ছেলেটা তখনও নিষ্পাপ, আসমানী পুরুষের মতো নিখাদ, এবং প্রকৃত প্রস্তাবে চূড়ান্ত কৌতহলী। চোখ মেলার পরই সমস্ত অনুভূতি, শ্রম ও সাধনা এক করে সে এ শহরকে ভালবাসল। লাল-নীল মায়ায় কাতর, কালো ধোঁয়া ঢাকা এ শহরের অলি-গলিতে সে পরিচালনা করল জীবনের প্রথম কব্যিক অভিযান। সে প্রেম করল পুতুল, বইয়ের পাতা, টেপ টেনিস বলের সাথে। সেই সাথে ঘৃণা করল সন্ধ্যা আইন, রাতের আহারের ফাঁকে বোকা বাক্সের পর্দায় নিজেকে খুঁজে ফেরার মাঝে এটাই ছিল একমাত্র পুলসিরাত, যা রাতে পিতার স্নেহ প্রাপ্তিকেও দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান জানাত। শহরটা এ সময় বেশ ছিল। এতে গান ছিল, রং ছিল, ছক্কার মার ছিল, টক-ঝাল-মিষ্টি ছিল, রাতের আকস্মিক বিভীষিকায় মায়ের প্রিয় আঁচল ছিল।
শুভ্র ছেলেটার এখানে সেখানে যখন কালো রঙের ছোপ দেখা দিচ্ছিল, তখন এল নতুন নিয়ম। এ শহরে তখন যুদ্ধের দামামা, মারতে হবে, জিততে হবে, ছুটতে হবে।
"ছোটো, ছোটো, ওই দেখা যায়, আরও জোরে, ভীষণ জ্বরে, কেবল ছোটো।"
ছোট হওয়ার এই ছোটাছুটিতেই ধরা দিল শরীর- মানবিক এবং কাব্যিক। শরীরের পূর্ণতার পাশাপাশি বেড়ে উঠল কাব্যিক শরীরও। এই সময় ছেলেটি প্রেম করল জানালার ফাঁকে উকি দেয়া নারিকেল গাছ, পাঠ্য বইয়ের আড়ালে কবিতা, প্রথম স্পর্শ, চুম্বন ও আলিঙ্গনের উত্তেজনার সাথে। এ সময় স্বপ্ন ছিল, সুন্দর ছিল, চাতুর্য ছিল, হারিয়ে যাওয়া বন্ধু ছিল, অভিমানও ছিল।
শুভ্র শরীর যুদ্ধের কয়লায় ঝলসে ততোদিনে কালো হয়ে গেছে। ক্রমে ছেলেটা ঘৃণা করতে শিখল কান্নাকে, তবু তার সাথেই হল বসত। এ সময়ে সে শিখল নেতৃত্ব, সাহস, প্রতিজ্ঞা ও কর্ম। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে ঢের। তখন সে শিখে গেছে প্রপঞ্চক, স্বার্থবাদী না হতে পারলে গতি নেই, একদম নেই।
"উপায় নেই, গোলাম হোসেন......"
তবু নিজের ঝলসে যাওয়া বর্তমান এবং প্রাচীন শুভ্র শরীরের সাথে একমাত্র যোগসূত্র এ শহরকে ভুলতে না পেরে, ছেলেটি ক্লেদাক্ত, মিথ্যে কথার এই শহরকে অশ্রুস্নানে শুচি করে চিরতরে ভালবাসল।
"এ শহরটা এমন, তোমায় ভাল বাসতে দিল-
এ শহরটা এমন, তোমার মতোই কাঁদিয়ে গেল......"
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২