এক দেশে ছিল এক "জন লী"। এই পন্ডিতের খায়া লয়া কোন কাজ কাম ছিলনা। তাই সে একদিন বইসা বইসা ভালবাসাবাসির শ্রেণীবিভাগ করা শুরু করল। অনেক খ্যাতা বালিশ পুড়ায়া অবশেষে সে আবিষ্কার করল মানুষজন নাকি ৬ রকম স্টাইলে ভালবাসাবাসি করে... নাম দিল "ভালবাসার কত্ত রং!!!" (Colors of love)। আসেন এই ৬ রকম স্টাইল নিয়া এট্টু গবেষণা করি:
স্টাইল ১: Eros
Eros হইল গিয়া চোখের খিদা টাইপ ভালবাসা। বুঝলেন না?? আচ্ছা বুঝায়া দেই... এই ভালবাসায় ৫০% মন আর ৫০% শরীর (শরীর ৮০% পর্যন্ত হইতে পারে!)। এই স্টাইলের পখা-পখীরা একজন আরেকজনরে বাইছা নেয় ইনটুইশান দিয়া... সহজ ভাষায় কইলে, যারে দেইখা পিরিত উথলায় উঠে তার সাথেই ঝুইলা পড়ে। পুরানো আমলের ভদ্র ভাষায় ইহাকে বলে "চার চক্ষুর মিলন" মানে প্রথম দেখায় প্রেম।
এসব পাবলিকরে পাগলা লী নাম দিল "Erotic Lover"। তো এদের কাছে বিয়া শাদী হইল দীর্ঘমেয়াদী হানিমুন!! (মনে রসের সহিত ফরমালিন মিশানো... তাই রস অনেক দিনেও শুকায়না বা নষ্ট হয়না।) টিংকুর (দৈহিক মিলন) মধ্যে এরা ভালবাসার নান্দনিক রূপ খুঁইজা পায়, সোজা বাংলায় "টিংকুই সব, বাকী সব মিথ্যা"। আহ্লাদে বাকবাকুম করতে করতে তারা প্রায়ই একজন আরেকজনের নাম ভুইলা যায় আর তারপর বিকল্প নামে ডাকাডাকি করে যেমন সুইঠার্ট, হানি, ময়না পাখি ইত্যাদি ইত্যাদি। (আমি এক মেয়েরে চিনি যে তার বয়ফ্রেন্ডরে ভল্লু বইলা ডাকে )। এদেরকে কেউ কেউ মনে করে "আজাইরা রোমান্টিক"; অন্যান্য ঘরানার প্রেমিক প্রেমিকারা এই স্টাইলরে অবাস্তব/অযৌক্তিক বলার প্রয়াস পায়া থাকে।
সুবিধা: এই স্টাইলের ভাল দিক হইতেসে আবেগের ছড়াছড়িতা । যারা এই প্রেম করে বা এই প্রেমে পড়ে, তারা পেট ভইরা প্রেমরে উপভোগ করে।
অসুবিধা: ঘন ঘন প্রেমে পড়ে। বেশিরভাগ সময় আকর্ষণ খুব বেশি দিন থাকেনা, "কাজের সময় কাজী... কাজ ফুরাইলে পাজী" টাইপ ব্যাপার। এদের কেউ কেউ ফ্যান্টাসির জগতে ঢুইকা যায়, পরে আর বাইর হইতে পারেনা। এক্সট্রিম অবস্হায় কেউ কেউ প্রেমিক বা প্রেমিকা আগডুম বাগডুম যাই বলুক তাই বিশ্বাস করে এবং যখন ছ্যাকা খায় তখন গাবের মতন কাজ কাম করা শুরু করে।
দেইখা ভালভাবে বুঝার জন্য কিছু মুভির নাম:
1) Forgetting Sarah Marshall
2) The blue lagoon
3) Return to the blue lagoon
4) Pretty Woman
5) Girl with a Pearl earring
স্টাইল ২: Ludus
Ludic স্টাইলের মানুষজন হইতেসে খেলোয়াড় । কোয়ালিটির থেকে কোয়ানটিটির দিকে নজর বেশি। "যাই পাই খায়া লাই" -এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী। এরা বিশ্ব প্রেমিক প্রেমিকা, সবার দিকেই প্রেম প্রেম ঢুলু ঢুলু দৃষ্টিতে তাকায়। প্রেম ভালবাসার নাম দিয়া যত আকাম কুকাম করা যায়, কইরা নিতে আগ্রহী। ব্রেক আপরে তেমন কেয়ার করেনা... ব্রেক আপের পরদিনই নতুন কাউরে দেইখা ছোঁক ছোঁক করা শুরু করে।
