somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় বই এর রিভিউ -১

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

The Boy in the striped pyjamas
-JOHN BOYN


হিস্টোরিকাল ফিকশন আমার খুব প্রিয় একটি জনরা।ইতিহাসকে আশ্রয় করে কল্পনার রং মিশিয়ে গড়ে ওঠা যেকোনো লেখা আমার প্রচণ্ড রকম পছন্দের।শুরুটা হয়েছিল সম্ভবত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’ পড়বার মধ্য দিয়ে, এরপর থেকে একই ঘরানার যেকোনো লেখকের বই হাতে পেলে গোগ্রাসে গেলাটা অভ্যাস। কিন্তু জন বয়নের ‘The Boy In The Striped Pyjamas’ বইটার খোঁজ পেয়েছিলাম এর মুভি এডাপশন দেখে।বলা বাহুল্য কাহিনী এবং চিত্রায়ন দুটোই এতো বেশি অপূর্ব ছিল যে সাথে সাথে ঠিক করেছিলাম এই বইটা যেভাবেই হোক একবার হলেও পরতে হবে।
তারপরের গল্পটা খুব সাধারণ।বইয়ের পাতা খুললাম, পড়লাম এবং মুগ্ধ হলাম। ঠিক করে বলতে গেলে মুগ্ধের থেকে অনেক বেশি কিছু হলাম। অনেকদিন পর কোন বই পড়া শেষ করে চুপচাপ বসেছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। ভিতরটা একদম খালি খালি লাগছিল। কোনকিছু ভাবতে পারিনি শুধু থেকে থেকে একেবার একেকটা নাম মনের ভেতর আসছিলো আবার পলকে হারিয়ে যাচ্ছিলো।একটা অনেক ভাল বই পড়লে যে তৃপ্তি ভিতরে কাজ করে এই বইটার ক্ষেত্রে তার সাথে সাথে আরও একটা অজানা কষ্ট কাজ করছিলো। মুভিটা দেখেছি বই পড়ার দুই সপ্তাহ আগে।সেটি দেখে বইটা দ্রুত পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি কোনোদিক দিয়ে হতাশ হইনি।মনে হয়েছে অনেকদিন পর একটা ভালো বই পড়ার সাথে সাথে একটা ভালো মুভি এডাপটেশন দেখেছি যা অনেক অনেকদিন মনে থাকবে।

গল্পটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরর সময়ের।নয় বছর বয়সী ব্রুনো একদিন স্কুল থেকে এসে হঠাৎ দেখে তার কমান্ডেন্ট বাবার ট্রান্সফার হয়ে গেছে।বন্ধু বান্ধব, স্কুল, প্রিয় বার্লিন শহরের হইচই ছেড়ে বাধ্য হয়ে তাকে পরিবারের সাথে যেতে হয় অস্কউইটজ (Auschwitz) নামের অজ পাড়াগাঁয়ের মতো এক জায়গায়, যেখানে তার সাথে খেলার কথা বলার কেউ নেই।একসময় কাছেই সে আবিস্কার করে বেড়া দিয়ে ঘেরা বিরাট এক জায়গা যেখানে হাজার হাজার মানুষ stripe জামা পরে একসাথে থাকে।নয় বছর বয়সী বালক তখনো ক্যাম্প মানে কি তা বোঝে না, যুদ্ধ বুঝে না। ব্রুনো একদিন সেখানে গিয়ে আবিস্কার করে তার বয়সী সেই সাদা ছাই striped পায়জামা পরা shmule কে। কথা বলে জানতে পারে তাদের জন্ম একই বছরের একই দিনে।নতুন বন্ধু পাবার আশায় উচ্ছ্বসিত ব্রুনো শুধু এটুকু বুঝে না কেন তার আর shmule এর মাঝে বিশাল এই কাঁটাতারের বেড়া। কেন ইহুদিদের ঘৃণা করতে হবে, কেন shmule কোনদিন তার বাড়িতে বেরাতে আসতে পারবেনা,তার সাথে মাঠে ছোটাছুটি করে খেলতে পারবেনা।একটা জাতিগত হিংসা কেন মানুষকে এভাবে ভাগ করে রাখবে। কিন্তু সত্যিই কি ভাগ করে রাখতে পেরেছিল?একটা ১২ ফুট লম্বা কাঁটাতার কি কখনো বন্ধুত্বের মতো আকাশ সমান কিছুকে এতো সহজে আটকে রাখতে পারে?


