আল বুকার্ক ( Albuquerqe) ১৪৫৩-১৫২১
প্রথম মিশনারী অর্থাৎ খৃষ্টান ধর্মপ্রচারক ভারতবর্ষে এসেছিলেন ১৪৭৯ খৃষ্টাব্দে। তিনিই প্রথম ভারতকে কেমন করে খৃষ্টান ধর্মের আওতায় আনা যায় তার চিন্তা করেন। শুধু তাই না, ভারতবর্ষকে কেমন করে প্রভাবিত করে ইংল্যাণ্ডের সমৃদ্ধির জন্য একটি শোষণাক্ষেত্রে পরিণত করা যায় চিন্তা করতে পেরেছিলেন তারও। ১৪৫৩ খৃষ্টাব্দে জন্মেছিলেন আলবুকার্ক তিনি এসেছিলেন পর্তুগাল থেকে। ভারতবর্ষের কয়েকটি স্থানে তিনি বেশ খানিকটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন বলা যায়।
সেন্ট জাভিয়ার (St. Xavier)
১৫০৬ খৃষ্টাব্দে জন্মে ১৫৫২-তে পরলোকগমন করেন। তিনি ছিলেন ভারতে খৃষ্টান ধর্মের বিখ্যাত প্রচারক। তাকে বিরাটা দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল ভারতবর্ষে। এখানে এসে তার দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছিলেন অর্থাৎ খৃষ্টানদের ভবিষ্যতের প্রশস্ত পথ তৈরি করতে বেশ কিছু মাইলস্টোন পুঁততে পেরেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডবাসী তার যোগ্যতায় খুশি হয়ে পাঠিয়েছিলেন চীনে। জাতি ও ধর্মের সাথে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। ইংল্যান্ডের মানুষ তাকে অবতার ও পূজ্যব্যক্তি বলে শ্রদ্ধা করতে শুরু করে ১৬২২ খৃষ্টাব্দ থেকে।
কুইন এলিজাবেথ (Queen Elizabeth)
জন্মেছিলেন ১৫৩৩ এ। তিনি সারা জীবন ছিলেন অবিবাহিতা। সিংহাসনে বসেছিলেন ২৫ বছর বয়সে। মোট রাজত্ব করেছিলেন ৪৫ বছর। ঐ সময় ভারতে সম্রাট আকবরের রাজত্ব চলছিল। তিনি যদিও মুসলমান সম্রাট হূমায়ূনের পুত্র তবুও এক নতুন ধর্ম বানিয়েছিলেন যার নাম “ দ্বীনি-ইলাহী ” তাথ্যিক পণ্ডিতগণের অনেকের মতে ঐ ধর্মটি ইসলাম ধর্মের বিপরীত। কারণ মদ এবং জুয়া তার ঐ ধর্মে বৈধ ছিল। তার স্ত্রীর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকলেও পাঁচ হাজার পর্যন্ত পাওয়া যায়।
বাদশা আকবর এর পোর্ট্রেইট
১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে রাণী ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীকে অধিকার দেন এ দেশে বাণিজ্য করার। ১৫৯৯ এর শেষ ভাগে কয়েকজন ইংরেজ ব্যবসাদার মিলে গঠন করেছিল ঐ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ঐ কোম্পানি কালক্রমে জয় করেছিল ভারতবর্ষ। রাজনৈতিক কারণে ১৮৫৮ তে ইংলণ্ডের তদানীন্তন রানী ভিক্টোরিয়া তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেন ভারতবর্ষ শাসনের অধিকার।
