১.
স্টকহোমের আধা ভ্যাগান সুন্দরী আতকা দর্শন চপকালো,"ভ্যাজিটারিয়ানরা নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে পারে না বলে মাংস খায় না, কিন্তু গাছেরও জীবন আছে। সেক্ষেত্রে কি?" এরকম দার্শনিক যুক্তির অনেক পাল্টা যুক্তি দেয়া যায়, যদি তাতেও না পারা যায়, তাহলে শেষ টোটকা বাংলার গর্ব,তার ওপর আমার দেশী জগদীশ কাকুর ইজ্জত ধুয়ে পানিতে ফেলে দেয়া। কিন্তু সমস্যা এখানে ছিলো না। সুন্দরীদের মন জোগানোর একটাই কৌশল: তর্ক না করা এবং শৈল্পিক উপায়ে তৈল দেয়া।
যদিও সুন্দরীর সাথে ব্রেক আপ হয় (এটা আমার স্বভাবগত দোষ), মাঝে মাঝে দার্শনিক ডাইলেমার কাছে অনেক ভালো ভালো পন্ডিতীয় যুক্তি মার খেয়ে যায়।
ধরা যাক, একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেই দেখি হুলস্থুল অবস্থা। সাম্প্রতিক পেন্টাগনের ভিডিও ফুটেজের রিপোর্টে এটা হয়তো জেনে গেছেন সবাই- ইউএফও সত্য এবং তারা মাঝেমধ্যেই আমেরিকার আকাশে আসে পিকনিক করতে। কিন্তু বেরসিক আমেরিকান এয়ারফোর্সের পাপারাজ্জী স্বভাবের কারনে তারা টিকতে না পেরে চলে যায়। তো তারাই সে সকালে সদল বলে পৃথিবীতে আসলো। কয়েক মিনিটের মধ্যে পৃথিবী দখল করে ফেললো। যারা শত শত আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে আমাদের এই দূষিত জানজট ওয়ালা বায়ু সম্বলিত নান্নামুন্না পৃথিবী দখল করতে আসে, স্বভাবতই তারা গুনে মানে টেকনোলজী রাজনীতিতে আমাদের থেকে শতগুন এগিয়ে।
তো তারা এসে কি করলো, কিছু মানুষকে পোষা হিসেবে বানিয়ে দৈনিক কোলাাকুলি সেল্ফি তুলে এলিয়েনোগ্রামে (ইনস্টাগ্রামের এলিয়েন আপডেট) দিতে লাগলো। কেউ কেউ আবার জিমে গিয়ে বডি বিল্ডার হবার জন্য মানুষের পায়ের হাতের মাংশ গ্রীল করে খাওয়া শুরু করলো। কেউ কেউ আবার তাদের বাপ দাদার আচার অনুষ্ঠান ঠিক রাখতে আমাদের সারা বছর খাইয়ে পড়িয়ে হৃস্টপুস্ট করিয়ে মোটাতাজা করে একদিন গন জবাই করে সুন্দর রান্না বান্না করে খাওয়া শুরু করলো। যারা নারী তাদের ধরে বুকের মধ্যে মেশিন লাগিয়ে সকল দুধ বের করে নানারকম ড্রিংক্স তৈরী করে পান করে একটু পিনিক নিলো। আবার যারা ফিট সেসব নারীদের ফার্মে ভরে ইন্জেকশনের মাধ্যমে গর্ভবতী করে ফি বছর মানুষ বানানোর ফার্ম তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনে গেলো।
এখন এরকম অমানবিক কাজ দেখে আমার আর সহ্য হলো না। তেলাপোকা গবেষক হবার করনে গুহায় এতদিন দিব্যি বেচে বর্তে থাকলেও একদিন বেরিয়ে সোজা মাদার এলিয়েন শীপে ঢুকে গেলাম। ওখানে গিয়ে এলিয়েনদের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী বা সভাপতি অথবা রাজা রানী যাই ধরেন, সেই মহাজনের সাথে দেখা করে বিচার দিলাম:
"মামো এইডা চলবার পারে না। আমরাও মানুষ। আমাদের শিশুদের ধরে গ্রীল করবা, মাইয়া মানুষ ধইরা ইন্জেকশন ধইরা পোয়াতী করবা আর আমরা যাগো গায়ের একটু গোস্ত আছে সেগুলো তাজা তাজা গ্রীল কইরা খাইবা, চেঙ্গিস খানও তো এরাম ছিলো না....। ব্লা ব্লা ব্লা"
মহাজন এলিয়েন আমার জগৎজয়ী নোবেলফেলী হৃদহৎকারী ভাষন খুব মনোযোগ দিয়া এলগুল ট্রান্সলেটর (গুগল ট্রান্সলেটরের এলিয়েন ভার্সন) কানে নিয়া ধৈর্যের গলা চিপা মেরে শুনলেন। ভাষন শেষ হইলে সে বিনয় কন্ঠে শুধাইলো,"পানি খাইবা? বক বক করলা এতক্ষন, পানি খাও। জিরায়া আবার শুরু করো।"
আমার মন আহ্লাদে গদ গদ, চোখের কোনে আশার আলো, পরানে ধ্বিকি ধ্বিকি মাইলস নিয়ে চোখ ভিজাইয়া কইলাম,"না মামো... এইটাই বক্তব্য ছিলো।!"
