somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষয়বিদ্যাঃ বিজ্ঞানের বিজ্ঞান

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উনিশ শতকের শেষের দিকে ‘ফেনমেনলজি’ বা বিষয়বিদ্যা নামে পাশ্চাত্যে দর্শনের মধ্যে যে নতুন ধারার উদ্ভব ঘটে তার সঙ্গে আমরা পরিচিত হবার চেষ্টা করছি। এর আগের আলোচনায় আমরা কয়েকটি বিষয় আলোচনা করেছি। কথাগুলো আবার গুছিয়ে হাজির করার চেষ্টা করব, যাতে বুঝতে সুবিধা হয়, কারন যাদের কাছে আমরা পৌঁছাতে চাইছি তারা সাধারণ পাঠক। দর্শনের পণ্ডিত নন।

১. এই দার্শনিক ধারার একটি জর্মন চরিত্র আছে। এর আবির্ভাব ও বিকাশ ঘটেছে মূলত জর্মন দার্শনিকদের হাতে; কিন্তু ইম্মেনুয়েল কান্ট থেকে শুরু করে হেগেল অবধি জর্মন দর্শনের ধারার মধ্যে এর উৎপত্তি ঘটে নি, ফলে হেগেল যে অর্থে ‘ফেনমেনলজি’ বুঝেছেন হুসার্ল বা হেইডেগার সেই অর্থে বোঝেন নি।

২. ঠিক জর্মন ভাবাদর্শের ভেতর থেকে এর উৎপত্তি ঘটেনি বরং ভাবাদর্শিকতা পরিহার করতে গিয়ে এই ধারা গড়ে উঠেছে। সতেরো আঠারো শতকের দিকে আধুনিক বিজ্ঞানের বিপুল ও প্রকট আত্মপ্রকাশের সঙ্গে দর্শন প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দার্শিনিক চিন্তার বিষয় চিহ্নিত ও সুনির্দিষ্ট করার তাগিদ বোধ করেছে। পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানের নিজেরও একটা দার্শনিক সংকট চলছিল। যে সত্য নিয়ে বিজ্ঞান কারবার করে সেই সত্যের নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। বিশেষত নিউটনের বৈজ্ঞানিক জগতের মডেল ছাড়াও যখন বৈজ্ঞানিক চিন্তা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের জগতে প্রবেশ করলো, তখন বোঝা গেল জগতকে একাট্টা একরকম ভাবার মধ্যে মুশকিল আছে। কিম্বা ইউক্লিডের জ্যামিতি ছাড়াও নন-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির জগতও আছে যেখানে ইউক্লিডের নিয়ম খাটে না বা খাটানো হায় না। এই চ্যালেঞ্জগুলো যখন হাজির হোল, তখন প্রশ্ন উঠল জ্যামিতি বলি কি গণিত বলি, তাদের নিশ্চিত ভিত্তি শনাক্ত বা নির্ণয় করবার পদ্ধতি কী হবে? কিম্বা সেই সবের বিচার করা যাবে কিভাবে? তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক না বেঠিক তা জানবার উপায় কি? আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তার সম্ভাবনা ও সংকটের ভেতর থেকে উঠে আসা নানান তাগিদ থেকেই ‘ফেনমেনলজির’ আবির্ভাব। যাতে বিজ্ঞানের এই চ্যালেঞ্জগুলো দর্শন মোকাবিলা করতে পারে এবং বিজ্ঞানের ‘বিষয়’-এর বাইরে তার নিজের বিষয় বা গবেষণার ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। যদিও দর্শনের বিষয় সুনির্দিষ্ট করার অর্থ ‘বিশেষ’ শাস্ত্র হিসাবে দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করা নয়, বরং চিন্তার আরও গোড়ায় ফিরে যাবার প্রতিভা ও পদ্ধতি নির্ণয় করা। বিভিন্ন শাস্ত্রের গোড়ায় একই চিন্তা কিভাবে কাজ করে এবং বিষয় ভেদে নিজ নিজ সত্য নির্ণয় করে সেটা যেন দেখানো সম্ভব হয়।

