এক
-এই কী ব্যাপার? আপনাকে দেখছি কিছুদিন ধরেই আমার পিছে পিছে ঘুরছেন,ফলো করছেন! আপনার মতলব টা কী,হ্যা??
-ইয়ে..... মানে....!
-কী মানে মানে করছেন? কথা বলতে পারেন না? তোতলাচ্ছেন কেন? আবার কোনদিন যদি আমাকে ফলো করতে দেখি তাহলে ঠ্যাং কেঁটে হাতে ধরায়ে দেবো......!
এই বলেই আমি চলে আসলাম।পিছনে ফিরে তাকায় নি! অবশ্য না তাকালেও আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম,ছেলেটা এখন আমার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে!
ছেলেটাকে ঝাড়ি মারতে পেরে নিজেকে বেশ হিরো হিরো লাগছে! ওহ্ সরি,হিরোইন হিরোইন লাগছে!
দুই
আসলে ঘটনা হচ্ছে ৩-৪ আগে থেকে দেখছি একটা ছেলে আমার পিছে লেগেছে! আমি যেখানেই যাই সেখানেই তাকে আমার পিছনে দেখা যাই! আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে মোড় পর্যন্ত গেলেই দেখি, হ্যা...... সে ঠিক দাঁড়িয়ে আছে! তারপর আবার বারান্দায় গেলেও দেখা যায় সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হয় মোবাইল টিপছে আর নাহলে আমার বারান্দার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
একদম মানে আমার পিছনে স্টিকারের মতন লেগে আছে!
আমার অবশ্য ভালই লাগছিল! কিন্তু ঝামেলা হয়ে গেছে আমার আম্মু দেখে ফেলেছে! আমি বারান্দায় ছিলাম।যথারীতি সেও ছিল নিচে! আম্মু হঠাৎ এসে ছেলেটাকে দেখে আমায় বলল
-কে রে ছেলেটা?
আমি চমকে উঠে বললাম
-কোথায়?
আম্মু খানিক চুপ থেকে বলল
-ওই....যে নিচে দাঁড়িয়ে!
আমি যদিও জানি ওখানে কে দাঁড়িয়ে আছে তবুও আম্মুকে দেখিয়ে একটু খোঁজার অভিনয় করে বললাম
-চিনি না তো! কে,কি জানি!
আম্মু বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-তুই কার কাছ থেকে কী লুকাচ্ছিস? আমি গতকালও দেখেছি তুই বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই ওই ছেলেটাই তোর পিছন পিছন আস্তে আস্তে সাইকেল নিয়ে ফলো করছিল! তুই চিনিস না ওঁকে?
-না,আম্মু! আমি সত্যিই ওইটাকে চিনিনা! আমিও দেখেছি একদিন ফলো করতে। কিছু বলিনি! তারপর আর দেখিনি! এইবার আমার পিছনে গেলে কথা বলতে হবে! ভালমতো ঝাড়তে হবে!
-হুম।মনে থাকে যেন!
এইটা বলেই আম্মু ভিতরে চলে গেল।আমিও আম্মুর পিছন পিছন চলে এলাম ভিতরে।আর সে আম্মু আসার একটু পরেই চলে গিয়েছে!
তারপর দিন এই ঘটনা। আমার অবশ্য খুব একটা ইচ্ছা ছিল না,ছেলেটাকে বকার।কিন্তু আমি আজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যেতেই আম্মু আমায় ফোন দিয়ে বলল
-ছেলেটা তোর পিছনেই আছে!
আমি বুঝলাম আম্মু কী করতে বলছে।তাই একবার পিছনে তাকিয়ে ছেলেটাকে দেখেও আম্মুকে বললাম
-কোই? কেউ তো নেই!
আম্মু বিরক্তি ভরে বলল
-আরে তোর পিছনেই আছে ভাল করে দ্যাখ!
এইবার আমি পিছনে ফিরে একবারে আমার বাড়ির দিকে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি আম্মু জানালায় দাঁড়িয়ে! আমার জানাই ছিল না যে জানলা দিয়ে এখানে দেখা যায়! আর আম্মু জানলায়ই দাঁড়িয়ে আছে।তাই আর বাহানা না দেখিয়ে বললাম
-হ্যা,দেখেছি।
বলেই লাইনটা কেটে দিলাম।
তারপর ছেলেটাকে গিয়ে ওইসব বললাম! এখন একটু খারাপই লাগছে!
পিছ পিছ ঘুরছিল,ভালই তো লাগছিল!
তিন
কিন্তু আর আসবেনানে! তাইই হলো। পরেরদিন আর সে এলোনা!
