সাইকেল চালাতে শেখার জন্য সাধারণত দুইজন লাগে- একজন শেখাবে আর আরেকজন শিখবে। কিন্তু একা একা সাইকেল চালাতে শেখাটাও অসম্ভব না। আমি নিজেই একা একা শিখেছি। এক বন্ধু পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে গিয়ে পড়েছে বিপদে; ওর শহরের কমন ট্রান্সপোর্ট হচ্ছে সাইকেল অথচ ও সাইকেল চালাতে পারে না। অন্যান্য ট্রান্সপোর্ট যা আছে তার খরচ ছাত্রদের নাগালের বাইরে। ওকে একা একা সাইকেল চালাতে শেখার কিছু সাজেশন দিতে গিয়ে মনে হল লিখে ফেলি, অনেকেরই কাজে লাগতে পারে, স্পেশিয়ালি মেয়েদের। কারন মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেদের কাছে সাইকেল চালাতে শিখতে আনইজি ফিল করে। আর আমাদের দেশে, বিশেষ করে ঢাকায় এতো কম মেয়ে সাইক্লিং করে যে একজন মেয়ে ট্রেইনার খুঁজে পাওয়া খুব সহজ নয়।
সাইকেল চালাতে শেখার সময় সাইকেলের সাথে শরীর ও মন এ দুইয়েরই ব্যালেন্স করতে হয়। এখানে আমি মানসিক দিকটাকেই এগিয়ে রাখবো।
(১) মানসিক দিক- ভয় দূর করুন, ধৈর্য ধরুন ও আত্মবিশ্বাসী হউনঃ
----------------------------------------------------------------------
আছাড় না খেয়ে, হাত-পা না ছিলে এবং ব্যাথা না পেয়ে কেউ সাইকেল চালাতে শিখেছে এমনটা জানা নেই। তাই পড়ে যাবেন- মন থেকে এই ভয় দূর করুন। সাইকেল চালাতে শেখার সময় আপনি পড়ে যাবেনই। ভয় পেলে আরও বেশি পড়ে যাবেন। তাই এই ভয় মন থেকে যতোটা পারা যায় বিদায় করুন। সেফটি গিয়ার যেমন, নী-গার্ড, এলবো-গার্ড, হেলমেট এবং গ্লাভস্ ব্যবহার করুন। এগুলো আপনাকে মেজর ইনজুরি থেকে বাঁচাবে। ঢাকার বংশালে এগুলো মোটামুটি কম দামেই পাওয়া যায়।
ধৈর্য ধরুন। আপনাকে সাইকেল চালাতে শেখার সময় একই কাজ বারবার করতে হবে। তাই ধৈর্য হারালে চলবে না। এখানে আত্মবিশ্বাসের ব্যাপারটাও চলে আসে। ধৈর্য হারিয়ে, পড়ে গিয়ে, ব্যাথা পেয়ে আপনি ভাবতে পারেন এই জিনিস আপনাকে দিয়ে হবে না। এটা ভাবার একদমই কোন কারন নেই। মনে রাখবেন বানর এবং কুকুরকে ট্রেনিং দিলে তারাও সাইকেল চালাতে পারে। আপনি এদের চেয়ে অনেক উন্নত প্রাণী। আর আমি এখানে যে পদ্ধতির কথা বলব তা ঠিকঠাক অনুসরণ করলে আপনার একা একা সাইকেল চালাতে শিখতে বড়জোর দুই দিন লাগবে। নাহলে পোস্ট ডিলিট। এই তিনটি ব্যাপারে আপনি পজিটিভ থাকলে আপনার সাইকেল চালাতে শেখা অর্ধেকের বেশি শেষ। বাকি কাজ জলবৎ তরলং।
(২) শারীরিক দিক - ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপঃ
----------------------------------------------
এ পর্যায়ে এসে আমরা ছয়টি ছোট ছোট ছোট ধাপ অনুসরণ করব। ভয়ের কোন কারন নেই। এগুলো অতি সহজ।
(ক) সাইকেলের স্যাডল বা সিটের উচ্চতা এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করুন যেন আপনি তার ওপর বসে মাটিতে পা রাখার পর হাটু সামান্য বেঁকে থাকে। খুব বেশি বেঁকে থাকলে প্যাডল করতে সমস্যা হবে। পা একদম সোজা হয়ে থাকলে ব্যালেন্স করতে কষ্ট হবে।
