মহাবিশ্বের সব চাইতে অসহায় গাড়ি গুলো কোথায় থাকে জানেন?
বাংলাদেশের থানা গুলোর সামনে আটকে রাখা চক্রযান গুলোই হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে হতভাগ্য গাড়ির দল!
পুলিশ এর হাতে সোপর্দ করার আগপর্যন্ত গাড়িটা কিন্তু চকচকে থাকে, ইঞ্জিন কর্মক্ষম থাকে,
সিভি জয়েন্টে স্মুদ থাকে, উইন্ডশিল্ডে পানি-ময়লা পড়লে তা মুছে দেবার জন্য সচল ওয়াইপার থাকে, ব্যাটারির তেজ থাকে।
থানায় গেলে স্থবির গাড়িতে ধুলো জমে, চাকার হাওয়া চলে যায়। ফ্ল্যাটস্পট পড়ে টায়ার নষ্ট হয়ে যায়। নেশাখোররা ডানেবায়ে তাকিয়ে হাজার টাকার অটো ব্যাক ভিউইং মিরর ছোঁ মেরে নিয়ে ভাঙ্গাড়ি দোকানীর কাছে ৫০ টাকায় বেঁচে ২ পোটলা গাঁজা কিনে কল্কীতে আগুন ধরায়। এসি ফ্লুইড, এঞ্জিন ওয়েল আর লুব্রিকেইট করতে পারে না, ব্রেইক বসে যায়, শেষমেশে রিক্সা চাকার ঘষায় স্ক্র্যাচ পড়ে পড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় মূল্যবান গাড়ির জাপানীজ গ্লোসি টাইপ পেইন্টিং!
মুমূর্ষু গাড়িকে রিক্সাওয়ালাও তোয়াজ করে চলে না!
সময় যেতে থাকে। একপর্যায়ে সেটা আর গাড়ি থাকে না, "গাড়ি ছিল" হয়ে যায়!
মানুষের সম্পর্ক গুলোও ঠিক গাড়ির মতোই। প্রতিটি সম্পর্কেরই নিয়মিত যত্ন নিতে হয়। ডাষ্টার দিয়ে সকাল বিকেল নিয়ম করে ধুলো ঝেড়ে ফেলতে হয়। সম্পর্কের চাকায় নিয়মিত পাম্প দিয়ে চলমান রাখতে হয়। মাঝেমাঝেই সার্ভিসিং করে বুষ্ট আপ রাখতে হয় সম্পর্ক গুলোকে। সময় বুঝে অ্যালাইনমেন্ট এডজাষ্ট করাতে হয়।
সবচাইতে সরল সম্পর্ক গুলোতেও প্রশংসার প্রয়োজন আছে। নিয়মিত একে অন্যের প্রশংসা করতে হয়। সে প্রশংসায় কিঞ্চিত নির্দোষ মিথ্যা থাকলেও ক্ষতি নেই। শুধুই যে প্রয়োজনে খোঁজ নিতে হবে তা নয়, দূরে থাকলে মাঝেমধ্যে অপ্রোয়োজনেও অভিমানী সুরে ফোন করে বলা উচিৎ "তোমাকে খুব মনে পড়ছে, আমাকে তো কখনোই তোমার মনে পড়ে না!"
জীবনটা ভাই খুব ছোট, আপনার আমার ধারণারর চাইতেও অনেক ছোট।
যেমন ধরুন, যদি আপনার আনুমানিক আরও ত্রিশ বছর বাঁচার সম্ভাবনা থাকে তবে এর মধ্যে ১৫ বছরই চলে যাবে রাতঘুমে....
বাকি পনেরো বছরের বেশীরভাগ আবার কেঁটে যাবে কর্মক্ষেত্র, স্যাটেলাইট, ইন্টার্নেট অথবা পার্থিব দুশ্চিন্তা করতে করতে।
পৃথিবীতে মানুষকে খুবই কম সময় দেয়া হয়েছে আপনজনদের জন্য। তাই তো মরে গেলে এতো হাহাকার আর তৃষ্ণা লাগে বুক জুড়ে! মনে হয় কেন আর কটাদিন বেশি বাঁচলো না!
এই অল্পদিন এর কাছে পাওয়াটাকে মূল্যায়ন করুন। প্রাণ ভরে ভালোবাসুন। হোক না সেটা আধিখ্যেতা, কি দোষ হবে প্রতিদিন নিয়ম করে "তোমায় ভালোবাসি" বললে?
প্রতিটি পবিত্র সম্পর্কই একেকটি অমূল্য স্বর্গীয় উপহার।
কিন্তু উপহার যত দামী হয় তা হারিয়ে ফেলার শঙ্কাও ততো বেশী হয়। পৃথিবীটা খুব প্রতিকূল ভালোবাসার জন্য, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য। এখানে যে যত হিংস্র আর নিষ্ঠুর তাকে ততো ফিটেষ্ট বলা হয়। ঈর্ষা, ঘৃণা, প্রতিহিংসা, অহংকার, ইগোর মতো ধারালো অস্ত্র সবচাইতে দুর্বল ব্যক্তিটিকেও ঝোলা ভরে দেয়া হয়েছে! পুলিশ হিসেবে দেয়া হয়েছে অবিশ্বাস আর সন্দেহ!
অথচ এগুলো ছাড়াও স্রোতের বিপরীতে দিব্যি সুখী হয়ে তীব্রভাবে বেঁচে থাকা যায় ভালোবেসে, শ্রদ্ধা দিয়ে, স্নেহ করে, ভুল গুলো এড়িয়ে গিয়ে, ট্যাক্টফুল কম্প্রোমাইজ এর মাধ্যমে।
সম্পর্ক গুলোকে তৃতীয় কোন পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে ক্ষতি ছাড়া কি লাভ বলুন তো!
পৃথিবীর মানুষ গুলোকে আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়
"কলজে জুড়িয়ে ভালোবাসে নে মরে যাবার আগেই!
ও হ্যাঁ, মহান বিজয়দিবস এর শুভেচ্ছা!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২২