বইয়ের নাম: শবনম
লেখক: মহিউদ্দিন মোহাম্মদ যুনাইদ (ব্লগার: নীল আকাশ)
প্রকাশক: এক রঙ্গা এক ঘুড়ি
মুদ্রিত মূল্য: ১৬০ টাকা
অনলাইন: রকমারী লিংক
একজন শুভ ও তার প্রেমকে ঘিরেই উপন্যাসটি এগিয়ে চলে। প্রেমিকা শবনমের সাথে ফোনালাপ দিয়েই উপন্যাসের শুরু যেখানে জানা যায় যে, শবনম শুভকে পছন্দ বা অপছন্দ করে না কারণ সে অন্য একজন মানুষকে পছন্দ করে; আর শুভ বারবারই প্রেমিকার কাছে ভালোবাসার দাবি জানায় কিংবা অপেক্ষা করে ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ার! কিন্তু খুব একটা লাভ হয়না তাতে। তারপর ফ্রাশব্যাক পর্বে প্রেমিকার প্রথম সাক্ষ্যাৎ লাভের ঘটনা জানা যায়, যেখানে দেখা যায় প্রথম দেখায় শুভ অপরূপা সুন্দরী শবনমের প্রেমে পড়ে। এভাবেই এগিয়ে চলে বর্ণাত্মক রীতিতে লেখা একটি উপন্যাস। পুরো রচনার অনেক অংশ জুড়েই রয়েছে শবনমের বর্ণনা, যেখানে অন্যান্য পার্শ্ব-চরিত্রগুলো তুলনামূলক ভাবে গুরুত্ব কম পেয়েছে। লেখক সাবলিল ভাবে সহজ ভাষায় লিখে গেছেন, তবে ব্যক্তিগত ভাবে বলবো- কিছু কিছু অংশে বর্ণনা একঘেয়েমিপূর্ণ মনে হয়েছে। আবার কিছু কিছু অংশে মনে হয়েছে, খানিকটা অংশ বোধহয় ছেঁটে ফেলা হয়েছে, যার উপস্থিতি পরিস্থিতি দাবী করে।
উপন্যাসটিতে যথেষ্ট নাটকীয়তা রয়েছে, অনেকটা সিনেমার মতো। এক্ষেত্রে বাস্তববাদী পাঠকদের পছন্দ নাও হতে পারে, তবে আমার কাছে মন্দ লাগেনি। গল্পে একসময় আমরা দেখি শবনমের বিয়ে হয়ে যায় আর প্রেমিক শুভ সবকিছু ভোলার চেষ্টা করে, নতুন জীবন শুরু করে এবং বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশের চাকরি পায়! আরো কিছু সময় পরে ঢাকায় পোস্টিং হয় এবং পাপে নিমজ্জিত শবনমের স্বামীকে হাতে নাতে ধরে। শুরু হয় আরেক অধ্যায়। শেষটাতেও যথেষ্ট নাটকীয়তা রয়েছে, হয়তো শবনমের সাথে শুভর মিলন হয় কিংবা হয় না।
ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ইংরেজি শব্দ দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। যেমন, পার্পল কালারের ফুলস্লীভ ড্রেস পড়া অপূর্ব সুন্দরী একটা মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে গটগট করে নীচে নেমে আসছে আর... কিংবা কত গভীর অতল গহবরে যে আমি আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছি সে শুধু আমিই জানি! ওহ, গড! পেইন, সো ডীপ পেইন... কিংবা ১৫ পাউন্ডের আয়রণ হ্যামার!
প্রুফ রিডিং এর জন্য আরেকটু বেশি সময় দেয়া দরকার ছিল, বেশ কিছু বানান ভুল আছে। আরেকটা বিষয়, বুক মেকআপ-এর ক্ষেত্রেও গুরুত্ব কম দেয়া হয়েছে। যেমন, পঁয়ত্রিশ তম পৃষ্ঠায় দেখা যায় উপরের প্যারার লাইন-স্পেসিং কম আবার নিচের প্যারায় বেশি কিংবা পুরা বই এ লেখা 'জাস্টিফাইড' থাকলেও আটাত্তর তম পৃষ্ঠায় 'লেফট এ্যালাইন' করা!
প্রচ্ছদ সম্পর্কে বলতে গেলে এক কথায়- সুন্দর। সারা সময় লেখক শবনমের যে পরিমাণ বর্ণনা করেছেন তাতে প্রচ্ছদটা দেখলে মিলিয়ে নিতে খানিকটা সুবিধা হয়। প্রচ্ছদে শবনমের এক কাল্পনিক রূপ দেখা যায় যা একই সাথে বাস্তবও হতে পারে!
যাইহোক, সর্বপরি বলা যায়, উপন্যাসটি ভালো লেগেছে। যদিও পুরোটা শেষ করার পর মনে হয়েছে নামকরণের ক্ষেত্রে লেখক 'শবনম' এর পরিবর্তে 'নূরে জেহান' কে বিবেচনায় নিতে পারতেন, কেননা অনেকবারই শবনমের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন- আমার 'নূরে জেহান'।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৮