(খ) কোন হাতে কোন চাকার ব্রেক তা খেয়াল করুন। সাধারণত ডান হাতে সামনের চাকার আর বাম হাতে পেছনের চাকার ব্রেক থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় আপনি শুধু পেছনের চাকার ব্রেক ব্যবহার করবেন।
(গ) এবার স্যাডলে বসে পা দিয়ে সামনে আগানোর চেষ্টা করুন, অনেকটা "সাইকেলে চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল" এর মতো।
চোখ প্যাডলের দিকে না রেখে সামনের দিকে রাখুন। সাইকেল থামানোর জন্য সবসময় ব্রেক ব্যবহার করুন। স্যাডলের ওপর আপনার কোমর সোজা রাখুন।
(ঘ) পায়ে ঠেলে যখন সাইকেলের স্পীড জোরে হাঁটার চেয়ে একটু বেশি হবে তখন পা মাটি থেকে সামান্য ওপরে তুলুন যাতে পড়ে যেতে নিলে পা দ্রুত নামিয়ে ফেলতে পারেন। খেয়াল করুন পা মাটিতে না লাগিয়ে আপনি কতোটা দূর পর্যন্ত যেতে পারেন। যত দূরে যেতে পারবেন ততোই আপনার ব্যালেন্স ভাল হবে।
(ঙ) যখন দেখবেন পা মাটিতে না নামিয়ে অন্তত ১৫-২০ হাত আগাতে পারছেন তখন এক পা প্যাডলে দিয়ে আরেক পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে স্পীড তুলে একই রকম প্র্যাকটিস করুন। আপনি ডান হাতি হলে ডান পা প্যাডলে রাখুন, বাম হাতি হলে বাম পা। এতে ব্যালেন্স করতে সুবিধা হবে।
(চ) এভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এবার দু'পাই প্যাডলে তুলে দিন এবং আস্তে আস্তে প্যাডল করার চেষ্টা করুন।
এ পর্যায়ে এসে আপনি আছাড় খাবেন এটা নিশ্চিত। সাফল্যের সাথে চার-পাঁচবার আছাড় খেতে খেতেই সাইকেল চালানো শিখে যাবেন।
সতর্কতা ও আরও কিছু পরামর্শঃ
------------------------------------
সাইকেল চালাতে শেখার সময় খুব বেশি ঝামেলা না হলে গ্যাপ না দেয়াই ভাল। আর শেখার পর প্রথম প্রথম শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত না পেলেও ব্যাথা হয়। এটা খুবই নরমাল। দুই-একদিন পর এমনিতেই চলে যায়। সাইকেল চালাতে শিখেই যানবাহন বহুল রাস্তায় উঠে যাওয়া আর সুইসাইড করা বেসিক্যালি একই কথা। অন্তত দশটি দিন কম যানবাহন চলে এমন রাস্তায় প্র্যাকটিস করুন। ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে জানুন। রাস্তায় হাত ব্যবহার করে সিগন্যাল দেয়া শিখুন। এ বিষয়ে যারা রেগুলার সাইক্লিং করে তাদের কাছে পরামর্শ নিন। সম্ভব হলে তাদের সাথে সাইকেল চালান। এটি করলে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে গেলে স্যাডলের হাইট আপনার উচ্চতার সাথে আবার অ্যাডজাস্ট করে নিন। এতে সাইকেল চালাতে সুবিধা হবে এবং ঘাড়, হাত, পিঠ ও কোমরের ব্যাথা থেকে রেহাই পাবেন। চালাতে শেখার পরও সেফটি গিয়ার ব্যবহার করবেন। এই বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া যাবেনা।
সাইক্লিং এর রোমাঞ্চকর জগতে আপনাকে আমন্ত্রণ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