আজকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কে নিয়ে কিছু ষ্টাডি করেছি।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত চিত্রকর্ম "দ্য মোনা লিসা" -এর আঁকিয়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। সবাই তাকে এক নামে চিনলেও মূলত বেশিরভাগ মানুষই তাকে চিনেন না!!!
তিনি যত বড় শিল্পী, একজন বিজ্ঞানী হিসেবেও তার চেয়ে কম বড় নন! তার চেয়ে বড় একজন দার্শনিক, তার চেয়েও বড় একজন স্বপ্ন দ্রষ্টা! বিশ্বসেরা আর্কিটেক্ট দের মধ্যেও তিনি একজন! যেগুলোর বিস্তারিত পড়ে রীতিমত আৎকে উঠেছি। একদিন বিস্তারিত লিখবো সেসব ব্যপারে।
যাইহোক আজ তার চিত্রকর্ম "দ্য মোনা লিসা'র নাড়িনক্ষত্র এবং একে ঘিরে কিছু রোমাঞ্চকর ফ্যাক্ট লিখে সময় কাটাই...
এর ডিমেনশান -৭৭সেমি x ৫৩সেমি।
তেল রংয়ে টিউলিপ কাঠের প্যানেল এর উপর ছবিটি আঁকা হয়েছে।
লিওনার্দো ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সাল পর্যন্ত মূল ছবিটি আঁকেন, পরবর্তী ১৫১৭ সাল পর্যন্ত ছবিটির একাধিক পরিমার্জন করেন তিনি। অর্থাৎ প্রায় পনেরো বছর ধরে এই ছবিটা এঁকেছিলেন এই মহামতি! :O
হাসিমুখ আর গোমড়া চোখে (!) দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটিকে 'লিসা গ্যাড়ারডিনি' বলে ধারনা করা হয়। তার জন্ম যেহেতু ১৪৭৯ সালে সেহেতু ছবিতে আমরা ২৪ বছরের যুবতী লিসা আপুকে দেখে থাকি যার যৌবন সময়ের সাথে যমুনা জলে মিশে যাবে না কখনো!
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দেখা, লেখা, গাওয়া, রম্য করা ছবি এটি। তুলনা দিলে এমন দেখাবে, "দ্য মোনালিসা" যদি ১০০ তে ৮০ মার্ক্স পেয়ে ফার্স্ট হয়, অন্য ছবি যেটা সেকেন্ড হয়েছে তার মার্কস মাত্র ০৫!
এই ছবিতে লিসার এক্সপ্রেশনের দুর্বোধতা, কম্পোজিশন এর অসাধারণত্ব ও নতুনত্ব, অবয়ব চিত্রায়নের সুক্ষ্ম নিপুনতা মিলে এক ঐন্দ্রজালিক ভ্রম সৃষ্টিকারী আবহ তৈরি করেছে। যা এই ছবিকে সমসাময়িক অন্য সব শিল্প থেকে আলাদা করে যুগ-শতাব্দী-কালেরও উর্ধে নিয়ে গেছে।
ছবির টাইটেলটি কিন্তু যথেষ্ট ইন্টারেষ্টিং। জর্জিও ভাজারী নামের একজন রেনেসাঁ যুগের শিল্প ইতিহাসবেত্তার লিখা "Leonardo undertook to paint, for Francesco del Giocondo, the portrait of Mona Lisa, his wife."(বইয়ের নাম মাশায়াল্লাহ এতো ছুডু!) বইয়ে প্রথম চিত্রকর্ম টির নাম পাওয়া যায়।
মোনা মূলত কোন নাম নয়। ইতালিয়ান ভাষায় কোন মহিলাকে ভদ্রভাবে সম্বোধনের (ma donna -ম্যাডাম/ম্যাম এর প্রায় সমার্থক) সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে Mona
লিওনার্দো'র মৃত্যুর পর তার অন্যান্য অনেক জিনিসের সাথে দ্য মোনা লিসাও তার শালার হস্তগত হয়! (শালা বলতে সালাই- লিওনার্দো'র প্রধান সহকারী+শিষ্যর নাম )
পরবর্তীতে তৎকালীন রাজা ১ম ফ্রান্সিস (François I) সালাই এর কাছ থেকে চার হাজার স্বর্নমুদ্রার বিনিময়ে মোনা লিসা কিনে ফাউন্টেনব্লু প্যালেস যাদুঘরে রাখেন। রাজা ১৪তম লুইস, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সহ বেশ কিছু প্রতাপশালীরর হাত ঘুরে ফরাসী বিপ্লবের পর বিশ্বের সবচেয়ে নামডাকওলা শিল্পের গোডাউন(!) লুভ'র যাদুঘরে মোনা লিসার ঠাই হয়।
তখনো মোনা লিসা ততটা বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ছিল না। ১৯১১ সালে লুভ'র যাদুঘর থেকে পেইন্টিংটা চুরি হবার পর সারা বিশ্বে আলোড়ন পড়ে যায়।
ভিনসেঞ্জু পেরুজিয়া নামে এক দেশপ্রেমিক লোক দীর্ঘদিন লুভ'র এ কর্মচারী হিসেবে কাজ করে এক রাতে মিউজিয়াম ক্লোজিং এর পর কোটের নিচে করে পেইন্টিংটি নিয়ে যায় এবং দুইবছর বাসায় রেখে এক পর্যায়ে ইতালির যাদুঘরে এটি বিক্রি করার চেষ্টা করলে তিনি ফ্রেঞ্চ ডিটেকটিভদের হাতে ধরা পরে যান। তার বিশ্বাস ছিল দ্য মোনালিসা ফ্রান্সে নয়, বরং ইতালিতে থাকা উচিৎ।
যাইহোক দুই বছর পর মোনালিসাকে আবার লুভ'রে ফেরত আনা হয়।
১৯৫৫ সালে দুঃস্কৃতিকারী কর্তৃক একাধিকবার এই পেইন্টিংয়ে পাথর, পানি এমনকী এসিড পর্যন্ত ছোঁড়া হয়, ফলশ্রুতিতে পেইন্টিং এর অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত যায়গা রিষ্টোর করে বুলেটপ্রুফ কাচের বক্সে রাখা হয়।
মোনালিসার বিষাদ চোখ আর রহস্যঘন হাসি এখনো ফ্রান্সের লুভ'র যাদুঘর গর্বভরে আগলে রেখেছে।
ভাবতেসি, "লুটলে ভান্ডার, মারলে হাতি" আসলেই প্রবাদের মত একটা প্রবাদ! কিছু যদি করতে হয় তবে, করার মতই করা উচিৎ!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