বিশ্বাস বা ঈমান হলে সেটা খেলনা হয়েই থাকবে। সেটা জীবনের কোন কাজে লাগবে না। বাস্তব শক্ত কঠিন বিশ্বাস বা ঈমানের জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করতে হবে। এটা বোধগম্য হওয়ার জন্য সদা তৎপর থাকতে হবে। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।উপলব্ধি দ্বারা বিশ্বাস শক্ত না হলে প্রমাণ খুঁজে নিতে হবে। এভাবে নিরন্তর চেষ্টা তৎপরতা থাকলে আল্লাহ সহায় হয়ে বিশ্বাসকে আরো মজবুত করার ব্যবস্থা করবেন। আর তাঁর রহমতের আওতাভুক্ত হয়ে গেলে আর কেউ বিশ্বাস বা ঈমান কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে না।
ভুল অনুমানে প্রাপ্ত বিশ্বাস সঠিক নয়।বান্তব উপলব্ধি সঠিক বিশ্বাসের মহা সহায়ক। আর সঠিক যুক্তি অবশ্যেই ঈমানের কাজে লাগে।আর ইসলামী বিশ্বাসের সঠিকতার প্রমাণ অবশ্যই আছে। প্রয়োজনে কষ্ট করে খুঁজে নিতে হবে। আর কারো নিকট সঠিক বিশ্বাসের গুরত্ব না থাকলে। সে বেঈমান হয়ে মরলে এর ফলও সে ভোগ করবে।এতে অন্যদের কিছুই করার থাকবে না।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৫