কাউকে হতাশ করা, বা demotivate করা আমার লক্ষ্য নয়। আমি মূলত বিভিন্ন লেখকের লেখা বই, ব্লগ এবং জার্নাল থেকে পড়বার মত যা পাই, সেটারই একটা ভাবানুবাদ করি এবং সাথে সাথে নিজের থেকে কিছু কথা যোগ করি। আর সেই ধারায় এই লেখা।
ব্যবসা কি চিরদিনের? আপনি কি একটা ব্যবসাই করবেন? আপনি যেই ব্যবসা এখন চালিয়ে যাচ্ছেন এর থেকে ভালো কোন সুযোগ কি আপনি হারাচ্ছেন না তো? প্রত্যেকটি ব্যবসারই কিছু সময় থাকে যখন তাতে মন্দা থাকে, এমন সময় থাকে যেন এটাই সেরা ব্যবসা মনে হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীর অবশ্যই এটা জানা উচিৎ যে কখন তাকে তার এই ব্যবসাটি ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছুতে মন দিতে হবে। আসুন তাহলে সেই তিনটি অত্যন্ত জরুরী বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।
১. আপনি আর আপনি নেই, নিজেকেই যেন চিনেন নাঃ
একটি ব্যবসা একেবারে ছোট থেকে আস্তে আস্তে বড় করাটা খুবই কঠিন একটি কাজ। যার কারণেই সবাই ব্যবসায় নামে না। একজন মানুষ যখন ব্যবসা করতে নামে, তখন তার মাথাতে থাকে আমি আজকে যা, আগামীতে আমাকে এর থেকে ভালো কিছু করতে হবে। কিন্তু ব্যবসা করতে গিয়ে যদি এমন হয় যে আপনি আপনার মন মত নেই, শুধুই ব্যবসা নিয়ে চিন্তা করে যেতে হচ্ছে, আপনার পরিবার-পরিজন-বন্ধু-বান্ধব সবই আপনি হারিয়ে ফেলছেন শুধুমাত্র আপনার এই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে; আপনি যেমনটা হতে চেয়েছিলেন তেমনটা আর নেই; তাহলে বুঝতে হবে, এখনই সময় এই ব্যবসাকে ছেড়ে দেওয়ার। কারণ আপনি যদি নিজের মতই না থাকেন, তাহলে আর এসব করে লাভ কি?
২. কাজের বহর আপনার সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছেঃ
আপনি যদি সফল ভাবে একটি ব্যবসা পরিচালনা করতে চান, তাহলে আপনাকে ভালো একটি দল (টিম) তৈরী করতে হবে। আর এর নেতৃত্ব আপনাকে নিতে হবে। যদি এমন হয় যে আপনিই সব কিছু করছেন, তাহলে একটি সময় পরে আপনি সব কিছু আর সামলিয়ে পারবেন না।
সাধারণত ছোট ব্যবসায় এই জিনিষটা অনেক বেশী দেখা যায়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেহেতু প্রচুর টাকা দিয়ে একটি ভালো লোককে চাকুরীতে নিয়োগ দিতে পারে না, তাই তার নিয়োগ দেওয়া অপেক্ষাকৃত কম পারদর্শী কর্মচারী/কর্মকর্তার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে পারেন না। আর সব কিছুতে নিজের মাথা খাটাতে হয়।
আবার অনেক সময় দেখা যায় ব্যবসায় আপনার আকাঙ্খা বা সাধ্যের বাইরে কাজের অনুরোধ আসছে, যা আপনার পক্ষে সঠিক ভাবে করাও সম্ভবপর নয়, আবার ব্যবসাকে হুট করে বাড়ানোও সম্ভব নয়; ফলে আপনি প্রচুর পরিমানে অতৃপ্ত ও অসন্তুস্ট গ্রাহক তৈরী করছেন, যারা আপনার কাছ থেকে পণ্য বা সেবা না পেয়ে আপনার উপরই ক্ষুব্ধ হচ্ছে। ফলে আপনি আপনার ব্যবসার ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে ফেলছেন।
যদি ব্যবার পরিস্থিতি এমনই দাড়ায়, তাহলে ছেড়ে দিবেন কিনা এটা সতর্কতার সাথে যাচাই করে দেখতে হবে। কারণ আপনি আর যাই হোক, একটি বদনামী প্রতিষ্ঠান নিয়ে খুব বেশী দূর এগুতে পারবেন না।
৩. কাজের আর আগ্রহ নাইঃ
এটার বিষয়ে আমি নিজের কথাই আগে বলে নেই। আমি এই পর্যন্ত প্রচুর প্রোজেক্ট শুরু করেছি, এবং কিছুদিনের মধ্যে হয়ত আগ্রহটা আর ধরে রাখতে পারিনি। এখন আমি যদি এই সব গুলি প্রোজেক্টই টেনে নিয়ে বেড়াই, সেটা শুধু আমার বোঝাকেই ভারী করবে, অন্য কোন কাজে দিবে না।
একটি ব্যবসা শুরু হয় আগ্রহ দিয়ে। নতুন কিছু বা ভালো কিছু করবার জন্য আপনার প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তিই আপনাকে ব্যবসায় নামায়। আপনি একটি কম্পানির মালিক এ কথা বলতে এবং এ কথা বলে নিজের একটি বিজনেস কার্ড কারও হাতে ধরিয়ে দেবার মত আনন্দ অন্য খুব কম জিনিষেই পাওয়া যায়।
তবে এই আনন্দ যদি এক সময় বিরক্তিতে পরিণত হয়, তখনই সমস্যা। কেননা একটি ব্যবসা চালাতে গিয়ে আপনাকে সব ধরণের সব কিছুরই খবরাখবর রাখতে হচ্ছে, প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট দেখতে হচ্ছে, এবং সর্বপরি প্রায় সব কাজেই নাক গলাতে হচ্ছে। কিন্তু এতকিছু করেও মন মত সাফল্য আসছে না, তখন ব্যবসার প্রতি বিরক্তি আসাটাই স্বাভাবিক। আর আপনি যদি কাজের প্রতি একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, তাহলেতো সেটা ধরে রাখা আরও কষ্টের।
এমন মুহূর্তে আপনার জন্য এই ব্যবসাটি ছেড়ে দেওয়াই ভালো হবার কথা। যদিও একটি ব্যবসা কিছুদুর দাড় করিয়ে সেটা ছেড়ে দেওয়া সহজ কোন বিষয় নয়। এটি যতটা না বাস্তব জীবনে দরকার, তার থেকে আপনার মানসিক দিকে চাপ দিবে বেশী। এমনকি এই সময় নিজেকে ব্যর্থও মনে হতে পারে।
একটি ব্যবসা সফল হয়নি বলে সেটা ছেড়ে দেওয়া দোষের কিছু নয়। বরং যাতে নিজের শান্তি এবং নিজের উন্নতি সেই কাজটি করাই সবার জন্য জরুরী। তাই যদি মনেই হয় যে এটি আর টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তাহলে ছেড়ে দিন। বরং এই ব্যবসা থেকে অভিজ্ঞতা গুলি কাজে লাগান।
আমরা মাঝে মধ্যেই এমন কিছু মানুষ দেখি, যারা কোন ভাবেই চাকরী করতে পছন্দ করেই না, কিছু একটা অন্য রকম করবার ইচ্ছা তার মনের মধ্যে জেঁকে বসে থাকে। কিছু করতে পারুক বা না পারুক, নিজের আত্মবিশ্বাস, নিজের চেষ্টা সব সময়ই থাকে নিজে থেকে কিছু করবার।
অপর দিকে কিছু মানুষ থাকে, যারা কোন ভাবেই কোন ঝুঁকি নিতে চায় না, মাসে একটা নির্ধারিত দিনে বেতন, নিয়ম মেনে খরচ করা, যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকাই তাদের কাজ। কিন্তু কেন এমন হয়? কেন দুজন মানুষ দুই রকম হয়? কেন দুজনের আশা দুই রকম? নিচের এই গুনের লিষ্ট যদি আপনার নিজের মধ্যে খুজে পান, তাহলে আপনি বুঝে নিতে পারেন যে উদ্দ্যোক্তা হবার জন্যই আপনার জন্ম হয়েছে, আপনিই পারবেন।
১. স্থীর হয়ে বসতে পারেন নাঃ সব সময় কিছু না কিছু করবার ইচ্ছা, কিছু করে দেখানোর বাসনা মনের মধ্যে থাকে।
২. নতুন নতুন আইডিয়া আসতেই থাকেঃ হোক সে ভালো কিংবা খারাপ, নতুন কিংবা পুরাতন কিছুকে নতুন করে ভাবা, আইডিয়া আপনার মাথার মধ্যে কিলবিল করতে থাকে।
৩. আপনি অন্যের আইডিয়ার ভুল ধরতে পারেনঃ এটা একা একাই তৈরী হয় নিজের মধ্যে, যখন আপনি অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করেন, আপনি জানেন কি করে চিন্তা করতে হয়, তাই জানেন কিসে সমস্যা থাকতে পারে।
৪. আপনি অনুপ্রানিত হন সফল ব্যবসায়ীদের দেখেঃ কোন নায়ক-নায়িকা নয়, কোন সফল খেলোয়াড়ও নয়, আপনি অনুপ্রানিত হন সফল ব্যবসায়ীদের দেখে।
৫. কোন সফল ব্যবসায়ীকে দেখলে খুশি হনঃ হোক কোন সেমিনার, কিংবা চলতি পথে, আপনি সফল কোন উদ্দ্যোক্ত/ব্যবসায়ীকে দেখলে খুশি হন, তার সাথে কথা বলতে মন চায়।
৬. আপনার কি করতে হবে সেটা বলে দেওয়া পছন্দ করেন নাঃ আপনি কাজের নির্দেশ পাবার থেকে দিতে বেশী পছন্দ করেন।
৭. নতুন জিনিষ শিখতে আগ্রহীঃ কিভাবে কি করতে হবে, কিভাবে কি করা যায়, কোথায় গেলে নতুন কিছু শিখতে পারবেন এগুলিতেই বেশী আগ্রহী।
৮. আপনি প্রচুর টাকার স্বপ্ন দেখেনঃ যদিও টাকাই সব কিছু না, কিন্তু আপনি কোনভাবে প্রচুর টাকার স্বপ্ন ছাড়তে পারেন না।
৯. আপনি সহজে হার মানেন নাঃ ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করাটাই আপনার কাছে বেশী আন্দের, কোন কিছুতে হার মানতে আপনি নারাজ।
১০. আপনি আপনার অভ্যাসে নিয়মিতঃ আপনি রুটিন করে কাজ করতে পছন্দ করেন, নিয়ম মাফিক চলতেই বেশী স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন।
১১. যত সম্ভব নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হনঃ আপনি নতুন মানুষে সাথে পরিচিত হতে আগ্রহী, লজ্জা পান না।
১২. বিফলতা থেকে ফিরে আসেনঃ কোন ভাবে হয়ত বড় ধরণের বিফলতা চলে আসলো, কিন্তু কিছুই আপনাকে দমাতে পারে না, আপনি নতুন করে আবার শুরু করতে পারেন।
১৩. নিজের জন্য লক্ষ্য নির্ধারন করেনঃ চলার পথে এক একটি লক্ষ্য নিয়েই আপনি এগিয়ে যেতে পছন্দ করেন।