মুসলমান শাসকদের সময়ে বহু বিদেশি শক্তি ভারতে প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছিল তারা। আকবর রাজপুত জাতির সঙ্গে বৈবাহিক সম্বন্ধ পাতিয়ে যেমন তাদেরকে বশে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তেমনি চিরকুমারী রাণী এলিজাবেথের পাঠানো বণিক কোম্পানি তথা রাণীর অনুরোপত্র হয়ত রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল তাকে। তাই হয়ত বৃহত্তর স্বার্থের আশা নিয়েই ঐ বিলেতি কোম্পানিকে তিনি দিয়েছিলেন অবাধে ব্যবসা করার অনুমতি। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র জাহাঙ্গীর পিতৃরোপিত অনুপ্রবেশের বিদেশি অঙ্কুরগুলোকে আরও মাথা উঁচু করার সুযোগ করে দেন। রাণী পরলোকগমন করেন ১৬০৩ খৃষ্টাব্দে।
টমাস রো(Thomas Rowe)
টমাস রো ছিলেন একজন ইংরেজ রাজনীতিজ্ঞ। তিনি ইংলন্ডের রাজা জেমসের দূত হিসাবে ১৬১৬ খৃষ্টাব্দে উপস্থিত হন সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজসভায়। টমাস রো এর কাজকর্মে সন্তুষ্ট হয়ে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিকে সুবিধাজনক শর্তে বাঙলা ও অন্যান্য স্থানে বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। টমার রো ইংলন্ডের পক্ষ থেকে নানা উপঢৌকন নিয়ে উপস্থিত হন জাহাঙ্গিরের দরবারে। টমাস আনুগত্য, ভক্তি, প্রীতি আর অনুনয়ের যে অভিনয় করেছিলেন তাতে সফল হয়েছিলেন তিনি। উপঢৌকনের মধ্যে ছিল দামী দামী মণিমুক্তোর মালাসহ চিত্তাকর্ষক নানারকমের গহনা, কিছু মূল্যবান পাথর যেগুলো গহনা বা মুকুটে ব্যবহারের উপযুক্ত। সাধারণ দরিদ্র মৃত সৈনিকের বিধবা স্ত্রী নূরজাহান একনজরেই পছন্দ করে ফেলেছিলেন টমাসের বেশির
ভাগ নৈবেদ্য। জাহাঙ্গীরকে পছন্দ করানোর উপহার ছিল বিলেতি সুরা আর নেচে গেয়ে মুগ্ধ করতে পারে এমন সঙ্গীতজ্ঞ বেশ কিছু বিদেশী সুন্দরী। দিল্লির দরবার সেদিন ঠিক করতে পারেনি ঐ সুন্দরীদের আসল পরিচয়। সুন্দরীদের প্রত্যেকেই ছিল জটিল রাজনীতিতে শিক্ষণপ্রাপ্ত, সচেতন ও স্বদেশ প্রেমিকা। সুতরাং চিত্তবিনোদন এবং স্ফুর্তির চরম ও পরম মুহূর্তে তারা নানা কায়দায় বাদশার হাতের পাঞ্জার ছাপ আদায় করতো অর্থাৎ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী তাদের ইচ্ছামত সুবিধাগুলো অনুমোদন করিয়ে নিতে পেরেছিল সহজেই। জাহাঙ্গীররের পক্ষ থেকে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির ইচ্ছাধীন শর্তে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষতঃ অবিভক্ত বাংলায় বাণিজ্য করার অধিকার ইংরেজরা পেয়ে গিয়েছিল অনায়াসে। বাণিজ্য করার ও ‘কুঠি’ স্থাপন করার অধিকারের কী বিবর্তিত রূপ হবে তা টের করতে পারেননি মদ্যপ জাহাঙ্গীর ও তার পথপ্রদর্শক পরম পিতৃদেব ‘মহামতি’ আকবর। বাণিজ্যের ‘কুঠি’ই পরিণত হয়েছিল রাজনীতির দূর্গে! টমার রো’র মত একজন নেতাকে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে বা তার শোষণের চক্রান্তের মূল্যায়নে তাকে ইংলণ্ড থকে দেয়া হয়েছিল ‘স্যার’ উপাধি।
জাহাঙ্গীরের দরবারে টমাস রো
মদের পিয়ালা হাতে নিয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৩