৩. ফেনমেনলজি বা বিষয়বিদ্যা কোন বিশেষ ধরণের ‘বিজ্ঞান’ হতে চায় নি, যেমন পদার্থবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাসশাস্ত্র, ইত্যাদি। বরং ‘বিজ্ঞানের বিজ্ঞান’ হতে চেয়েছে। যে কোন বিজ্ঞানের পেছনেই কোন না কোন চিন্তা রয়েছে সেটা গণিত হোক কিম্বা হোক ধর্মশাস্ত্র। কিভাবে চিন্তা এই ধরণের বিশেষ রূপ পরিগ্রহণ করে তাকে বর্ণনা এবং বোঝার কর্তব্য ছাড়াও সেই বিশেষ রূপের আগেপিছে চিন্তার নিজের স্বরূপটা আসলে কী – তার চলন কেমন -- নিজে কিভাবে বিশেষ বিশেষ রূপ নিয়ে চিন্তা দানা বাঁধে বা হয়ে ওঠে -- সেটা বুঝতে চায় ফেনমেনলজি। অন্য ভাবেও বলা যায় যে কাজটা হচ্ছে চিন্তার মধ্যে কিভাবে বিভিন্ন ‘বিষয়’ দানা বাঁধে সেই কঠিন কাজটিকে ধরা, বর্ণনা ও বোঝা। এই কারণেই বাংলায় আমরা এর নাম রেখেছি, ‘বিষয়বিদ্যা’। প্রকৃতি বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জের ধরে রাখবার জন্য আমরা ‘বিষয়’ কথাটার পরে ‘বিদ্যা’ বা ‘বিজ্ঞান’ কথাটা ব্যবহারের পক্ষে। আগেই বলেছি, বিষয়বিদ্যা নিছকই জর্মন ভাবাদর্শিক ধারার মধ্যে খাবি খেতে চায় নি, বিজ্ঞান হতে চেয়েছে।

প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুকরণ এবং বিজ্ঞানের দার্শনিক সংকটের সূত্র ধরেই বিষয়বিদ্যার উদ্ভব – এই দিকটির ওপর বিশেষ ভাবে জোর দিতে চাইছি। এর পেছনে জর্মন ভাবাদর্শের প্রভাব নাই তা নয়, থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা জর্মন দর্শনের ভাবাদর্শিক ধারার ধারাবাহিকতা নয়। বিষয়বিদ্যার মূল প্রণোদনা এসেছে প্রকৃতি বিজ্ঞান থেকে। কিছুটা এর আগেও আলোচনা করেছি। বোঝার সুবিধার জন্য আরও কয়েকটি কথা বলব।

মানুষের শরীর থেকে মনকে আলাদা করে ভাববার অভ্যাসটা সাম্প্রতিক। মূলত রেনে দেকার্তের পর থেকেই এই বিভাজনটা দৃঢ়মূল হয়। বিভাজন ঘটবার ইতিহাস অনেক লম্বা। সে ইতিহাসে না গিয়ে সহজে বুঝবার জন্য আমি বাংলাদেশ থেকে উদাহরণ দেব। গ্রামে এখনও আমরা দেখি প্রেম ভালবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে বলা হয়, ‘তোমার জন্য আমার পেট পোড়ে’। তোমার জন্য আমার ‘মন’ কাতর হয় শোনার জন্যই আমরা প্রস্তুত থাকি। ‘পেট পোড়ে’ এই অভিপ্রকাশ বা বলার ধরণে আমরা অভ্যস্ত নই। অনেক বেগানা মনে হয়। কিন্তু গ্রামে এই ভাবে বলার সংস্কৃতি এখনও সচল। এর মানে এই নয় যে চিন্তার দিক থেকে গ্রামের মানুষ ‘আধুনিক’দের চেয়ে পিছিয়ে আছে। এটা হচ্ছে চিন্তা করবার একটা উদাহরণ যেখানে ‘মন’ নামক কোন রহস্যময় বস্তু বা বিষয়ের ধারণা অনুপস্থিত কিম্বা মনকে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন কোন সত্তা হিসাবে গণ্য করা হয় না। যে সংস্কৃতিতে মন আর শরীরের বিচ্ছেদ দৃঢ়মূল নয়, সেখানে মানুষের আবেগ অনুভূতি প্রেম ভালবাসা কোন কিছুই শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। ভালবাসা সে কারণে শারিরীক ব্যাপার, মানসিক বিকার নয়। অতএব কাউকে ভালবাসার অর্থ শরীরের দাহন, পেট পোড়া। ‘তোমার জন্য আমার পেট পোড়ে’।

