২০১৩ সালের শেষ দিকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গুম হয়েছিলেন মূলত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ১৯ তরুণ নেতাকর্মী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা সংসদ নির্বাচনে ঠেকানোর জন্য তখন আন্দোলন করছিল বিএনপি-জামায়াত।
গুম হওয়া এসব নেতাকর্মীদের জীবিত অথবা তাদের কবরের সন্ধান পাওয়ার দাবি নিয়ে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এসেছিলেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছিল প্রেসক্লাবের পরিবেশ।
পরিবারের সদস্যরা এসব গুমের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করলেও সরকারের পক্ষ থেকে সবসময়ই তা অস্বীকার করা হয়েছে।
গুম হওয়া সেলিম রেজা পিন্টুর বড় বোন মুন্নী আক্তার বলেন, ‘প্রচণ্ড শীতের রাতে ২৪ জন ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে ২০১৩ সালের এই দিন রাতে যখন আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলাম কোন অপরাধে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? তারা আমাদের কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে ডিবি কার্যালয় থেকে শুরু করে সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করেও তার কোনো সন্ধান পেলাম না। নিকটবর্তী থানার পুলিশের কাছে গেলে তারা বলে তদন্ত চলছে। জানি না তাদের তদন্ত কবে শেষ হবে।’
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন,‘আমরা আর আপনার কাছে আমার ভাইকে ফেরত চাইবো না। আপনি আমাদের সকলকে মেরে ফেলে দিয়ে যান। আমরা আর কাঁদব না।’
গুম হওয়া এম এ আদনান চৌধুরীর পিতা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার হৃদয় অত্যন্ত ব্যথিত। কথা বলার ভাষা নেই । সেই যে তারা বলে গেল আমরা নিয়ে যাচ্ছি, আবার ফেরত দিয়ে যাব। কিন্তু আজ ও পেলাম না। আমি আজও তার অপেক্ষায় আছি। পিতার মৃত্যুর আগে সন্তান হারানোর বেদনা শুধু পিতাই বোঝে।’
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে হয়তো আমাদের সন্তানদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে হারিয়ে যাওয়া মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ছেলেদের ফিরিয়ে দেন, অথবা গ্রেপ্তার দেখান। আর যদি মেরে ফেলেন তবে তাদের কবর দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের কবর জিয়ারত করব। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সুযোগটা চাই।’
মো. সোহেলের (চঞ্চল) সন্তান আহাদ বলেন, ‘আমি বেশি কিছু বলতে চাই না, শুধু আমার বাবাকে ফেরত চাই ।’
গুম হওয়া সোহেলের ১১ বছরের সন্তান রাজ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘বাবা আমার জন্মদিনের ফুল আনতে শাহবাগে গিয়েছিলেন। এর পর আর তিনি আসেননি। আমার এখন জন্মদিন পালন করতে ভাল লাগে না। মনে হয় ফুল আনতে গিয়ে যদি আরো কেউ হারিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
গুম হওয়া ওই ১৯ জন হলেন-শাহীনবাগের সাজেদুল ইসলাম সুমন ও এম এ আদনান চোধুরী; বসুন্ধরা এলাকার জাহিদুল করিম তানভীর; নাখালপাড়ার আব্দুল কাদের ভূইয়া মাসুম, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, কাউসার; কমলাপুরের আসাদুজ্জামান রানা; উত্তর বাড্ডার আল আমিন; সূত্রাপুরের সেলিম রেজা পিন্টু ও সম্রাট মোল্লা; বাংলাবাজারের খালিদ হাসান; বংশালের হাবিবুর বাশার জহির, পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল এবং চঞ্চল; দক্ষিণ খানের নিজাম উদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম মুন্না এবং সবুজবাগের মাহবুব হাসান ও কাজী ফরহাদ।
সংবাদ সম্মেলনে গুম হয়ে যাওয়া ১৯ পরিবারের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৪