বিবাহ এদের দুই চউক্ষের বিষ। অন্য সব ঘরানার চাইতে এই ঘরানায় বিশ্বাস ঘাতকতার প্রবণতা বেশি। টিংকু কইরা এমন ভাব নেয় যেন যুদ্ধ জয় কইরা ফেলসে আর সম্পর্ক তৈরি করে কারণ তারা পটানোরে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে লাইক করে। প্রায়ই কিছু সরল সহজ ভালমানুষ এদের ফাঁদে পইড়া যায় এবং ধরা খাওয়ার পর দুনিয়ার সবাইরে বদ/কুত্তা ভাইবা মন খারাপ কইরা ব্লগে "তুই এমন কেন?"- টাইপ রাগমিশ্রিত হুতাস পোস্ট দিতে থাকে। দু:খের কথা পোলাগো মইধ্যে এই স্টাইল বেশি দেখা যায় ।
সুবিধা: এদের স্পেশালিটি হইতেসে পটানোর ভাল টেকনিক জানে। টিংকুতে ভাল পারফর্মার- স্হায়ীত্বেও, কৌশলেও ।
অসুবিধা: আগেই বলসি, বিশ্বাস ভাইঙ্গা গুঁড়া গুঁড়া না করলে পেটের ভাত হজম হইতে ছায়না। বিয়ার বাইরে টিংকুতে প্রবল আগ্রহ। Ludic ভালবাসার চূড়ান্ত রূপ হইল বহুগামিতা।
ওয়াচিং কইরা বুঝিং এর জন্য :
1) Garam Masala (hindi)
2) Dangerous Liaisons
3) Cruel Intentions
স্টাইল ৩: Storge
এনাদের নাম হইল Storgic lovers. এদের ভালবাসার শানে নুযূল পড়লে দেখা যায় পোলা মাইয়া প্রথমে অনেক দিনের দোস্ত থাকে। তুই তোকারি, আরি-উরি বইলা সমানে থাবড়া থাবড়ি করে। এমনে করতে করতে কখন যে প্রেম হইয়া যায় এরা নিজেরাও বুঝতে পারেনা। যখন বুঝে যে কাম সারসে তখন লজ্জা লজ্জা মুখে তুই থিকা তুমিতে নাইমা যায়। প্রকাশ্যে থাবড়া থাবড়ি না কইরা তখন করে চিপায়, সাথে থাকে "যাও অসভ্য/ তুমি না একটা...." টাইপ কথাবার্তা। অনেক সময় ব্রেক আপ হইলেও এদের বন্ধুত্ব টিকা থাকে। এই স্টাইলের অনুসারীরা মনে প্রাণে চায় তাদের জীবনসঙ্গী একই সাথে খুব ভাল বন্ধুও হোক।
এ ঘরানায় কমিটমেন্টের গুরুত্ব হেভভী। পরস্পরের প্রতি ভরসা বিশ্বাসঘাতকতা এড়াইতে হেল্পু করে, এইজন্য হঠাৎ রাস্তায় কাউরে দেইখা ভাল লাগলেও শুধু কোনাইচ্যা তাকায়া আর মনে মনে এট্টু হাজিবাজি চিন্তা কইরাই খুশি থাকে (পোলারা বেশি)। বিয়া-শাদি আর পোলাপাইন নিয়া এরা সুখে জীবন কাটায় দেয়। অন্য স্টাইলগুলার তুলনায় টিংকুর গুরুত্ব এইখানে কিছু কম।
সুবিধা: দুইজনের মধ্যে মনের দিক দিয়া ঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি। সম্পর্ক অনেক হেড এ্যান্ড শোল্ডার্স থুক্কু ক্লিন এ্যান্ড ক্লিয়ার ।
অসুবিধা: কখনো কখনো ডাইল ডাইল আর বোরিং লাগে, তখন কাচ্চি খাইতে মনে চায় । প্যাশনের অভাব দেখা যাইতে পারে কারন শরীর এই ভালবাসায় নিরামিষের ভূমিকায় থাকে ।
দেখেন আর বুইঝা উল্টায় লান:
1) When Harry met Sally
2) Kuch Kuch Hota Hain (hindi)
স্টাইল ৪: Pragma
এরা বাস্তবিকই ফন্ডিত শ্রেণীর। "যত পাই তত চাই" টাইপ কান্ড কারখানা কইরা বেড়ায়।আগেই লিস্টি কইরা রাখে যারে বিয়া করবে বা যার সাথে প্রেম করবে তার গামলা ভরা কি কি গুণ থাকতে হবে। তারপর হাটে মাঠে ঘাটে ঐ গুনওয়ালা/ওয়ালি খুঁজতে থাকে আর পাইলে আল্লাহর নাম নিয়া আডাইল্যা পুকার মতন গায়ে লাইগা যায়। এর পরও "যা পাইসি তার থিক্কাও ভাল পাইতে পারি"- এই আশায় হাঁক কইরা বইসা থাকে এবং প্রায়ই শেষে মারা খায়া কাইন্দা জামা কাপড় ভাসায়া দেয়।এই ঘরানার ব্যাক্কলেরা আশা করে তাগো পার্টনাররা অর্ডারমতন কোন কারখানা থিকা তৈরি হইয়া আসব! ।