দেকার্তের সময় থেকে ‘মন’ নামক একটি ক্ষেত্র বা বিষয়ের আবির্ভাবের পর তার বিজ্ঞানও গড়ে উঠতে থাকল। তাকে নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার পদ্ধতি ও প্রকরণও ধার করা হোল প্রকৃতি বিজ্ঞান থেকে। বিশেষত ব্রিটিশ প্রত্যক্ষ্যবাদ নামে যে ধারাটি বিলাতে গড়ে উঠেছিল তার প্রভাবে মনোবিজ্ঞানই হয়ে উঠল চেতনার বিজ্ঞান। দেকার্তের পর থেকে ‘চেতনা’, ‘মন’ ইত্যাদির অর্থ হয়ে উঠল এমন সব জিনিস যা যুক্তি মেনে চলে (rational)। যুক্তি যার স্বভাবের অন্তর্গত। মনোবিজ্ঞান (psychology) যখন নিজেকে চেতনার বিজ্ঞান হিসাবে হাজির করতে শুরু করল তখন শুধু ইন্দ্রিয়পরায়ন চেতনার হদিস নিয়ে ক্ষান্ত রইল না, যুক্তিগুণ সম্পন্ন চেতনারও খবর নিতে চাইল। সাইকোলজি এই অনুসন্ধিৎসার মধ্য দিয়ে আসলে দর্শনের ক্ষেত্রেই প্রবেশ করছিল। মানুষের উপলব্ধি কিভাবে ঘটে, মানুষ কিভাবে চিন্তা করে এইসব দর্শনেরও বিষয়। মনোবিজ্ঞান হয়ে উঠছিল এক ধরণের অভিজ্ঞতার বিজ্ঞান যার উদয় ও উপলব্ধি মানুষের ‘মন’ নামক নতুন এক বিষয়ের প্রতি অনুসন্ধিৎসা থেকে জাত। যদিও মনের সঙ্গে শরীরের ভেদ বা অভেদ তর্ক সাপেক্ষ। কিন্তু সেটা আলাদা বিষয়। সেই তর্ক আমরা এখানে করছি না। আমরা শুধু ধরিয়ে দিতে চাইছি যে মানুষের মন কিভাবে মানুষের গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠার সময় মনোবিজ্ঞান বা চেতনার বিজ্ঞান হয়ে হাজির হরেছিন, কিন্তু সেটা একই সঙ্গে আসলে দর্শনেরও বিষয়। কারণ দর্শনও মন চেতনা, চৈতন্য নামক ব্যাপ্রগুলো আসলে কি সেতা জানতে চায়। এই জানা তো চিন্তার নিজেকেই জানা। অর্থাৎ কিভাবে চিন্তা করে সেই রহস্যের খোঁজখবর করা।

এর আগে মনের জায়গায় আত্মার ধারনা ছিল না তা নয়। কিন্তু ‘আত্মা’ ছিল এক ধরণের বস্তুময় সত্তা বা শক্তি; শরীরে আত্মা বিরাজ করে বলেই মানুষ জীবন্ত থাকে, আত্মা দেহ ত্যাগ করলে মানুষ মরে যায়। শরীরের মতো আত্মা নশ্বর নাকি অবিনশ্বর এই তর্কের কারন আত্মাকে শারীরিক বা বস্তুময় সত্তা হিসাবে অনুমান। এই দিকটি খেয়ালে থাকা দরকার। আত্মা যদি দেহমূলক না হয় তাহলে আত্মার নশ্বরতা/অমরতার তর্ক অবান্তর। তর্কের কোন ক্ষেত্র আর থাকে না। কিন্তু মনোবিজ্ঞান যখন চেতনার বিজ্ঞান হিসাবে গড়ে উঠল তখন তার বিষয় হয়ে উঠল মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ভাবনাচিন্তার বিচার। সেখানে নশ্বরতা/অমরতার তর্ক ওঠার কোন প্রয়োজনীয়তা রইল না। দেকার্তের পরে চিন্তার জগতে এই পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যৎ দর্শনের অভিমুখ নির্ণয় করবার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে।

