খুব সকালে কাজ ছিল আজ। দুইমিনিট পরপর করে টানা পাঁচটা এলার্ম সেট করেও টাইমলি ঘুম থেকে উঠতে না পারা দলের লোক আমি। কোনমতে টের পেলেও স্নুজ অপশনে টিপ দিয়ে আক্ষরিক স্নুজ মানে ঝিমোতে ঝিমোতে আবার ঘুমিয়ে যাই।
ভূমিকম্প আজ আমার প্রাকৃতিক এলার্ম ঘড়ির কাজ করেছে। কিন্তু আসল ঘটনা সেটা নয়।
ঘুম আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল কাজের টেনশানে। বাকি তন্দ্রাটাও কেঁটে গেলো বিছানার পাশের ওয়াল মাউন্টেড ডেস্কটা ধুপ করে পড়ে যাবার শব্দে। আবিষ্কার করলাম খাট থেকে শুরু করে জাানলার গ্লাস সব বিশ্রী ভাবে কাঁপছে। আমি নির্বিকার, ভাবলাম ও আচ্ছা মারা যাচ্ছি তাহলে! মরার আগে ভাল কি করা যায় এখন? (হিমু এফেক্ট সম্ভবত)
আম্মার ধমকে ধ্যান বিঘ্ন হলো, বুঝলাম পালাতে হবে এখন। পৃথিবতেই এই একটা সময়েই সম্ভবত মানুষ তার নিজের ঘরকে ভয় পায়, প্রচণ্ড ভয় পায়।
সমগ্র জীবনের সম্বল জড়ো করে তৈরি করা ছাদ রাজদ্রোহীর মতো মনিবের মাথায় ভেঙ্গে পড়ে অন্য কারো সুক্ষ্ম নির্দেশে - কোন মানে হয় এর!
বিশ্বাসঘাতকতা বিশ্বজগৎ এর খুবই মৌলিক আর প্রাচীন বৈশিষ্ট্য।
লিফট বন্ধ, চালু থাকলেও লিফটে নামাটা চরম বোকামো হবে তাই সিরিই একমাত্র ভরসা। ভাইয়া আমি হঠাৎ পিছনে দেখি আম্মা সমানে সামনের দুই ফ্ল্যাটের দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বেল চাপছে।
ভূমিকম্প ততোক্ষণে থেমে গেছে তবু নিচে যেতে হবে। যেকোন সময়ই আবার আঘাত করতে পারে।
আম্মা আনিকাদের উঠিয়ে নিয়েই পড়ে যাবে!
ধমকের সুরে আম্মারে "নিজে বাঁচলে আনিকার নাম!" বলে হাতে ধরে পাঁচ তলা থেকে নামতে যাচ্ছি, আম্মা এবার বাচ্চাদের মতো বলে "তালা টা দিয়া নেই?'
ধমক দিয়ে জোর করে নিয়ে নিচে গেলাম। মাঝেমাঝে বাবা মায়েদেরও উলটো শাসন করতে মন্দ লাগেনা। তারাও আবার লক্ষ্মী বাচ্চাদের মতোই তা মেনে নেয়। ভালোবাসা, আশা, আনন্দ ব্যপারগুলো রেসিপ্রোকাল। সন্তানের হতে বকা খাওয়াটা সম্ভবত পিতামাতাররাও একই সাথে উপভোগ করেন।
সবাই দাঁড়িয়ে আছে দ্বিতীয় ভূমিকম্পের আশায়। ছোটাছুটি কমা মাত্রই আম্মা আমারে বলে "এই খালিপায়ে কেন? জুতা কই? শার্টের বোতাম খোলা ক্যান?"
কত্ত কিউট আমাদের মা গুলা!
আমাদের বিল্ডিংয়ে যে এতো মানুষ থাকে জানতাম না। আরো জানতাম না এই এলাকায় এতো এতো সুন্দরীদের বসবাস! ভয় পেলে সম্ভবত মেয়েরা লাল হয়ে যায়, মেকাপবিহীন লাল হয়ে যাওয়া মেয়েগুলোকে রাতে ফিলামেন্ট লাইটেই এতো অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগে। দিনের আলোয় কতো না ভালো লাগতো কে জানে!