তখন সে ইন্টারগ্যালাকটিক সংবিধানের বই একটা হাতে ধরাইয়া শুরু করলো," এই সংবিধানের অমুক ধারার তমুক চ্যাপ্টারের সমুক চিপায় কমুক গলির চমুক উপ ধারা অনুযায়ী কম বুদ্ধি বিশিষ্ট নিচু আইকিউর ভাষাহীন শারীরিক ভাবে দুর্বল অনিয়ন্ত্রিত ও উর্বর প্রজাতিদের খাওয়া জায়েজ। এবং এইটা তুমরাও মানো। বডি বিল্ডিং এর নামে ডেইলি ৪ বেলা মুরগীর রান, সকালে বিকালে গরুর দুধের হোয়ে প্রোটিন, দুধ চীজ খাইতা তুমরা। তারপর মুরগীর ফার্মে গরু জবাই, গরূর ফার্মে শুয়োর কাটা এইডা তুমরাও করছো। মুরগী ডিম পাইড়া একটা হাগ দিতে পারে নাই, তুমরা পুচ কইরা খাইয়া কও, কুসুমে নুন কম আর বেশী ফ্রাই হই গেছে। বুঝছো?"
আমার ৩ ঘন্টার বক্তৃতার পাল্টা ১ মিনিটের কয়টা লাইনে এমন উড়ায় দিবো আগে ভাবি নাই। তবে এখন সমস্যা হইলো তেলাচুরা হইয়া গুহায় তো দিব্যি খাওয়া দাওয়া আর বুক ডন দিয়া শরীর ঠিক রাখছিলাম। এখন আমারে কি গ্রীল করবে না পোষা প্রানী বানাবে? এদিকে জন্মগতভাবে নাদুষ নুদুষ চেহারা তো আমার না, যে আমারে কোলে নিয়া হগ দিয়ে কুচিকু মারবে!
এমন আমল করলাম যে সেটা এখন এলিয়েন মলে পরিনত হতে বাকি।
২.