‘মন’-যখন বিজ্ঞানের নতুন বিষয় হিসাবে গবেষণার বস্তু হয়ে উঠল তখন তাকে নিয়ে ভাবনাচিন্তার পদ্ধতি ও প্রকরণের আমদানি হোল প্রকৃতি বিজ্ঞানের চর্চা অনুকরণ করে। মন শরীরের অন্তর্গত একটি গুণ, ফলে মনোবিজ্ঞান শরীরবিজ্ঞানেরই অংশ হয়ে উঠল। শরীরের মধ্যে শরীর হয়ে কিভাবে আত্মা, মন বা চেতনা কাজ করে শরীরবিদ্যা সেই ভাবে চেতনাকে জানতে চাইল। চেতনার বিচার হয়ে উঠল শরীরবিদ্যার বিষয়, কিন্তু সেটা তো আসলে শরীরবিদ্যার বিষয় নয়। বরং দর্শনের বিষয় বটে। শরীরের মধ্যে চেতনা, বুদ্ধি ইত্যাদি কিভাবে কাজ করে সেটা জানতে চাইলে শরীরবিদ্যার পদ্ধতি ও প্রকরণেও হবে না। বিজ্ঞানের পদ্ধতির সঙ্গে সমান ভাবে টেক্কা দিয়ে দর্শনকেও তার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বা পদ্ধতির বিজ্ঞান গড়ে তুলে হবে। এই তাগিদে মনোবিজ্ঞানের এই ধারাবাহিকতার পথ ধরেই হুসার্লের ‘ফেনমেনলজি’র উদ্ভব।

প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণের অনুকরণে একটি দার্শনিক ধারার উদ্ভব এ পর্যায়ে লক্ষ্য করা যায়। এই ধারা ‘পজিটিভিজম’ নামে খ্যাত। প্রত্যক্ষবাদের সঙ্গে এর কিছু সঙ্গতি থাকলেও সাধারণ ভাবে এই দার্শনিক ধারার ভিত্তি হচ্ছে বুদ্ধিগ্রাহ্যতা। যে কোন বিষয়কে বুদ্ধির কাছে গ্রাহ্য হয়েই নিজের সঠিকতা প্রমাণ করতে হবে – পজিটিভিজম এই দাবি নিয়ে এলো। কিন্তু ‘সঠিক’ মানে কি? সঠিকতার অর্থ হচ্ছে যা তথ্যের (facts) ওপর দাঁড়ানো। তার উপজীব্য হচ্ছে ফ্যাক্টস। কিন্তু পজিটিভিজমে ‘ফ্যাক্টস’ মানে তথ্যের নিশ্চয়তা নয়, বরং জগতকে বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করবার একটা পদ্ধতি। সেটাই ‘ফ্যাক্টস’ বা সঠিক যদি সেই তথ্য পরিমানগত ভাবে মাপজোক করা যায়, ওজন করা যায়, হিসাব নিকাশ করা যায় এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়, ইত্যাদি। এই হিসাবনিকাশ মাপজোকের অর্থেই পজিটিভিজম বা বুদ্ধিগ্রাহ্যতা। তত্ত্ব হিসাবে এর বিকাশ ঘটল ফরাসি দেশে অগাস্ট কোঁতে (১৭৯৮ – ১৮৫৭) ও বিলাতে জন স্টুয়ার্ট মিলের (১৮০৬ - ১৮৭৩) হাতে। সমান্তরালে।

বুদ্ধিগ্রাহ্যতার মধ্য দিয়ে ঠিক/বেঠিক নির্ণয়ের এই পদ্ধতি নিছকই গবেষণার পদ্ধতি ছিলনা, এটা একটা জ্ঞানতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ধারা হিসাবে গড়ে উঠেছিল। যেমন, মানুষ কিম্বা সমাজের বিকাশের ক্ষেত্রে তিনটি স্তর মানতেন অগাস্ট কোঁতে। প্রথমত ধর্মের স্তর, এরপর পরাবিদ্যা বা অধিবিদ্যার স্তর আর সবার শেষে বিজ্ঞানের স্তর। কোঁতে যখন লিখালিখি করছিলেন তখন বিজ্ঞানপর্বের সবে শুরু। এর লক্ষ্য ছিল প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণ প্রয়োগ করে একটি সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটানো যে-বিজ্ঞান মানুষ ও মানুষের নানাবিধ মানবিক সম্পর্কের একটি সাধারণ বা সার্বজনীন তত্ত্ব দাঁড় করাতে সক্ষম হবে।

জন স্টুয়ার্ট মিলের কাছে পজিটিভিজম বা বুদ্ধিগ্রাহ্যবাদ ছিল বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণকে একটি সার্বজনীন দার্শনিক তত্ত্বে রূপ দেওয়া। তিনি তাঁর লজিক বিষয়ক গ্রন্থে (System of Deductive and Inductive Logic ) নীতিশাস্ত্রের লজিক বিচার করতে চেয়েছেন। নীতিনৈতিকতাকে যুক্তি ও বুদ্ধিগ্রাহ্য পর্যালোচনার অধীনেই আনবার চেষ্টা করেছেন স্টুয়ার্ট মিল। নীতিনৈতিকতা তো মানুষের মনেরই ব্যাপার। চেতনা ও বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের ব্যবহারবিধি নির্ণয়ের প্রয়াস ছিল তাঁর চেষ্টার মধ্যে। যে-নীতিশাস্ত্রকে তিনি লজিক বা যুক্তির অধীনে আনতে চেয়েছেন সেটাও আসলে ঐতিহ্যগত ভাবে মানববিদ্যা বা ইতিহাস শাস্ত্রেরই বিষয় – মানুষের চিন্তা চেতনা যার কেন্দ্রীয় প্রসঙ্গ।

