আপনি বাসে বসে আছেন, মোটামোটি ভিড়। মধ্যবয়সী একজন মহিলা উঠলেন। পরিচ্ছদ দেখেই বোঝা যায় মোটামোটি স্বচ্ছল পরিবারের তিনি। বাসে চড়ে যে খুব একটা অভ্যস্তত নন ভিড়ের অনিচ্ছাকৃত ইশৎ ধাক্কাধাক্কিতে তার মুখের বিরক্তি ভাব দেখে তা খুব সহজেই ধরা যায়।
আপনি চিন্তা করছেন আপনার মাও তো এই বয়েসী। ওনার যায়গায় আপনার মাও তো থাকতে পারতেন। সুন্দর করে "আন্টি" বলে ডেকে নিজের সীট টা ছেড়ে দিলেন, আন্টি বসলেন, স্বস্তি পেলেন আর আপনি মনে মনে অপার্থিব এক শান্তি পেলেন!
একটু শান্ত হোন! এ এতো সহজেই মহাপুরুষ হওয়া যায় না!
এ্যাত্তো সহজ কিন্তু না। ভিড়ের মাঝেই এতোক্ষণ আপনার সীট ধরে একজন ষাটোর্ধ মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় শুরু থেকেই। আপনি খেয়ালই করেন নি, কিম্বা কিঞ্চিৎ খেয়াল করলেও তার কষ্ট আপনাকে ছুঁয়ে যায় নি! মনে হয়নি, নিজের সীট টা ছেড়ে দিই তাকে বসার জন্যি।
কেন জানেন?
কারন হল- তার পরনে থাকা বহুবছর পুরোনো প্রিন্টের সস্তা ময়লা শারী, তার এক হাতে জড়ানো অসুন্দর ব্যাগ, গা থেকে কেনা পারফিউমের গন্ধ না আসা অথবা তার শুষ্কপ্রায় কর্মক্লান্ত মুখ।
সারাদিন জোগাল খেটে এখন হয়তো বাড়ি যাচ্ছেন।
শক্তপোক্ত মহিলা, সারাদিন ইট ভাঙেন__আমাদের চেয়ে বেশি শারিরিক সামর্থ্য রাখেন তিনি -অবচেতন মনে এই ভাবনাও কারন হতে পারে।
আমরা প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছি -রিক্সা টানতে রিক্সাওয়ার কোন কষ্টই হয় না অথবা ঘর্মাক্ত জামা যার তার শরীরে কষ্ট লাগে না!
এর মূল কারন কিন্তু আরেকটা,
সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশকরা আমাদের শুধু শোষনই করে নিয়েই যায় নি। রেললাইনের মত কিছুকিছু জিনিস দিয়েও গেছে।
আমাদের কলোনিয়াল মেন্টালিটি (ঔপনিবেশিক মানসিকতা) তার মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশরা নিজেদের স্বার্থে আমাদের চাষা-বাঙাল দাদা-পরদাদা'দের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে আমরা 'সুটেড বুটেড লর্ড' -এবার আমাদের পূজা করো তোমরা ব্লাডি পিপলেরা!
ঔপনিবেশিক রা চলে গেছে, দাদা-পরদাদা'রা ও মরে গেছেন। কিন্তু আমাদের ডিএনএ তে দিয়ে গেছেন - সেই "সাহেব পূজো'ইজম"!
আমরা খুব সহজেই ট্যাগিং করে দিতে পছন্দ করি।
প্রকাশ্য সাহেব ইনফ্লুয়েন্স যার আছে বা যেটা দেখানো হচ্ছে, আগেই তাকে আমরা চুজ করে নিই!!!
সাহেবকে কিন্তু আমি ছোট করছি না। কিন্তু তার জন্যি জীর্ণ পোষাকের বৃদ্ধা কে দেখবো না বা তাকে প্রাপ্য সম্মান দেব না এটা কিন্তু ঠিক নয়.......বড্ড অবিচারী মনোভাব আর চেতনা আমাদের।
আমার লাষ্ট জব ছিল একটা বহুজাতিক ইউরোপিয়ান কোম্পানিতে বাংলাদেশে'র মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে। বস শালা মাঝেমইধ্যেই টি-শার্ট পরে অফিসে চলে আসতো আবার কখনো কুঁচকানো
শার্ট পরে মিটিং এ বসে যেত!
ওরা কিন্তু ঠিকি প্রাধান্য দিয়েছে মানুষ আর তার কর্মকে। ওরা শত বছর এগিয়ে গেছে আমাদের থেকে। পৃথিবী' ধ্বংস হয়ে গেলে চাঁদে কিভাবে গিয়ে থাকবে তার ফন্দি আঁটছে! আর আমরা এখনো গরমের দিনে স্যুট পরে এসি ছেড়ে অফিসের ডেস্কে বসে বসে ভাবি.........আহ স্যুট জিনিসটা বড়ই চমৎকার, অতীব সৌন্দর্য, জীবনের স্বার্থকতা!
ভায়েরা আমার, বইনেরা তোমার -
এইসব হাঙ্কিপাঙ্কি বাদ্দিয়া চলেন মানুষে বিশ্বাসী হই, কর্মে বিশ্বাসী হই।
দেশটা সুন্দর হয়ে যাবে, সাথে আমরাও!
মনের সৌন্দর্যই তো আসল সৌন্দর্য! তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