somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাইটার

০৫ ই জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল কি যেন হয়েছে আমার। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়। এখন রাত ৩ টা প্রায়। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘরে শুধু দেয়াল ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ। আমি মাথার কাছে সব সময় এক বোতল পানি নিয়ে ঘুমাই। বোতল থেকে একটু পানি খেলাম। ঘরটা একটু বেশিই অন্ধকার লাগছে আজকে। মনে হয় আকাশে আজকে চাঁদ উঠে নাই। আমি ঘরে ডিম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতে পারি না। ঘরটা কে খুব অচেনা লাগছে অন্ধকারে। মনে হচ্ছে আমি নিজের রুমে নাই। ঘরে কিসের যেন একটা মৃদু মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছিলাম। কিন্তু কিসের গন্ধ মনে করতে পারছিনা। রাতে যে কখন ঘুমিয়েছি, সেটাও মনে করতে পারছি না। কেমন একটা অদভুত অনুভুতি হচ্ছে। গন্ধটা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। গন্ধের উৎস মনে হচ্ছে আমার কাছে আসছে। বিছানায় উঠে বসলাম। হঠাৎ একটা থান্ডা বাতাস যেনে আম্র মুখের উপর এসে ঝাপটা দিল। শরীরটা কাঁটা দিয়ে উঠল। কাঁথাটা টেনে গায়ের উপর নিলাম। গায়ে জড়িয়ে বিছানা থেকে নামলাম। লাইট জালানোর জন্য সুইচবোর্ডের সব সুইচ চালু করলাম। কিন্তু আলো জ্বলল না। ফ্যান চলা শুরু করল। ঠান্ডা লাগছিল। তাই আবার তাড়াতাড়ি সব সুইচ বন্ধ করে দিলাম। মনে পড়ল, রাতে ঘুমানোর আগে ঘরের একমাত্র লাইটটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। রাতে খাবার না খেয়ে ফেসবুক চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মোবাইলটা বিছানাতেই ছিল। মনে পড়তেই অন্ধকারের মদ্ধ্যে মোবাইল খুজতে থাকলাম। পেলাম না। বালিশ নিচে হাত দিতেই কি যেন একটা পেলাম। এটা মোবাইল না। হাতে নিয়ে বোঝার চেস্টা করলাম। কি এটা ! অন্ধকারে অনেক্ষন পর বুঝতে পারলাম এটা একটা লাইটার। জ্বালানোর চেষ্টা করলাম। কয়েকবার চেষ্টার পর জ্বলে উঠল। আলো জ্বলতেই মনে হলো, জানালার পর্দার পাশে থেকে কিছু একটা সরে গেল।আমি ভয় পেয়ে যাই। হাত কেঁপে উঠাতে লাইটারটা নিভে যায়। আবার জ্বালাই লাইটারটা। আমার হাত কাঁপছে। জানালার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। আমার বুকের মদ্ধে হার্টবিট অনেক বেড়ে গেছে। তখনি মনে পড়ল, হাতের লাইটারটা আমার না। ভেবে পাচ্ছি না, এই লাইটারটা আমার বালিসের নিচে এলো কিভাবে। আমার হাতটা এখনো কাঁপছে। সারা শরীর কাঁটা দিচ্ছে। বিছানায় উঠে বসলাম। কাঁথাটা জড়িয়ে নিয়ে লাইটার হাতে নিয়ে চারদিকে দেখছি, ঘরে কেউ আছে কিনা। কি করব বুঝতে পারছি না। নিস্তব্ধ ঘরে যেন আমার হার্টবিট এর আওয়াজ আমি নিজে শুনতে পারছি। আবার মনে হচ্ছে গন্ধটা তীব্র হচ্ছে। লাইটারটা নাকের কাছে আনতে বুঝলাম, লাইটার থেকেই গন্ধটা আসছে। লাইটারের আলোতে বিছানায় মোবাইলটা খুঁজছি। কিন্তু নাই। বিছানার পাশে মেঝেতে পেলাম মোবাইলটা। মোবাইল এর ফ্ল্যাস লাইটের আলোতে লাইটারটা দেখছি আর জানালার দিকে তাকাচ্ছি। কিন্তু কিছুই নাই। আস্তে আস্তে সব যেন স্বাভাবিক হতে শুরু করল। এতখন উত্তেজনাইয় ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ শুনতে পারছিলাম না।এখন যেন শুনতে পাচ্ছি। শুধু গন্ধটা আছে। সব একটু স্বাভাবিক লাগায় নেমে বাথ্রুম এর লাইটা জ্বালিয়ে দিয়ে, দরজাটা খুলে দিলাম। বাথ্রুম এর আলোতে কেন যেন বার বার মনে হচ্ছে জানালার ঐ পর্দার পাশে এখনো কেউ আছে। কিন্তু কাছে যওয়ার সাহস হলো না।