মিলের লজিকের খ্যাতি ছিল দেশে বিদেশে। বুদ্ধিগ্রাহ্য চিন্তা চর্চার ফল সামগ্রিক ভাবে দর্শনের জন্য ইতিবাচক হোল। এতে একদিকে যে কোন বিশেষ বিজ্ঞানের গোড়ার কাঠামো বিশ্লেষণের সুবিধা ও সম্ভাবনা যেমন বাড়লো, অন্যদিকে বিজ্ঞানের জন্যও তার নিজের গণ্ডি ও পদ্ধতির মধ্যে বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ থেকে গেল। যেমন পদার্থ বিজ্ঞান তার নিজের পদ্ধতি, প্রকরণ ও বিষয়ের সুনির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে নিজের চিন্তার চর্চা করতে পারল, আবার একই ভাবে পদার্থ বিজ্ঞান কিভাবে নিজের বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে তাকে দর্শনে আলাদা ভাবে বিচারের সম্ভাবনাও তৈরী হোল।

এটা করতে গিয়ে কাণ্টের ‘ক্রিটিক অফ পিওর রিজন’-এর ডাক পড়ল আবার। নতুন ভাবে এই ডাক পড়ার উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানের দর্শনকে আরও স্পষ্ট রূপ দেওয়া। ঝোঁক ছিল কাণ্টের অনুসরণে মানুষের বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতা কিভাবে ঘটে তার ব্যাখ্যা বা তত্ত্বায়ন। যেমন, গাণিতিক পদার্থবিদ্যা। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানের অভিজ্ঞতা কিভাবে ঘটে তার ব্যাখ্যার জন্য কান্ট আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন। তাঁর দেখিয়ে দেওয়া চিন্তা কাঠামোর মধ্যেই এই চেষ্টাগুলো চলতে লাগলো।বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা হলেও জ্ঞানের বিষয় হিসাবে বিজ্ঞান কিভাবে দানা বাঁধছে সেই মুহূর্তগুলো আবিষ্কারের দিকেই ঝোঁক ছিল তার। সেই দিক থেকে কাণ্টের হাতে সেই মুহূর্তগুলোর ব্যখ্যা পাঠ করলে সহজেই বোঝা যায়, সেটা হয়ে উঠছিল চেতনারই একটা তত্ত্ব, চিন্তা কিভাবে দানা বাঁধে সেই সাধারণ দিকগুলো বর্ণনার কারণে সেটাও হয়ে উঠছিল চেতনার বিজ্ঞান। এখানে বিজ্ঞানের দর্শনও মনোবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করল। মনোবিজ্ঞানে ‘চেতনা’ গবেষণার সুনির্দিষ্ট বিষয় হয়ে উঠলেও জ্ঞানতত্ত্বেও ‘চেতনা’ পরোক্ষ ভাবে দর্শনের বিষয় হয়ে উঠল। যদিও সেটা হয়ে উঠল সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে। অর্থাৎ সাইকোলজি যেভাবে মনের খবর নিতে চাইছিল তার সঙ্গে জ্ঞানতত্ত্বের ফারাক ছিল বটে কিন্তু জ্ঞানতত্ত্বের বিষয়ও তো শেষাবধি মন বা চিন্তা কিভাবে ভাবে, চিন্তা করে, জানে ইত্যাদি রহস্য আবিষ্কার করা। মনোবিজ্ঞান ও জ্ঞানতত্ত্ব উভয়েই আসলে একই বিষয়কেই জানতে চাইছিল দুই দিক থেকে। ভিন্ন ভাবে।