এভাবে ৩ দিন যাওয়ার পর আবার তাকে দেখতে পেলাম!
তারপর থেকে আবার আগের মতই নিয়মিত! তবে এবার আর সে বাড়ির কাছে যেত না! মনেহয় তাকে বকার আগে আমার ফোনে কথা বলা একটু শুনেছিল! তাই বুঝেছে যে,আমার আম্মুকে নিয়ে ঝামেলা হয়েছে!
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর আমার বান্ধবীরা সব জেনে গেল! ওঁরা ছেলেটার সাথে কথাও বলে ফেলল! কিন্তু ছেলেটার কোন ডেভেলপ নাই! সে আমার সাথে কখনো কথাও বলতে আসেনা! শুধু দূরত্ব বজায় রেখে পিছু করে! ভালও লাগে আবার বিরক্তও লাগে! বিরক্ত লাগে এই ভেবে যে,খালি পিছ পিছ আসে কথা বলেনা! আমি কি বাঘ,ভাল্লুক নাকি যে খেয়ে ফেলব? একদিন বকেছি বলে আর কথা বলতেই আসেনা!
এদিকে আমার বান্ধবীরা আমাকে তাঁর নামে খেপানো শুরু করেছে! ভালই লাগে সবকিছু!
কয়েকদিন পর দেখলাম ছেলাটার সাথে ছেলেটার আরেক বন্ধুও আসল ! খুব হ্যান্ডসাম দেখতে ছেলেটা! আমার দুই বান্ধবী তো একসাথে ক্রাশ খায়ে জগড়া বাধিয়ে দিল নিজেদের মধ্যে ছেলেটাকে নিয়ে!
চার
প্রায় তিনমাস হতে চলল ছেলেটা আমার পিছনে ঘোরে। কিন্তু আজও প্রপোজ করতে পারলো না। বান্ধবীদের চাপে আর নিজের ইচ্ছেতেই মাঝে একদিন ছেলেটাকে একা পেয়ে কথা বলার জন্য ডাক দিয়েছিলান।কিন্তু ভীতু ছেলেটা উল্টো দিকে ঘুরে দিল ভৌ দৌড়! সেইটা দেখে আমার বান্ধবীরা তো একেবারে হাসতে হাসতে রাস্তায় গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা!
আমার এত্তো পরিমাণ রাগ হচ্ছিল! মন বলছিল,সবকয়টার গলা টিপে মেরে ফেলি! সাথে ওই ছাগল টাকেও! একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁতগুলো সব ফেলে দিতে ইচ্ছা করছিল!
কিন্তু কিছুই করা হয়ে ওঠেনি শুধু আফসোস ছাড়া!
পাঁচ
ঠিক তার পরের দিনই দেখি অন্য একটা ছেলে আমার পিছনে লেগেছে! আগে কোনদিন দেখিনি এঁকে!
কিন্তু ছেলেটার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম! সরাসরি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে মুসকান বলে ডাক দিল!
আমি মাথা তুলে তাকাতেই বলল
-আমি তোমাকে পছন্দ করি!
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম
-আমার বয়ফ্রেন্ড আছে!
সে আর কিছু না বলে চলে গেল। আমি আবার সামনে তাকিয়ে হাটা শুরু করতেই দেখি,সাঈদ দাঁড়িয়ে! কাছে গিয়ে ওঁর দিকে তাকিয়ে দেখি চোখের মধ্যে ওঁর পানি টলমল করছে! মনে হচ্ছে এক্ষুণি কেঁদে ফেলবে! জানি ওঁ কী ভাবছে। কিন্তু ওঁ তো আর জানে না আমি ছেলেটার সাথে কী কথা বলেছি।
সেদিন সাঈদ একাই ছিল! সাথে অনুপ মানে ওঁর বন্ধুটা ছিল না!
ছয়
সেদিন সন্ধ্যায় আমি যখন আবার প্রাইভেট থেকে বাসায় ফিরছিলাম তখন দেখি ওই অনুপ টা এসে আমার পথ আটকালো! আমার সামনে এসেই বলল
-মুসকান,আপু।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে!
আমি জানি সে আমার সিনিয়র কিন্তু তাও আমাকে আপু বলে ডাকে! আমার সাথে অনুপ ভাইয়ার আগেও একবার কথা হয়েছে!
তো আমি বললাম
-হ্যা ভাইয়া বলেন।কী বলবেন?
