২.
আজ ভার্সিটির প্রথম ক্লাস।মৃদু উত্তেজনা নিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।সবচেয়ে পছন্দের শার্টটি পড়ে বাসা থেকে বের হলাম। গতকাল ফার্মগেটের মোড় থেকে সস্তায় কেনা পারফিউমটা নিতে ভুললাম না।পারফিউমটার গন্ধটা সুন্দর হলেও কেন জানি দুই মিনিটের বেশী স্থায়ী হয়না।তাই ক্লাসে ঢোকার আগে একবার চুপ করে দিয়ে নিতে হবে।যদিও মেয়েদের নিয়ে আমার প্রাথমিক উত্তেজনায় অরিয়েন্টেশন ক্লাসেই ভাটা পড়েছে ।যেখানে থাকার কথা ছিল শর্ট স্কার্ট পড়ে হাটু পর্যন্ত বের করা মেয়ে (বাংলা সিনেমায় আমি এভাবে শাবনুর পপিদের অনেকবার আসতে দেখেছি!!!) সেখানে কিনা অধিকাংশই জংগী (আপাদমুখ বোরকায় ঢাকা)।তবুও হাল ছাড়ার পাত্র আমি নই।ভার্সিটি মানেই প্রেম,মেয়েদের সাথে ঘোরাফেরা-একথা কে না জানে।রাস্তায় একটা ভার্সিটি ভার্সিটি ভাব নিয়ে থাকলাম যেন স্কুল-কলেজের মেয়েগুলা বাঁকা চোখে তাকায়।আর তখন আমি একটা বাঁকা ঠোটের এমন হাসি দিব যার অর্থ-হুমম...বেল নাই,ভার্সিটিতে ভর্তি হও তারপর।কিন্তু শালার চেহারাটা এমন গাঁজাখোরদের মত কোন মেয়েই আমার দিকে তাকাল না।উল্টা বাসের কন্ট্রাকটর ভাড়া নেওয়ার সময় একটা ঝাড়ি দিল । গাধার বাচ্চারা, কন্ট্রাকটর না হয় মূর্খ মানুষ কিন্তু তোরা তো বুঝিস ভার্সিটি কি জিনিস।গাড়ি থেকে নামার সময় তো এক মেয়ে এমনভাবে সরে দাড়ালো যে তার শরীরে যদি একটু টাচ লাগে তাহলে মনে হয় সে ধংস হয়ে যাবে।বুঝলাম না আমাকে এত ভয় পাবার কি আছে।আমার তো মনে হয় ঐ মেয়ে এখন থেকে ছোট বাচ্চাদের আমার ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়াবে। ঐ যে বাবা গাড়িতে যে ভয়ংকর প্রাণী দেখেছিলাম ও আসছে,ঘুমাও ঘুমাও।শালার মেজাজটাই গরম হয়ে গেল।ক্লাসে পৌছেই পিছনের একটা বেঞ্চে বসলাম।যেন পুরো ক্লাস টাকে ভালভাবে দেখা যায়।দু’জন ছাত্র হাসতে হাসতে ভিতরে ঢুকছে।একজন সম্ভবত মারাত্মক হাসির কোন ঘটনা বলছে যে কিনা হাংলা ,পাতলা গড়নের।আর একজন মাদ্রাসার ছাত্র কারণ তার মুখে জংগী টাইপের দাড়ি সেই হাসির ঘটনা শুনে মাথা নিচু করে মুখ টিপে মিটিমিটি হাসছে আর বাঁকা চোখে হাংলা ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছে।আমার মনে হল হাংলা ছেলেটা দাড়িওয়ালাকে নিয়েই কিছু বলছে।এজন্য দাড়িওয়ালা হাসতে একটু লজ্জা বোধ করছে।হয়ত বলছে,
-দ্যাখ দোস্ত তোর দিকে সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে।
-যাহ্ , কি বলিস আবছাড়া !!!
-আমার মনে হয় সবাই তোর দাড়ির প্রেমে পড়ে গেছে।
-চুপ কর তো বালছাল (ইষৎ চোখ রাঙ্গিয়ে)।
ছেলে দুইটা ঠিক আমার সামনের বেঞ্চে বসল।ক্লাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে এরা খাতা ,কলম এবং আশ্চর্যজনকভাবে একটি স্কেল (লেকচার উঠানোর জন্য) বের করল।আজব ব্যাপার!!! এরা কি ভার্সিটিকে কিন্ডারগার্টেন মনে করে নাকি?ভাবখানা এমন যে খালপাড়ের মাদ্রাসা থেকে এসে ফার্স্ট হবে!!আহাম্মক কোথাকার?ঠিক তখন এমন একজন ক্লাসে ঢুকল যে স্বয়ং ঈবলিশ শয়তান ঢুকলেও মনে হয় আমার এত রাগ উঠত না।আমি দাড়িওয়ালা হুজুরকে পর্যন্ত মাফ করে দিলাম ।...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