জন স্টুয়ার্ট মিল নৈতিক বিজ্ঞানের লজিক (On the Logic of the Moral Sciences) নিয়ে ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত বইয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এমন বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করছিলেন যাকে প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতির আওতায় আনা যাচ্ছিল না। প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণ মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ওপর পুরাপুরি খাটে না, এটা জর্মন চিন্তাবিদদের মধ্যে ভিলহেলম্‌ ডিলথি (১৮৩৩ – ১৯১১) সেই সময় বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি টের পেয়েছিলেন যেসকল বিজ্ঞান মানুষ, সমাজ বা ইতিহাস নিয়ে কারবার করে তাদেরকে দর্শনের জায়গা থেকে বুঝতে হলে বাস্তব বিষয়কে বাস্তবিক ভাবেই বুঝতে হবে। মানুষকে ‘বস্তু’ জ্ঞান করে প্রকৃতিবিজ্ঞানের মতো বিচার বিশ্লেষণের মধ্যে চরম গলদ রয়েছে। তাহলে মানববিদ্যা বা ইতিহাসের বাস্তব বিষয়টা কি? চিন্তা কী নিয়ে চিন্তিত হলে মানববিদ্যা বা ইতিহাসের দিক থেকে ঠিক বিষয়টা শনাক্ত করতে পারবে? ডিলথির কাছে সেটা হচ্ছে মানুষের ‘জীবন’বা আরও সম্প্রসারিত অর্থে মানুষের জীবনযাপন। এটাই মানববিদ্যা বা ইতিহাসের বাস্তব বিষয়। মানুষের ‘জীবন’ এমন এক আলাদা বাস্তবতা যাকে প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণ দিয়ে বোঝা যাবে না, বরং তাকে উপলব্ধি, বর্ণনা ও বোঝার জন্য বিষয়ের উপযুক্ত পদ্ধতি ও প্রকরণ দরকার। বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও উপযুক্ত পদ্ধতি দিয়েই বুঝতে হবে। ডিলথির অবদান হচ্ছে তিনি ভিন্ন ভাবে মানুষের জীবনকে বুঝতে গিয়ে আসলে মানুষের মনোজগত বোঝার দিকেই মুখ ফেরালেন। চিন্তাচেতনা সম্পন্ন মানুষ ও তাদের সমাজ ডিলথির গবেষণার বিষয় হয়ে উঠল। দর্শনের দিক থেকে তিনি মৌলিক কোন কথা মৌলিক ভাবে বলেছেন সেটা হয়ত দাবি করা যাবে না, কিন্তু মানুষের ‘জীবন’ বা জীবনযাপনকে তার শর্তেই বুঝতে গিয়ে চেতনার বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর যে ইঙ্গিত সেটা প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসৃত ‘মনোবিজ্ঞান’ যেমন নয়, অন্যদিকে জ্ঞানতত্ত্বের মধ্যে হাজির হতে থাকা জ্ঞান-স্বরূপ চেতনার তত্ত্বও নয়। ডিলথি ইতিহাসকে ‘বৈজ্ঞানিক’ ভাবে বুঝবার কোন পদ্ধতি পেশ করেন নি, কিন্তু মানুষের ইতিহাস বলতে আমরা কি বুঝব সেই দিকটাকে নজরের মধ্যে এনেছিলেন। তাকে বর্ণনা ও বিচারের পদ্ধতি ও সম্ভাবনাকে স্পষ্ট করে তুলবার মধ্য দিয়ে তিনি প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণের গোঁড়ামি থেকে দর্শনের নজর প্রত্যাহার করে আনতে সহায়তা করেছিলেন। কান্টের দিকে দর্শন যখন উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগের দিকে ফিরতে শুরু করেছিল তখন জ্ঞানতত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বুঝতে গিয়ে এক ধরণের গোঁড়া কাণ্টবাদের উদ্ভব ঘটছিল। কিন্তু ডিলথি এই দোষ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। জর্মন দর্শনের ইতিহাসে জ্ঞানতত্ত্বের এই গোঁড়া কাণ্টবাদী ধারা সাধারণত মারবুর্গ ইস্কুল (Marburg School) বা হেরমান কোহেনের (Hermann Cohen ১৮৪২ - ১৯১৮) ধারা হিশাবে পরিচিত। কান্টের ক্রিটিক অব পিওর রিজনের অভাব পূরণের জন্য ডিলথি তার অন্বেষণের নাম দিয়েছিলেন ‘ক্রিটিক অব হিস্টরিকাল রিজন’। বিশুদ্ধ বুদ্ধি মানুষ বা মানুষের ইতিহাসকে বর্ণনা, বোঝা বা বিশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট নয় এই সন্দেহ বা সংশয় তৈরীর জন্য ডিলথি জর্মন দর্শনের ইতিহাসে এখনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে এবং বিজ্ঞানের নিশ্চয় ভিত্তির সংকট দেখা দেওয়ার মধ্য দিয়ে যে-দর্শন গড়ে ওঠে সেই দর্শন নিজেকেও ‘বিজ্ঞান’ বা ‘বৈজ্ঞানিক দর্শন’ হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করে। এর প্রধান কারণ প্রকৃতি বিজ্ঞানের ধারাবাহিকতাতেই এই নতুন দার্শনিক চিন্তার আবির্ভাব ঘটেছে। এই ধারাবাহিকতার পথ ধরেই বিষয়বিদ্যার আবির্ভাব। একই কারণে বিষয়বিদ্যাও বিজ্ঞান। কিন্তু বিজ্ঞানের বিজ্ঞান। কেন দর্শন নিজেকে বিজ্ঞান বা ‘বৈজ্ঞানিক দর্শন’ হিশাবে হাজির করতে পেরেছে তার আরও কারণ আছে। মার্টিন হেইডেগার তাঁর ‘সময়ের ধারণার ইতিহাস’ গ্রন্থে আরও কয়েকটি কারণ দিয়েছেন। সেই কারনগুলো উল্লেখ করে আমরা এই কিস্তি শেষ করব।