এ্যারিস্টটলের নাম শুনে নাই এমন ফটিকচান ব্লগে এখন থাকতে পারে, এইটা আমি নিশ্চিত। তো তারা এই পার্ট না পড়লেই পারেন। এ্যার-কাকু তখন একটা বই লিখছিলেন পলিটিকেন....বিশাল বড়। এইটা পড়তে গেলেও কেমন কেমন জানি লাগে, মাথা ঘূর্নি, ক্ষেত্রবিশেষে বমি বমি। কুনটার পর কি লেখছে পুরাই লায়লট! তো জ্ঞানী এরিস্টটলের বইয়ের কিছু চ্যাপ্টার আছে যেখানে প্রাকৃতিক দাসত্বের কথা বলা আছে। তার মতে উন্নত সমাজ ব্যাবস্থা গড়ার জন্য শ্রেনীবৈষম্যটাইপ সমাজ ব্যাবস্থার বিকল্প নাই এবং সেটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দাসত্ব অপরিহার্য। তার মতে একজন দাস হলো মালিকের কাছে শুধুই যন্ত্র, সম্পত্তি যার জন্মই হইছে হাত বদল করে মালিকানা বদল ও বিক্রিবাট্টার জন্য।
তার মতো প্লেটোও দাসত্বের সমর্থনে কথা বলে গেছে। এখন বলতে পারেন যে প্রাচীন মানুষ, তারা এটা করতেই পারে নাইলে জন গন ঘা মেরে তাল গাছে ঝুলাবে। কিন্তু কয়েক শতক আগে নীশে তো আরো ডেন্জারাস কথা বলছে। তার মতে এদের জন্মই হইছে দাসত্ব করা লিগা। কালো মানুষ গায়ে গতরে কাম বেশী করতে পারে। সাদা মানুষ এত কাম করবার পারে না, সহ্য করার ক্ষমতা কম। তাই সাদা মানুষের অস্তিত্ব টিকায় রাখার জন্য হইলেও এর কোনো বিকল্প নাই।
তবে প্রাচীন মানুষের সবাই যে এমন এলিয়েন টাইপ ছিলো সেটা না। খ্রিস্টাব্দ ৯ থেকে ১২ সাল পর্যন্ত চৈনিক রাজা ওয়াং ম্যাং যিনি কিনা জিং ডাইন্যাস্টির প্রথম সম্রাট তিনি পুরোপুরি ভাবে দাসত্ব প্রথা রদ করেন। তার শাসনামলে তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার এমনভাবে করেন যার জন্য তাকে রাত দিন কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। যদিও শেষ জীবনে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে তিনি সেই যিনি দাসত্বের মতো সুন্নতী প্রথা রদ করেছিলেন।
যদিও তৎকালীন ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্য পরবর্তিতে আমেরিকা সহ পৃথিবীর প্রতিটা মহাদেশেই দাসত্বের বিভিন্ন রূপ ছিলো। এশিয়া মহাদেশে যেটা সবচেয়ে বেশী ছিলো সেটা হলো খাজনা বা দারিদ্রতার কারনে নিজেকে বা তার সন্তানদেরকে বিক্রি করে দেয়া।
তবে একটা জিনিস আমার বেশ হাসি পায় আফ্রিকাতে যারা দাস মালিক ছিলো, পরবর্তিতে তারা অথবা তাদের বংশধর মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে দাসে পরিনত হয়। মধ্যপ্রাচ্যে যারা একসময় দাস মালিক ছিলো তারা কালের বিবর্তনে ইউরোপের দাসে পরিনত হয়। ইউরোপে রেনেসার পর শুরু হয় হোয়াইট সুপ্রেমেসির মতো দল, বর্তমান সময়ে সোজা কথায় বিভিন্ন দেশে ডানপন্থিদের একটা বড় অংশই এই হোয়াইট সুপ্রেমেসিস্ট যারা কিনা ছলে বলে দাসত্ব, বর্নবাদের গুন গান গায়। ওদিকে আমেরিকাতে নৌকা ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হতো আফ্রিকা থেকে কয়েক শতক আগেও। ইউরোপীয়ানরা যখন আমেরিকাতে কলোনাইজেশন শুরু করে, ১৫১০ সালের দিকে হবে, জন মেয়ার তখন এরিস্টটলের পলিটিক বইয়ের চ্যাপ্টারের কথা উল্লেখ করে বলেন, দাসত্ব প্রাকৃতিক, এবং কিছু মানুষের জন্মই হয়েছে দাসত্বের জন্য।
৩.
না, আজ কোনো ধর্ম বিরোধী কথা লিখবো না। আমি দাসত্ব নিয়ে লিখবো। পৃথিবীর সকল মানুষের গা থেকেই রক্ত বেরোয়। সবারই দুঃখ কষ্ট হাসি কান্না আছে। তবুও দাসত্বের নামে তাকে বিক্রি করা, ভোগ্যপন্য বানিয়ে ধর্ষনের বৈধতা দেয়া অথবা তাকে যন্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা কোনো দর্শন বা জ্ঞান বা ধর্ম এর সবই অস্বীকার করি! এবং আমৃত্যু এসব অনাচার সংশ্লিষ্ট যত মতবাদ, মিথ্যা বর্বর ধর্ম বা জ্ঞানী আছেন, তাদেরকে সম্মান জানাতে মনুষত্বে বাধে। এটাই আমার নিয়ম, এটাই আমি।নীলুপিলু কথা আমার সাথে চলবে না
হ্যাপী কোয়ারেন্টিন