somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

** “আমার চোখে মুজিবের ভিলেন হয়ে ওঠার গল্প ”

২২ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর । ঢাকার আলরাজি হসপিটালে আমার জন্ম । বেড়ে উঠি বরিশাল শহরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে । জয়েন ফ্যামিলি । দাদা-দাদি , মা-বাবা , চাচা-চাচি , ফুফু , ভাই-বোন নিয়ে বিশাল এক পরিবার । আমার দাদা ছিলেন চেয়ারম্যান । পরপর ৩ বার তিনি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন । এক কথায় তিনি বরিশাল শহরের অত্যাধিক সম্মানিত এক ব্যক্তি ।আমাদের বংশও আবার চৌধুরী । আমার নাম দেখেই বুঝতে পাড়ছেন :P :P
বাবা হলেন জনতা ব্যাংকে চাকরীরত । পরিচয় পর্ব এখানেই শেষ করি । মূল কথায় ফিরে আসি ।

ছোটবেলা থেকেই আমার একপ্রকার রাজনীতির প্রতি আকর্ষন সৃষ্টি হয় । তবে আমার পরিবারের কেউ ই রাজনীতিতে সক্রিয় নন । বরিশাল শহরের বেশির ভাগ লোকই বিএনপি এর সাপোর্টার । তাই আমিও ছোটবেলা থেকে খালেদা ভক্ত হয়ে উঠি । আওয়ামিলীগ দুই চোখের বিষ হয়ে দাঁড়ায় ।
কিন্তু ছোটবেলায় সত্যিকার অর্থে শেখ মুজিব ও জিয়াকে মন প্রান দিয়ে সম্মান করতাম । টিভিতে যখন দেখতাম সব মুক্তিযোদ্ধারা গলা ফাটিয়ে বলছে “আমার নেতা তোমার নেতা । শেখ মুজিব , শেখ মুজিব ।” তখন আমার ভিতর একপ্রকারের শিহরন সৃষ্ট হত । গা এর লোম খাড়া হয়ে যেত । তখন আমিও গলা ফাটিয়ে শেখ মুজিব , শেখ মুজিব করতাম । আর গাইতাম , “শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ্য মুজিবরের ধনি , কন্ঠ ধনি……আকাশ বাতসে ওঠে রনি ।” আর জিয়া এর কথা কি আর বলবো ।এককথায় সূর্য পুরুষ । তাকে দেখে আমার আর্মি হতে ইচ্ছা করত । টিভিতে যে ভিডিও গুলা দেখতাম তা আমাকে অনেক অনুপ্রেরনা দিত ।

যাই হোক । ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম । কিছু বইপত্র পড়তাম । নানা মানুষ জনের নানান কথা শুনতাম । আমার এক ফুফা এর সাথে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতাম । ফুফা ছিলেন কঠোর বিএনপি ।হাসিনা এর কথা শুনতেই পারত না ।উনি সাইদী , সাকা চৌধুরী , খালেদার প্রচুর ভক্ত ছিল । তাদের সাথে ভাল সম্পর্কও ছিল । সাইদী মাঝে মাঝে তার বাসায় থাকতেন এবং সাকা চৌধুরী তার দুঃসম্পর্কের মামা লাগেন ।তাই যা হওয়ার তাই হল । আলোচনার সময় বেশিরভাগ সময়ই উনি আওয়ামীলীগ ও মুজিব এর সমালোচনার মেতে থাকতেন । তো ধীরে ধীরে এই মিথ্যার বীজ আমার মাথায়ও রোপিত হল । মোট কথা হল , আমার মনে হত শেখ মুজিব এর আমলে সব মন্রী গুলা ছিল চোর , উনি নিজেও ব্যর্থ , শেখ মুজিব এর দেশ চালানোর কোন যোগ্যতা নাই , শুধুমাত্র জনতা কে উত্তেজিত করতে পারে , ওনার ছেলে গুলোও ছিল খারাপ , দূর্নিতিগ্রস্থ(কথাগুলো পুরোপুরি মিথ্যা নয়) , মুক্তিযুদ্ধ না হলেও দেশ সাধীন হত , দেশে যুদ্ধের কোন দরকার ছিল না , বাংলাদেশ সাধীন না হলে মানে পাকিস্থানের অধীনে থাকলে আমরা আজ এর থেকে ভাল থাকতাম , খালেদা , সাইদী এরা অনেক ভাল মানুষ পুরা দুধে ধোয়া , সাইদী-সাকা রাজাকার না , জিয়া অনেক ভাল একজন নেতা । আর বললাম না । বুঝতেই পারছেন । এসব কথার সব যে মিথ্যা তা নয় । কিন্তু এমন ধারনা আমার মাথায় জন্মানোর পর মুজিবকে আমার কেমন জানি লাগতে শুরু করলো । কিছু বই পড়েছিলাম তা পড়ার পর মুজিবকে আরো খারাপ লাগতে শুরু করল । ছোট বেলার তার নাম শুনলে দেহে যে উত্তেজনার সৃষ্ট হত তা ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করল । তার প্রতি একপ্রকার ঘৃণা জন্ম হল । এরপর পুরোপুরি বিএনপি মাইন্ডের হয়ে গেলাম ।

এরপর থেকে আমার ফুফা এবং অন্যদের সাথেও আমি আওয়ামীলীগ ও মুজিব এর সমালোচনায় মেতে উঠতাম । রাজাকার এ পরিনত হচ্ছিলাম আরকি :P :P
এরপর আরো বড় হওয়ার পর বুঝতে পারলাম যে এসবের মাঝে কোন একটা ফাক আছে , প্রতারনা আছে , মিথ্যে আছে । ফুফার কথাবার্তাকে ফাউল লাগতে শুরু করল । ওনার সব কথা মিথ্যা লাগতে শুরু করল । এরপর এগুলো নিয়ে আরো মাথা ঘামাতে শুরু করলাম , বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করলাম ।
যা বুঝতে পারলাম তা হলো , মুজিব , জিয়া দুজনই বাংলার নায়ক , মহাপুরুষ , বাংলার সোনার ছেলে যাদের মতো মানুষের জন্ম আর হাজার বছরেও হবে না ।এদের নিয়ে সমালোচনা করা মহাপাপ , অনেক বড় স্পর্ধা । এদের দুজনকেই মন-প্রান দিয়ে শ্রদ্ধা করা উচিত ।
এখন আমার এই দুজন ব্যক্তির নাম শুনলে আগের মতোই দেহে শিহরন সৃষ্ট হয় ।

** আমার মতো অনেকেই আছে ভুল তথ্য জেনে মুজিব কিংবা জিয়া কে দেখতে পারে না , ঘৃণা করে । তাদের সমালোচনা করে । তাদের কে সঠিক ইতিহাস জানার অনুরোধ করছে ।

**লেখায় আমি এই দুজন মহাপুরুষকে মুজিব ও জিয়া বলে সম্বোধন করেছি । তেল মারা নেতাদের মতো নামের আগে একশ একটা উপাধি যোগ করি নাই ।অনেকে সমালোচনা করতে পারেন । তাদের বলছি , মহাপুরুষদের কথা বলতে নাম লাগে না । তাদের কর্মই তাদের আসল পরিচয় দিয়ে দেয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ৯:০৪
১৭টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×