এক. যেহেতু প্রকৃতি বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত নেবার পদ্ধতি ও প্রকরণ স্পষ্ট করবার দায় নিয়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানতত্ত্ব হিশাবে পরিগঠিত হয়ে উঠছিলো সে কারণে এই সময়ের দর্শন আসলেই ছিল বৈজ্ঞানিক দর্শন। এই সময়েই দার্শনিক চিন্তার পদ্ধতির মধ্যে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য পরিস্ফূট হয়ে উঠছিল । বিজ্ঞানের ফ্যাক্টস বা তথ্য এবং তার ওপর দাঁড়ানো বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত ছিল এই দর্শনের বিষয়।

দুই. বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় আগাম গঠিত হয়ে এই দর্শনের সামনে হাজির ছিল। দর্শনের কাজ হচ্ছে সেই গঠনের কাঠামো বিচার। সে ক্ষেত্রে দর্শন তার নিজের পদ্ধতিই অনুসরণ করতো, ফলে যে বিশেষ বিজ্ঞানের গঠন দার্শনিক বিচারের অধীনস্থ হোত, দর্শন নিজে সেই বিশেষ বিজ্ঞানের অধীনস্থ হয়ে পড়তো না। কিন্তু বিজ্ঞানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার নিজের পদ্ধতিকে একটা বৈজ্ঞানিক চরিত্র নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়ে উঠেছিল। এই দর্শন ‘বৈজ্ঞানিক’ একারনে যে প্রকৃতি বিজ্ঞানের মতোই তার নিজের বিষয় বা তার গবেষণার ক্ষেত্র যেমন সুস্পষ্ট ছিল, তেমনি তার বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গত পদ্ধতিও গড়ে উঠেছিল। দর্শন তার পদ্ধতির বৈজ্ঞানিকতা নিশ্চিত করতে পেরেছিল অন্যান্য বিজ্ঞান যেভাবে তাদের পদ্ধতির সঠিকতা নির্ণয় করার জন্য সতর্ক থাকে ঠিক সেই মাত্রার সতর্কতার কারনে। বারবার নানাভাবে বিভিন্ন দিক থেকে নিজের পদ্ধতিকে সুস্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন করে তোলার প্রয়াসের প্রতি দর্শনের অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা তাকে বিজ্ঞানের চরিত্র দান করেছে। অর্থাৎ দর্শন এই অর্থেই বিজ্ঞান যে অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো নিজের বিষয় সম্পর্কে সচেতন এবং সেই বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি ও প্রকরণ নির্ণয় করতেও সক্ষম।

তিন. যে সকল বিজ্ঞানের অভিমুখ ছিল মন, চেতনা বা চিন্তার দিকে, তাদের গবেষণাকে তাত্ত্বিক ভিত্তি দেবার জন্য চেতনার বিজ্ঞান হিসাবে একটি নতুন কিন্তু মৌলিক বিজ্ঞানশাস্ত্রের জন্ম দেবার মধ্য দিয়ে উনিশ শতকের শেষের দিকে দর্শন নিজেকে বৈজ্ঞানিক চরিত্র দেবার ক্ষেত্রে বিপুল ভাবে এগিয়ে গেল। এই নতুন শাস্ত্রের নাম মনোবিজ্ঞান (psychology)।