Pragmatic গো পুঁটি মাছের আত্মা। গ্যাঞ্জামের ভয়ে ইচ্ছা থাকলেও অন্য কারো লগে টাংকায় না। সবসময় সম্পর্ক নিয়া লাভ লোকসানের হিসাব করে আর "পরের বাড়ির পিঠা, খাইতে বড় মিঠা" টাইপ চিন্তা কইরা দূর থিকা গলা শুকায় । অবসর বিনোদন হিসাবে টিংকু কইরা থাকে। বিবাহের আসরে নিজেরে আপলোড কইরা পরে পোলাপাইন ডাউনলোড করারে সামাজিক দায়িত্ব মনে কইরা পালন করে।
সুবিধা: শক্ত, বাস্তববাদী। যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে মন না ঘামায়া মাথা ঘামায়।
অসুবিধা: কইলজায় আবেগের ছিডাফুডা নাই। "তোমারে ভালবাসি" কইতে কইলে কয় "এহহহ আইসে!! ঢঅঅং !!!"
দেখেন দেখেন, তাত্তারি!!:
১) Ordinary People
২) "Charlotte(একটি চরিত্র)" in Pride and Prejudice
সুখের কথা, বেশিরভাগ মাইয়ারা Storgic নাইলে Pragmatic হইয়া থাকে ।
স্টাইল ৫: Mania
Mania টাইপ একটু বেশি আউলা। এদের সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি। এরা কিছু না বুইঝা সবসময় ভালোবাসাবাসি নিয়া লাফায় আর ফালায়, ফালায় আর লাফায়। মনের মানুষরে এত বড় জায়গা দেয় যে নিজেই মাঝে মাঝে এর মইধ্যে হারায়া যায়। ম্যানিয়াক লাভাররা গল্প করতে গেলে অন্যদের খুবই পেইন দেয়। যেকোন গল্প ঘুরায়া ফিরায়া পছন্দের মানুষ ওয়ালা টপিকে নিয়া যায় । এরা পারলে সারাক্ষণ সঙ্গীর সাথে থাকতে চায়, সারাদিন থাকলেও যাওয়ার সময় এমন ভাব করে যে দুইন্যা ধ্বংস হইয়া যাইতাসে... তারপর পারলে টয়লেটে গিয়াও কর্ণাটক (কর্ণে কর্ণে যে talk) করতে থাকে। এদের কমন ডায়লগ হইতেসে গিয়া " আমার জানুটা, তোমারে ছাড়া চোউক্ষে এত আন্ধার দেখি যে তখন নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও হাতড়ায় খুঁইজা পাইনা।"
ধরা খাইয়া মানিজ্জত নিয়া টানাটানির ভয় থাকলে এ স্টাইলিশরা অন্য নৌকায় পা দেয়না। বিয়ার পর বাকি হাফ'রে নিজের সম্পত্তি মনে করে। সবসময় শুধু শুকনা ভালবাসায় এদের পুষেনা, ভালবাসার গ্যারান্টি হিসাবে টিংকু পিংকু দাবি কইরা বসে। এদের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হইতেসে, এরা আগে পিছে উপর নিচে চিন্তা না কইরাই ধপাস কইরা প্রেমে পইড়া যায়। লী পাগলাডার মতে, টিনেজ পোলাপাইনরা প্রথম প্রথম প্রেমে পড়লে তাগো কাজকামে এই স্টাইল চকচক করে ।
সুবিধা: ভালবাসা অনেক অনেক তীব্র, কোন কিছুরে মানতে চায়না।
অসুবিধা: এগো ভিতরে অনেক ঈর্ষা। মাঝে মাঝে হুদাই সন্দেহ করে যে তার "জান" অন্য কারো সাথে না ভাইগা যায়!! এইরকম বেশি হইতে থাকলে শেষমেষ পুরাই আউলায় যায়, তারপর খামোখা চিল্লাপাল্লা কইরা চাইরপাশ মাথায় তুলে।