বইটা পড়লে পদে পদে মুগ্ধ হতে হয়,বিষণ্ণ হতে হয়, হাসতে হয় , কাঁদতে হয়।মন ছুঁয়ে দিতে বাধ্য করে শিশু মনের সরলতা, তাদের চিন্তা ভাবনা আবার গভীর ভাবে ভাবায়ও।নিষ্ঠুর ,কঠিন দিকগুলো পাপহীন সাদামনের ছোট বাচ্চারা কিভাবে দেখে, কিভাবে বিচার করে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই বইটি। কেউ কেউ কঠিনভাবে বইয়ের কাহিনীকে সমালোচনা করলেও আমার কাছে এটি একটি ১০ এ সাড়ে ৯ পাওয়া বই কারণ আমি বইটা পড়ে আনন্দ পেয়েছি, খাঁটি আনন্দ। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে আমার আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যাওয়া বুক থেকে যে কষ্টের দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এসেছে তার পিছনের প্রতিটা আবেগ এর উৎস লেখকের লেখনি থেকে শুরু করে কাহিনী বর্ণনা, চরিত্র অংকন, শব্দ চয়ন সর্বোপরি তার নিজের ইমোশন। এই বইকে তাই কেউ কেউ কিভাবে খুব দুর্বল বলে আখ্যায়িত করে তা আমার জানা নেই।প্রধান চরিত্র ব্রুনোর সরলতা মুগ্ধ করবে যে কাউকে। যে শিশু তার থাকার জায়গার নামটা ঠিকমতো বলতে পারে না , Auschwitz কে Out with, Fuhrer কে the Fury বলে বেড়ায়,Heil Hitler যার কাছে কোন নেতার প্রতি আনুগত্য না বরং মনে করে তা Hello এর অপভ্রংশ, তার পারস্পেক্টিভ থেকে দেখা বিশ্বযুদ্ধের মতো বিরাট একটা ব্যাপার লেখক অশাধারন নৈপুন্যের সাথে তুলে ধরেছেন।এই বইটি বন্ধুত্ব সৃষ্টির গল্প বলে, এই বইটি সারল্যের গল্প বলে। এছাড়াও মাতৃস্নেহ,অত্যাচার,মানসিক চাপ,একাকীত্ব আরও নানারকম অনুভূতির গল্প কারিগরের দক্ষ কলমে উঠে এসেছে দুই মলাটের বাঁধনে।

অনেক সময় অনেকে জিজ্ঞেস করে ইংরেজি বই পড়া শুরু করবার ক্ষেত্রে সহজ ভাবে লেখা কোন বই রেকমেনড করতে। এতদিন আমি এক্ষেত্রে সাহায্য করতে না পারলেও এখন চোখ বন্ধ করে সবার হাতে এই বইটি তুলে দিতে পারি।ঝরঝরা ভাষা, কোথাও পড়তে গিয়ে আটকাতে হয়না।সহজ বর্ণনা।আমার মনে হয় বাংলাদেশে সেবা প্রকাশনী বা অন্যান্য সকল বাঙ্গালী অনুবাদকের উচিত এই বইটা অনুবাদ করে মানুষজনকে পড়বার সুযোগ করে দেয়া। এটা এমন একটা বই যা একবার পড়লে বারবার পড়তে ইচ্ছা হয়। অন্তত আমার ইচ্ছা আছে এই বছরই কোন এক বর্ষা দুপুরে যখন আমারও আকাশের সাথে মন কেমন কেমন করবে তখন আমি আরও একবার বইটা হাতে নিবো।হয় মন ভাল করতে বা খারাপ, তাতে কি আসে যায়? আমার এই বই পড়াতেই আনন্দ।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×