একটা ঘটনা মনে পরে গেল-
ক্লাস নাইনে থাকতে আমাদের স্কুলে রুমে রুমে ছোট ছোট লাউডস্পিকার লাগানো হয়েছিল, হেডস্যার এর নোটিস যাতে শুনতে পাই আমরা সে উদ্দেশ্যে। যেদিন লাগানো হল, সেদিন টেস্ট করার জন্য বিভিন্ন গান বাজাচ্ছিল । ক্লাসে ম্যাডাম চুপচাপ বসে আছে আর আমরা গান শুনতাছি মজা করে আর সেই সাথে টুকুরটুকুর গল্প।
হঠাত করে লাউডস্পিকারে বেজে ওঠে- আমার সোনার বাংলা ...... আমি তোমায় ভালবাসি।
ছোটবেলা থেকে ই অতিমাত্রায় পছন্দের এর গান শুনে কোনকিছু চিন্তা না করেই সটান দাঁড়িয়ে গেলাম ... এবং অবাক হয়ে দেখলাম আর কেউ দাঁড়ালো না দেখে।
ম্যাম মনে করেছিলেন আমি বাইরে যাব তাই পারমিশন চাচ্ছি।
কিন্তু কিছু বলছি না দেখে কারন জিজ্ঞাসা করলে আমি এককথায় খালি একটা কথা বলেছিলাম- ম্যাডাম জাতীয় সংগীত বাজছে তো ......
ম্যাম অবাক...... আমার কাছে এসে বললেন- আর কেউ তো দাড়ায়নি। তুমি চাইলে বসতে পার ......
হ্যা, আর কেউ দাড়ায়নি সেদিন...... একা ক্লাসে বোকার মত একলা আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। এটাকে বান্ধবীরা বোকামী বলে টিজ ও করেছিল। কিন্তু আমি বসিনি। কারন কেউ দেখুক না দেখুক নিজের কাছেই ছোট হয়ে যেতাম।
আর সেদিন ঢাকাতে এক বাস হেল্পারের ফোনে জাতীয় সংগীতের রিংটোন শুনে তাকে বলেছিলাম- এটা যে আইনোতো অপরাধ সেটা কি জানেন ???
তার কথা- সবাই তো রাখে ।
বিরস মুখে তাকে বললাম- তাহলে প্রতিবার যখন ফোন বাজবে, মনে করে একটূ দাঁড়িয়ে সম্মান জানাতে পারবেন ???
ঐ ছেলে কে বুঝলো কে জানে- মাথা নাড়ালো ।সে কি আদৌ জানে যে জাতীয় সংগীতের সময় কিভাবে সম্মান জানাতে হয় ???
হাতে হাত রেখে কোমড় বাকিয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অন্তরা থেকে শুরু করে চেহারাউ অতিমাত্রায় কৃত্রিমতা নিয়ে আর যাই হোক
জাতীয় সংগীত গাওয়া যায় না।
ক্ষিও দের গাওয়া ঐ রবীন্দ্র সঙ্গীত কে নিয়ে পাবলিকের শেয়ারনুভুতি দেখার মত ......
হ্যা ভাই, ওরা যা গেয়েছে তা রবীন্দ্রসঙ্গীত ই... আমাদের জাতীয় সংগীত না......
তাই কমেন্টে চোখের পানি না ফেলে যখন কোথাও এই গান টা আদি ও অকৃত্রিম রূপে বাজবে তখন একটূ সম্মান দিয়েন...
নতুন কম্পজিশনে টূংটাং লাগিয়ে অতিমাত্রায় গলা কাঁপিয়ে সে যা গাইলো, গান হিসেবে তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এভাবে আমাদের জাতীয় সংগীত কে চেঞ্জ করার প্রচেষ্টা না চালালেই পারত। তাও আবার স্বাধীনতার মাসে, এটা তাদের মার্কেট পাওয়ার টেকনিক কিনা জানি না।
কিন্তু আমার ভয়- বাঙ্গালী যে পরিমানে হুজুগে, সাধারন পাবলিক পরবর্তীতে ওদের স্ট্যাইল মত জাতীয় সংগীত না গাইতে শুরু করে......
না ভাই, আর যাই হোক জাতীয় সংগীতে ফিউশন চাই না ...... এর চেয়ে স্কুলে লাইনে দাঁড়ানো বাচ্চাদের কোরাস টা বেশি মন ছোয়ানো ...... সেখানে সুরে ভুলভাল থাকলেও অ্যাট লিস্ট বানিজ্যিক চিন্তাভাবনা না থেকে ভালোবাসাটাই থাকে ......
অনেকেই এখন হয়ত পরিবর্তন নিয়ে লম্বা লেকচার ঝাড়বেন এখানে। কিন্তু ভাই লাগবে না গিটারের টুংটাং...... লাগবে না কোন পিয়ানো তবলা, আমার সোনার বাংলা যেমন ই ছিল তেমনি থাকতে দিন না প্লিজ... দেশ কে পরিবর্তেন ঠেলায় আমরা কই নিয়ে যাচ্ছি সেটা তো সবাই জানে। এই একটা গানে আদিমতা থাকুক...... আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সেই জাতীয় সংগীত ই গাক ...... যেটাকে আমি, আপনি, আমাদের বাবা মা... তাদের বাবা মা এমনকি তাদের বাবা মা ও গেয়ে এসেছে......
শেষ করব আমার খুব পছন্দের একটা লাইন দিয়ে - পরিবর্তন ভালো কিন্তু সকল ক্ষেত্রে না
দীর্ঘ এক বছর প্রায় সময় পরে ব্লগে লিখলাম, মানে না লিখে পারলাম না,