দেশের জাতীয় দৈনিক গুলোতে বেশ আলোচিত একটি সংবাদ এসেছে... ‘তিন ব্যাংকে কার্ড জালিয়াতি’ নিয়ে করা এসব প্রতিবেদনে ঘুরে ফিরে এসেছে এটিএম কার্ড স্কিমিং এর কথা। শব্দটা আমাদের কাছে নতুন, এবং আমাদের অধিকাংশই জানিনা এটিএম কার্ড স্কিমিং আসলে কী!
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এটিএম কার্ড স্কিমিং এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করছে স্কিমার রা। আমরা হয়তো জানিই না, আমাদের অসাবধানতার কারণেই আমরা স্কিমারদের কাছে দিয়ে আসছি আমাদের ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের সকল তথ্য!
এটিএম স্কিমিং কী?
এটা এমন এক ধরণের চুরি যাতে গ্রাহকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সকল ডেটা একটি মেমরি তে স্টোর করা হয়, এবং সেই ডেটা কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্টে থাকা অর্থ চুরি করা হয়।
কিভাবে এটা কাজ করে?
লক্ষ্য করলে দেখবেন আপনার এটিএম কার্ডের পেছন দিকে একটি কালো রঙের স্ট্রিপ আছে যেটিকে বলা হয় ‘ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ’
এতে গ্রাহকের সকল তথ্য স্টোর করা থাকে। কোন স্কিমার প্রথমে কোন একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ কে টার্গেট করে, এবং সুযোগ বুঝে সে বুথের এটিএম মেশিনে একটি স্কিমার ডিভাইস সেট করে ফেলে। মজার ব্যাপার হলো, এই স্কিমার ডিভাইস গুলো সেট করতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড, যা এটিএম পাহাড়ায় থাকা গার্ডের পক্ষে বুঝে ওঠা প্রায় অসম্ভব! এটিএম কার্ড স্কিমারগুলো দেখেও সহজে বোঝা যায় না এগুলো আসলে এটিএম মেশিনের বাড়তি কোন অংশ!
স্কিমিং মেশিনের কাজ হলো আপনার ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থেকে সকল ডেটা স্কিমিং মেশিনে থাকা মেমরী তে কপি করে নেয়া। অর্থাৎ আপনি এটিএম মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করার সাথে সাথেই আপনার কার্ডের সকল ডেটা স্কিমিং মেশিনে কপি হয়ে যায়, যা দিয়ে পরবর্তীতে হুবহু একটি কার্ড বানানো সম্ভব!
আপনার কার্ডের ডেটা পেয়ে যাবার পর একজন স্কিমারের কাছে সেই কার্ডের ক্লোন বানানো কোন বিষয় না, কিন্তু ট্রাঞ্জেকশানের জন্য প্রয়োজন আপনার কার্ডের পিন নাম্বার। এটাও তাকে জোগার করতে হয়, কিন্তু কিভাবে!
সাধারণত স্কিমার রা এটিএম মেশিনের কিছু জায়গায় গোপন ক্যামেরা সেট করে ,যা আপনি যখন কার্ডের পিন প্রবেশ করেন তা রেকর্ড করে রাখে। অনেক সময় ক্যামেরার বদলে স্কিমার রা এটিএম মেশিনের নাম্বার প্লেটের উপর আরেকটি পাতলা প্লেট রেখে দেয় , যা আপনার প্রেস করা নাম্বার গুলোকে নোট করে রাখে, এবং নিশ্চিতভাবে তা স্কিমারের কাছে পৌছে দেয়!
আরো চমকে দেয়ার মতো ব্যপার হলো, এই সবগুলো ডিভাইস ঘড়ির ব্যাটারী বা একটা মাত্র রিমোটের (AAA) সাইজ ব্যাটারী দিয়ে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা সচল থাকতে পারে!
পরবর্তীতে ক্লোন করা কার্ড এবং রেকর্ডকৃত পিন নাম্বার দিয়ে খুব সহজেই এটিএম বুথ থেকে স্কিমাররা আপনার একাউন্টের টাকা বের করে নিতে পারে!
প্রযুক্তি কতো সহজ, তাই না!
এটিএম স্কিমিং বুঝবো কিভাবে?
আপনি যখন জেনেই গেছেন এটিএম স্কিমিং কিভাবে কাজ করে তাহলে আপনার কাছে এটা প্রতিরোধ করাটা খুব সহজ একটি কাজ। শুধু মনে করে প্রতিবার কার্ড ব্যবহারের আগে কিছু জিনিস লক্ষ্য করে দেখুন।
মেশিনে এটিএম কার্ড প্রবেশ করানোর আগে কার্ড প্রবেশের জায়গাটিতে হালকা নাড়াচাড়া করে দেখে নিন সেটি খুলে আসছে কিনা, যদি খুলে আসে, তাহলে আপনি আসলে একটি স্কিমিং মেশিনে কার্ড প্রবেশ করাচ্ছেন!
যেকোন মেশিনে কার্ড প্রবেশের সময় তা খুব মসৃণভাবে মেশিনে প্রবেশ করা উচিত। যদি কার্ড প্রবেশের সময় আপনি আটকে যাওয়ার অনুভূতি পান, তাহলে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
চাইলে আপনি নাম্বার প্লেটটি নেড়ে দেখতে পারেন সেটি আলগা কিনা।
উপরের ক্যামেরাটি সাধারণত চোখে পড়েনা। আর তাছাড়া ক্যামেরা সবসময় উপরেই থাকবে এমন কথা নেই। বুথের যেকোন জায়গায় গোপন ক্যামেরাটি থাকতে পারে যা আপনার নাম্বার প্লেটে প্রবেশ করানো নাম্বার গুলো দেখতে পারবে। তাই, পিন নাম্বার প্রবেশের সময় শরীর এবং হাত দিয়ে পুরো জায়গাটি ঢেকে ফেলুন, যাতে কোন পাশের ক্যামেরাই আপনার পিনটি নোট করতে না পারে।
দিন দিন অপরাধীরা আরো শক্তিশালী হচ্ছে। সহজে ও অল্প দামে পাওয়া প্রযুক্তির কল্যাণে তারা যে কাউকে খুব সহজে বোকা বানাতে সক্ষম! আপনার সতর্কতা অনেক ক্ষেত্রেই আপনাকে রক্ষা করবে, এবং আপনার কষ্টের উপার্জন চুরি হওয়া ঠেকাবে। শুধুমাত্র ব্যাংক এর পক্ষে স্কিমিং এর মতো বিশাল ফাঁদ মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব। যতো বেশী গ্রাহক স্কিমিং এর ব্যপারে সচেতন হবে, স্কিমারদের পাতানো ফাঁদ ততো বেশী দুর্বল হয়ে পড়বে। কোন বুথে উল্লেখিত কোন লক্ষণ দেখা মাত্র বুথের গার্ডের সাহায্য নিয়ে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জানান। আপনার এই সামান্য উদ্যোগ হয়তো অনেক মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কামানো টাকা বাঁচিয়ে দেবে!
আর একটা কথা সবসময় মাথায় রাখুন, কোন এটিএম মেশিনে স্কিমিং এর কোন লক্ষণ না পাবার পরও যদি আপনার মনে খটোকা থাকে, তাহলে সেই মেশিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। সকলের প্রচেষ্টায় স্কিমিং এর মতো একটি মারাত্মক অপরাধ প্রতিরোধ হোক। শুভকামনা সবার জন্য।
পুনশ্চঃ ভুল গুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন,
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: বাংলা পত্রিকা ,Mahmudul Islam Shuvo ভাই
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩২