পর্ব ১. Click This Link
পর্ব ২ঃ Click This Link
পর্ব ৩ ঃ Click This Link
পর্ব ৪ঃ Click This Link
এই পর্বের নাম বাক্সবদল।
প্রথম দিনের ভর্তি পরীক্ষা। সবুজ একটা পলিব্যাগে করে বই খাতা নিয়ে গেলাম পরীক্ষার হলে। পরীক্ষার সময় স্যারের টেবিলের সামনে ওগুলো জমা দিতে হল। আমি খুব দ্রুত লিখি বরাবরই। পরীক্ষা শেষ হল সবার আগে। আর বসে থেকে কী হবে? উত্তরগুলো তো আর বদলানো যাবে না! বেড়িয়ে পড়ি আমার বই খাতাশুদ্ধ সবুজ পলিব্যাগ হাতে। মাঝে বিরতি। দুপুরে আবার পরীক্ষা। ফিরে এলাম হলে। হাতে অনেক সময়। ভাবলাম একটু পড়ি। সবুজ পলিব্যাগ থেকে বই বের করতে গিয়ে সারাটা আকাশ ভেঙ্গে পড়ল আমার মাথায়। একি? এসব কার বই খাতা? ওহ না! ঠিক এই রকম সবুজ পলি ব্যাগ অন্য কারোও থাকতে পারে?? এখনো আমার ঢাবি আর মেডিক্যালে পরীক্ষা দেওয়া বাকি। আমি কত কষ্ট করে কত্তরকম তথ্য খাতায় লিখেছিলাম। এগুলো এখন কোথায় পাব? আচ্ছা, খাতা না হয় বাদ দিলাম। এই বইগুলো দিয়েও আমার চলবে না। এগুলো সব পুরাতন সিলেবাসের বই। রাগে, দু;খে ক্ষোভে কেমন যে লাগছিল আমার। দুপুরে ভাইয়া এল পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেতে। ভাইয়াকে এ ঘটনা বলার পরে এক চোট কথা কাটাকাটি হয়ে গেল।
মাঝে মাঝে ১০-১১ বছর আগের আমিটার দিকে তাকিয়ে দেখি, কত পরিবর্তন ঘটেছে আমার! আজ যদি ঠিক এমন একটা ঘটনা ঘটে, কী করব আমি? একটু দুঃচিন্তা হলেও ঠিক সামলে নেব নিজেকে। নিজে নিজে অনেক কিছু বুঝ দিয়ে চলতে হয় এখন। কিন্তু ২০০০ সালের এই আমিটা তো আর এমন ছিল না। তার উপর ওকে কেউ বলে নি, চিন্তা করো না, ঠিক পাওয়া যাবে। মাথার ভিতরে শুধু একটা কথাই ঘুরছে, কোথায় পাব? কোথায় পাব? এত মানুষের ভীড়ে?
এক রাশ মন খারাপ নিয়ে পরীক্ষা দিতে বসলাম। রোল নম্বর লিখতে ভুল করলাম। ভয়ে আরো সিঁটিয়ে গেলাম। নিজেকে এত অসহায় লাগছিল। এবারও পরীক্ষা দিতে এসেছি ঐ ব্যাগ নিয়ে। রেখেছি হল রুমের সামনে। বারবার খেয়াল করছি, ওটা কি কেউ নিতে আসে কি না। কি যে দিলাম পরীক্ষা! পরীক্ষা শেষে ঐ ব্যাগ নিয়ে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। আশা, যার ব্যাগ সে যদি এই পরীক্ষা দিতে আসে তবে আমাকে সেও খুঁজবে। শত শত ছেলে মেয়ে। একে একে সবাই চলে গেল। কেউ এল না আমার কাছে। মন ভার করে ফিরে যেতে রওনা দিলাম আমি আর ভাইয়া। ঠিক তখনি ঝড়ের বেগে এক ছেলে excuse me, excuse me করতে করতে আমাকে থামালো।
‘’আপনি এই ব্যাগ কোথায় পেলেন?’’
তাকিয়ে দেখি ছেলেটার হাতেও ঠিক একই রকম সবুজ ব্যাগ। আমার মুখে একান ওকান জুড়ে হাসি ফোটে। কথা না বাড়িয়ে আমার ব্যাগটা ঐ ছেলের হাতে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এতক্ষণ পরে নিজের ব্যাগটা ফেরত পেয়ে, বইখাতা গুলো নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। ওগুলো দেখতে গিয়ে ভাল করে ছেলেটার চেহারাও দেখা হয় নি। কয়েকপ্রস্থ thank you, thank you করে খুশি মনে ফিরে এলাম হলে।
হলে ফিরে দিদিদের এই ঘটনা বয়ান করে আমি বললাম—‘’এমন ঘটনা তো সিনেমাতে ঘটে। পুরোপুরি সিনেমা।‘’ বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে দিদিরাও বলতে লাগল, ‘’এমন আরো কত ঘটবে! মনে হবে এগুলো তো সিনেমায় ঘটে। জীবনটা আসলে সিনেমাই।‘’
বই খাতাগুলো ফেরত পেয়ে খুব ভাল লাগছিল। ইশ! ছেলেটাকে ভাল মত দেখাই হল না। আবার দেখা হলে চিনতেই পারব না। নামটাও তো জিজ্ঞেস করিনি। খুব খারাপ হল ব্যাপারটা। সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কিনা দেখছিলাম বই খাতা উলটে পালটে। হঠাৎ দেখি খাতার মধ্যে একটা পৃষ্ঠায় খুবই তাড়াহুড়া করে লেখা একটা ঠিকানা। নাহ, বাবা! এখনই সিনেমার নায়িকা হবার ইচ্ছে নেই আমার। কালি দিয়ে ভাল মত কেটে দিই ঠিকানাটা।
(এ ঘটনার অনেক বছর পরে দেখি সত্যজিতের বাক্সবদল ছবিটি। )