খুব গরীব ঘরের মেয়ে। নাম সেলিনা। গর্ভে এক সন্তান রেখে স্বামী পালিয়ে গিয়ে আরেকটা বিয়ে করলো। কেন?? তার শরীরের কালো চামড়া কি তার স্বামীকে বাধ্য করেছিলো অন্য কারো সাথে পালিয়ে যেতে? মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো কি কেউই ছিলো না?? স্বামী ভক্তি তার মনে বিন্দু মাত্র কম নেই। চটপটে! খুব কাজ জানে মেয়েটা, তারপরেও এরকম হলো কেন/? মানুষের বাড়িতে কাজ করে, তেলের ফ্যাক্টরী তে বোতল ধুয়ে দিন এনে দিনে খেয়ে তার দিন কাটতে শুরু করলো। গর্ভের সন্তান জন্ম নিলো, কন্যা সন্তান। বড়ই লক্ষ্মী সন্তান। ছোট্ট সন্তান কোলে নিয়ে এর বাড়ি ওর বাড়ি কাজ করে দু চারটে টাকা জমানো শুরু করলো। মেয়ে ধীরে ধীরে ৬ -৭ বছরের হলো। এখন সেলিনা এক উকিলের বাসায় কাজ করে। উকিল বড় ভালো মানুষ। সেলিনার কষ্ট দেখে বলে "মা,তোমার মেয়েটা তো বড় লক্ষ্মী, আমি ওকে পড়াশুনা করাবো। " কিন্তু উকিলের স্ত্রী তার স্বামীর এই উদারতা সহ্য করতে পারলো না। নানা রকম দোষ চাপিয়ে সেলিনা আর তার মেয়ে কে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। আবার সেই আগের মতো তেলের ফ্যাক্টরীর বোতল ধুয়ে দু-এক টাকা যা হয় তা দিয়েই দিন পার করতে হবে । কিছুদিনের মধ্যেই একজন ভন্ড দয়ালু তাকে বিয়ে করলো, পূর্বের ন্যায় আবারও গর্ভে সন্তান দিয়ে সেও পলাতক হয়ে গেলো। পর পর দুবার তার সাথে এ অন্যায়- অবিচার হলো। সে তবু ভেঙ্গে পড়েনি একমাত্র মেয়ে কে মাদ্রাসাতে দিয়ে গর্ভের সন্তান নিয়ে কাজ করা শুরু করলো। এবার তার ছেলে হলো। সে ৩ বছরের হয়ে এলো, মা বসে কাজ করে আর সে মা এর পাশে চুপটি করে বসে থাকে। তার এলাকায় এখন বন্যা। বন্যায় অনেকের মতো তার ঘর বাড়িও ভেঙ্গে গিয়েছে। কোনো মতো একটা রুম বেঁচেছে। টিনের বাড়ি তার। এভাবেই বাড়ি পুনর্নিমাণের চিন্তা নিয়ে সে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। যে বাসায় সে এখন কাজ করে সে বাসার মানুষ নিজেদের সাথে কথা বলছে--
- ইট পাথর কিনতে হবে, দু'তালা দিয়ে পোষাচ্ছে না, ৩ তালা বানিয়ে উপর তালা টা ভাড়া দিয়ে দেবো।
.
আর সেলিনা মনে মনে বলছে
.
- যদি ২-৪ টে বাঁশ কিনতে পারতাম, তাহলে আমার বাড়ি টা ঠিক করতে পারতাম।