এখন সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন অভিমুখ ও শাখা প্রশাখা আমরা দেখি তার সঙ্গে ‘চেতনার বিজ্ঞান’ হিসাবে যে বিষয় উনিশ শতকের শেষের দিকে স্বরূপে হাজির হয়েছিল – যে বিজ্ঞান নিয়ে আমরা এত্ক্ষণ কথা বলছি -- তা আলাদা। বিষয়বিদ্যা হিসাবে পুরাপুরি দানা বেঁধে উঠবার আগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণে অন্যপ্রাণিত হয়ে চেতনা বা চিন্তাকে বর্ণনা, জানা, বোঝা ও বিচার করবার যে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক শাস্ত্র গড়ে ওঠে আমরা সেই বিজ্ঞান নিয়েই কথা বলছি এখানে। এই বিজ্ঞানও সাইকোলজি নামেই অভিহিত হয়। দুইয়ের মধ্যে আমরা যেন আবার গোলমাল না করে ফেলি। অন্যদিকে খেয়াল রাখতে হবে, আমরা ফ্রয়েড কিম্বা জাক লাকঁর মনোবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করছি না।

বিষয়বিদ্যার আবির্ভাবের পরিপ্রেক্ষিত বুঝতে হলে যে দিকগুলো কমবেশি নজরদারিতে থাকা দরকার সেই দিকগুলোই এখানে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হোল। এর পরের কিস্তিগুলোতে আমরা একই ভাবে সংক্ষেপে আলোচনা করব কিভাবে ফ্রানৎস ব্রেনতানো এবং এডমুন্ড হুসার্লের হাতে বিজ্ঞান হিসাবে বিষয়বিদ্য আরও সুস্পষ্ট ও দৃঢ়মূল হোল। এই প্রেক্ষাপটগুলো স্পষ্ট না হলে বিষয়বিদ্যার যে তিনটি ‘আবিষ্কার’ নিয়ে আমরা প্রথম কিস্তিতে আলোচনার প্রস্তাব করেছি সেই প্রসঙ্গে প্রবেশ করতে পারবো না। মার্টিন হেইডেগারের আবির্ভাবের জন্য যে ‘আবিষ্কার’ ছিল দর্শনের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

মন, চেতনা, চৈতন্য বা চিন্তার স্বভাব বিচার করতে গিয়ে প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণ অনুসরণের সুবিধা, অন্যদিকে সেই অনুসরণের সীমাবদ্ধতা ও সংকট কিভাবে দর্শনকে নতুন ভাবে নিজের পদ্ধতি সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করল সেই দিকটাই আমরা এখানে বিশেষ ভাবে বুঝতে চেয়েছি। তবে ব্রেনতানো ও হুসার্লের প্রসঙ্গে যাবার আগে আগামি কিস্তিতে এই বিষয়টাকে আমরা আরও পরিচ্ছন্ন করতে চাই। কারণ বিষয়বিদ্যা শুধু দার্শনিক ‘বিষয়’ কিভাবে চিন্তায় পরিগঠিত হয়, তা নিয়ে কারবার করে না। বিজ্ঞানের বিষয়ও করে। অবশ্যই। এমননকি ধর্ম, রাষ্ট্রচিন্তা, কাব্য, শিল্পকলা – অর্থাৎ চিন্তা যা কিছুই চিন্তা করে সেই সব কিছুরই কারবারি হতে চায় এই বিজ্ঞান। যে কারণে বলা হয় বিষয়বিদ্যা ‘বিজ্ঞানের বিজ্ঞান’ হতে চায়। এই সংকল্পের মধ্য দিয়েই বিষয়বিদ্যা উনিশ শতক জুড়ে শক্তি সঞ্চয় করেছে। এই সংকল্পই পাশ্চাত্যে দর্শনের গুণগত উল্লম্ফনের শর্ত তৈরী করেছে।

বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও প্রকরণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, কিন্তু বিজ্ঞানের অধীনস্থ না থেকে চিন্তা নিজের সার্বভৌম ক্ষেত্র আবিষ্কার করার মধ্য দিয়ে কিভাবে বিজ্ঞানের বিজ্ঞান হয়ে ঊঠল -- বিষয়বিদ্যার এই হয়ে ওঠার ইতিহাসটা এ কারণেই বোঝা বিশেষ ভাবে জরুরী।
ফরহাদ মজহার।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×