অথচ এক ইঞ্চ মেকাপ লাগিয়ে উদ্ভট সেজে থাকে সব মেয়ে গুলো :3
বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার আগে ভারী মেকাপের বদলে আচ্ছামত ভয় দেখিয়ে দিলে মেয়েদের আরো শতগুণ সুন্দরী লাগতো তা নিশ্চিত করেই বলা যায়
মানুষ আমাকে মিতভাষী হিসেবে জানে, আর বাসায় জানে বোবা/বেআক্কেল হিসেবে। অথচ মনেমনে আমি ভয়ঙ্কর রকমের বাচাল। ছোট কিছু লিখতে গেলেও একগাল অপ্রাসঙ্গিক কথা জুড়ে ইয়া বড় অপাঠ্য জঞ্জাল বানিয়ে ফেলি।
যাইহোক ডিজিটাল ডায়েরী লিখছি অনিশ্চিত একটা আগামীকাল সামনে রেখে। হয়তো এমনো হতে পারে কাল চোখ খুলে দেখবো আমি মেঘে ভাসছি। মানে মরে গেছি। কিভাবে মারা গেছি টের ও পাইনি। হঠাৎ নীচে তাকিয়ে দেখলাম পৃথিবীতে কোন দালান নেই, ঘর নেই। সব ই ইট সিমেন্ট্রির ভাঙ্গা স্তুপ। কংক্রিট সমুদ্রের মতো দেখা যায়!.....
অথবা যদি অ্যাপোক্যালিপ্স হয়,
দেখা হয়তো গেলো আগামীকাল রাতে আধা ঘন্টা ধরে একটানা পৃথিবীর সব বাড়িঘর মৃদুভাবে কাঁপছে।
সারে সাতশ কোটি মানুষ ঘর ছেড়ে খোলা আকাশের নীচে ভীতসন্ত্রস্ত চোখে দাঁড়িয়ে আছে।
আকাশ ভর্তি গিজগিজ করা সব তারা পৃথিবীর দিকে নুয়ে পড়েছে। অবাক উৎসুক তারা গুলো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাদের পৃথিবীর দুঃখী বন্ধুদের খোঁজ করবে, রাতভর যাদের সাথে তারা গুলো কথা বলতো এতোদিন।
চাঁদের মুখে আজ ব্যঙ্গার্থ হাসি। আজ দরিদ্র কি বনেদি, কুলীন কি কাঙ্গাল সব সব দূরত্ব ঘুচে যাবার দিন বলে কথা! সহস্র বছরে তৈরি অসার দম্ভের ইটে তিলেতিলে তৈরি হওয়া অট্টালিকা ভেঙ্গে যেতে দেখবে সে আজ চোখের সামনে!
হঠাৎ পৃথিবীর কাঁপুনি বেড়ে গেলো। সঙ্গে
হতবিহব্বল কোটি মানুষ উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় হৃদপিন্ড যেন ফেটে বাইরে বেরিয়ে যায় অবস্থায় দেখলো -
দালান কোঠা, প্লাজা, স্কুল, কলেজ, ষ্টেডিয়াম, স্মরণী, সৌধ.....মানুষের তৈরি যা কিছু-- সব সাগরপাড়ের বালুঘরের মতো মিশে যাচ্ছে।
ভারী ব্যাংক একাউন্ট, সার্টিফিকেট, ফেসবুকেব পঞ্চাশ কোটি ফলোয়ার, এয়ার কুলার, অ্যাপল প্রোডাক্ট, পোর্শে কিম্বা মার্সিডিজ - সবই অনর্থ হয়ে গেল এক নিমিষে।
এবার দেখা যাবে দক্ষতার জোড়! টিকে থাকার শারীরিক সামর্থ্য, বুদ্ধিমত্বার প্রাকৃতিক প্রয়োগ আর জমি চাষে দক্ষরা হবে রাজা, তাদের নিজ হাতে তৈরি বাশের ঘর বিবেচিত হবে ষ্টেইট অফ দা আর্ট বলে!....
-----------
বোঝা গেছে পৃথিবীর সবচাইতে ধৈর্যশীল সর্বভূক পর্যায়ের পাঠক আপনি। যে কিনা সামনে যা পায় তাই গোগ্রাসে গিলে থুক্কু পড়ে ফেলে
এইমাত্র ভূমিকম্পের কারণ জানা গেছে। আজকে ছাত্রলীগের জন্মবার্ষিকী ছিল। আনন্দে ছেলেপেলেরা ঘুম থেকে উঠে বার্ষিকীর খবর পেয়ে বোধহয় একটু বেশীই ফালাফালি কইরে ফেলসে। তাই শহরজুড়ে ভোরের দিকে হালকা কাঁপুনি অনুভূত হইছিল আর কি
হাসুন যতক্ষণ বেঁচে আছেন, বাঁচুন যতক্ষণ বেঁচে আছেন, ভালোবাসুন যতক্ষণ বেঁচে আছেন...
- - - - - - - -
জানুয়ারি ৪, ১৬ খৃঃ