অনেক কাঠখর পুড়িয়ে হলে সিট পেয়েছিলাম। প্রথম বর্ষের একদম শেষ দিকে এসে। তাও টু সিটেড রুমে চারজন। চারজনই একই ডিপার্টমেন্টের এবং খুব ভাল ফ্রেন্ড ছিলাম বলে থাকতে খারাপ লাগত না। ক্লাস শেষ করে হলে ফিরেই শুরু হয়ে যেতো আমাদের গল্প আর হিহিহিহি। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতাম আমরা। আমাদের উচ্চহাসির শব্দে নাকি আশেপাশের রুমের অনেকেরই ঘুম ভেঙ্গে যেত। প্রায়ই সিনিয়ার আপুদের কাছে বকা খেতাম। তারপরো হাসি কমতো না।
সন্ধ্যায় ঘুরতে বের হতাম। হাটতে হাটতে ফুচকা খেতে যেতাম। কখনও রিকশা নিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে চক্কর দিতাম। হলের গেট বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাইরেই থাকতাম। এখন হলে থাকলেও এগূলা হয় না। মিস করি খুব ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারের দিনগুলি।
আমরা টিচারদের তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন নাম দিতাম (এখনো দেই)। এমনকি সিমিয়াররাও বাদ যেত না। আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়ার ব্যাচে একটা কাপল ছিলো- ভাইয়াটা অসম্ভব শুকনা আর আপুটা অসম্ভব মোটা। আমরা নাম দিয়েছিলাম বাইনারি কাপল (ভাইয়া ওয়ান আর আপু জিরো)।
ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দিকে আমাদের আলোচনার একটা অংশ ছিল কার সাথে কার প্রেম হল আর কাদের প্রেম ভাংলো এই নিয়ে। আমাদের ২ ব্যাচ সিনিয়ার ছিলো ক ভাইয়া আর খ আপু। জটিল প্রেম। তাদের ভালোবাসা দেখে আমরা মুগ্ধ। হঠাত শুনলাম খ আপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এখন ক ভাইয়ার কি হবে তাই নিয়ে যখন আমরা জল্পনা-কল্পনায় ব্যস্ত এমন সময় একজন এসে বলল সে নাকি দেখেছে প্রীতিলতা হলের সামনে আপু আর ভাইয়া চরম ঝগড়া করছে। আপু নাকি বাংলা সিনামার নায়িকাদের মতো চিৎকার করে বলে,"কি আছে তোমার যে তোমাকে বিয়ে করব? "। ভাইয়া যাত্রার অভিনেতাদের মতো হাত নেড়ে বলে," যাও তুমি সুখী হও। চার বছরের প্রেম-ব্যাপের না।" আমরা শুনে হাসতে হাসতে মরি। এরপর এটা আমাদের একটা কমন ডায়লগ হয়ে গিয়েছিল। কেউ কিছু করলেই বলতাম, যা তুই সুখী হ, ৩ বছরের ফ্রেন্ডশীপ- ব্যাপার না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০