এবার ডিম লাইটটাও জ্বালিয়ে দিলাম। বোতল থেকে অনেক খানি পানি খেলাম। বিছানায় গিয়ে কাঁথা মুড়ে শুয়ে পড়লাম। ঘরের মদ্ধে ছমছমে ভাব। এভাবে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, বলতে পারব না। ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমার পুরো রুমটা আলোয় আলোকিত। অন্যদিন সকালের আলো চোঁখে পড়লে অনেক রাগ হতো। আজকে আলোটা অনেক ভাল লাগছে। রাতের কথা মনে পড়তেই, লাইটার এর কথা মনে পড়ল। বিছানায় খুঁজে পেলাম না। পেলাম বিছানার পাশে মেঝেতে। যেখানে রাতে মোবাইলটা পড়েছিল। হাতে নিয়েই নাকের কাছে নিলাম। সেই গন্ধটা নাই। লাইটারটা জ্বালানোর চেস্টা করলাম। জ্বলল না। অবাক হয়ে দেখলাম লাইটারটা খালি। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে, লাইটার এ অর্ধেক তেল ভরা ছিল। এত তারাতারি খালি হল কিভাবে। আর এই লাইটারটা তো আমার না। আমি কখনো লাইটার কিনি নাই বা কারো কাছে থেকে আনি নাই। এই ঘরে আমি ৪ বছর ধরে আছি। এই লাইটারটা আমার বালিস এর নিচে এল কিভাবে। পর্দার কথা মনে পড়তেই কাছে গিয়ে পর্দা সরিয়ে দেখলাম। কিন্তু কিছু বুঝলাম না। সব স্বাভাবিক। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম জেলী আর ব্রেড দিয়ে। অফিসে আজকে জরুরি মিটিং আছে। তারাতারি যেতে হবে। দ্রুত রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম। লাইটারটা পকেটে নিয়ে বের হলাম। ফেরার সময় তেল ভরে আনব। কিন্তু সারাদিন অফিস এর কাজ এর চাপে রাতের ব্যাপারটা একদম ভুলে গিয়েছিলাম। বাসায় ফেরার সময় বাসে লাইটার আর রাত এর ঘটানা টা মনে পড়ল। পকেট থেকে লাইটারটা বের করে মনে করার চেষ্টা করলাম, এটা এল কিভাবে আমার কাছে। কিছুতেই মনে পড়ল না। বাস থেকে নেমে লাইটারটা ঠিক করালাম। একটা এল ই ডি লাইট কিনলাম। বাসায় গিয়ে নষ্ট লাইটটা বদলে দিলাম।

বিছানায় বসে আবার ভাবতে শুরু করলাম, লাইটারটা নিয়ে। বার বার মনে হচ্ছে আমি হয়তো এনেছি লাইটারটা, কিন্তু ভুলে গিয়েছি। অনেক চেস্টা করেও মনে করতে পারলাম না। বসে বসে লাইটারটা বার বার জ্বালাচ্ছি আর নেভাচ্ছি। আজ রাত এ আর খাওয়া হবে না। অফিসে অনেক নাস্তা হয়েছে সন্ধ্যায়। পেট একদম ভরা। আজকে আর ঘরের লাইটা অফ করতে ইচ্ছা করল না। মাথার পাশে লাইটারটা রেখে কাঁথা নিয়ে শুয়ে পরলাম আর ভাবছিলাম আজ ও কি অদ্ভুত কিছু হবে। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি!

ঘুমের মধ্যে সপ্ন দেখছি আমি একটা মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিক থেকে অনেক মানুষ লাইটার হাতে আমার দিয়ে আসছে। আমি কোন দিকে যাব বুঝতে পারছি না। পকেটে হাত দিয়ে দেখি সেই লাইটারটা। বের করে লাইটারটা জ্বালাতেই, ঐ মানুষগুলো পালাতে থাকে আমার থেকে। ঘুম ভেঙ্গে যায়। তাকিয়ে দেখি আমি হাতে ঐ লাইটার জ্বালিয়ে সুয়ে আছে। হাত থেকে পড়ে গেলেই বিছানায় বা কাঁথায় আগুন ধরে যাবে। লাফ দিয়ে উঠে লাইটার টা ছুড়ে ফেলে দেই মেঝেতে। লাইটার টা ঠিক ঐ জানালার পর্দার কাছে গিয়ে পড়ে ফেটে গিয়ে পর্দায় আগুন ধরে যায়। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে পর্দাটা। আমি ঘটানার আকস্মিকতায় কি করব বুঝতে পারছিলাম না। কয়েক মুহূর্ত পরে, বিছানা থেকে দোড়ে গিয়ে বাথ্রুম থেকে পানি ভর্তি বালতি নিয়ে এসে আগুন নেভাই। আগুন নিভে যায়। কিন্তু সম্পুর্ণ পর্দাটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। উত্তেজনায় মেঝেতে বসে পড়ি। একটু স্বাভাবিক হতেই উঠে বিছানায় বসি। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৩টা ১৪ মিনিট। কাছে গিয়ে দেখি লাইটার টাও পুড়ে ছাই। লাইটার এর কোন চিহ্ন নাই। এর পর থেকে কয়েকদিন আমি লাইটা জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছি। আর কখনো কোন সমস্যা হয় নাই। গভীর রাতে এখন আর আমার ঘুম ও ভাঙ্গে না। কিন্তু প্রতিদিন ঠিক রাত ১১ টা থেকে ঐ জানালার কোনায় মৃদু ঐ মিষ্টি গন্ধটা পাই। আমি ছাড়াও অনেকে আমার রুম এ ১১টার পর এই গন্ধটা পেয়েছে। আর অদ্ভুৎ সেই লাইটার এর রহস্যটা এখনো আমি কোন সমাধান করতে পারি নাই।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×