...আমি খুব সাধারণ একটা কৃষক হইতে পারতাম। ভোরবেলা ঘর থেকে বের হইতাম, বীজতলায় ধানের চারা তুলতাম, in the meantime জমিটার মধ্যে লাঙ্গল দিয়ে জমিটা ভাঙতাম, বৃষ্টিতে ভিজে মাটি চকলেটের মত নরম হয়ে গেলে মই দিয়ে দিয়ে এটারে আরও মোলায়েম বানাইতাম।
রোদে পুড়তাম, সারাদিন হালের বলদ গুলিকে অকথ্য গালিগালাজ করতাম, আশে পাশের ক্ষেতের মানুষগুলির সাথে টিটকারি মারতাম, নারিকেলের হুক্কায় গুড়গুড় শব্দ করে তামুক ভাগ করে খাইতাম।
সবাই তো ভাত খাই, একটা চাল ভাত হয়ে হাতে আসার আগে প্রতিটা ধানের গল্প কি আমরা জানি? যে মানুষ নিজের জন্মানো ধানের ভাত খায়, তাঁর গর্বের অনুভূতিটা কি আমরা জানি?
জীবনটা সাধারণ হইতে পারত। গভীর রাতে ভয়ংকর কোন কারণে ঘুম না ভেঙ্গে, ঘুম ভাঙ্গার কারণ হইতে পারত - গাভীন গাইটা বিয়াইতেছে। কুপি জ্বালায়ে আমার মা গাইটারে বিয়াইতে সাহায্য করতেছে, আহারে বড় ভালো গাই, ঘরের লক্ষ্মী গাই...
ভোর হইত। সকালের নরম আলোয় দেখতে পাইতাম সাদা খয়েরি মিক্সড কালারের একটা নরম ষাড় বাছুর জীবনে প্রথম বার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতায় অভিভূত! গাইটাও উঠে দাঁড়াইছে। বাছুরটার গা চাটতেছে।
জীবনটা খুব সাধারণ হইতে পারত। আমার একটা দাদী থাকতে পারত, নাকে নথ পরা কম বয়েসি একটা গোলগাল আলু আলু বউ থাকতে পারত, যারে আমার দাদী পারতপক্ষে আমার কাছে ঘেসতে দেয় নাই। মাইয়াটা এখনো বড় হয় নাই। তার পাঁঠার মতো নাতির হাতে এখনই এরে ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।
জীবনটা স্বস্তির হইতে পারত। ধান লাগানর পর যখন কাজ থাকে না, তখন বইসা বইসা বড়শি দিয়া মাছ মারতে পারতাম। মাছ না লাগলে ছয় ব্যাটারির শখের রেডিও ছাইড়া গামছা মাথার তলে দিয়া মাচার মধ্যে ঘুমায় পড়তে পারতাম। রেডিওতে গান বাজতে পারত -
হাইলা লোকের লাঙ্গল বাঁকা
জনম বাঁকা চান্দ রে জনম বাঁকা চান্দ ...
আহারে! জীবনটা অতি সাধারণ, কিন্তু জীবন হইতে পারত!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:০২