১৪. আপনি সাহায্য করতে পছন্দ করেনঃ যখনই সময় এবং সুযোগ মেলে, আপনি অন্যের ভালো করতে আগ্রহী হন।
১৫. আপনি মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পথ খুজেনঃ কিভাবে অন্যকে অনুপ্রাণিত করা যায়, তা ভাবেন প্রচুর পরিমানে।
১৬. কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করে চলেনঃ আপনার প্রতিটি কাজেই একটি সময়সীমা থাকে, এবং কোন ছাড়ের স্থান সেখানে নেই।
১৭. আপনি গল্প বলতে পছন্দ করেনঃ নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের জ্ঞান, নিজের সম্পর্কে মানুষকে বলতে পছন্দ করেন।
১৮. আপনি নিজেকে কাজে জড়ানঃ কোন কাজের সুযোগ থাকলে আপনি সেখানে নিজেকে কিভাবে লাগানো যায় তার চেষ্টায় থাকেন।
১৯. মানুষের মধ্যে সম্ভাবনা দেখেনঃ একটা মানুষ কি অবস্থায় আছে তা বিচার না করে আপনি বিচার করেন তাকে দিয়ে কি করা সম্ভব, এবং আপনি তাকে সেই ভাবে পরিচালিত করতে আগ্রহী।
২০. আপনি বিপদেও ধীরস্থীরঃ প্রচন্ড বিপদেও আপনি খুব স্থীর ভাবে চিন্তা করতে পারেন।
২১. যার সাথে সুযোগ থাকে, তার সাথে থাকতে চেষ্টা করেনঃ কখনওই কোন সুযোগ হাত ছাড়া হতে দিতে চান না।
২২. সময় নষ্ট পছন্দ করেন নাঃ নিজে নিজেই যে কাজে সময় নষ্ট হবে তা করা থেকে বিরত থাকেন।
২৩. আবেগ নয়, যৌক্তিক চিন্তা করেনঃ আপনি আপনার নিজের লজিক পছন্দ করেন, আবেগ নয়।
২৪. মানুষের আবেগ বুঝতে চেষ্টা করেনঃ যৌক্তিক হলেও, মানুষের আবেগের বিষয়ে যথেস্ট সম্মান আপনার আছে।
২৫. অন্যের উপদেশে গ্রহণ করেনঃ অন্য কেউ কোন ভালো কিছু বললে তা আপনি নির্দিধায় মেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী নিজেকে পরিবর্তন করেন।
২৬. মাঝে মধ্যেই নতুন প্রোজেক্ট চালু করেনঃ সব সময় মাথায় নতুন নতুন আইডিয়া ঘুরে বলেই মাঝে মধ্যেই তার দু-একটা শুরু করে দেন।
২৭. আপনি নিয়মিত আপগ্রেড হনঃ হোক সে বাড়ি, কিংবা গাড়ি, কিংবা মোবাইল কিংবা টেকনোলজিতে, আপনি নিয়মিত আপগ্রেড হতে পছন্দ করেন।
২৮. আপনি নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে পাগলঃ নতুন একটি প্রযুক্তি আসবে, আর আপনি তা জানবেন না এবং চাইবেন না, এমন হয় না।
২৯. নিয়মিত খবর এবং বই পড়েনঃ এটা অভ্যাস হয়ে যাবার কথা।
৩০. কাজের মাঝে সময় ভুলে যানঃ নিজের স্বপ্নের কাজ করবার সময় মাঝে মধ্যেই আপনার সময়ের খেয়াল থাকে না।
সর্বপরি, আপনি সব সময় নিজে নিজে কিছু একটা করতে আগ্রহী, কোন প্রতিকূলতা, কোন প্রতিবন্ধকতা, কোন বাজে কথা কিংবা কোন সমস্যাই আপনার কাছে কিছু না, এগিয়ে যাওয়া, এগিয়ে চলাই আপনার জীবনের পাথেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২০