সে আমার পাশে হাটতে হাটতে বলল
-দ্যাখো,সাঈদ তোমাকে পছন্দ করে অনেক দিন হয়ে গেল! কিন্তু ওঁর নাকি তোমাকে দেখলেই ভয় লাগে! তাই সে তোমার সাথে কথা বলতেই পারেনা! ওঁ যে কতবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার সাথে কথা বলার জন্যে প্রাকটিস করেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই!
-কিন্তু আমি কী করি বলেন!
-আজ ওঁ খুব কষ্ট পেয়েছে তোমার সাথে ওই ছেলের কথা বলা দেখে!
-হুম! আমিও সেটা দেখলাম!
-এখন আমার মনেহয় না ওঁ নিজে থেকে কিছু করতেপারবে! আমিও তো আর কম চাপ দেইনি! কিছুতেই সে পারেনা! আমার মনেহয় তোমাকেই কিছু একটা করতে হবে!
-আমি কী করব?
-কী করবে সেটা পরে বলছি।তার আগে তুমি বল,ওই ছেলেটা কি তোমায় ডিস্টার্ব করছে?
আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম
-হ্যা হ্যা! আমাকে আজ বলছে,সে পছন্দ করে আমায়!
-তুমি কী বলেছ?
-আমি বলেছি,"আমার বয়ফ্রেন্ড আছে!" তারপরই চলে গিয়েছে! কিন্তু আমার মনেহয় না সে আমার কথা বিশ্বাস করেছে! আবার আসবে হয়ত কাল!
-আচ্ছা ঠিকাছে! আমি কাল আসবোনে যখন ওই ছেলে তোমার সাথে কথা বলতে আসবে! তারপর......................
তারপর আমায় কী কী করতে হবে সব বুঝিয়ে দিল! আমি মনে মনে বেশ খুশি! অনুপ ভাইয়া আসলেই খুব ভাল! আমি অনেকবার ধন্যবাদ দিয়ে এসেছি! কাল যদি আল্লাহ্ র রহমতে সবকিছু ঠিকঠাক মতো হয়।তাহলে কাল থেকেই ওই ছাগলটাকে মানুষ বানানোর কাজে লাগতে হবে!
রাতে খেয়ে, এশার নামাজ পড়ে অনেক্ষণ শুয়ে শুয়ে আরেকবার ভেবে নিলাম আমায় কাল কী কী করতে হবে! তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম!
সাত
পরের দিন আবার প্রাইভেটে যাওয়ার সময় সত্যি সত্যিই দেখি সেই ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে! সাথে সাথেই দেখি সামনে অনুপ ভাইয়া আর আমার ছাগল টা আসছে! অনুপ ভাইয়া দেখলাম সাঈদকে কী যেন বলতে বলতে আসছিল! বকছিল সম্ভবত!
তারপর ওই ছেলেটা আমার কাছে এসে বলল
-কেমন আছো??
আর ততক্ষণে সাঈদরা আমার একেবারে কাছে চলে এসেছে! কাছে আসতে আসতেই ছাগলটা দাঁড়িয়ে গেল একটু খানি দূরে আর অনুপ ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আরে ভাবী.... কী করো??
আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম
-ভাইয়া দ্যাখেন এই ছেলেটা আমায় ডিস্টার্ব করছে?
-আচ্ছা ঠিকাছে আমি দেখছি তুমি ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়াও।
আমি আর কিছু না বলে আস্তে আস্তে সাঈদের কাছে গেলাম। দেখি পাগলটা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে ভয়ে! আমি গিয়ে করে ওঁর হাতটা ধরে আস্তে করে বললাম
-এই ছাগল এমন করছো কেন? তোমায় মানুষ বানাতে আমার কী যে হবেনে আমি ভেবে পাচ্ছি না! আমি পাগলই হয়ে যাবোনে!
সে চুপ করেই আছে! তারপর আমি অনুপ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ছেলেটাকে একটা বেশ জোরে চড় মারল। তারপর আবার কিছু কথা বলে বিদায় করে দিল!
এইবার অনুপ ভাইয়া আমাদের কাছে এসে বলল
-ভাবী,সাঈদ কিন্তু আসলেই আমার চাচাত ভাই! এবং বয়সে সাত মাসের বড়! তারমানে তুমি আমার ভাবী আর আমি তোমার.............
আমরা এবার একসাথে সবাই মিলে হেসে উঠলাম!
তারপর আমি হঠাৎ করে সাঈদের দিকে তাকিয়ে কঠিন করে বললাম
-তুমি হেসো না! আগে প্রপোজ কর!
সাঈদ তখন আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে অনুপ ভাইয়াকে বলল
-ভাইরে আমার এইবার বিপদই আছে!
আমরা আবার সবাই মিলে হেসে উঠলাম......