মানুষের আন্তরিকতার থেকে সুন্দর জিনিস খুব কমই আছে। কোর্টে যাওয়া আসা শুরু করেছি কাটায় কাটায় ১ মাস। পিউপিলেজের এই ছোট্ট সফরে দুই আন্টির সাথে পরিচয়। দুইজনই এত আন্তরিক। তাদের মধ্যে বন্দনা আন্টি একটু বেশি আদর। শান্তিনিকেতনি ভাষা নিয়ে যতই এ যুগের 'কুল' জাতি হাসাহাসি করুক, তার মুখে কথা শুনলে বোঝা যায় আসলে ভাষার সৌন্দর্যটা কোথায় লুকিয়ে আছে।আদর আদর বন্দনা আন্টি পহেলা বৈশাখের আগের দিন র্যাপিং করা দুই তিনটা প্যাকেট নিয়ে এসে আমাদের সবার মুখের সামনে দিয়ে বললেন, ' নিয়ে নাওতো যার যেটা পছন্দ, দেখি কার ভাগ্যে কি পরে।'
ও মা! খুলতেই দেখি সাগর পাবলিশার্স এর দোকান থেকে কেনা অরিজিনাল আনন্দের বই , ঝকঝকে তকতকে। অমিতের ভাগে পরলো গুন্টার গ্রাস , ফারির ভাগ্যে প্রিয় সুচিত্রাদির মিতিনমাসি, তৌফিকের হাতে বুদ্ধদেব বসু। আর আমার কপালে এসে জুটলো স্মরণজিৎ চক্রবর্তী নামের ভদ্রলোকের 'মোম-কাগজ'। আমি জীবনেও এই লেখকের নাম শুনিনি। অমিতের বইটার উপর নজর ছিল। পরে কি ভেবে রেখে দিলাম হাতে যেটা এসেছে সেটাই।
বইয়ের প্রথম পাতাতেই লেখা- 'পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা, আশীর্বাদান্তে বন্দনা আন্টি'। কি মিষ্টি! ঠিক করে ফেললাম দুই একদিনের মধ্যে পড়া শুরু করতেই হবে, করেও দিলাম। শুরুটা ভালই। কনটেম্পোরারি! ঝরঝরা। কাহিনী ভালও না , খারাপও না! চলে টাইপ। কিন্তু লেখাটা সহজ সাবলীল বলে পড়তে খুব আরাম লাগে। রুকু নামের একজনের অতীত-ভবিষ্যৎ প্রতি চ্যাপ্টারে চ্যাপ্টারে পালাবদল করে লেখা। সেইসাথে টুকটুক করে এগিয়ে যাওয়া কাহিনী। সবচেয়ে বেশি ভাল লাগার জায়গাটা হলো এই যে অতীত আর ভবিষ্যতের মসৃণ টান্সজিশন্টা। এত মসৃণভাবে এগিয়েছে যে বোঝাই যায়না। প্রেম আছে, বাস্তবতা আছে, টানাপড়েন আছে। কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে মনে হয় খুব বেশি ড্রামাটিক ভাবে কাহিনী আগাচ্ছে। মনে হয় যেন এটা উপন্যাস না হয়ে সিনেমা নাটকের গল্প হলেই বেশি মানায়। কিন্তু শেষটা গিয়েই একটা ধাক্কা মারলো। আনেক্সপেক্টেডলি এক্সপেক্টেড।
কনটেম্পোরারি নভেল লেখায় অপার ভারতের লেখকদের মুনশিয়ানা আছে এটা আমি স্বীকার করি। এই বইটাও তার সাক্ষ্যই রাখে । ভাল লাগলেও মনে হয় তাও কিছুটা পথ এখনো এই লেখকের পাড়ি দিলে বোধয় ভাল হবে।তারপরও ৪ তারা কারণ সাদামাটা কাহিনীর অন্যরকম সৌন্দর্য আছে। সামনে আরও সুন্দর সুন্দর বই পাবার আশা রাখছি, সেই সাথে বাকি বইগুলো পড়ে ফেলবার ইচ্ছাও।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৯