আসেন দেইখা ফালাই:
* Misery
* Fatal Attraction
* Play Misty for Me
* Swimfan
* Taxi Driver
স্টাইল ৬: Agape
Agapic রা শহীদীয় প্রজাতি । এরা সবসময় জান হাতে নিয়া ঘুরাফিরা করে। ভালবাসার জন্য জান দেয়া দরকার এমন সিচুয়েশান আসলেই এরা জান দিবার জন্য ঝাঁপায় পড়ে। এরা সঙ্গীরে দেব-দেবীর আসনে বসায় ফালায়, তারপর ভক্তি মিশ্রিত ভালবাসা করে না ভালবাসা মিশ্রিত ভক্তি করে তা ঠিক বুঝা যায়না। ভালবাসার ঠেলায় ব্লগে "টুনি আমার খনি" নামক তেলতেলে কবিতা পোস্ট করে। তবে সারাদিন অতিরিক্ত খোঁজ খবর নিয়া পার্টনারের জীবনরে অতিষ্ঠ কইরা ফেলে। জানুরে কষ্ট দেয়ার কথা চিন্তা করলে নিজেরাই কষ্টে অর্ধেক হইয়া যায়, তাই এই কাজ ভুলেও কোনদিন করেনা। সম্পর্ক ভাইঙ্গা গেলেও বলদের মত হুদাহুদি আবার তার ফিরা আসনের অপেক্ষায় থাইকা থাইকা সন্ন্যাসী হইয়া যায় নাইলে বইসা বইসা ঘোড়ার ঘাস কাটে ( )। যদি ফিরা না আসে তখন আবার এই ব্লগেই "ভাল থাইকো টুনি, এখন পটলের চোখের মণি" নাম দিয়া শুভেচ্ছা পোস্ট দেয়। মাইয়া এমন হইলে এই লাভরে কয় "মাদারলি মাদারলি লাভ", পোলা এমন হইলে কয় "ফাদারলি ফাদারলি লাভ" আর পোলা মাইয়া দুই জনই এমন হইলে কয় "ব্রাদারলি সিস্টারলি লাভ।"
বিবাহ আর সন্তান এদের চোখে অসামান্য ও পবিত্র উপহার হিসাবে গণ্য হয়। এরা টিংকুরে আল্লাহর অশেষ রহমত মনে কইরা অতিব যত্নের সাথে করতে যায় আর এই যত্নের চিন্তায় চিন্তায় আসল কাজই ঠিকমত করতে পারেনা । অনেক সময় এরা জানপাখির মন রক্ষা করতে করতে নিজের অস্তিত্ব নিয়া টানাটানি লাগায় দেয় ।
সুবিধা: মন হয় দয়ার সাগর। মনের মানুষ পিডায়া ভচকায় ফালাইলেও তার কাছে থাকার লাইগা কান্নাকাটি করে। নিজের ভাল খারাপরে খুব ছুটু কইরা দেখে।
অসুবিধা: এর অসুবিধাটা একটু জটিল টাইপ। Agapic দের ভালবাসার বন্যায় অনেক সময় অন্য হাফ ভাইসা যায়, মানে ঠিক মানায় নিতে পারেনা। ফলাফল সে আস্তে আস্তে দূরে সইরা যায়। কথায় আছে না "বেশি মিষ্টি খাইতে ভাল্লাগেনা!!"
এখনো দেখার এনার্জি আছে??
* The Gift of the Magi, by O. Henry
* Penelope in Odyssey
* The Mission
* Somewhere in Time
* Titanic
* Untamed Heart
* Forrest Gump
* Passion of the Christ
পরিশিষ্ট: গবেষকদের মতে পোলা মাইয়া দুই জনই যদি এক কিসিমের হয় তাইলে সম্পর্ক বেশিদিন ভালভাবে টিকে। এইজন্য আমাদের সকলের কর্তব্য নিজের স্টাইল বুইঝা সেই মত জানেমানের সাথে মিলমিশ কইরা থাকা। সবাই ভালা থাইক্কেন। ঠা ঠা !!
---------------------------------------------------------------------------------
অনুবাদের মূল উৎস: উইকিপিডিয়া
নিজের স্টাইলটি বুঝার জন্য টেস্ট দিন এইখানে
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
এই অনুবাদের ২ টা লাইন আমার বইনে লিখা, তারে আপনারা সবাই চিনেন এখন- "নষ্ট মাথার দুষ্ট বালিকা"। মূল রচনার লিংকের সাপ্লায়ারও সে।